শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৫

শিরোনাম পাঠকের হাতে (দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ)


(১)
কতবার যে নিজেকে রসির মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
নিজ পিঠের ছোট্ট তিলটি ছুঁতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি ।
কতবার যে ঘুম চোখে ডান পা সঠিক স্যান্ডালে
গলাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছি
তোমাকে বলতে গেলে জানি
হেসে লুটোপুটি
খেয়ে মফিজ
মফিজ বলে
মাতিয়ে তুলবে
রবীন্দ্র সরোবর ।


(২)
মরে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে ধ্বসে যাচ্ছে সব
এই নিয়ে করছে কারা মিহি উৎসব ?
মাগো আমার ক্ষুধা পাচ্ছে, ক্ষুধা বাড়ছে
আমি কিন্তু বোমা খেয়ে ফেলবো !

(৩)
অরন্যের শূন্যতা বন্য ছিলোনা কখনো
নগরে ছিলো ঢেঁড় বেশী ।
বন্যতা পুষেছে নগর ।
বেঁধেছে ঘর ।
অরন্যে যাবো ।
আমি
অরন্যে যাবো ।
(৪)
লক্ষ কোটি শুক্রাণু পরাজিত করে
পৃথিবীতে এসেছি হেরে যেতে নয় ।
ঘৃণা নয়তো প্রেম
আলোকিত দিন
অথবা
অন্ধকার
জয় করে
নেবো ।
পরাজয়ের খালি হাতে ফিরবোনা ঘরে ।

আমার আগে একবার মহামতি আলেকজ্যান্ডার ,
একবার ঘুরে গেছে চে ।
গাইতে গাইতে ফিরে গেছে
খুদিরাম ।
বিজয়ী বীরের বুকে উপচে পড়ে মানুষের প্রেম
কি করে হারাবে আমাকে !
(৫)
আমাকে বেপথু করোনা ।
সূঁই সুতোর সখ্যতা বৈরিতায় যে নকশী কাঁথার জন্ম
আমি তার নিপুণ সৌন্দর্যের দিব্বি দিয়ে বলছি
এ দেশ আমার ; আমাদের বাংলাদেশ ।
দোহাই মুক্তি যুদ্ধ , ত্রিশ লক্ষ প্রাণ , ভাষার ।
মাকে নিয়ে দোলনা খেলোনা ।
কোন জাহানেই ক্ষমা নেই ।
তোমাদের লোভের লালায় মাখা
হন্তারকের তকমা লাগানো
চশমা চোখে রঙ্গিন জীবন
আমাকে দিও না ।
যদি পারো, দিও , যুদ্ধে পাওয়া লাল সবুজের নিখুঁত আঁচল
পরিপাটি টিকসই যা কিছু আমাদের প্রিয় ।
আমাকে বেপথু করোনা
ও পথে হাঁটবো না আমি
রুখে দাঁড়াবো ।
প্রিয় সবুজ সাক্ষী থাকুক কবিতা
আমি যুদ্ধে যাবো
যুদ্ধে যাবো
যুদ্ধে যাবো ।
(৬)
দেশ আমাদের জননী ; তাহাদের ডাইনিং টেবিল।
রাজনিতির কাটা চামচ টুং টাং
শীত উৎসবে মুখরিত
পাতে-পাতে
মুখে-মুখে
সুখ দেয়
জনতা বার বি কিউ ।

তেনাদের ধারাবাহিক উৎসবে পুড়ে যাচ্ছি মা,
পূড়ে যাচ্ছ তুমি, তোমার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল।
আর কতোটা পোড়ালে হবে কয়লার খনি?
যাহা খুঁড়ে পেয়ে যাবে ক্ষমতার হিরা।
(৭)
পুর্ণিমা, তুমি আর বার বি কিউ।
মুনিরের নিস্তব্ধ রিসোর্ট শত কন্ঠে
সরব হয়ে গেলে
কোরালের বার বি কিউ
আগুন বুকে বসে থাকে
পুলের কিনারে।

আমি মুগ্ধতার বৃক্ষতলে বসে
দুর থেকে তোমাকে দেখি
রাজহাঁস উঁচু মুখে
চেয়ে দেখো পুর্ণিমা চাঁদ।
জ্যোৎস্নালোকের প্রশাধনে
তুমি আরো সুশ্রী হলে,
আমরা এক সাথে সেরে নেই
রাত্রিকালীন ভোজ।
ভরা আলো ফিরে গেলে
নিজ বাসভূমে
দিনের আলোয় চিনি
আমাদের মুখ!
(৮)
মান জটে মাসী পিসী
যান জটে জনতা
পথে বসে ধুলা খায়
তেনারা খান ক্ষমতা ।
ঘরে বসে কাৎরায়
গতরে নাই উম
জনতা পুড়ে করে
উৎসব ধুম ।
এই আছি বেশ আছি
গণতন্ত্রের দেশে
পোড়াপুড়ি ভাংচুর
করি ভালোবেসে ।
(৯)
মৃত্যু ।
আমাকে ফিরে যেতে বলোনা
সে পথ বন্ধ হয়েছে জেনো।
অবিরাম সন্মুখে যাবো আমি।
যতক্ষন না তোমাকে ছুঁতে পাবো।

যেতে যেতে
যেতে যেতে
যেতে যেতে
একদিন আমি, তুমি হয়ে যাবো।
(১০)
অভিজিৎ
বিশ্বাস করো অভিজিৎ
ওরা মানুষ ছিলনা
যারা হাত ঘরির সাথে মিলিয়ে
তোমার মৃত্যু যন্ত্রনায়
ইলিশের তিন লাফ গুনছিলো
তারা ছিল শিখণ্ডী শূয়র ।

পথ নাটকের দৃশ্য ভেবে
যারা অপেক্ষায় উদগ্রীব
উৎকৃষ্ট অধম ছিলো তারাও।
না, অভিজিৎ না
ওরা মানুষ ছিলো না।
মৃত্যু- ইতিহাস হলে মোছা যায় না
এখন অভিধানে, অভিজিৎ মানে ইতিহাস।
কি করে মুছবে তোমাকে ?
তুমি জেনে যাও অভিজিৎ
ওরা মানুষ ছিলনা কখনো ।
অথচ কি আশ্চর্য দেখো
নির্জন পথের বৈরিতায়
যে কোন নাফিদা হোঁচট খেলেই
গোপন কামের স্পর্শ প্রতিযোগিতায়
সোল, ষাঠ মমতায় একাকার !
আল্লাহর কসম, অভিজিৎ
ওরা মানুষ ছিলোনা কোনদিন ।
(১১)
অপেক্ষা করিম ।
আর কতো , পুরনো ভাঙ্গা হ্যারিকেন সলতে হবো !
দুর্গন্ধময় বিজল পড়া কেরোসিন দাহ্য প্রাণে হবো
আনন্দ ফানুস !
আর কতো কতো সার্কাস ক্লাউন
এচিয়ে পেঁচিয়ে কাদা মাটি কেঁচো হবো !
যাত্রার প্রিন্সেস, আগুনের মঞ্চে নেচে
তাহাদের আনন্দ উৎস হবো !
কতো
কতো
অভিজিৎ, হুমায়ূন আজাদ
অবাক দৃশ্য নিয়ে ফিরে যাবো
অপুর্ণ আকাঙ্ক্ষা !
কতো কাল
কতো কাল
মুক্তির পরীক্ষা দেবো
সোল কোটি অপেক্ষা করিম !
(১২)
রল অংক ।
বুকের ফয়েলে যতো বাঁক ছিলো
যতো উষ্ণতা ছিলো ভাঁজে ভাঁজে
ভয়ের ভালুক বন ছাড়ার আগে
উদ্ববাস্ত হলো মনবাড়ী ফেলে !

মাখন মুখে তাজা অমায়িক পাপ
সেও এক রাজকীয় অভিশাপ !
খল ছল তির তির কামে ঘামে
এতোটুকু মানুষে কতোটুকু মাটি !
প্রৌর বর্ষায় শাপের সাঁতার
ঢেউ তোলে বিশ্বাসের জমানো জলে !
স্নেহ প্রীতি ভালবাসার দায়ভার ভুলে
তুলে দেয় সীমান্ত কাঁটা তার !
শুধু ভুলে যাও তুমি
সঠিক হিসাব রাখে ভোরের শালিক ।
(১৩)
বয়সি গাছের ছায়া ছেড়ে রৌদ্র মাখো উড়াল ডানায় ।
প্রখর আদরে খসে গেলে দু'চার পালক
ফিরে এসো ছায়া তলে
ফিরে এসো
ফিরে এসো
পুরানো ডেরায় ।

(১৪)
সরল অংক গড়ল জীবন ।
এক ভাগ সুখ
তিন ভাগ দুঃখ মানুষ
কার পিছে লেগে থাকো দিন রাত
কাকে ভাঙো মনে মনে দাঁত কেটে
যেভাবে ভাঙ্গন নেয় লোকালয় ঘুম
কার ভাতে ছাই দিতে রাত জেগে
দলে দলে সোমরসে ভরে রাখো
শিশ্নের হাঁড়ি ।

শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কোন পণে
বেধে রাখো অমায়িক আঙ্গুলের কোণ
কি করো একা একা স্নান ঘরে
কার সুরে গুন গুন মাতোয়ারা
ঘসে মেজে বক্ষচুড়া
কৃষ্ণ গড়ো
কৃষ্ণ ভাঙ্গো
মাঝ রাতে রাধা তুমি
কোন বাঁশী ফেলে রেখে
কার বাঁশী ধরো ।
পশু নয়
জন্তু নয়
ফুল
পাখী
লতা
পাতা
কিছু নয়
সরল অংক গড়ল জীবন
মানুষ লেগে আছো মানুষের পিছে ।
(১৫)
পরকিয়া ।
ব্যস্ত সময় ঘর খোঁজে না ,
বন্ধু , স্বজন মন বোঝে না ।
বাও তুফানের ভাও বোঝে না ,
মাটির ভান্ডে দুধের সর
যত্নে তোলা সিকার উপর
নিজের মানুষ ঘরের ভিতর
হুলো বিড়াল শুঁকলো গতর
শীতল জলে স্নানের প্রহর
নিভিয়ে দিলো ; পুড়িয়ে দিয়ে
প্রেমের নগর ।
ব্যস্ত সময়
ব্যস্ত সময়
তোমার কিগো কাজ সরে না ।
ঘরে ফেরার হয় না সময় ?
ব্যস্ত সময়
ব্যস্ত সময় ।

(১৬)
অবৈধ ।
বেশ কিছুদুর দৌড়ে গেলাম ।
আর কিছুটা জোর কদমে ।
তারপর
আস্তে
আস্তে
এক
পা
দুই
পা
হাটা।
নির্বাক চেয়ে দেখি
নিজেকে রক্ষার
অপেক্ষা না করে
কৌশলী রাতের কাছে
খুলে দিলে বুকের কাপড় !

তবে কি...........
তুমিও বীর্যবতী পরের মায়ায় !
(১৭)
নির্জনে একাকী সুন্দর তুমি
কার অপেক্ষ্যায় সুস্থির
ছুঁয়ে, বসে, পিড়ে বাধা
মাটির শরীর ।
বুঝি ভাংগা ঘর অপেক্ষায় আছো
গৃহকর্তা ফিরে এলে ব্যান্ডেজ হবে
বাজ পড়া টিনের চালে । হবে
সুন্দর আবাদ ।
সুন্দর, সুন্দর, তুমি কি জানো
তুমি কতো সুন্দর !
(১৮)
ভুলেই গেছো দেশের কথা
বিক্রি করে কোটি মাথা
খাচ্ছো বেশ আয়েশে ।
ষোল কোটির গায়ের ঘাম
পোড় খাওয়া শুকনো চাম
খাচ্ছো চেটে দুধেল পায়েশে ।

ভুলেই গেছো আম জনতা
ক্ষেপে গেলে করবে যা তা
দড়ি ধরে হঠাৎ টানে
প্রতিবাদের কোরাস গানে
সব সুদ্ধ বেধে ছেদে
ঝুলিয়ে দেবে মাথা ।
ভুলেই গেছো দেশের কথা !
(১৯)
ছেলে গুলো
একটু শুধু
দুষ্টু ছিলো
হঠাৎ যখন সুজোগ পেলো
হাতিয়ে দিলো
ভিড়ের ভিতর
জোয়ান গতর ।

এই টুকুতেই
এত্তো কথা !
লক্ষ টাকা দাম ধরেছো
ওদের মাথা !
তোমরা বাপু পারো মাইরি
নাম গুনে ভরছো ডাইরি ।
এমন যোগ্য হবার
সুজোগ কি আর
পাবে ওরা ফি বছর ?
হাতিয়ে দিতে
জোয়ান গতর ।
বাসায় কি আর, বোন অথবা মায়ের গায়
তোমরাই বলো, হাত দেয়া যায় ?
ওরা কি আর ততো বাজে
এমন কাজ কি ওদের সাজে ?
বোঝে শুধু আই জি পি সাব
খাপে খাপে আম্বিয়ার বাপ ।
মজায় মজায়
একটু না হয়
হাতিয়ে দিলো
জোয়ান গতর ।
আম জনতা
তোমরা কেন তা বোঝনা
ওরাই দেশের সোনার ছেলে
ওদের নিয়ে
আর বলোনা
আর বলোনা
(২০)
বাতাস কি বলেনি, ফিরবো না আর
ছোঁবে না দুই পা আংগিনা তোমার
সারারাত জ্যোৎস্না জোনাকির ভীর
সব স্মৃতি ছুঁয়ে যাবে তোমার শরীর
দাতের কোনায় ছিড়ে শাড়ির আচল
কান্নায় মুছে যাবে চোখের কাজল ।
ফিরবোনা ফিরবোনা আমি কোনদিন
যাবর কেটে যাও যা ছিলো রংগিন ।
(২১)
প্রিয়তমা পুর্ণিমা,
তোমাকে বিবসনা পেয়ে যাই কাপ্তাই রাতে ।
বাথটব লেকে,
রুপালী তরল জল, স্বর্গ সুখ তাতে ।
আসছি তমা আগামি জুনের প্রভাতে
আমারও চাঁদ আছে, জ্যোৎস্না আছে সাথে ।
মাঝ রাতে বিলাবো তাহার আলো
তুমি ও তার বুকে, সকল ভালো ।
প্রিয়তমা, প্রিয়তমা, প্রিয়তমা চাঁদ
বুকে তুলে খুলে দিও আলোর প্রাসাদ ।
(২২)
সিল্কের ওড়না ঘন কুয়াশার মতো
ঢেকে রাখে যুগল পাহাড় ।
পর্বতারোহী চুড়া নির্ণয় ভুলে যায় ।
গভীরে গন্তব্য জেনে স্বেচ্ছায়
পিছলে পড়ে খাদে ।
এখানে পৃথিবী তার
বৃন্তে বেধেছে ঘর ।
আরোহী ছাড়া থাকে আরো কিছু স্বার্থপর !
(২৩)
বিনয়ের বিনীত জীবন উচ্ছৃঙ্খলতা ছোয়নি
উদ্ধত দাড়ায়নি দুয়ারে ।
শহড়ের দাঁড়কাক শত শত কোকিলের সুরে
গেয়ে গেলো শুধু গান ।
শুনেছি , কোরাসের পরিচালক
জাতীয় পুরস্কার পাবে এ বছর !
(২৪)
নদীটির নাম জানা হয়নি কখনো
হতে পারে পানহাটা, মালশাভাংগা
নদীটি ডুবে গেছে নদীর গভীরে ।
সেই নদী অভিমান তোমার ভিতরে ।
তুমি মানে, হ্যা, তুমি মানে বেদনা সরকার ।
তুমি মানেই তুমি , এক কেজি অহংকার ।
(২৫)
খেলবোনা ওব্বু , হাত তুলে দাঁড়ালে
জানলেনা অভিমানে কি তুমি হারালে
আমিও ছাড়বোনা ফের কোন চাল
এভাবেই পুড়ে থাকে, পোড়ার কপাল ।
ভুল দান খেলেও ফির দানে খেলা যায়
হেরে যাওয়া খেলাও ধৈর্যে জেতা যায় ।
কৌশলে খেলা নয় ;খেলা , স্কিলে খেলো
প্রতিভার ডানাজোড়া আকাশেতে মেলো ।
গোপনে যে সুন্দর, বুকে বেধে রেখেছো
কখনো কি তুমি তার ওজনটা মেপেছো
কোন কালি দিয়ে তারে মুছে দিতে চাও
এখনো অমুল্য জেনো, প্রতিভার ভাও ।
(২৬)
ধরা যাক
কাপ্তাই ছড়ানো সবুজ
বারো হাত শাড়ির আচল ।
আমি বনে পলাতক পাখি
খুনশুটি, মাখামাখি
আরো কতো কি !

আরো ধরি
কাপ্তাই নীলজল
সারা দেহ টলমল ।
আমি তাতে সরপুঁটি
সরাত সরাত কাটি
অবাধ সাঁতার !
ধরে নেই
কাপ্তাই সুর্যটা
কপালের লাল টিপ ।
এবার মিলাও সখি
আমিতো তোমাতে দেখি
আমার সব শেষ !
(২৬)
কাকের উড়াল বিষ্ঠা ছুঁয়ে যায় তোমার
কামিজ ।
কতো অনায়াসে পিঁপড়েরা হেটে যায় শরীর
ভুগোল ।
তুমি মায়াবতী নিশ্চুপ, বুকে বাধো প্রেমের
তাবিজ ।
শুধু আমি একটু ছুঁতে চাইলেই বাধাও
গন্ডগোল ।

(২৭)
এখন আমি তোমার জন্য রাত জাগিনা
আর করিনা ঘুমের সাথে ঝগড়া বিবাদ
খাতার পাতায় আকি বুকি আর করিনা
জেগে জেগে বুকের মধ্যে কস্ট আবাদ
এখন ঘুম পেলেই ঘুমিয়ে পড়ি কুম্ভকর্ণ
কষ্ট বৃক্ষ বুকের মধ্যে বাড়ছিল বেশ
স্মৃতির পাতা এখন আমার খুব বিবর্ণ
সাথে ছিলো ডাবল বোনাস কথার শ্লেষ
এখন নাকি জেগে থাকা তোমার স্বভাব
এখন নাকি রাতের সাথে ঘুম আসেনা
এখন তুমি বুঝতে পাবে আমার অভাব
দশ জীবনেও তুমি আমায় আর পাবেনা
(২৮)
আমি তোমায় ডাকি সারাবেলা
পাচ বেলাতেও তাই
বুকের মধ্যে তুমি আছো
অন্য কেহ নাই ।
রক্ত অনু তোমায় ডাকে
নিশ্বাসে নিশ্বাসে
তোমার ধ্যানে , জ্ঞ্যানে-গুনে
অপাপ বিশ্বাসে ।
আমি সবুজ আছি, সবুজ রেখো
বন, বনানীর মতো
বুকের মধ্যে একে দিয়ো
তোমার নাম শতো ।
(২৯)
খুচড়ো পয়সার মতো দিনের শেষ টুকু
সাথে নিয়ে মাওয়া ফেরি ঘাটে থামি ।
প্রান্ত বেলার ইলিশ ঘিরে উপচে পড়া
প্রাডো ভিড়ে আমাদের চোখ সরেনা ।
অন্ধের গান উষ্ণ বাদাম আম কলা পান
ঝাল মুড়ি ফেরিওয়ালা বাহারি আওয়াজে
সরগরম চির চেনা বহু ভাংগা মাওয়া ঘাটে
ফেরির তলপেট চিড়ে নামে মানুষের ঢল ।
আমাদের সন্মিলিত পুর্ণিমা আয়োজন
পদ্মা জলের রুপালী ডাইনিং এ আজ
বাসমতি মেহরিন-সুবাস তোমাকে মনে
করিয়ে দেবে । তুমি এলে জমে যেতো
এই রাত, এই চাঁদ, আলো আলো খেলা।
আকাশের জামা থেকে তারার বোতাম
একে একে গেথে দিলে তোমার কামিজে
তুমি হয়ে যেতে সফল প্রেমের উপমা ।
(৩০)
আর কতো ঝাঁকাবে
বোটা ছিঁড়ে পড়ে যাবে দেহের গোলাপ
এর চেয়ে বেশী হলে
শুরু হবে, জেনে রেখো পাগল প্রলাপ ।
পারবে না পারবে না
তুমি কভু, ছিঁড়ে নিতে, দেহ থেকে মন
তার কাছে চলে যাবো
বসে আছে চুপচাপ মন মহাজন ।
(৩১)
পাটের আশের মতো সোনার শরীর
একে একে খুলে যায় যতটা তোমার
চোখের তারায় কাপে কাম তিরতির
এখানে নির্জন চুপ, সাঁঝের আধার ।
প্রহরীর চোখ, ছুঁয়ে গেলে কামের গরম
প্রজাপতি উড়ে যায় বাতাস ভেলায়
আংগুরের উষ্ণতা দাও, মমতা পরম
লোক লাজ ভয় ভুলে এই অবেলায় !
সাতক্ষিরা হেটে যায় চন্দ্রিমা উদ্যান
প্রেমের কাহনে ফ্যালো মিহি শব্দজাল
জোয়ান গতর দেখো, সাদা ত্বক টান
কামের কুয়ায় মরো জাতের মাতাল ।
এক বোকা, প্রেম খেলে জীবন বাজিতে
এক রাতে গিলে ফেলে এক গ্লাশ ঘৃনা
সরল মনের দাম পারো কিগো দিতে
তুমিতো প্রেমের মান আসলে জানোনা ।
কতো কথা কতো নীতি কতো অভিনয়
পাকা মিথ্যা বোল চালে এন্টিবায়োটিক
সব কথা ঝুলে পড়ে, উভয় নির্ভয়
কাম নাম সত্য আজ বাকিটা বেঠিক ।
(৩২)
আপনার এক আংগুলের নির্দেশ ।
জন্মেছে এই দেশ । প্রিয় বাংলাদেশ ।
আপনিই নির্মাতা ।
হে পিতা,
জাতির পিতা ।

আপনার অভাব যাবেনা কখনো
আমি কাদি, আমরা কাদি এখনো ।
(৩৩)
সাত বছর ছয় মাস মানে
দুই হাজার সাত শত পঁয়ত্রিশ দিন ।
পঁয়ষট্টি হাজার ছয় শত চল্লিশ ঘন্টা ।
উনচল্লিশ লক্ষ আটত্রিশ হাজার চারশো মিনিট।
তেইশ কোটি তেষট্টি লক্ষ চার হাজার সেকেন্ড ।
আরো কতো ন্যানো-পিকো, তার'চে বেশী
পুড়ে মরে ঘুমিয়েছি নিজের ভিতর ।
চাইনি শীতল জল বরফ সাগর ।
কখনো খুলিনি দার বাঘের খাঁচার ।
নিজের শত্রু নিজে
যুদ্ধ করেছি আগুনের মাঠে ।
দাউ দাউ পুড়ে পুড়ে কয়লার খনি ।
থরে থরে রেখেছি ধরে হিরকের দ্যুতি।
সোনার গোলক হয়ে ছুঁইনিকো অনামিকা তার
যে ছিলো আমার । কেবলই আমার ।
কতো শতো তাজা লাশ, উষ্ণ নিশ্বাস
পাশ কেটে চলে গেছি সন্মুখে ।
বিজয় পতাকা পুতে ফিরে গেছি সফল নায়ক । আগুনে পুড়েছি, আগুনে মরেছি
আগুনে করে গেছি রিপুর সিয়াম ।
কারা যেনো সারারাত মধুজল পান করে
দিয়ে গেছে চিরতার কষ ।
আবাদের ভাষা ভুলে,
খেতের আল তুলে
ভুল চাষে চিটা ফেলে
চলে গেছে ফসলের গায় ।
নিজ দোষে ভুগিনি , আমাকে ভোগায় ।
(৩৪)
আবারো জমেছে খেলা
দাতা হোতা গুরু চেলা
যে যার মতো করে খেলছে ।
হাতে হাতে দিনে রাতে
দিয়ে নিয়ে পাতে পাতে
ওরা মন্ডা মিঠাই সব গিলছে ।

জনতা আমের আটি
চুসে চুসে দাত পাটি
অকালেই ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে ।
আম , কলা দুধ বাটি
আরো যতো আছে খাটি
দাতা হোতা খেয়ে মোটা হচ্ছে ।
জনতা সুধির ভাই
ভোট ছাড়া দাম নাই
তার কথা এতো কেনো ভাববে ।
ওরাই দেশের মাথা
দাতা হোতা বিক্রেতা
ভোট এলে ফের কাছে ডাকবে ।
(৩৫)
ভদ্রতার সুতি কাপড় ছিঁড়ে আমাদের
নগ্নতা বেরিয়ে এলে , প্রকৃত নগ্নগন
লজ্জায় মুখ ঢাকে কাদা জলে নেমে ।
মরনের ভয় গোড়া থেকে টেনে তুলে
শিকড় সমেত , রাতের সৃগাল লাজ মুখে
একাকী পথ হাটে দিনের আলোয় ।

সুর্যের তন্দুর কভু পোড়েনি বনানী ।
নগরায়ন সবুজ আবাস
খেয়েছে চিবিয়ে ।
চেতনারা ক্রাচে ভর করে
নিয়তির সার্কাস খেলে
দড়ির উপর ।
আমাদের স্বভাব যাবেনা মরিলে ।
(৩৬)
বানের জলে অনাত্মীয় টিসুর মতো
টুকরো টুকরো হয়ে দিগ্বিদিক
ভেসে যায় গনতন্ত্র ।
মুখ ও মুখোশের যুগে
বেশ আছি নির্বাক
উৎসবে উৎসবে
ক্লান্তিহীন আনন্দে ।

জয় হউক রাজন্যের ।
জয় হউক ঢোলকের ।
(৩৭)
বাবা, আমি তোমার অস্টম শুকরানুর বিস্ফারণ
বড় হয়ে তোমার লাঠি হতে চেয়েছিলাম ।
যার উপর ভর করে তোমার সুখ চলা
আরো দীর্ঘ হতে পারতো, কিন্তু তার
আগেই তুমি.........
শোন বাবা, আজ বিশ্ব বাবা দিবস ।
তোমাদের সময় এই দিবসের
বালাই ছিলোনা ।
তোমরা তোমাদের বাবার সাথেই থাকতে ।
আমরা যারা বাবা হয়েছি, আমাদের আশ্রয়
বৃদ্ধাশ্রম ।
কিছুই দেইনি তোমাকে, নিয়েছি শুধু ,
এখনো চাইছি । ওপারে বসে দোয়া করো
বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার আগেই যেনো তোমার
কাছে তোমার মতো করে আসতে পারি ।
জান্নাতি সুখে সুখি থেকো বাবা ।

(৩৮)
হাটতে হাটতে ভিজছিলাম
অথবা
ভিজতে ভিজতে হাটছিলাম
কিংবা
হাটছিলাম আর ভিজছিলাম
নয়তো
ভিজছিলাম আর হাটছিলাম
বিভিন্ন ছলে
আমি তোমাকেই ভাবছিলাম ।

(৩৯)
সারাটা সকাল আকাশ উপুর বৃষ্টি ঢেলে
তানসেন মেঘমল্লারে বুঁদ ।
রংধনু বিকেল ময়ুর পেখমে
নেচে গেলে আমাদের উঠোন
গোধূলি অনুঢ়া হাত পা ছুঁড়ে
আঁকিবুঁকি দেয় স্মৃতির আকাশে ।
এ শহরে রাত আসে রাত নামে
তোমায় ভিজিয়ে ।

(৪০)
বৃস্টির হাত ধরে কতো যে
ভিজেছি বৃস্টির জলে
বৃস্টিরে,তোরে খুব মনে পড়ে
কেনো গেলি অকালে !

(৪১) 
বৃস্টির পিতা বাজ এর আওয়াজে দেয় ডাক
আহ ! থামাও কান্না তোমার !
মেয়েটা আমার ভিজে ভিজে
জ্বর বাধাবে গায় !
আকাশ ছিছ কাঁদুনি ঝির ঝির ঝরে যায় ।
বৃস্টি, আহা, বৃস্টিতে ভিজে
জ্বরে পড়ে কাতরায় ।

(৪২)
বৃস্টিরে তুই কোন গেরামে থাহস ?
ইচ্ছা অইলেই যহন তহন আহস !
তর পাড়ায় কি জুয়ান কেউই নাই ?
যার প্রেমে তুই অন্ধ হইতে পারস ।
(৪৩)
ধার করা গল্পটি কি অবলিলায় নিজের নামে ঝেড়ে দিলে !
কিছুই তোমার নেই ! কিচ্ছু না ! কোথায় দাঁড়াবে
তুমি ?
কার পায়ে ভর করে এইভাবে নির্ভার হেটে যাও এই পথে ?
যতটুকু জানি এ শহরে বোকাদের হাট বসেনি কোন কালে ।
(৪৪)
অপেক্ষায় ছিলাম, উপেক্ষা দিলে !
(৪৫)
প্রশংসা মুখর ভির ঠেলে খুব কষ্টে শিস্টে
তিনি সামনে এসে দাঁড়ালেন।
মুখ তার মেঘে ঢাকা ম্লান চাঁদ।
খুব যেন কস্ট হচ্ছে সুনাম শুনে ।
এভাবে চলতে থাকলে....!

তরুন কবি বিখ্যাত হাওয়ার আশংকায় তিনি
নিরব প্রতিবাদে মঞ্চ ছেড়ে গেলেন ।
নবীনেরা দিয়ে যায় , প্রবীণ পারেনা নিতে ।
(৪৬)
পরিচয় পর্বে একজন জাপানিজ
হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের নাম বললেন...
"মোরিও সুমি মুতো"
আমি শুনলাম, মরিও সময় মতো !
দ্বিতীয় জন, "টাকিহোনা মুটে হাসি "
কানে বাজলো, তাকিও না মুতে আসি !
জীবনের জমানো সমস্ত হাসি সুনামির মতো
বেরিয়ে এলো এক সাথে ।
সিদ্ধান্তে এলাম , যত দ্রুত সম্ভব একজন ই,এন,টি স্পেশালিষ্ট এর দরোজা খুঁজতে হবে ।
(৪৭)
উত্তোরাধিকার ।
শতরঞ্চিটি দাদা ব্যবহার করতেন।
বাবাকে দিয়ে বলেছিলেন নে, তোর
ছেলেকে দিস, আমার বয়সে এলে ।
তিন পুরুষের উত্তোরাধিকার আমার
ঘরে তিরিশ বছর ।
এ খাঠ ও খাট , এ বাড়ী ও বাড়ী করে
আলমিরা জীবনে বুকউপুর শুয়ে আছে
কান পেতে শুনবে কখন মেঘের আওয়াজ ।
এখন, তার প্রতীক্ষার প্রহর গোনে
ইঁদুরের মেথিদানা দাত
আড়শোলা ক্ষোভ ।
কিছুতেই পারেনা খেতে কেটে কুটে
বংশের ধার । বছরে একবার তার ঘ্রান
পায় পতংগের দল, কাঠের ঘর ফেলে
বের হলে রোদের ক্ষুধায় ।
বড় যত্নে তারে রেখেছি ধরে , সে আমার
তিন পুরুষের স্মৃতি।
সময় ঘুরেছে আবার ।
কার হাতে দিয়ে যাবো বহনের ভার ?
বড়, মেজো, সেজো
কে হবে উত্তোরাধিকার ?
পুত্র নয় , পেয়েছি দেড় জোড়া হিরার খনি
তিন কন্যা আমার ।
(৪৮)
ওদের কেউ কেউ ছাপাখানা খুলেছে
কেউ গেছে ক্যামেরার পিছনে ।
বস্তা বস্তা কালো টাকার মতো,ওরা
মন ভর্তি অন্ধকারে হামাগুড়ি খায় ।
অবশিষ্টরা উচ্ছিষ্ট শিখণ্ডী , নোংড়া ভঙ্গিতে
এর মলে ওর মুত্রজল ঢেলে দুর্গন্ধের চিত্র
আঁকে মানবিক দেয়ালে ।
প্রথম ও শেষ আঁধার ছাড়া
এখানে দৈনিক আলো নেই ।
ওরা ভাবনার পঙ্গুত্ব আমদানি করে
আমাদের জামদানী জীবনের দরে ।
(৪৯)
মানুষের রক্তে এখন মিরিন্ডার স্বাদ
বুকচাপ গরমের সুপেয় পানিয় ।
কামরুল কামের সুত্র জানে
কামশাস্ত্র মতে ।
রাজনের সত্য বাচে মৃত্যুর ক্ষতে
আর আমাদের অক্ষমতায় ।

কাকেদের চেঁচামেচি নেই ।
ডানার বাহার নেই আকাশের মেঘে ।
শকুনের উল্লাস নেই ঠোটের চামচে ।
হায়েনার থাবা লজ্জবতি পাতার মতো
গুটিয়েছে মানে মানে ।
কামরুলের হিংস্রতা
এই সব পশু পাখী জানে
আর জেনে গেছে আমাদের রাজন ।
(৫০)
হারিয়েছি প্রথম কলম
হারিয়ে ফেলেছি ধারাপাত
হারিয়েছি ঈদের জামা
কান্নায় ভাসিয়েছি রাত ।
হারিয়েছি দল বেধে চাঁদ দেখা সাঁঝ
দলে দলে জলঝাপ মিষ্টি আওয়াজ ।
হারিয়েছি হাতপাখা শীতল চাটাই
হাতে মুখে মাখামাখি হাওয়াই মিঠাই ।
লেবেনচুষের মজা হারিয়ে ফেলেছি
শিশুকাল বেসামাল আনন্দে মেতেছি ।
দুর গ্রামে হেটে যাওয়া ঈদের জামাত
বুকে আজ নেই সেই সুখের প্রপাত ।
সব ঘর সকলের, বাধা নেই যেতে
সারাদিন কাটিয়েছি উৎসবে মেতে
মায়ের আঁচলে মোছা শিশুর কপাল ।
আহ, আবার পেতাম যদি শৈশবকাল ।
এখনকার ঈদ মানে বুক ভরা শৈশব স্মৃতি ।
(৫১)
সন্দেহের বাবা জর্দা মুখে পুরে
অন্তর্জ্বালা বাড়ালে
সম্পর্কের মাড়িতে দুরারোগ্য
ক্যান্সার বাসা বাঁধে
দ্রুত লয়ে ক্ষয়ে যায় বিশ্বাসের আয়ু ।
টিকটিকি লেজ খসিয়ে
দৌড়ে বাচায় নিজের জীবন
বিবাগী ইঁদুর চেটে খায়
স্বভাবের গোপন প্রশাদ
জার্মানি ককরোচ বিরক্তির
আমৃত্যু ভরসা দেয় বাতি নেভালেই ।
সকলেই টিকে থাকে যে যার যায়গায়
বিপদে শাপে ও বেঁজিতে সখ্যতা হয়
একই খাদে পড়ে ।
সন্দেহ , দুরারোগ্য ।
সংসার যায়না তার সাথে ।
(৫২)
মুখোশের বাহিরে কোন মুখ নেই , পরিচিত
সব মুখ একে একে দেখা হয়ে গেলে
নিজেক লুকিয়ে ফেলি মুখোশের আড়ালে ।
এইবার খুঁজে দেখো
কোথায় রেখেছি মুখ
কোন আদলে ।
কাকে তুমি পাবে খুঁজে
প্রকাশ্যে হারালে ।

পিতার মুখোশে আমি, কতোটুকু পিতা
কতোটুকু ভাই, বন্ধু, কতোটুকু স্বামী
কতোটা প্রেমিক, কতো পথ পার হলে ।
কি করে বোঝাবো কাকে
কতোটা আড়াল থেকে
চেনা মুখ চেনা ভিরে
কতোটা অচেনা হয়
ক'জনার কাছে ।
নিজেকে নিজের কাছে কি করে আড়াল নেবো
মুখোশের ওপারে মুখ,শত শত বাঁচে,কেউ নয়
শুধু আমি জানি, কোন মুখ সত্য ধরে আছে ।
(৫৩)
দিচ্ছি নিচ্ছি সমান সমান
রাগে কিংবা অনুরাগে
তবু কেনো অতৃপ্তিটা
দৌড়ে থাকে সবার আগে !
অসন্তুষ্টি ঘুমের কাছিম
পড়ে থাকে বুক বিছিয়ে
সুখি খরগোস দ্রুত ভাগে
থাকেনা না সে ঘর গুছিয়ে ।
আমার এমন কেনো হচ্ছে বল
তোমায় পেয়ে নিমপাতা স্বাদ
চিরতার সকল তিতা
গদ্যে পদ্যে হচ্ছে আবাদ ।
ভালোবাসার সেফটিপিনটা
গাঁথতে গেলে বুক পকেটে
জোড়া লেগেই খুলে যাচ্ছে
থাকেনা তা খুব নিকটে ।
আমার এমন কেনো হচ্ছে
আমার কেনো এমন হচ্ছে
ভেতর বাড়ী প্রেমিক মানুষ
হাত পা ছুঁড়ে মরছে ।
(৫৪)
তেলের গাদে পিছলে যাওয়া হ্যারিকেনের
সলতে হয়ে আটকে আছি চাবির কাটায় ।
না উঠছে ভাগ্য ফিতা না নামছে নিচে ।
সুখের ঠিকানা হাতে বিছানা খোঁজার
তির তির আলো, থরো থরো কেঁপে
নিভে যায় , দমকা হাওয়ার
অবৈধ দাপটে !

আপনারা মহামান্য । ক্ষমতার বিমানে চড়ে
মমতার ছিটে ফোটা ছড়িয়ে দিলে
আমরা পেয়ে যাই অক্কা পাওয়ার
ঝুকি মুক্ত গ্যারান্টি ।
এ ছাড়া আমের খুব বেশী কিছু
চাওয়ার আছে বলুন ?
আটিটুকু ছাড়া !
তিনবেলা মুখ বুজে চুপ থাকা
আর ক্ষুধা পেলে ঘরি ধরে
গুম খাওয়া। দলে বিদলে মিলে
আপনারা যেই ত্যাগে মহিয়ান
আমরা সতেরো কোটি তাহাই
এক ঐক্যে, এক বাক্যে
স্বরন রাখি কৃতজ্ঞ মরনে !
(৫৫)
অনুপমা চৌধুরী ।
বাড়িয়ে দেয়া ভিজিটিং কার্ডটি
নারকেল শ্বাসের মতো
নরম ঠোটে চেপে ধরে
নিজের খানা বের করে দিলেন
ভ্যানিটি খুঁজে ।

অনুপমা চৌধুরী ।
হার্ভাড ফেলো ।
ভাষা গবেষক ।
আমি চোখের ভাষা ব্যস্ত লুকাই ।
এমন নজরকাবু স্নিগ্ধ গোলাপ
আমি আর হাটতে দেখিনি ।
আমি স্তব্ধ ডুবে যাই ।
তিরিশোর্ধ সেগুনসুন্দরী বাটিমধু মুখে
ঢেলে, পশ্চাতপ্রদেশে ঝিরি বাতাসের
ঢেউ তুলে চলে গেলেন
আবার দেখা হবে বলে ।
আমি তার গমন পথে মুগ্ধ তাকিয়ে থাকি !
আমি তার গমন পথে উড়াল পাখি দেখি !
আমি তার গমন পথে স্বপ্নমগ্ন থাকি !
আমি তার গমন পথে দীর্ঘশ্বাস রাখি !
(৫৬)
সুর্যাফিজ ।
মুস্তাফিজ,
তোমাকে তাবিজ করে
তরুণীরা গলায় ঝুলিয়েছে
তুমি জান কি ?

শিমুল তুলার মতো নরম
জোড়া টিলার মাঝখানে
দোল খাচ্ছা
টের পাচ্ছ কি ?
সুর্য হয়ে গেছো মুস্তাফিজ ।
তুমি সুর্যাফিজ ।
সুর্যাফিজকে
চিনতে পারছো কি ?
মেঘের দেয়াল ভেংগে
খুশীর আলো জ্বেলেছো ।
তুমি উৎসব তালি
শুনতে পাচ্ছো কি ?
মুস্তাফিজ

মুস্তাফিজ ।
(৫৭)
বদলে যাওয়ার গল্প দিয়ে
আমুল বদলে গেলেন!
অল্প অল্প গল্প বলে
অধীনকে বদলালেন!
শিকড় শুধ্য উপড়ে তুলে
শিখর নোয়ালেন!
বদলে বদলে কেমন করে
এমন বদলে গেলেন!

পরের গাছে ভরের ভার
পরগাছা হলেন !
সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাতে
মন মেজাজের হাড়ি, পাতে
পচা গুড়ের পায়েশ
তুলে দিলেন !
লোভের ঘরে
লাভের গুরে
কতো বড়
পাহাড় বানালেন ?
আমরা যদি বদলে যেতাম
৫২তে ভাষা পেতাম
কেমন করে ?
গল্প শুনে বদলে গেলে
স্বাধীনতা পেতাম কি আর
৭১ রে ?
তখনোতো ওরা ছিলো
এখন ওদের ফাসি হচ্ছে
গুনে গুনে ।
মেজর এলো
মেজর গেলো
এক জেনারেল
মেজর খেলো
৯০ কি আর
থেমে ছিলো
ঘরের কোণে ?
নতুন গল্প
হাতে নিয়ে
আপনি
এলেন
সদলবলে
গল্প বলতে
Digital এই
বৃন্দাবনে !
মীর নেই
জাফর নেই
রাধা কিংবা
কৃষ্ণ ও নেই
প্রেমের
এবং
ঠগের
সব দায়িত্ব
একাই
নিলেন !
বদলে যাওয়ার গল্প মেখে
এমন করে বদলে গেলেন !
(৫৮)
টিথোনাসের বিছানায় অমরত্বের অভিশাপ ।
যৌবনা ইয়োস বাঁচে প্রেমিকের কংকালে ।
আশি বছর গড় জীবনে ব্যাথার বয়স হাজার
সৌর বছর ।
ভালোবাসা একই পিঠে বয়সটা পায় কয়েক
ন্যানো সেকেন্ড ।

বহুল পাঠে চোখের জলে বানের স্রোত
যুগল মরনে।
রাজ্য তাগের গল্প মুখে ইতিহাসের বিজ্ঞ চড়ুই
বয়ানে চঞ্চল ।
রাধার ঘরে কৃষ্ণ সুর, কুল ভেংগে যায় মাঝ
দুপুর ।
এখন এন্ড্রয়েড প্রেম এক টাচে বদলে দেয় ব্যাকগ্রাউন্ড পিক ।
বিদ্ধস্ত ঝিনুক খোলা বাজারের মুল্য হাকে
গোপন ফেবুতে ।
গল্পের জংশন পার হলে বদলে যায় পথ
বগি ও সংগী ।
এ কালের প্রেম দেখে শাহজাহান মৃত নখ
দাতে কাটে স্বলাজ নয়নে ।
(৫৯)
জ্যান্ত তারকাটা হাতে নিয়ে
জেগে থাকে ফুলার রোড ।
নগরের সব কোণ ছেকে
যৌনতার মৌন মিছিলে
যোগ দেয় মাঝরাত।
ওরা ত্রিচক্রযান গুছিয়ে
বসে থাকে অপেক্ষায়
ফুটে ওঠে গাঁদাফুল
জোড়ায় জ্যোড়ায় ।

দুই একটা গোলাপ বকুল
জুঁই শিউলি ভির ঠেলে
উঠে এলে, দামি গাড়ী
সিট বেল্ট জুড়ে দিয়ে
চতুর শিকারি যায়
শিতাতপ ঘরে ।
বহু পথে বহু ঘরে
ঢুকে যায় নগরের
ভ্রাম্যমাণ গোস্তের বাজার ।
সোডিয়াম বাতি নিভে গেলে
বুক পেতে ঘুমায় ফুলার রোড ।
আমরা পেয়ে যাই নিম্ন মধ্যবিত্ত
আয়ের স্বীকৃতি !
(৬০)
গাছের পাখিরা উড়ে গেলে
ঝরে পড়ে দু একটা পাতা ।
অংকের পাখিরা চলে গেলে
পড়ে থাকে সাদা শুন্য খাতা ।
ফুলে ফলে পারিজাত
বেচে থাকে পুরাণে
সময় পার্শ্বব , কর্মকাঠ গুঁজে দেয়
বেহিসেবী জীবনের উনুনে ।
ভুলে ও সঠিকে, চকিত যাবো
নিজ ঘরে, হিম অন্ধকারে ।
স্বজনে সুজনে মুছে চোখ
বিড়বিড় বলে যাবে, হোক
স্বর্গবাসী হোক, তবু স্পস্ট
নয়, স্পস্ট বলবেনা কেউ !
ফিরপথে চারপায়া চার কাধে
কার দান চলে আসে কে জানে !
এ যাত্রা চিত্তির কোন পথে নয়
চুম্বকে চলছি সঠিক গন্তব্য জেনে ।
দরুদে সালামে সমবেত পায়ে
হেটে গেলে গেলে চল্লিশ কদম
খুলে যাবে হিজিবিজি টুটাফুটা
রংচটা হিসাবের খাতা ।
ছিটে ফোটা পাবো কিছু
হাতে নাতে, যথেস্ট নয় ।
জানি, জীবনের পাটিগণিত
আখেরের আগে মিলিবেনা।

( ৬১)
আবাদের ভাষা ।

তোর জন্যেই আল কেটে
ইলাস্টিকের মতো
আবাদি ভুমি
আরো কিছুটা
বৃদ্ধি করে নেয়া ।
মেঘ ভাংগা বৃষ্টি উর্বরতা দেবে ।
আসছে মৌসুমে ফসলের সোনালী দানায়
তুই রুপবতী হবি ।
কর্ষণের ঘামে ঝাক ঝাক পোনাদের
জন্ম কোরাসে উপচে যাবে তোর
গংগা যমুনা ।
মাতৃ আবাদে সবুজে লাল পদ্ম ফোটাবি
হতে পারে আমার আদলে কিংবা তোর ।
আবাদের ভাষা শিখেছিস
ফসলের গল্প হবে জম্পেস ।

(৬২)

যুগের পার্বতী শোন
দেবদাস কোন নায়কের নাম নয়
যুদ্ধে না গিয়ে যে মানে পরাজয়
তোমার নায়ক সে কি করে হয় ?
চুনিলাল, ঠিক তালে বেসামাল
ভুল তালে দেবদাস বদ্ধ মাতাল
সারারাত দেহ ভাংগা কারুকাজ
গুটি পায়ে উকি দেয় ক্লান্ত সকাল
সুরা সাকি সুরুরে যে
খোজে আশ্রয়
তোমার নায়ক সে
কি করে হয় ?
দেবতার দাস দেবু হয়নি কখনো
হয়নি পারুর সে খোলা আকাশ
মুখ ভরা দাড়ি আর মদ ভরা গ্লাশ
কি করে হয় সে প্রেমের ইতিহাস ?
সুরা সাকি সুরুরে যে
খোজে আশ্রয়
তোমার নায়ক সে
কি করে হয় ?
দেবদাস কোন নায়কের নাম নয় ।

(৬৩)
অকবি ধোলাই পর্ব ।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি আগুন ছিলেন
উপস্থিত সকলে পুড়ে কয়লা হবার আগেই
শব্দের খড়ি-কাঠ গুঁজে দিচ্ছিলেন ক্রোধের
উনুনে ।
শীতাতপ দুপুরে একদল শব্দ চাষীর সন্মুখে
তিনি সাহেবী পোশাকে দিগম্বর ছিলেন ।
তিনি এতোটাই উত্তেজিত ছিলেন আজ ।

কাব্য ভুমে ভাবনার চিটাবীজ ছড়িয়ে
তিনি চটি শব্দ ফেরি করেন আগাছার
বিরক্তিকর ল্যাপ্টানো স্বভাবে ।
বাকিরা শান্তির শীতল জলে দিব্বি মেতে
ছিলো গল্প সুখে । তিনি একাকী কংকাল
পড়ে ছিলেন উপেক্ষার ভাগাড়ে ।
একজন অকবির মৃত্যু হলে, কবিরা
শুশ্রূষায় সুশ্রী হন নিজস্ব স্বভাবে ।
তিনি বড় বেশী কুৎশিত ছিলেন আজ !

(৬৪)
শান্তির ভরাট হাড়িতে অশান্তির সাগু দানা
ঢেলে কাম জ্বরের পথ্য বানাও প্রবীণ মর্কট !
তোমাতে কি নিরাপদ বলে কিছু নেই !
বানপ্রস্থ নিলেনা, অগ্নিতাপে পুড়বে বলে !
পোড়ার কি বয়স আছে হাড়ে ?
যতটুকু পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া যায়
যতোটা ছাই হলে ঠাই পাওয়া যায়
উদাম বাতাসের গায় ।
তুমি তার কতোটা রেখেছো ধরে ।
অন্যকে পোড়াতে গিয়ে নিজেকে
পুড়িয়েছো অধিক ।
একদিন ডুবে যাবে নর্দমার জ্বলে ।


(৬৫)
প্রাণের ঢাকা ।

বৃষ্টির ধারাপাত মুখস্ত করে ঘুমিয়ে আছে রংপুর
ঘুমিয়ে আছে চঞ্চল ভৌমিক ।
রাত্রির কাজল ধোয়া সকালের জল
পায়ে মেখে আমি
আর মাহবুব লাভলু
উঠে যাই পর্যটন মোটেলে ।
ছেড়ে আসা ঢাকা বুক পকেটে মুখ লুকিয়ে
ঘুমিয়ে আছে হিসু দেয়া শিশুর মতো
জড়সড় ।
পৃথিবীর যেখানেই যাইনা কেনো
ঢাকা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়না আমার ।

(৬৬)
উদ্ভ্রান্ত ।
'ভুল' আমার মায়ের পেটের বড় ভাই ।
আমি তারে খুব ভালবাসি ।
হৃদয়ে বসে আছে সে ।
রক্তে মিশে গেছে সে ।
সে আছে মস্তিষ্কের কোষে কোষে ।

'সঠিক' বাবার দ্বিতীয় ঘরের কানা ছেলে ।
আমাকে চোখ রাঙ্গায় !
এটা ঠিক নয় ।
ওটা উচিৎ নয় ।
বড় বেশী মাস্টারি করে !
আমি কাকে বেছে নেবো ?
কারে দেবো নমিনেশন ?
কার হাতে তুলে দেবো আমাদের ভবিষ্যৎ ?


(৬৭)
গল্পটা যুদ্ধের ।
সকলে তন্ময় হয়ে শুনছিলাম
আধো অন্ধকার ঘরে ।
গুল্পটা ছিলো যুদ্ধের ।
তখন শত্রু পক্ষের ফিরে যাবার
সব পথ রুদ্ধ ।
মিত্রপক্ষ বিজয় উৎযাপনের
বেসামাল আনন্দ অপেক্ষ্যায়
এমন টান টান উত্তেজনায়
উপস্থিত সমবেত নি:শ্বাসে
থেমে গেছে স্থানিয় বাতাসের গুঞ্জন।
স্বেদ বিন্দু, হিরক দানার সৌন্দর্য হারিয়ে
এলোমেলো নেমে গেছে গৃহ ছেড়ে ।

আমারা কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম ।
আমাতে তাকালে তুমি অন্ধকারে
গল্পের ঘোড়া ডোবে সাগরের জলে ।
তুমি আমি ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ি
শুধু আছড়ে পড়ি আমাদের বুকে ।

(৬৮)
কৌশলের সকল কিতাব
পুড়ে গেছে তোর আগুনে ।
মানে অপমানে
বহু আয়োজনে
ভুলে যাবো
সরে যাবো
দূরে যাবো
ছেড়ে দেবো
ভেবে ভেবে
প্রতিজ্ঞার অশ্বথ,বৃদ্ধ হয়েছে দিনে দিনে ।

ভুলে গেছি কবে ,কোন কালে ঝুলে ছিলো তিতু
জীবনের সব তিতা দলা করে কাঁঠালের ডালে ।
ভুলে গেছি শত শ্লোক বহুকাল আগে ।
তোকে ভুলতে বাহান্ন তেপ্পান্ন লাগে !
এইবার ঠিক ঠিক ছেড়ে দেবো তোকে ।
ছাই মুখে ধোঁয়া হয়ে উড়ে যারে উড়ে ।
সিগারেট
সিগারেট
শিরোনাম হয়ে থাক পাঠকের হাতে ।
(৬৮)
 আমি তোমায় দেখি, আমার মতো করে
তুমি তোমায় দেখো, বারোবনিতার ঘরে
আমি জুই চামেলীর সুবাস পেতে
তোমার কাছে যাই।
তুমি পর পুরুষের বীর্য নিয়ে
করে যাচ্ছো সদাই।
তুমি এমন হলে কেমন করে আমি
মিথ্যেটাকেই ভেবে নেবো দামি ?
এই যে এতো পাশে থাকো, লেপ্টে সেপ্টে
ফল বাকলের মতো।
আমার সাথে থেকে তুমি ; এক সেকেন্ডও
আমার হলে নাতো !
প্রকাশ্যে কি আর সৎ হওয়া যায়
গোপনে পাপ ঢেকে।
মিষ্টি হাসি যতোই ছাড়ো
উচ্চ দামের প্রশাধনে থেখে ।
আমি না দেখেও চিনে নেবো তোমায়
আমার দু'চোখ বন্ধ রেখে।

(৬৯)
খুলে যাচ্ছে খুলি থেকে চুল
দেহ থেকে চামড়া।
পা সমেত খুলে যাচ্ছে।
চোখের গোলক থেকে কালো মনি।
হাড়, মাংশ, ধড় ,মাথা কানের পর্দা
ফেটে রক্তের স্রোত।
কোপে কোপে নামছে কাচা মাল
মগজের খাটাখাট।

সমবেত নপুংশকের দল
গোল টেবিলে উদবীগ্ন।
ক্যামেরার এংগেলটা
ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে
মাইক্রো ফোন ঠিক ঠাক ধরে
নিচ্ছে মুখের সামনে।
দেশের এমন কোপালগ্নে কি
বসে থাকা শোভা পায় !
বেয়াদব মেকাপম্যানটা কোথায় !
চুলটা, ভ্রুটা ঠিক মতো গুছিয়ে না দিলে
মুখের গোলাপী আভা
বিশ্বাস যোগ্যতার ভরষায়
দেবেনা গাঢ় স্বর।
ওরে......ম্যানেজার প্রোডাকশন
এক গ্লাশ জল দেতো বাপ।
প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ সময় চলে যায়
আমাদের মাঝরাত।
অনেক বলেছি শক্ত স্বরে।
বাকিরাতো মিন মিন শুধু
ন্যাড়া মাথা নেড়ে গেলো
ডানে বায়ে।
আমাকেতো এই রাতেই
একা যেতে হবে ঘরে।
চেকের অংকটা ঠিক ঠাক মতো
বসানো আছেতো ঘরে ?
(৭০)
থা ছিলো ততোটুকু দিয়ে যাবে নিজে
যতোটুকু কাচালংকা নিয়ে গেছে ভোরে
সুনীলীয় দু:খ বোধে সেও পারেনি তার
দেয় কথা ধরে রেখে, ঘুচাতে কথার দায়।
ভিটির মরিচ, পালানে নেই, খেতেও নেই।
রফতানিতে ভাওয়াইয়া গায় পাড়ের গায়েন
যদি বন্ধু খাবার চাও..........
বাবার জমি ভুইলে যাওরে........
বন্ধু কালের..............................
তিরিশ টাকার দর বেড়েছে তিনশতে তার
টিনের চালে চাল কুমড়ো, পুই পাতা নেই
আগের মতোন, খালে বিলে জলটুকু নেই
কৈ খৈল্যা, ঝাকি জালে পোলোর খোলে
ঝাকুনি নেই শৈল বোয়ালের।
শেখ সৈয়দ আর মিয়া বাড়ীর সকলে খায় নিত্য নতুন
আমদানিতে ফল ফলারির শত বছর পুরনো রস।
ব্যাক্তিগত উড়োজাহাজ উড়িয়ে আনে সোনার পরী।
হায় ভগবান, দ্বীনের দয়াল, পাক রাহমান আমরা শুধু
খেতে গেলেই খুলে দিচ্ছি শাড়ীর গিট, যোনির কপাট !
(৭১)
ঞ্জিওগ্রাম।
আজ সকালে হৃদয় বাড়ি হানা দেবো সদল বলে
বৈধ সকল অস্ত্র সস্ত্র সংগে নিয়ে ঝেটিয়ে দেবো ।
কোন ঘরের কোন কোনাতে বাধ পড়েছে কতো উঁচু
কুনো ব্যাং আছে কিনা দু চারটে লুকিয়ে কোথাও
কিংবা যদি ধেড়ে ইঁদুর একটা দুটো ধুকে ধুকে
থেকে থাকে খুব গোপনে, সব শালাকে পেদিয়ে দেবো।
ঝেটিয়ে দেবো চাঁদনী রাতের রুপার উঠোন ।

সংগে সুধু লাগবে কিছু দোয়ার বারুদ। শুভাকাংক্ষী
বন্ধুরা সব যে যার মতো তৈরী আছে পকেট ভরা গোপন
অস্ত্রে। তছবীহ হাতে বাবার সাথে বাবাই বুবাই মাকে নিয়ে
ব্যস্ত ভিশন জায়নামাজে। সকল স্বজন যে যার মতো ক্ষুদ্র
বৃহত ধাড়ালো সব শক্তিশালী এটম দোয়া বুকের মধ্যে
জমিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। এবার তোমার রহমতের
স্রোতে ভাসাও দয়াল আমায়। ইসমে আযম নামের খেয়ায়।
(৭২)
কষাইর মতো ফুলের গাছটা মেরে ফেললি তুই !
ধুতরার বীজ লাগিয়ে উপরে ফেললি জুই !
অভাবটা তোর কোথায় ছিলো ? অর্থে নাকি
স্বভাবে? কাকের মতো দিয়ে ফাকি !
গরম মাটির গতরে
জলের সেচে, মাপা সারে
বেশ বাড়ছিলি তো তরতরে ।

শেকড় শুদ্ধ উপরে নিলি সুভাসিত গাছটিকে !
অপেক্ষ্যাটা সইলোনা তোর ?
বেছে নিলি সকাল ছেড়ে সন্ধ্যাকে !
একটু কষ্টে কেষ্ট মেলে, "ধৈর্যফলে" মিষ্টি খুব ।
ধুতরার মাতাল সুখে, আপন ভুলে ডোবায় ডুব
দিয়েই দিলি !
এতোনা তোর নীতির বাহার ?
শরীর নাকি ঘৃনার পাহাড় !
কতো গল্প অল্ল স্বল্প করেছিলি বুক উচিয়ে
খাসা গতর পচা মানুষ স্বস্তা মাদুর বিছিয়ে
তুলেই দিলি !
তুই কেমন করে এমন হলি ?
সম্ভাবনার খোলা দুয়ার
লোভের খিল তুলে দিলি !
(৭৩)
বিশ্বাসে মিলায় মৃত্যু ।
তোর কথাতেই চলছিলো সব
আমার ব্যথা, আমার উৎসব ।
বিষের দানা মখে তুলে
যত্ন করে বলতি আমায়
এই নে, দিলেম অমৃত ।
আমার সকল বিশ্বাস
তোকে ঘিরে
সারাক্ষন বিষ পানেও
জীবিত ।
সুর্যকে তুই হেলিয়ে দিয়ে
উত্তরে ।
বলতি আমায় দ্যাখ,দ্যাখ
পশ্চিমের আলো যাচ্ছে
কিন্তু তোর ঘরে ।
আমি তাতেই ছিলেম জলের পুটি
নতুন জলে ফুরফুরিয়ে আফিম গুটি
বড়শীকাটা গলায় নিয়ে
মুখে পুরে নেশায় ছিলাম তোকে পেয়ে ।
তোর কথাতেই চলছিলো সব
আমার ব্যাথা আমার উৎসব।
(৭৪)
জানা গল্প ।
যদি এমন হতো
একবার বিশ্বাস করা যেতো
যে কোন সম্পর্কে নারী সৎ।
প্রিয় ভাইয়ের কাছে
প্রেমিকের কাছে
স্বমীর কাছে
দেবরের কাছে
পিতার কাছে
শশুরের কাছে
খদ্দেরের কাছে বেশ্যা
নারী কেবলই জঠর ছেঁড়া সন্তানের কাছে সৎ ।
এ কথা জেনেই পুরুষ গিলোটিনে মাথা রাখে প্রতিদিন ।
(৭৫)
হেরেছো তো বহুবার।
এই হেমন্তে, একবার দাড়াওনা ঘুরে।
ভুলে গেছো, ইতিহাসে বেচে আছে বখতিয়ার ।
পরাজয়ে যুদ্ধ থামেনা, যুদ্ধের অবসান বিজয়ে।
খুলে দাও শহরের সিংহ দরোজা, আসতে দাও
সন্মিলিত শত্রুর কাফেলা।
পালানোর সকল পথ বন্ধ করে দাও,
শত্রু মিত্র উভয় পক্ষ সন্মুখ সমরে চিনে
নিবে মৃত্যুকে।
যুদ্ধের জয় পরাজয় মৃত্যুতে।
বৈঠকে বাটোয়ারা ।
(৭৬)
তুই ছিলিনা, দুপুর বেলা
রৌদ্র বিহিন মেঘ ছিলো
আকশ ভরা ।
শীতল ছায়ায় ঘঘুর গানে
ভালো ছিলাম একা একা
তোকে ছাড়া।

কেনো এলি ভর দুপুরে
বনের ভিতর ফুলের
তোড়া হাতে নিয়ে ।
তোকে ফেলে কি করে যাই
একলা একা
বলনা মেয়ে ?
(৭৭)
শ্যাওলায় বসত।
দেয়ালের জমানো শ্যাওলায়
পথ ভুলে লোভাতুর টিকটিকি
টুপ করে পড়ে গেছে মাটিতে।
তার মৃত্যুর আগেই মরেগেছে শিশুটি
যে ছিলো ডিমের খোলসে ভরা জলের বাড়ীতে।

পুকুরে বাধানো ঘাটে শ্যাওলায় বসে গুই শাপ
দুই একটা ব্যাঙ, ধেরে ইঁদুর অথবা বোকা মাছের আশায়।
রাজপথ পিচ্ছিল শ্যাওলায়। নেতার পাঞ্জাবি শীতের শাল
ফাংগাসে পালটে গেছে রঙ, গন্ধ, পকেটের দৈর্ঘ বেড়েছে
ক্ষমতার দীর্ঘ বয়সে।
বই খাতা রঙ তুলি বাজারের ব্যাগ, বার্থডে কেক
ব্রা পেন্টি ওড়নায় শ্যাওলা জমে আছে।
ফেসিয়াল যুবতির যোনি মুখে, পশ্চাতে, টাকা ওলা বৃদ্ধের
বিষ ভাংগা বুড়ো সাপ একে বেকে ঘুরে যায় পিচ্ছিল শ্যাওলায়।
আমাদের নাকে মুখে বুকে ও মগজে সবখানে শ্যাওলা জমে গ্যাছে ।
(৭৮)
পাথরের গল্প ।
একটা পাথর, পাথর ছিলো। শক্ত ছিলো।
লুকিয়ে ছিলো লাল গোলাপের বীজ।
মাটির সাথে সখ্য করে পাথর পেলো
আস্ত গোলাপ বাগান।
পাথর,পাথর ছিলো।

কঠিন পাথর বাগান ছেড়ে বহুতলের স্বপ্ন ঘোরে
উঁচুতলার ঘুরনি সিঁড়ি ধরতে গিয়ে ভুলে গেছে
ফুলের সুবাস, মৃত্তিকারূপ, বুকের জমিন, সবুজ
ঘাসের উড়াল ফড়িঙ, বৌচি বিকাল ভুলে গেছে।
পাথর, পাথর ছিলো।
সখ্য সখী মাটির কষ্ট পাথর বোঝেনা
কাদা মাটি একা কেদে পানি হলো
নদী হলো, সাগর হলো। উর্মিমালার
ছন্দে দিলো লাল গোধুলীর প্রেম।
পাথর, পাথর ছিলো
(৭৯)
কোন হাতে যাও
কোন পাতে খাও
প্রক্ষ্যালনে হস্ত ডোবাও কোন জলে !
ঘরের ইঁদুর
ঘরের মাদুর
চিকন দাঁতে কেটে দিচ্ছো কোন ছলে !

ভালোবেসে
আপন হবে
বুকের মধ্যে
বসত নেবে
এমন আপন হবে তুমি কোন কালে !
জলজ চোখে
মেঘলা মুখে
কাস্তে ভুরু করুন করে তাকালে !
ভাবছো মনে
বোকা জনে
বুঝবে কি আর
পর সমাচার
ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি ঝোলালে !
বোকার হদ্দ
সদ্য সদ্য
ভুলে গদ্য
পড়ছে পদ্য
ভুল প্রেমের বাল্য শিক্ষ্যা পড়ালে !
(৮০)
রিয় রাস্তা পুরান হলে, পা চলেনা সেই পথে আর
দায় যত সব পথের থাকে, কোমলতার মসৃনতার।
চলছো তুমি, ভাংছো তুমি, খানাখন্দে ভরছো তুমি
নিজের পথে বিষ্ঠা ফেলে রুমালে মুখ ঢাকছো তুমি।
দোষ দিচ্ছো সরল পথের, মতের সাথে মিল না হলে
ঝড় বাদলে বাজ হাকালে, যাচ্ছো ছুটে নিদানকালে
কার নিকটে? লোভের কামড় হেথায় হোথায় দিচ্ছো
গেঁথে, ভাগাড় থেকেও খাচ্ছো খাবার সুজোগ পেলে !
ছতর গতর পৃষ্ঠা খুলে, ত্রিকোণ খালে জলের সিথি
শুকিয়ে গেলে, হাত পেতে নাও নগদ যা পাও। তোমার
ষোল কলার বাকল খুলে, দেহ ঘরের কোনে কোনে
কলের গানে ছলায় কলায় নতুন করে কাকে ডাকো !
ত্রিকোণ খালে জোয়ড় ভাটার লগ্ন এলে ।
কোন পথে যাও, পুরান পথের মায়া ভুলে ?
(৮১)
কথার সাথে মিল না রেখে
পাখি বদলে গেলে দ্রুত
সংগি হবার শখটা কারো
থাকবে না তো আগের মত ।
নতুন ডালে বসলে পাখি
কাচা পাকা ফলের লোভে
ঘরের ফলটা পচিয়ে দিলে
একটু কিছুই না ভেবে ।

পাখি ডানায় তোমার
কতো পালক ধরো ।
কোন বাতাসে কেমন করে
সেই ডানাতে ওড়ো ।
কোন ডালেতে কখন বসো
কাকে আপন করো।
কোন ফলটা খুটে রেখে
নতুন কোনটা ধরো ।
তোমার সুরটা বদলে গেছে
ইদানিং র‍্যাগি গাচ্ছো খুব ।
প্রানের শেকড় লোকজ গান
তুমি ভুলেছো বেকুব ।
তোমার খাছা ভাংগার বুদ্ধিটাতে
কোন শিল্প ছিলোনা ।
ফলের লোভে ফুলের লোভে
পাখি বৃক্ষ চিনলেনা ।
একাকি পরে থাকে বৃক্ষ, পাখি ডানা মেলে আকাশে ।
(৮২)
মাতাল ও বনিতার গান।
বাজের গম্ভীর ডাকে কেপে ওঠে মোলায়েম রাত
ভয়ে, ভানে, পানে, গানে কম্পিত হাত খুঁজে পায়
গেলাশের তলানিতে জমে থাকা চুলুয়ার শেষ
ফোটা জল।
বেদনা কোরাস গায়
এলোমেলো মাতালের দল।

বুকের মধ্যে উথাল ঢেউ.........
ঢেউ,দেখেনাতো কেউ......
দেখে শুধু পাল তোলা নৌকা.......
নেশার হাংগর অনেক ডাঙর সমুদ্র জল খায়
হাওড় নদী সাগর ধু ধু মরুতে হারায়
ক্ষুধা তৃষ্ণা সকল কিছু এক নিয়মেই পায়
হায় ! লালসা লাস্যময়ী
সরাইখানার হাস্যময়ী
ভাঙা স্বরে গায়
সাধ না মিটিলো
আশা না পুরিলো ।
(৮৩)
অসমাপ্ত গল্প।
গল্পে,গল্পে, গল্পের বেশীটা শুনেছি তার মুখে।
বহুপথ ঘুরে পেলো এখানে নোঙ্গর।
গোনের আলো স্নানে নামে নোনা সুখে।
রুপাজল আলো ভরা বাগদার ঘর।

শিকারি জ্বালিয়ে নেয় রাতের লন্ঠন।
হাতজালে টেনে তোলে নিরীহ চিংড়ীর ঘুম।
আড্ডা ছেড়ে দু'একজন চড়ে বসে ঘুম রথে।
সোমরস, বারবিকিউ রাতভর উৎসব ধুম।
আমরা গল্পটির শেষ প্রান্ত ভুলে যাই মাঝ পথে।
সে একাকী রয়ে গেলো আগের মতোন।
(৮৪)
শিরোনাম পাঠকের হাতে ।
বিশ্বাসের ভাটি নদী অবিশ্বাসের সমুদ্র
জোয়ারে ভাসে মৃত ডলিফিনের মতো ।
ভালোবাসার গল্প জাহাজ ভুল পালে
দিক খুঁজে ন্যায় যাদুর বন্দর ।

বন্দরের চারপাশ ঘিরে জম জমাট
মোহের বাজার । সাজানো প্রেমের
বোর্ডে ঝুলে থাকে রংগিন বেলুন ।
শিকারি অপেক্ষায় থাকে থির ।
প্রেমিক ম্যাজিশিয়ান ছয় কে নয়
নয় কে ছয় করে দেখালে, বোকা
দর্শকের মাঝে বেজে ওঠে
মুগ্ধ করতালি ।
বায়েস্কোপের অন্ধকার বাক্সে চোখ রেখে কারা যেনো
বিশ্বাসের গল্প শিখে লোকালয়ে জানাতে চায়
প্রতিশ্রুতির কোন স্তরে থাকে
ভাঙনের নাটকীয় সুত্র ।
শিকারি, ম্যাজিশিয়ান, বায়েস্কোপ ওয়ালা
সকলের থাকে অবশিষ্ট ।
আমি বিশ্বাসের দ্রাঘিমা রেখা
খুজি অস্থির হাতে ।
অবিশ্বাসের গন সংগীতে হারিয়ে যায়
বিশ্বাসের গাঢ় সুর ।
প্রেমের তানপুরা পড়ে থাকে তার ছিঁড়ে
তেলাপোকা খুটে খাওয়া রাতে ।
(৮৫)
থুত্তুরি নয় চাঁদের বুড়ী ।
চাঁদের বুড়ী থুত্তুরি নয় লক্ষি কোটি বছর কিংবা তারো আগে আটকে আছে ২৩'র কোঠায়।
জোয়ান বুড়ি গরম গতর, মেজাজ আগুন, বিগড়ে গেলেই সুতো কাটে পরের চাকায়।
ধারের আলো ছড়িয়ে দিয়ে রঙিন শুতোয় চড়কা কাটে চাঁদের বুড়ী। রুপার উঠোন
বাসন কোসন সব পড়ে রয় এলোমেলো
শুঁকে শুঁকে রাত খেয়ে যায় ছুঁচোল ইঁদুর ।
সুখের আগেই দু:খ বুনে নিত্য দিনে
রাতের পাখায় চিঠি বেধে খবর পাঠায়
চাদের বুড়ী। আয়রে আমার চাঁদের কুমার
সোনার ঘোড়ায় আয় চড়ে আয়।
জীবন আমার নি:শ্ব যাবে চড়কা কাটায় !
চাঁদের বুড়ী চাঁদের বুড়ী থুত্তুরি নয় ২৩র কোঠায় ।
(৮৬)
সুপারমুন ।
মানবি চাঁদ, সামলে হেটো উছলে পড়া জ্যোৎস্নাতে আজ।
পিছলে গেলে সোনার শরীর কে তুলবে লালাভ আলোয়। সামলে হেটো মানবি চাঁদ সামলে হেটো এই রাতে আজ। লাল জ্যোৎস্নায় ডুবে যাবো । তোমার পতন সুখে মুগ্ধ হয়ে বুকের ওড়না উড়ে গেলে হঠাৎ হাওয়ায়, হাতের মুঠোয় তুলবে কে আর বলো দেখি আগের মতন।
মানবি চাঁদ, সামলে হেটো, সামলে হেটো, এই রাতে আজ। আমি তোমার নিবিড় পাঠক, মন চাইবে আদ্যোপান্ত পড়ি আবার। তুমি হোচট খেলে, পিছলে গেলে, শেকড় বাকড়
ছড়িয়ে দিয়ে অশ্বথ হবো। মানবি চাঁদ, মানবি চাঁদ আমি তোমার নিরাল ভুমির বিড়ালকাটা কোরাল বুকের।
সামলে হেটো মানবি চাঁদ, সামলে হেটো এই রাতে আজ।
(৮৭)

 সাদা

ফ হাসনাইন মানজুর

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ০০:২৪:১৬
 সাদাফ হাসনাইন মানজুর







(৮৮)
শরতে বুড়ি ও কদমের স্নান

এখন কদম আর কাঁদেনা শরতের রাতে ।
সারারাত গায়ে মেখে বৃস্টির জল
ব্যর্থ, কালোমুখ ফিরে যায় কষ্টের দল ।
কদমেরা স্নান শেষে হেসে ওঠে
দিনের আলোয় ।

বুড়ি, তোর চুলে ভাদ্রের মেঘ জমে আছে ।
কাশফুলে ছেয়ে গেছে জীবনের কুল ।
যদি পুর্নিমা ছুঁয়ে যায় এই রাতে, জানি ঠিক
ফিরে পাবি ষোলর মহিমা ।
এই নামে বন্দনা হবে ফের ।

কদমবুড়ি, জড়াজড়ি ।
সন্ধ্যাবেলায় কেশের চুড়ায় মেঘের বাড়ীতে
সৃষ্টি খেলায় শরৎ নামে গোপন সন্ধিতে।
ওলো তুই কি ধরেছিস কেশবপুরে ?
দেহে তোর এত শরৎ নামে !
( ৮৯)
ইঁদুরের মৃত্যুতে।
ওদের সাথে এক বাড়ীতে থাকতাম ।
গত রাতে দল বেধে মারা গেছে সব।
নিশির খাবারে বিষ মেশানো ছিলো।
কাল রাত, ওদের শেষ রাত ছিলো ।

এক টন বিরক্তি ছিলো আমাদের।
যতোটা বিরক্ত হলে খুনি হওয়া যায়।
এক নদী আগুনের রাগ ছিলো আমাদের।
যতোটা রাগান্বিত হলে খুনি হওয়া যায়।
আমাদের পাঁচজনের পরিকল্পনায়
একটি নিখুঁত মৃত্যু নকশা তৈরী হয়।
ওরা বুঝতেও পারেনি, চুপচাপ
গোবেচারা মুখের ওপারে আছে খুনি।
একে একে সব মরে গেছে গতরাতে।
ফাকা বাড়ীতে কোন শোক নেই।
স্বস্তির নিশ্বাসে আনন্দের সাগুদানা
কেবলই বলকে উঠছে আমাদের বুকে।
(৯০)
গল্পটা যুদ্ধের ।
সকলে তন্ময় হয়ে শুনছিলাম
আধো অন্ধকার ঘরে ।
গুল্পটা ছিলো যুদ্ধের ।
তখন শত্রু পক্ষের ফিরে যাবার
সব পথ রুদ্ধ ।
মিত্রপক্ষ বিজয় উৎযাপনের
বেসামাল আনন্দ অপেক্ষ্যায় ।
এমন টান টান উত্তেজনায়
উপস্থিত সমবেত নি:শ্বাসে
থেমে গেছে স্থানিয় বাতাসের গুঞ্জন।
স্বেদ বিন্দু, হিরক দানার সৌন্দর্য হারিয়ে
এলোমেলো নেমে গেছে গৃহ ছেড়ে ।

আমরা কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম ।
আমাতে তাকালে তুমি অন্ধকারে
গল্পের ঘোড়া ডোবে সাগরের জলে ।
তুমি আমি ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ি
শুধু আছড়ে পড়ি আমাদের বুকে ।
(৯১)

গুটি গুটি পায়ে বিকেলের সুর্যটা
সন্ধ্যার খোয়ড়ে ঢুকে যাচ্ছিলো ।
আয় আয় তৈ তৈ করে
কালোজিরা রাতের মিহি দানা
ডেকে নিচ্ছিলো তাকে ।
চেনা পথ হারানোর আগেই
তোমাকে হারিয়ে ফেললাম ।
অথচ কি আশ্চর্য, কিছুক্ষন আগেও
দুজন এক সাথে ছিলাম প্রিয় কাধ ছুঁয়ে
কাপ্তাইর সুর্যকে স্বাক্ষী রেখে ।
মানুষ নিজ স্বভাবে বিচ্ছিন্ন হয়
সকল প্রতীজ্ঞাকে সামনে রেখে।
পশুরা দল বেধে চলে সারাপথ ।

(৯২)
প্রথম প্রেম ।

তারপরও আমাদের দেখা হবে।
আবারও দেখা হবে।
আরো দেখা হবে।
মালশাভাংগা বাঁশের সাকোটির বদলে
কালভার্ট হবে। তারও পড়ে ব্রীজ হবে।
একদিন ভরাট হয়ে পাকা রাস্তা হবে।
গনতন্ত্র প্রশবের আগে, নেতাদের
নতুন প্রতিস্রুতির জোয়াড়ে, আমাদের
ঐতিহ্য ভেসে যাবে, কলা পাতায় ভাসিয়ে
দেয়া ভোগের মতো।
ইমামগঞ্জ থেকে রামকৃষ্ণদি, নীমতলী থেকে
রাজানগর, শতবর্ষী বৃদ্ধার সিথির মতো রুগ্ন
এলোমেলো হয়ে যাওয়া আমাদের কৈশরের
শাখা নদীটি, ঠিকই আমাকে মনে করিয়ে দেবে
এই খানে স্রোত ছিলো, গান ছিলো, প্রেম ছিলো
একই ঘাটে ঘোষ আর শেখেদের স্নান ছিলো ।
এ ঘাটেই তোমাকে পেয়েছি। হারিয়েছি এখানেই।
একবার চেনা হলে প্রেম, ভোলে কি মৃত্যুর আগে?
আবারও দেখা হবে।
আরো দেখা হবে
দৃষ্টি ধুসর হবে।
তবু কি অচেনা হবে তুমি ?

(৯৩)

জলের আচল ধরে দুরবিন চোখে, ঠায় দাঁড়ানো শিকারি বক।
বিলের আদরে বেড়ে ওঠা ময়নাপুটি, গুলশা, ফলি, ধারালো
ঠোঁটের কেচিতে কেটে প্রাণ , অফুরান উড়ালের শখ
অভিজ্ঞ ডানায় ধরে, দূর পথে পাখি গোয়েন্দা দৃষ্টিকে হারালো।
কিছু লোভে ; কিছু পাপে খেতে গিয়ে জিয়লের স্বাদ ।
খেয়ালী চিলের সাথে ছিলো তার পুরনো বিবাদ ।
হায় ! চিল খায় , এক পায় দাঁড়ানো বকের খাবার।
ভয় নেই তার ফিরে পাবে হারানো ক্ষমতা আবার।
ধ্যানী বক
শিকারি চিল
ক্ষুধা কিলবিল
উজাড় , উজাড় আমাদের স্বর্ণকমল বিল !

(৯৪)

কেউ আসেনি বলে অপেক্ষা করোনা ।
ভাংগা সাকো পার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে
এগিয়ে থেকো।
এদো কাদা পার হয়ে যারা সন্মুখে গেছে
তারা রাজপথ পেয়ে গেছে পায়ের তলায় ।
ভাগ্য থাকে পায়ে পায়ে।

কপালের বলি রেখা ছোট বড় মেজো হয়ে
দল বেধে শুয়ে থাকে।
পদক্ষেপে থাকে প্রাণ ।
চন্দনের তিলকে ঘ্রান ।
আয়নায় ললাট দেখিনি ততবার
যতবার দুই পা দেখেছি চোখে ।

(৯৫)

তুমি ও তোমার চৌদ্দবছর ।
পায়ে হেটে যাদবপুর, মেট্রো, মুকুন্দপুরের
সন্ধ্যার কোলাহল ঘন রাতের শরীরে ঢুকে
যাচ্ছিলো ক্রমশ ।
যেতে যেতে পথে, দু:খের ছোট বড় দু'একটি
চেনা মুখ ; গতি রুখে সামনে দাঁড়ালে আমি
তোমাতে তাকাই।
আহ , কি আপন সম্ভাষন ; জোড়া হাতে
অভিযোগের মিঠাই তুলে দিয়ে তোমাকে বলে
এতোদিনে মনে হলো ?
বুকের গোপন ঘরে অন্ধকারে জমে থাকা
গোপন ব্যাথা এতদিন পরে ভেংগে গেলো বলে
আমি আনন্দে কেঁদে উঠি ।
আমি লজ্জায় নুয়ে পড়ি, এখানে অগুনিত আত্নিয়ের
সাজানো সম্ভারে, বাংলাদেশে কতো অচেনা হয়ে আছে
তোমার রক্তেরা !
তোমার জীবনের চৌদ্দ বছর হঠাৎ সন্তোষপুর
জোড়া ব্রীজের এক চালা ভাতের দোকানে এসে
পেয়ে যাই এক সাথে ।
মাটির খাটালে জুতো পায়ে বসে আছি যেই টুলে
এইখানে বুক পেতে শুয়ে ছিলে কতো কতো শীতরাত
একা একা ।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া তুমি টাই পড়ে স্কুলে যেতে
কাঁধেচাপা বইব্যাগ টিফিন, কি দারুন সুর্যমুখী হাটা
ছিলো স্বপ্ন চোখে ।
কানাই তস্করের ইতিহাস বলতে বলতে তুমি
বুঝিয়ে দিচ্ছিলে জীবন ত্যাগে ও বিচ্ছেদে
প্রকৃত সুন্দর।
আর আমি পারিবারিক বিচ্ছিন্নতায় অক্ষম
ক্রোধের শুই সুতোয় এফোঁড়ওফোঁড় করছিলাম
বংশীয় চাদর।
বেচে থাকার নয়া যুদ্ধমন্ত্র খুঁজে নিয়েছো মনে মনে ।
এইবার কলকাতা না এলে তুমি অচেনা থেকে যেতে
হে রক্ত আমার ।
অচেনা থেকে যেতো, সুভাষ চন্দ্র, জহরলাল, সন্তোষ।
অচেনা থেকে যেতো, সুস্মিতা সুশোভন যারা চমকে দিয়ে
কিনে নেয় কেজি দরে হৃৎপিন্ড।