শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রকাশকের কথা ।


সাদাফ হাসনাইন মানজুর একজন স্বনির্মিত কবিসত্তা । বহু জীবনের উত্থান পতন , নিরন্ততর স্বপ্নচারিতা ও আপন প্রতিচ্ছবির অবিচল পথের সন্ধান তাকে দিয়েছে কবিত্ব শক্তি । কর্মমুখী সময়ের বৈপরীত্যে কবিতাকে লালন করেছেন নিভৃতচারী হয়ে । সংসার সংগ্রামের মিলন ও দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেই রচিত কবিতা সংগ্রহ হচ্ছে - তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ " প্রতিবেশী নদীর মতো " ।

কাব্য গ্রন্থটি কবি সাদাফ হাসনাইন মানজুর এর প্রকাশিত অপ্রকাশিত আত্নকথনের একটি আত্নিক প্রকাশ । স্নেহ বেদনার প্রতিচ্ছবির আলো আঁধার ফুটে উঠেছে সচেতন ভাবে । প্রকৃত সাহিত্যের অনুসন্ধান করেছেন সারাজীবন । প্রকৃতিই প্রকৃত সাহিত্য - এ বিশ্বাসকে অনুধাবন
করতে গিয়ে প্রেম ও প্রিয়াকে ভাব ও বাস্তবের উপর প্রতিস্থাপন করেছেন , নীরিক্ষাধর্মী দৃষ্টি ভঙ্গীতে ।
ফলে , প্রেম মানবতা এক করে মানবিক মুক্তির আশাবাদী হতে দেখা যায় তাকে । ৮০ দশকের কবি ও কবিতার পরিমণ্ডলে ছোট কাগজ চর্যাপদ দিয়ে লেখা লেখির যাত্রা শুরু, এই নতুন শতাব্দীতেও তিনি সচল । প্রতিবেশী নদীর মতো কাব্য গ্রন্থ তার প্রথম প্রকাশনা । আত্নহৃদয় , স্বদেশ স্বজাতি ও বিশ্বময়ী প্রেম ও মানবতার প্রতি অনুভব তাকে দিয়েছে আন্তরিক প্রাণ শক্তি । জীবনবাদীতার সর্বরুপী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার আকুতি দেখা যায় নানা উপমা উৎপ্রেক্ষায় ।
জীবনের অনন্ত বিশ্বাস উপলব্ধির পরম ও চরম সত্যকে কবিতায় অর্থবহ করে জোরালো ভাবে বলতে চেয়েছেন । দর্শন বিজ্ঞ্যান প্রযুক্তির অভ্যন্তরে সরল গ্রামীণ জীবনের আত্নীয়তাকে কবিতায় প্রাধান্য দিয়েছেন বহুলাংশে । সত্য প্রকাশের নিজস্বতা, প্রেমানুভুতির স্পর্শকাতরতা , আবেগের গভীরতা সব মিলিয়ে সাদাফ হাসনাইন মানজুরের প্রতিবেশী নদীর মতো কাব্য গ্রন্থটি অবশ্যই সুপাঠ্য ।
দুই যুগ ধরে মুখে মুখে ও ছোট কাগজে প্রকাশিত ও শ্রুত কবিতা গুলির মলাট বন্দি বই আকারে পাঠকের হাতে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত । প্রচ্ছদ করেছেন উত্তম সেন । কাব্য গ্রন্থটি অনুসন্ধানী ও মনোযোগী পাঠকের সংগ্রহে রাখার মতো ।
প্রকাশক ।   

বিচ্ছেদ ।





তোমাকে বয়স ছুঁয়েছে ; বয়সের আগে
আমাকে ছোঁয়নি পঞ্চাশে ।
আজও রয়ে গেছি পঁচিশের ঘরে
তুমি ছেড়ে গেছো আটাশে ।

কাছে কাছে থেকে , দূরে চলে গেলে
বয়সের ভারে আমাকে ফেলে !

ক্ষমতার হিরা

দেশ আমাদের জননী ; তাহাদের ডাইনিং টেবিল।
রাজনিতির কাটা চামচ টুং টাং
শীত উৎসবে মুখরিত
পাতে-পাতে
মুখে-মুখে
সুখ দেয়
জনতা বার বি কিউ । 


তেনাদের ধারাবাহিক উৎসবে পুড়ে যাচ্ছি মা,
পূড়ে যাচ্ছ তুমি, তোমার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল।
আর কতোটা পোড়ালে হবে কয়লার খনি?
যাহা খুঁড়ে পেয়ে যাবে ক্ষমতার হিরা।

আমাকে বেপথু করোনা ।


সাদাফ হাসনাইন মানজুর এর
গুচ্ছ কবিতা ।


আমাকে বেপথু করোনা ।

সূঁই সুতোর সখ্যতা বৈরিতায় যে নকশী কাঁথার জন্ম
আমি তার নিপুণ সৌন্দর্যের দিব্বি দিয়ে বলছি
এ দেশ আমার ; আমাদের বাংলাদেশ ।
দোহাই মুক্তি যুদ্ধের , ত্রিশ লক্ষ প্রাণের , ভাষার ।
মাকে নিয়ে দোলনা খেলোনা ।
সন্তানের আঘাতে জননীর মৃত্যু !
কোন জাহানেই ক্ষমা নেই ।
তোমাদের লোভের লালায় মাখা
হন্তারকের তকমা লাগানো
চশমা চোখে রঙ্গিন জীবন
আমাকে দিও না ।
যদি পারো, দিও , যুদ্ধে পাওয়া লাল সবুজের নিখুঁত আঁচল
পরিপাটি টিকসই যা কিছু আমাদের প্রিয় ।
আমাকে বেপথু করোনা
ও পথে হাঁটবো না আমি
রুখে দাঁড়াবো ।
প্রিয় সবুজ সাক্ষী থাকুক কবিতা
আমি যুদ্ধে যাবো
যুদ্ধে যাবো
যুদ্ধে যাবো ।

বিজয়ী ।

লক্ষ কোটি শুক্রাণু পরাজিত করে
পৃথিবীতে এসেছি হেরে যেতে নয় ।
ঘৃণা নয়তো প্রেম
আলোকিত দিন
অথবা
অন্ধকার
জয় করে
নেবো ।
পরাজয়ের খালি হাতে ফিরবোনা ঘরে ।

আমার আগে একবার মহামতি আলেকজ্যান্ডার ,
একবার ঘুরে গেছে চে ।
গাইতে গাইতে ফিরে গেছে
খুদিরাম ।
বিজয়ী বীরের বুকে উপচে পড়ে মানুষের প্রেম
কি করে হারাবে আমাকে !

আমার আকাশটা

জাহিদ ভাইর জন্য লিরিক ।
সাদাফ হাসনাইন মানজুর । 

প্রমিজিং রোমান্টিক লিরিক ।  
১।
আমার আকাশটা তোমাকে দেবো যদি
মেঘ হয়ে ওড়ে কেশ ঐ আকাশে
স্নান শেষে তাজা ঘ্রাণ ওড়ে বাতাসে
আমার আকাশটা তোমাকে দেবো

নিদাঘ দুপুরে ছায়া যদি চাও
মেঘে মেঘে এনে দেবো তাও
যদি শীতল হাওয়া দাও ঐ আকাশে
আমার আকাশটা তোমাকে দেবো
যদি মেঘ হয়ে ওড়ে কেশ ঐ আকাশে

ঝড় শেষে নির্মাণে কাছে যদি চাও
সাজানো আছে যতো পারো নাও
দিন শেষে ঠাই দিও তোমার পাশে
আমার আকাশটা তোমাকে দেবো
যদি মেঘ হয়ে ওড়ে কেশ ঐ আকাশে

২।
দেহ তত্ব বেইজড লিরিক ।

তুমি নিরালায় বসিয়া
মানুষ নামের চাদর বুনছ
ভাবের সুতা দিয়া
দয়াল নিরালায় বসিয়া

দশমাস দশদিন সময় নিয়া 
ভাবের সুতায় প্রেম মিশাইয়া
বুনছ মায়ের কোলে থুইয়া
দুধের আহার দিয়া
বিধি নিরালায় বসিয়া

ছয় ধোপাতে চুক্তি নিয়া
ছিঁড়ছে চাদর ধুইতে গিয়া
মানব চাদর হয়না রিপু
সেলাই মেশিন দিয়া
বিধি নিরালায় বসিয়া

শব্দ সমবায় ।



১। কবির গাম্ভীর্যে হঠাৎ মেঘে ঢেকে গেলে সুনীল আকাশ
আমি আতি পাতি তোমাকে খুঁজি, বৃষ্টি বানে ভিজে
আবাদের যোগ্য হবো বপন সুশ্রীতে ।

২। অভিমানে ভেঙ্গে গেলে মেঘের চোয়াল
আলো নিয়ে ফিরে আসে চাঁদের শরীর ।
ও চাঁদ সামলে রেখো জ্যোৎস্নাকে ......
শুভ পূর্ণিমা ।

৩। আমাকে একটি সিগারেটের বয়স ঋণ দেবে প্লীজ ?
নিজেকে পোড়ানোর ধোঁয়ায় তোমাকে দেখে দেখে
বুঝে নিতাম সুখ টান বলে কিছু আছে কিনা !

৪। একজন মনোযোগী পাঠক কবিকে শুধরে দিয়ে গেলে
মাঝ রাতে কবিকে ছুটি দিয়ে কবিত্ব যায় পাঠকের পাতে ।

৫। কতবার যে নিজেকে রসির মতো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
নিজ পিঠের ছোট্ট তিলটি ছুঁতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি ।
কতবার যে ঘুম চোখে ডান পা সঠিক স্যান্ডালে
গলাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছি
তোমাকে বলতে গেলে জানি
হেসে লুটোপুটি
খেয়ে মফিজ
মফিজ বলে
মাতিয়ে তুলবে
রবীন্দ্র সরোবর ।


৬। মরে যাচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে ধ্বসে যাচ্ছে সব
এই নিয়ে করছে কারা মিহি উৎসব ?
মাগো আমার ক্ষুধা পাচ্ছে, ক্ষুধা বাড়ছে
আমি কিন্তু বোমা খেয়ে ফেলবো !

৭। তোমার অনামিকায় রেখে আসা শেষ স্পর্শ স্মৃতি
মনে করিয়ে দেয় তুমি আমার ছিলে ।
সত্যই কি আমার ছিলে ?

৮। সাধ্যের উঁচু দেয়াল ধ'রো বড়জোর , টপকে যেওনা ।
যতোটাই পাও , তোমার হাহাকার যাবেনা ।

৯। ফাঁসির দড়িকে বন্ধু করে নিজ ছাদে শুন্যে ঝুলেছো !
কাপুরুষ বন্ধুভাগ্য আমার ! এতো প্রিয় ছিলে তুমি !

১০। আটকে পড়া ফড়িং এর অস্থিরতা তোমাতে কেন !
কোন ফাঁদে পড়ে আছো তুমি ? মনে রেখো
হিসাবী ভালোবাসা কৌশল শিখায়
বিশ্বাস দেয় না ।


১১। অরন্যের শূন্যতা বন্য ছিলোনা কখনো
নগরে ছিলো ঢেঁড় বেশী ।
বন্যতা পুষেছে নগর ।
বেঁধেছে ঘর ।
অরন্যে যাবো ।
আমি
অরন্যে যাবো ।