শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

ছড়া কবিতা ।

ছড়া কবিতা / কিশোর কবিতা 

(১)

বিনিময়

তুই বলছিস অল্প নিবি
আমায় দিবি অধিক
প্রেমে হয়না সিক্সটি-ফরটি
সমান হবে দু’দিক ।।

উষ্ণতা তুই একাই দিবি ?
আমি দেবো আদ্রতা!!
ভালো্বাসার চাল চলনে
এটা নয়রে ভদ্রতা ।।
আমার বুকের ব্যাথা ছুঁবি ?
সত্যি ছুঁবি তুই?
তোকে ছুঁতে দিয়ে যদি
আমিও একটু ছুঁই?
ছুঁতে দিবি তুই ??
ছুঁয়ে ছুঁয়ে আপন হবার
পদ্ধতিটা আদী
না ছুঁয়েই করনা চেষ্টা
হতে পারিস যদি ।।
সকল ব্যাথা কুড়িয়ে নিবি
জীবন নদী পাড়ী দিবি
ভাসিয়ে তোর মন পবনের নাও ....
তুইতো নসরে ব্লটিং পেপার
দুঃখ চুষে করবি ডিনার !
সব বেদনা একাই খাবি !
আমরা যাবো ফাও !
শরৎ গেছে, দেনা যেতে
বিশ্বাষে রাখ আঁচল পেতে
ভোরের আগে ভরে যাবে
শুন্য আঁচলটাও ।।
আমার, যা আছে সুখ
হিবাহ করে দেবরে তোর নামে
কিনতে চাইলে পাবিনে তুই
সাত পৃথীবির দামে!!!!!

(0২)

বিষন্নতার দোষ কি বলো (?)...
ভালো্বাসতে না লাগে জল 

না লাগে চাল-চুলো ।
একটু খানি আবাদ যোগ্য 

নরম মেজাজ পেলেই হলো ।
একটা মৌসুম দেখোনা কি হয় 

বিষন্নতাকে বেসে ভালো 
বিষন্নতার দোষ কি বলো ? 

দোষ কি বলো ?

(0৩)
যতই বলিস
দুরের শহড়
তুইতো আছিস
বুকের ভিতর ।
পনের হাজার
কিলো মিটার
ঐ দেখা যায়
এপাড় ওপাড় !
এ পথ কি আর
খুব বেশী দুর ?
ততোই কাছে,
যতটা গলা ও সুর ।
ঝড়তে দে তুই,
সময় ওদের ঝ’ড়ে যাওয়ার ।
কুড়িয়ে নে তুই,
তোর সময়টা কুড়িয়ে পাওয়ার ।
ও্মা! Call দেবো কি
হাওয়ায় উড়ে ?
মন পবনের
নাও’য়ে চড়ে ?
দিস্ নি কেন
Cell ঠিকানা ?
ইচ্ছে তোর
গল্পো করার,
ভাব বিনিময়
মেজাজ ধরার ।
তোকে ধরার
Clue দিবিনা ?
আমি তোর মতো
নই, গোপন কৃপণ ।
আমি তোর
বন্ধু আপন ।
পাঠিয়ে দিলাম
ফোনের Digit,
করিস এবার
কথার Visit ।। 


(0৪)

তোর মন জানালা...
পুরো খোলা...
তুইতো কবি...
বন্ধু হবি ?
বলনা নীলা...
মেঘলা দিনে...
নিবি চিনে...
উদাস দুপুর...
বৃস্টি নুপুর...
ঝিরি হাওয়া...
আমি হবো...
ঝরা পাতা...
ঝরে যাওয়া...
আমাকে তুই...
মিস করবি
আমায় নিয়ে...
দুই একটা...
ছড়া লিখবি...
আমিও কবির...
বন্ধু হবো...
কাব্য ছড়ায়...
দখল নেবো...
এই টুকুন...
ছোট দাবি...
খুবি খোলা...
তুইকি আমার...
বন্ধু হবি ?...
বলনা নীলা...


(0৫)

আকাশ সুনীল বুকে
ফড়িং একাকী আমি, আনমনা।
সারাদিন উড়ে চলি মেলে দুই ডানা।
নামিতে চাইনা আমি আছি যেগো সুখে।

কোথাও বসিনা করি শুধু ওড়া উড়ি।
থাকিনা থিথু আমি ডানাওয়ালা ঘুড়ি।
ওপারে ঘর আমার আকাশের পরে।
নেবোনা কাউকে কখনো সঙ্গী করে
ইচ্ছেরা জোট বাঁধে সমবেত স্বরে।
কেমনে একাকি থাকি থাকিগো গোপন
নই পাপি তাপি সাদা ফড়িঙের মন।

 (৬)

কথা ছিল কথা হবে ফোনে ......
নিষেধ করনি তুমি শুনে......
কার কাছে দিয়ে দেহ মন.......
তুমি নিলে একাকী জিবন.......
মিলে গিয়ে দুধে জলে একা
ভালোবেসে খাওনিকি ধোঁকা ?
লয় তাল কেটে গিয়ে সুর .......
থেমে গেছে জীবন সুরুর .......
কোথায় তুমি,সে কতো দূর!! ......


(৭)

বৃষ্টি মানেই স্মৃতির স্রোতে
একলা ভেসে যাওয়া
বৃষ্টি মানেই মিশেল স্মৃতির
মৃদু মন্দ হাওয়া
বৃষ্টি আমার সুখের আড়ত
বৃষ্টি চির প্রেম 
বৃষ্টি আমার অমৃত রস
বৃষ্টি আমার হেম ।


(৮)

শূন্য বাড়ী
শূন্য গোয়াল
শূন্য গোলা ।।

শূন্য উঠোন
শূন্য উনুন
শূন্য থালা ।।
শূন্য হাত, পকেট, মাথা
শূন্য দোয়াত, কলম, খাতা।।

শূন্য ঘরের ঘটি বাটি
শূন্য জীবন জীয়ন কাঠি
শূন্য সকাল দুপুর বিকাল
শূন্য ঘরে একলা থাকা
শূন্য এখন দৃষ্টি আমার
বুকটা আমার ভীষণ ফাঁকা ।

(৯)

দরোজা'টা খোলা ছিল
তুমি ছিলে ঘুমে
পটে আঁকা তোমায় দেখে
পরে গেলাম প্রেমে...

আব্বু তোমার অফিস বোধহয়
মা গেছেন নাইতে
ঘুমে সুন্দর দেখতে তুমি
জেগে থাকার চাইতে...
তাই তোমাকে জাগাই'নিতো
উচ্চ ম্রিদু স্বরে
মাঝ দুপুরে পূর্ণিমা চাঁদ
সেদিন তোমার ঘরে...
কাছে পেয়েও পূর্ণিমা চাঁদ
ছুঁইনি আমি সেদিন
চাঁদ সুন্দর তোমায় দেখে
মুগ্ধতায় বিলীন...

(১১)

পাত্রী তাহার ছাত্রী ছিল
এখন ঘরের ইস্তিরি
মাষ্টার মশাই প্রমাণ দিলেন
প্রেমের বড় মিস্তিরি।

মাথা মোটা ছাত্রীটি আজ
ঘরের পাকা গৃহিণী
মাষ্টার এখন ঘরের ম্যাও
বউটি ঘরের বাঘিনি।
মহান পেশা ছেড়ে দিলেন
ঘরের নীচে লনডিরি
পাঁচ টাকাতে কাপড় ডলেন
ভাবেন, ভালই ছিল মাস্টারি।

(১২)

তুই মেয়েটা ভালই ছিলি
শুধু শুধু কস্ট দিলি
দিপু'র মতো কাদা মাটির মানুষ'টাকে ।
খেক শিয়ালের চালে পড়ে
গোত্তা খেয়ে হাওয়ায় উড়ে
মানুষ ভেবে ধরলি শেষে ফানুস'টাকে ।

ভালই ছিলি তুই মেয়েটা
নাস্তা সেরে দুই পড়োটা
এক সকালেই চলে গেলি ।
এর পরেতো দুপুর ছিলো
বিকেল সন্দ্যা রাত্রী ছিলো
কোরমা পোলাউ ফিরনি ছিলো
পান্তা লংকা সাথে না হয়
নিমক বিহীন ভর্তা ছিলো
সুখ দুঃখের তিতা মিঠায়
পুড়ো জীবন পরেই ছিলো ।
দুঃখের ভয়ে সুখের খোঁজে
কার বুকে তুই মুখ লুকোলি
নাস্তা সেরে সকাল সকাল
চোরের মতো পালিয়ে গেলি ।

(১৪)
ডান কাতে শুই
বাম কাতে শুই
উভয় দিকেই শুই
ডানে শুলে
বায়ে তুই
বামে শুলে
ডান কাতে তুই
শুধু তোকে নিয়ে শুই
আমি তোকে নিয়েই শুই। 


তুইতো মেয়ে
ঘন দুধের
পাতা দই
বিন্নি ধানের
সাদা খই
তুই যুগের
রাধা'ও নস
আমিও তোর
কৃষ্ণ নই
আমায় সঙ্গে
নিবি সই
যদিও খুব
দামী নই
তোর প্রেমে
হোঁচট খেয়ে
বুকে আমার
ব্যাথা অথই।।
 

তোর কাছে
দেহের চাবি
খুললে পরে
দেখতে পাবি
ফুরিয়ে যাচ্ছে
ঘরির সময়
পাপে তাপে
হচ্ছে যে ক্ষয়
দেহের আর
কিইবা দোষ
দোষটাতো সব ভাবনাতে
আমি মরি
তো্র সামনে
তুই দেখিস পাবনাতে।


(১৫)

ঘুসের টকায় বাবু মানিব্যাগ ভরেছো
আগোরা নন্দন খুঁজে চন্দন সাবান
শ্যাম্পু লোশন লিস্টি ধরা সামান
হারাম হারাম বলে চিৎকার জুড়েছো
আখেরের ভয়ে, হালাল মাংশ কিনেছো ।

সোম রষ কিনে খাও লাগেনা সরম
অর্থ দাপটে জুড়াও গায়ের গরম
তোমাদের কামে ঘামে একাকার যাদের বিছানা
তারা খুব অচ্ছুত, ফুুরালে রাতের সীমানা
সাহেবের পাপ ধুতে বুঝি, গঙ্গা লাগেনা ।
" ঈশ্বরের বন্দনা করিও
ঊর্ধ্ মুখে পথ চলিওনা"
ধারাপাত ভুলে গেছো মনেও রাখোনা
শুয়োর স্বভাবে বেশ করছো আরাম
মাঝে মাঝে বলে ওঠো হারাম হারাম ।

(১৬)

কেঁদে উঠি মাঝে মাঝে একা ঘরে শিশুর মতোন
ঠোঁট বাঁকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে
কেঁদে উঠি উথাল পাথাল
শব্দ ছাড়া কেঁদে চলি একলা মাতাল
রাঙামাটির রাত্রী যদি আর না আসে
আর না আসে পাহাড় ছুঁতে মেঘের গোলা
ছবি তোলা পাগলা স্বভাব, তোমার অভাব
ভোগায় যদি আমার সময় আমার জীবন
সাগর যদি আর না ডাকে আগের মতোন
মনে হলেই কেঁদে উঠি উথাল পাথাল
শব্দ ছাড়া কেঁদে চলি একলা মাতাল

ইচ্ছে আমার হয়না তবু মাড়িয়ে দিতে তোমার চাতাল।


(১৭)

তোমার কথার পাথড় কণা
পড়লো এসে বুকের মাঝে
সুখের চোখে মেঘ জমেছে
আজ পৃথিবী যাবে ভিজে।

সুখের কপাট খীল দিয়েছে
দুঃখের দুয়ার খোলা
বুকে কথার তীর বিঁধেছে
তীব্র দহন জ্বালা।
কথায় কথায় ব্যথা
দিতে চাও যদি
দুঃখ রোদে শুকিয়ে
যাবে সুখের নদী।
তাইতো আমি ঠিক করেছি
কাঁদবোনা আর দুঃখ পেলে
কষ্ট দিয়ে দেখো দেখি
কেমন কাটাই হেঁসে খেলে।

(১৮)

যদি পুড়ে হই ছাই

যদি নদী হয়ে যাই
যদি সাগরে হারাই
যদি ঝর্ণা হয়ে ঝরে পড়ি
তুমি থাকবে কিগো মেয়ে
আমার পথো চেয়ে
উজান স্রোতে যদি ফিরি।।

যদি পাখী হয়ে যাই
যদি বনে চলে যাই
যদি গৌতম ধ্যানে বসে পড়ি
তুমি আসবে কিগো মেয়ে
আমার নটিনী হয়ে
পাত্রে দুগ্ধ পুর্ণ করি ।।
যদি মেঘ হয়ে যাই
যদি আকাশে মিলাই
যদি বৃস্টি হয়ে ঝরে পড়ি
তাকিয়ে অবাক চোখে
আমায় নেবে কি মেখে
তো্মার আঁচলে যদি পড়ি ।।
যদি রোদ হয়ে যাই
যদি কিছুটা পোড়াই
যদি পুরোটাই পুড়ে হই ছাই
তুমি থেকোনা গো মেয়ে
আমার পথো চেয়ে
আর যদি ঘরে না ফিরি ।

(১৯)

আবার তুমি বাসছো কাকে ভালো
কাকে দিচ্ছো অন্ধকারের কালো
দিচ্ছো কাকে শরীর ভুগোল তুমি
কে পাচ্ছে হৃদয় মনোভূমি ?

(২০)
এভাবেই লুকিয়ে রেখো নিজেকে
যে ভাবে মুক্তো থাকে ঝিনুকের বুকে ।
এসোনা, কখনো সামনে এসোনা।
তোমাকে দেখে নেবো অন্তরচোখে ।

(২১)

বিশ্বাষের সুইস ব্যাংকে থরে থরে সাজিয়ে রাখা
ভালোবাসার তর তাজা নোট ক্রোধের আগুনে
পুড়ে ছাই করে দিলে !
সবইতো তোমার ছিলো জানি ।
কি করে পোড়ালে সখি নিজে গড়া
ভালবাসার ঘর !


 (২১)

আগুন পোড়ায় না ততো
যতোটা কৌশলী প্রেম ।
শত ফোটা অমৃত মারে
এক ফোটা বিরহের হেম ।
একবার ভালবেসে
বারবার মরে যেতে চাই ।
অমৃত আবাদে যদি
কৃষকের অধিকার পাই ।
নরমে পাইনি ততো
যতোটা পেয়েছি কঠিনে ।
পেরেক গেঁথেছো সখি
এই বুকের গহিনে ।

(২২)

মশাই ,
আপনি আমায় ভুল বুজেছেন দারুন ভাবে
ঘুস আমি খাইনা মোটেও ঘোর অভাবে ।
ভালোবেসে লাউ মুলোটা নিয়ে এলে ঘরে
ঘরের লক্ষী তারে আমি ফিরাই ক্যামন করে ?
পুকুরের মাছ ,পালতু মুরগি,গাভীর খাঁটি দুধ
এটাকে কি ঘুস বলা যায় কিংবা অন্য রকম সুধ !
কাজ করে দেই, খুশি মনে যে যা দিয়ে যায়
দু'হাত তুলে নিত্য করি শুকরিয়া আদায় ।
আমায় তিনি দেবেন বলেই এমন বাহানা ।
আমি জানি এই সত্য, মশাই জানেনা ।


(২৩)

ভরাট বুকের স্পর্শ লেগে আছে বর্ষিয়ান পিঠে ।
যমজ ফলের মতো এভাবেই থেকে যাক বৃন্তে ।
এপ্রান্ত ছুঁয়ে দিলে
ওপ্রান্ত নড়ে ওঠে ।
দুরন্ত উরন্ত গতি
ঘুরে বসে, দূরে যাবো
নেইতো উপায় ।
এমন কষ্টের সুখ ফিরে যদি আসে আরবার
এভাবেই বসে থেকো ।
ভরাট বুক লেগে থাক বর্ষিয়ান পিঠে ।


মাটির গনেশ খায়না
মানুষ গনেশ পায়না ।
 



(২৪) ।

মমতা 

যে জলে শুকাও তুমি
সে জলে ডোবাও
কতটা পারো তুমি
দেখি,কতো দুরে যাও ।
শতো নদী রক্তে
কিনেছি এ দেশ
লাল সবুজের এই
প্রিয় বাংলাদেশ ।
যে জল বল দিয়ে
বাঁধে আটকাও
সে জল বৈধ পথে
কতটুকু পাও ?
তিস্তার বুক তুমি
করে দিয়ে খালি
মিছে ভাষণে পাও
মিছে হাত তালি ।
মমতার মমতায়
পানি নেই তিস্তায়
তিস্তার বুকে শুধু
ধু ধু মরু বালি
ভুলে গেছো মমতা
ষোল কোটি বাঙ্গালী!
বঞ্চিত করে তুমি
পালাবে কোথায়
তিস্তার পানি ধরে
রাখো গঙ্গায় !
কোন চেক দিয়ে তুমি
পানি কিনে নিলে
এ দেশ পোড়াবে বুঝি
মঙ্গায় ফেলে !
মমতা গো মমতা
দেখেছো কি সরোতা
মাঝখানে ফেলে দেবো
এমন এক চাপ
বুঝবে বাঙ্গালী ক্যামন
বাপরে ! বাপ !!


(২৫)

স্বত্ব ।
হাত ধরে বললেই হলো
ঘর রয়েছে খালি,চলো ।
শরীরটা কি মন্ডা মিঠাই !
ইচ্ছে মতো হাত পেতে চাই ।
যখন তখন, দে গোল্লা ছুট ।
মাই ফুট । ফোট শালা,ফোট ।

গতর আমার বেহেস্তি বাগান
জায়নামাজের স্বত্ব বেচি নাই ।


(২৫)
তিনু মিনু'র পবিত্র হজ্ব ।
( আল্লাহ পাক আমাদের হেদায়েত কবুল করুন । আমীন)
এক জোড়া ভন্ড,
বসে দুই দন্ড
ক্ষুধা পেটে
এহরাম
ছিঁড়ে খায় । 


হেথা খায়
হোথা খায়
লাথি খায়
গুতা খায়
জুতা খায়
ফিতা খায়
ধুলা খায়
মুলা খায়
ভুল খায়
চুল খায়
ছাল খায়
বাল খায়
খেয়ে গলা
চুলকায় ।


মল খায়
জল খায়
রানী'মার
তল খায়
ইশকুলে
ঘুস খায়
পেয়ে গেলে
ম্যাডামের
হিসু খায় ।
শত শত
কোটি টাকা
আই এস ডি
বিল খায়
গাঁজা খায়
ভাং খায়
মদ খায়
তাড়ি খায়
ভদকায়
টাল খায় ।


কিল খায়
ঢিল খায়
কালোজিরা
তিল খায়
মিল খায়
ঝিল খায়
দেশ খায়
জাতি খায়
সবুজের
বুক চিড়ে
ভিতরের
লাল খায় ।


ডান খায়
বাম খায়
নাস্তিক
জিহবায়
জামায়াত
চেটে খায়
মাঝ রাত
হলে পরে
খাপে খাপে
মিল খায়
সব খাওয়া
শেষ হলে
দুই হাতে
কান মলে
তিনু মিনু
হজ্বে যায় !


(২৬)

নীল কষ্টের গুঁড়ো , ঊর্মি ভাঙ্গা অশান্ত জল
পরিমাণ মতো ধৈর্যের নিমক মিশিয়ে
বুকের কড়াইয়ে করেছি প্রেমের খামির ।
তুমি ফিরে না এলে , গোধুলি যাবেনা কোথাও
সময় , খিল তুলে বসে রবে একাকী নির্জনে ।

সন্ধ্যা হবেনা পাড়ায় পাড়ায় , কর্পোরেশনের
পথে পথে জ্বলে উঠবেনা নিয়মের বাতি ।
রাত আসবেনা আজ , সূর্য যাবেনা ডুবে ।
আনন্দ ভ্রমনে জোনাকিরা পাবেনা রাতের আঁধার ।
সব চলাচল থেমে রবে গৌধুলির ঘরে ।
তুমি না এলে , কেউ যাবেনা কোথাও ।
আমিও যাবনা নিয়ে বিরহের তন্দুর , প্রেমের খামির ।

(২৭)

দুঃখের দীঘল দীঘি বেয়ে মাঝে মধ্যে
দই একটা আনন্দ সংবাদ ভেসে আসে
মোহর ভরা কলসির মতো ।
ভাড়াটে সুখ, বুক পকেটে রেখে প্রিয় বেশ্যার
অবিকল আদলে মায়াবী সুরে বাজায়
নগ্নতার গান ।

কিনে নিয়ে মুঠো মুঠো সুখের অসুখ
দলে দলে ভীর জমে ঝাপ খোলা
অনিদ্রার বড়াই খানায় ।
মাঝ রাতে মাপা দরে জমে যায় কেঁচোর বাজার
অনুঢ়া ভুমির তল থেকে বুদবুদ কাদা জল উঠে এলে
সুগন্ধ বন্ধনী খুঁজে পায় মেহগনি ফল ।
চেতনার মহামতি সম্বিত ফিরে পেলে
কদাচিৎ ঘরে ফিরে মোহর কলস ।

(২৮)

ভুল বোঝায় কৃতিত্ব নেই জেনেও
বারবার তাই বুঝেছো । গমনে ও আগমনে
বিস্তর ফারাক জেনেও ভুল পথে গেছো ।
স্বেচ্ছা ভুলে দারুন পটু
কটু কথার খৈ ফোটাও
উষ্ণ হৃদয় লুকিয়ে রেখে
সস্তা দরে শত্রু জোটাও ।



(২৯)

নপুংসক ।
খ্যাপা
সিংহ
ধরেনি
তখনো
ছুয়েছে
কেবল
তাতেই
কুপোকাত ।
খুব
গোপনে
হয়েই
গেলো
এক
পশলা
সাদা
বৃষ্টিপাত ।

জাহান্নামে
যাও
আলোটা
নিভিয়ে
সিংহী
বলেন
দাঁত
চিবিয়ে ।
ঘরেতে
আগুন
আখেরেও
তাই,
সিংহের
জীবন
কেশর
ছাড়াই ।।


(৩০)

ওব্বূ আর থাকবো না তোমাদের সাথে
থুক্কু আর থাকবো না তোমাদের সাথে ।
কথায় কথায় খুন খারাপী
সাধু সন্ত পাপী তাপী ।
বুক চিড়ে তেলে পুড়ে
তোমারা খেলছো খেলা
সকাল বিকাল সন্ধ্যা
এবং দিনে রাতে ।
ওব্বূ আর থাকবো না তোমাদের সাথে
থুক্কু আর থাকবো না তোমাদের সাথে ।


শুনেছিলাম রাজা প্রজা
সখ্য হতো আগে ,
প্রজারা না খেতে পেলে
রাজা থাকতেন জেগে ।
এখন রাজা সব চুষে খায়
প্রজাদের নাড়ি শুকায় ,
উজির নাজির চেল-চামুন্ডা
সবাই আছো দুধে ভাতে ।
ওব্বূ আর থাকবো না তোমাদের সাথে
থুক্কু আর থাকবো না তোমাদের সাথে ।

জোড় করে যায়না পাওয়া
এক মানুষের মন ,
কি করে পাবে রাজা
কোটি জনগণ ।
তোমাদের দেশপ্রেম নাই
খাও ক্ষমতার মন্ডা মিঠাই
আম জনতার নাই মমতা
থাকুক পড়ে ফুটপাতে ।
ওব্বূ আর থাকবো না তোমাদের সাথে
থুক্কু আর থাকবো না তোমাদের সাথে ।

বামেদের তর্ক বড়াই
তত্তের ফুটো কড়াই ,
রাজাকারের পাকি প্রীতি
উথলে ওঠে ভাতৃ স্মৃতি ।
প্রয়োজনে বসিয়ে কোলে
ক্ষমতার দোলনা খেলো
এই জনতা খেপলে রাজা
পাবে সাজা হাতে নাতে ।
ওব্বূ আর থাকবো না তোমাদের সাথে
থুক্কু আর থাকবো না তোমাদের সাথে 

পরের স্বামী দেখতে দারুন
ঘরেরটা মাকুন্দা
পরের গায়ে সুগন্ধি
ঘরের গায়ে ফাকুন্দা ।
পরের বউ মিষ্টি তেতুল
ঘরেরটা ধাইন্না ঝাল
পরের বউ কোকের বোতল
ঘরেরটা ভুষিমাল !

নারী আর তেলাপোকা
বংশ বৃদ্ধি করে
পুরুশ আর তুরকুলা
মরার আগে শতবার
আছার খেয়ে মরে ।
নারী আর মেনি মাছ
যত বড় আদার হউক
মুখের সামনে পেলে ক্যোঁৎ করে গিলে খায়
পুরুষ আর বোয়াল মাছ
জিন্দা মুর্দা পচা গলা গু গোবর সব খায় ।

উকুন আর নারী উভয়েই সমান
একজন ধারণ করে অন্যটা বিচরণ
সুযোগ পেলে সমান তালে বালিশ
বিছানা এবং শরীর পাল্টায় ।
পুরুষ আর বিড়ালে পার্থক্য নাই
দুধ দেখলে উভয়েই
ছোক ছোক করে
সন্তর্পণে মুখ বাড়িয়ে দেয় ।

অন্ধ দেখে অন্তর চোখে
ভালদের চোখ থাকে খোলা
অন্ধ বরাবর পষ্ট দেখে
খোলা চোখ দেখে ঘোলা !
সাদাফ
না দেখে ঘোলা
না দেখে পষ্ট
অন্তর বাহির
দুই'ই নষ্ট ।

ইদানিং ।

তুমি নাকি ব্যস্ত ভীষণ
তোমার সময় দিচ্ছ কাকে।
আমার মতো আপন করে
শুনি, বলো আরকে ডাকে ।
বেনিয়ারা হরেদরে কিনছে
নাকি তোমার সময় ।
আজকাল প্রতিরাতে
তিনু মিনুর যেমনটা হয় ।
পিঠ ছড়ানো রঙিন চুলে
বিক্রি হচ্ছ হাতে হাতে ।
আদর করে বুকের পায়রা
তুলে দিচ্ছ নতুন পাতে ।
কোন হাতে যে পায়েশ বাটি
দিচ্ছ তুলে নাভীর চাবি ।
কে যে যাচ্ছে সাঁতরে ওপাড়
কে যে খাচ্ছে দারুন খাবি ।
আমি চাইলেম বুকের ময়না
নিজের একটু অধিকার ।
ওদের দিলে আস্ত তোমায়
ওদের বেলায় এতো উদার !!!

পার্থক্য

তোমার ,
জলের সহজ স্বভাব ঢেলে
যা ছিল সব দিয়ে দিলে
রেষম চুলে রোদের হাওড়
কপাল জুড়ে মেঘের প্রহড়
স্বেদ বিন্দু নরম আদল
নিকট দুরে চোখের বাদল
বাখড়খানি মচমচে বুক
জঙ্ঘা পাড়ের অমৃত সুখ
বাজিয়ে দিয়ে স্নায়ুর নূপুর
রতির তালে অমিয় সুর
কথায় কথায় সবই দিলে
কথার মাখন মধু ঢেলে ।

আমার ,
স্থাবর অস্থাবর সবই নিলে
সাব কবলার এক দলিলে ।


ভালোবাসার শস্য দানা খায় খুটে খায়
পাখ পাখালির দল ।
তোমার মন গোলাতে তুললেনা তা
রাখলে করে নিষিদ্ধ অঞ্চল ।

বুঝলেনাতো আপন কে পর
বুঝবে কি আর পাহাড়, নদী, গাছ,
ঢেউয়ের মাতম, প্রাশাদ প্রবাল,
রক্ত চোখা কোরাল নিঃশ্বাস ।
মন বাড়ীতে ঝুল বারান্দা
হু হু বহে বৈশাখী বাতাস
তুমিও নে আমিও নেই
দোল খেয়ে যায় যুবক দীর্ঘশ্বাস ।


মিয়া সাইফুল্লা......
শেষ পর্যন্ত কি ভাবলা ?
সার্জারি পার্টেই থাকবা
নাকি পাগলের বৈদ্য হবা ?
রাজা পাগল
প্রজা পাগল
পাগল সেনা পতি
খুনি গুমী হজ্ঞলতে নাকি
আমরার ভগ্নীপতি!!
উচ্চ শ্রেণীর
পাগল পাবা
পয়সা নিবা
থাবা থাবা
income হইবো more
দেশের নাক
ভাইঙ্গা যাক
pocket ভরবো your
ভাইবা দেখো হইবা কোনটা
স্হীর কইরা অস্হীর মনটা
করো সকাল বিকাল কশরত
এই দেশে সবই আল্লাহর রহমত !!
নাদান সাদাফ বোঝে আধা
রাজন্যগন পুরান আদা
প্রজারা সব গাধা'র দাদা !!!!

 ।
বেতনের সব টাকা শেষ হলে ঘরের ভারায় ।
বিনিত জীবন ভাঙ্গে সভ্যের দেয়াল ।
কঠিন চোয়াল, ভেঙ্গে খায় নিজ মাড়ী দাঁত ।
দু হাত ফিরিয়ে দেয় অনুপম ছোঁয়া ।
কদমে কদমে চেনে অন্ধকার পথ ।

এই ভাবে থেমে গেলে সৎ এর জীবন
নিজ হাতে রেধে খাবে আপন মগজ ।
ফুসফুস গলা গিলা কলিজা চুল ও নখ
পুরো দেহ খেয়ে নেবে ক্ষুধার জঠর ।
ভুলের চর্চা পেলে মূলের অধিক
অসভ্যের দল পায় সাহেবি জীবন !!

আমার স্বপ্ন দেখা রাত
সুখের যায়না ভোলা কিছু
দিগন্তে পথ দৌড়ে গেছি
তোমার পিছু পিছু ।
পাইনি ছুঁতে তোমায়
ক্লান্ত হয়ে বসে ছিলাম
শিমুল মেঘের ছায়ায় ।

হাত দুরত্বে আমরা দুজন
ছিলাম মুখো মুখি
মেঘে রোদে মাখা মাখি
বোতাম খোলা আকাশ ।
দিক ছাপানো
সবুজ চাদর
দারুন দুর্বা ঘাস ।
হাতের কাছে ভরা দীঘি
পাতা ভাসা ঢেউ
ওপারে দুই চখা চখি
আমরা দুজনেও ।
ঢেউয়ের কথক
দেখেছিলাম
আর দেখেনি কেউ ।
আমার স্বপ্নে দেখা রাত
আজো যায়না ভোলা কিছু ।


তোমাকে কষ্ট দেবোনা বলে থির করেছি।
তোমাকে দুঃখ দেবোনা বলে থির করেছি।
এই ঢাকা’কে সাক্ষী রেখে বলছি।
প্রাণের ঢাকা সাক্ষী রেখে বলছি।

অভিমানে হরতাল ডেকে
ভয়তাল পাকাবোনা থির করেছি।
তুষের আগুন বুকে জ্বেলে
তোমাকে পোড়াবোনা থির করেছি।
এই ঢাকা’কে সাক্ষী রেখে বলছি।
প্রাণের ঢাকা সাক্ষী রেখে বলছি।
বিকেলের সোনারোদ মেঘে ঢেকে গেলে
তোমাকে দেখাবোনা থির করেছি।
ঝড়ের ইংগিতে বাজ নেমে এলে
তোমাকে কাঁপাবোনা থির করেছি।
এই ঢাকা’কে সাক্ষী রেখে বলছি।
প্রাণের ঢাকা সাক্ষী রেখে বলছি ।



তোকে একটা জীবন ভালোবাসা মানে ,
এক জগ পানিতে সাওয়ার নেয়া !
না যাবে স্নানের তৃষ্ণা , না প্রেমের ।
সাতটা জীবন চাই আমার সাতটা জীবন চাই
তোকে একটা জীবন ভালোবেসে কোন তৃপ্তি নাই ।

তোকে একটা জীবন ভালোবাসা মানে
একটা কাকতাড়ুয়া জীবন বেছে নেয়া ।
এক পায়ে দেখে যাওয়া সোনালী যৌবন ।
না যাবে ছোঁয়া তারে, না পুরাবে আশা ।
সাতটা জীবন চাই আমার সাতটা জীবন চাই
তোকে এক জীবনে ভালবেসে কোন তৃপ্তি নাই ।
তোকে একটা জীবন ভালোবাসা মানে
তিন জীবনের ঘুম যাবে সীমান্ত প্রহরায় ।
অরক্ষিত ঘর কি করে প্রেম সামলায় !
তোকে একটা জীবন ভালবেসে কোন তৃপ্তি নাই
সাতটা জীবন চাই আমার সাতটা জীবন চাই ।

ভাই সাহেব, রাজনিতি করেন মনে হচ্ছে ?
নাতো !!!
তাহলে গাধার মতো কথা বলেন না।


তুমি ।
সূর্যটা শুয়ে থাক মেঘের জাজিমে ।
দূর পথ হেঁটে যাব একাকী নির্জনে ।
ক্লান্তিকে দিয়ে দেবো গ্রীষ্মের ছুটি ।
রাজপথে, আড্ডায়, বাদে ও বিবাদে
ঘরে,অবসরে তুমি শুধু ধরে রেখো
ঐ মুখে সূর্যের হাঁসি ।

ভান করেছি,ভান করেছি প্রেমের নামে।
হিরক খন্ড কিনতে গ্যাছি জলের দামে।

কতো কথা বললাম তাকে
সে কি বাচাল ভাবলো আমাকে !

কদিন আমার স্পর্শের উত্তেজনায় নিজেকে
মেলে ধরতে পুনর্বার গুটিয়ে নেবার আগে ।
সহিষ্ণু লজ্জাবতি বুকের দু'পাতা খুলে
অপেক্ষাকে দীর্ঘায়িত করে, যেভাবে
মাটি কামড়ে পড়ে থাকে বৃষ্টি জলের
উষ্ণ স্পর্শের আশায়
একদিন আমার স্পর্শের উত্তেজনায়
তুমি নিজেকে ... 



শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

গল্প, গল্প নয় ।


গল্প-গল্প নয়
সাদাফ হাসনাইন মানজুর

কারো কারো বয়স বাড়ে বহুমাত্রিক সুশৃংখল চিন্তার ঘন আসা যাওয়ায় । কারো বাড়ে যথা বয়সে, কেউ কেউ বয়সের আগেই চিটা ধানের মতো চুপসে গিয়ে অজস্র কাটা-কুটি গায়ে মেখে মলিন পড়ে থাকে জীবনের রাফ খাতায় । কারো বাড়ে সুর্যোদয়ের আগে । কারো কারো সূর্যাস্তে । 'আমার' বেড়েছে পেটের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় । কারো মেধায় সয়, কারো পেটে বা পিঠে । আমার সবটাতেই বদ হজম ,কিছুতেই সয় না কিছু । দুই যুগ বয়সের সীমানা ছুঁতে না ছুঁতেই আমার জ্ঞ্যান-বাহী মুল্যবান মাথার দুই দিকের ভ্রু বরাবর, মেঘ ভাঙ্গা সূর্যের মতো রাজস্থানের মরুভূমি উঁকি দিয়ে জানান দেয়া শুরু করেছে তার অবৈধ দখল প্রচেষ্টা । সেই সাথে কেশ বাগানের মাথার উপরে উঠেছে সাদা কালোর মোজাইক চিত্র । কোন শ্রেণীর পেট যে আমার নামে এলটম্যান্ট হয়েছে, শত চেষ্টাতেও তা বোঝা যায়নি । এই বয়সেই শীল পড়া আধ-পাকা কুমড়োর মতো ব্যাদান মুখ নিয়ে জগতের সকল হাসি খুশি সুখ দুঃখ নিরীহ মেনি মাছের ধৈর্য্যে গিলে যাচ্ছি সব । ফলে মন মেজাজের চিক্কন-মোটা, সব ধরনের চাপের অন্তীম আশ্রয় যদি বেচারা উদরের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে তাহলে, তার আর দোষ কি? বেঁকে তো বসবেই । শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে শেয অব্দি বৈদ্যের শরণ। আমার প্রাত্যহিক অনিয়মের সুনিপুণ মাত্রার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বৈদ্য দিলেন পথ্য পালটে। খাবারের মেন্যুতে ঝুলিয়ে দিলেন দীর্ঘ শিকলসহ এক বিশাল তালা । বিয়াল্লিশ রকম খাদ্যের উপর করে দিলেন কার্ফ্যু জারী । বৈমাত্র শীবির ভ্রাত জ্ঞ্যানে পাশ কাটিয়ে চলতে পারলে নাকি অচিরেই পেট আমার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে । ভেতরটা নাকি চৌদ্দ সি,এফ,টি ডীপ ফ্রীজের মতো শীতল হয়ে যাবে । আরে বাবা, আমার মাথার উপরের সাদা কালো মোজাইক চিত্রটি পূর্বের মতো সিল্কের অন্ধকার খুঁজে পাবে কিনা সেটা বলো আগে । নাকি তাজা বাশেঁর পাকা কঞ্চি হয়েই থাকবে ?

যার পূর্বপুরুষেরা ভোগ বিলাস আর মৌজ মাস্তিতে জমিদারী খোয়ানোর ইতিহাস গড়েছেন, তাদের উদভ্রান্ত উত্তরসূরী হিসেবে বৈদ্যবাবুর বিধি নিষেধে আমার চলবে কেনো? ফলে, বৈদ্যবাবুর নিপাট মলাট ভাঁজ করে শুরু করে দিলাম নিজ হাতে আপন পরিচর্যা । সেই যে শুরু, আজ চার যুগের   প্রান্তসীমায় এসেও থামেনি । একই গতিতে চলছে যজ্ঞ । আগে গাছ থেকে তুলে আনা মেহেদী পাতার বাটনা তুলে দিতাম চুলে । এখন শপিং মল থেকে কোরিয়ান হাইস্পীড কলপের প্যাকেট কিনে এনে ঘরে বসে নিজ হাতে মাখি মাসে চারবার । কিছুক্ষণ আগে এ মাসের শেষ কিস্তির কাজ সম্পন্ন করে বারান্দায় বসেছি, পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জের কবি “ডেরেক ওয়ালকট” এর অনুবাদ কবিতা হাতে নিয়ে ।
ওয়ালকট প্রকৃতির কবি । লিখতে গিয়ে তিনি প্রকৃতি ও প্রকৃতি-নির্ভর জীবিকা অণ্বেষণে ব্যস্ত মানুষের কাছে ফিরে গেছেন বার বার । নোবেল ভূষিত 'ডেরেক' , সমুদ্রের গভীরতা, সামুদ্রিক সৌন্দর্য, সমুদ্রের নির্ভরতা নিয়ে বেঁচে থাকা সরল অথচ কঠিন পরিশ্রমী মানুষ নিয়ে বহু কালজয়ী শব্দ ছবি এঁকেছেন । সব দেশেই সবসময় হাতে গোনা কিছু শব্দকৃষক জন্মান যাঁরা নিজ দেশের কাব্য ভূমিতে কাব্যের বাম্পার ফসল ফলান বলেই মনো-স্বাস্থ্যকর এ ফসল শতাব্দীকালব্যাপী পৃথিবীর কোটি কোটি সাহিত্য ভোজী পাঠকের রুচির খোরাক হয়ে এখনো পর্যন্ত দেশে দেশে রপ্তানী হচ্ছে স্রোতধারায় । আমাদের রবীন্দ্রনাথ,নজরুল, লালন সাঁই’র মতো ভাব-সম্রাট স্বচ্ছল-শব্দ কৃষকেরা যখন অর্গানিক শব্দাবাদ করেছেন বাম্পার ফলনে, তখন তা নিজ দেশ উপচে পড়ে বহু দেশের পাঠকের হাতে হাতে ঘুরেছে, আজো ঘুরছে। শেক্সপিওর, গ্যেয়তে,গোর্কি , গালিব ,খৈয়াম, ফিরাখ, রিল্কে, কামিংস, মালার্মে, ফ্রস্ট,ওয়ালকট আরো শত শত গুণীর আবাদী ফলন পেয়েছি বলেই আমরাও মেধায় মননে ভাবনায় রুচিতে ঋদ্ধ করেছি নিজেদেরকে। আবার যাদের কাব্য নদীতে নাব্যতা নেই তারাও দেশে দেশে যুগে যুগে ভাবের চরে হাঁটু মুড়ে কথার মটর-দানা পুড়ে উৎসব করে চলেছে রাজন্যগণের ফিতে কাটায়। অবৈধ বাণিজ্যিকের ব্যক্তিগত বিত্ত বৃদ্ধি পাওয়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে এরা, এদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কোনকালেও করা যায়নি উলটো এরাই বরং ক্ষোভ, হিংসা আর বিদ্বেষের অক্ষম আগুনে পোড়াতে চেয়েছে কাব্য ভূমির প্রকৃত অশ্বথ্থ ।

'তোমার রুপ চর্চা শেষ হলো?' ঘরের ভিতর থেকে বাতাসে ছুঁড়ে ফেলা ‘ইদন’ এর এই সকাল বেলার তাড়া দেয়া আওয়াজ, ট্রাফিকের রেড সিগন্যালে, দ্রুত ছুটে আসা যানের মতোই আমার ভাব জগতের সবগুলো গাড়ী হঠাৎ-ব্রেকে হুড়মুড় করে থেমে গেলো যে যার জায়গায় । এবার দমকা হাওয়া! “তুই খাবি না? একশবার খাবি…তোর বাবা খাবে” আমার ছোট মেয়েটা বড় দুজনের চেয়ে একটু বেশী মাত্রার ঘুম কাতুরে বলে ওকে ডে শিফটে দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ সকাল এগারোটায় ওর ইস্কুল শুরু । ইস্কুলে যাওয়ার সময় বুবাই কিছুতেই কিছু খেতে চায়না জেনেও ইদন জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করবে প্রতিদিন সকালে আর যথারীতি ফেইল মেরে তুই তুকারি করে বকা ঝকা শুরু করবে । এতটুকু বুবাই আমার, সেও গজাল মারা নৌকার গলুই’র মতো ঘাড় শক্ত করে নট নড়ন চড়ন বসে থাকবে । বুবাই আমার মাঝ বয়সের কুড়িয়ে পাওয়া খেলনা । ওর প্রতি ইদনের স্নেহাত্যাচারে আমি এক ধরনের হাবু কাবু হয়ে যাই । বারান্দায় বসে বসেই মিনমিনে স্বরে বলতে চেষ্টা করি ‘ঠিক আছে আমাকেই না হয় দাও, খেয়ে ফেলি’ । ব্যস, কম্ম সারা! সব কিছু জেনেও যে কেন এই সকাল সকাল ভুলটা করতে গেলাম ! চুল ছিঁড়ে প্রায়শ্চিত্ত করবো তারও উপায় রাখিনি, হাতে কলপের কালি লেগে যা তা হয়ে যাবে। এবার যুদ্ধ ময়দানে প্রতিপক্ষ আমি, মুখাস্ত্রের তাক এখন বুবাইকে ছেড়ে আমার দিকে ঘুরেছে, ঝাক ঝাক শব্দ বুলেট আমাকে ঝাঁঝরা করে ছাড়বে জানি । আমিও নিশ্চিত পরাজয় মেনে ভিতরে ভিতরে মাথা ভাঙ্গা দেবদারু আর বাহিরে বটের ঋজুতায় কঠিন, ভাবখানা এমন “বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচাগ্র মেদেনী”।

আচ্ছা? শেক্সপিয়র মহাশয় কি বুবাই, ইদনের মতো স্নেহমাখা শাসনের কোন বিগ ক্লোজআপ দৃশ্য দেখে লিখেছিলেন? I must be cruel only to be kind. শুরুর আগেই রণে ভঙ্গ দিয়ে পড়ি মরি করে ঘর ছেড়ে সোজা রাস্তায় নামার আগে ড্রাইভার হাফিজকে ইশারায় বুঝিয়ে দিয়ে গেলাম, তুই আজ ম্যাডামের অধীনে থাক। আমি দুই পা ভরসায় দিন শুরু করলাম। এই সময়টাতে সি,এন,জি বা রিক্সা পাওয়া আর যে কোন বড় দলের অধীনে নির্বাচনের টিকেট পাওয়া সমান কষ্টকর । আমাকে রংপুর যেতে হবে।  লাভলু আর আমি যাবো।  ছোট্ট আকারের একটা সাহিত্য আড্ডায়। ফলে সোজা 'ফিট বাবু টেকসই' মাথা নিচু করে লম্বা হাঁটা । মডেল কলেজ ঘেষেঁ খিলজি রোড হয়ে কলেজগেট ছাড়িয়ে সোজা কল্যাণপুর আগমনি বাস কাউন্টার । রাতের শেষ বাসের দুটো টিকেট কেটে চারুকলায় যাবো 'রনি'র কাছে । ছবিগুলো কদ্দুর কি করলো খবর নিতে হবে । রেস্তোরাঁটাকে একটু ভিন্ন আদলে সাজাবো বলে ভাবছি । সেই ভাবনাতেই ওকে কিছু ছবি আঁকার কাজ দেয়া । দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিভার রেলগাড়ি পুওউউউ করে ছুটিয়ে দিয়েছে ঝিকি ঝিকি করে ।

টিকেট দুটো পকেটে পুরে লাভলুকে ফোনে জানিয়ে দিলাম । রিপোর্টং টাইম সাড়ে এগারটা । গাড়ী ছাড়বে বারোটায় । দুপুর থেকে আকাশের অবস্থা 'ইদনের' সকালবেলার মনের অবস্থার সাথে দৌড়াচ্ছে কিনা কে জানে! গুড়ুম গুড়ুম মেঘের ডাক, দমকা হাওয়া আর ঘন পাতলা টানা বৃষ্টি । অবস্থা আরো খারাপ হলেও আমি যে যাবোই এই ব্যাপারে 'ইদনের' কোন সন্দেহ নেই তাই সব ধরনের মন খারাপ থাকা সত্বেও আমার ট্রাভেল ব্যাগটা ঠিকই গুছিয়ে রাখবে । সেই সাথে টর্চ লাইট, ব্রাশ কিট, লোশন, কটনবাড, কিছুই বাদ পড়বেনা । প্যান্টের ডান পকেটে রাখা এন্ড্রয়েডে ঠাকুরজীর 'কালো তা সে যতোই কালো হউক আমি দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ' সাদি মোহাম্মদের গলায় বেজে উঠলো । এই রিং টোন বলে দিচ্ছে আমার ম্যাডামের মান ভেঙ্গেছে ।

"শোন, লাভলু ভাইকে আমি কল করে বলে দিয়েছি, যাওয়ার আগে যেন এখানে এসে রাতের খাবার খেয়ে যায় " চুঁই ঝাল দিয়ে খাসী ভুনা করেছি । কাঁচা ঝালে ধনে পাতার ঘন পাবদা ঝোল, জলপাইর ডাল আর সিম আলু সর্ষের ভর্তা । এই হচ্ছে ইদন । প্রেমিকা হিসেবে যতো কৃপণ ততো উদার দায়িত্বশীল স্ত্রী হিসাবে । সময় ধরে লাভলু চলে এলো, রাতের খাবার খেয়ে যথাসময়ে দুজন বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলাম রংপুরের উদ্দেশ্যে। একটা ঘরোয়া সাহিত্যে আড্ডার আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে রংপুরে ছুটে যাওয়া ।

ঘাড়ে করে বৃষ্টির বোঝা নিয়ে সারারাত পথ ভেঙ্গে ঘুম ঘুম চোখে, জলের ভেজা-সম্ভাষণে পর্যটনের মোটেলে আশ্রয় । এখানে পোস্টম্যানের মতো বৃষ্টি ছুঁয়েছে ঘরের দুয়ার । দু একটি ছোট ছোট উঁচু এলাকা ছাড়া পুরো রংপুর ডুবে আছে জলে । গত দুই দিনের টানা বর্ষণে রংপুর এখন জল-মোমের বিছানা । দিনের মেইল ট্রেন আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চা মুড়কি আর রুই ঝোলে সব্জি ডালের মধ্যাহ্ন আহার। সময় যে কখন বড়শী ছেঁড়া মাছের মতো সরাত করে মুগ্ধ জলের শরীর কেটে বেরিয়ে গেলো কেউ টেরই পেলাম না!

রাতে নিমন্ত্রণী চঞ্চলদার বাড়ীতে ছিলো ভোজের বিলাস । চঞ্চলদা মানে চঞ্চল ভৌমিক। একজন সরকারী আমলা, জেলা শহরে পোস্টিং নিয়ে সকাল সন্ধ্যা শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত রাখেন নিজেকে। ফেইসবুকি মানুষ। অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। অগণিত লাইকার আর ফলোয়ারের লিস্ট দেখে বোঝা যায় তার তারকা খ্যাতি!  যে কোন গাছের নীচে দাঁড়িয়ে অনায়াসে হাত তুলে আম পেড়ে খাওয়ার মতো লম্বা মানুষ চঞ্চল। জ্বাল দেয়া দুধ ঘন হতেই পারে, তাই বলে চঞ্চলদার গায়ের রঙকে অতিক্রম করে যাবে (!) সে সাধ্যি দুধের নেই।  রাধার ঘুম ভাংগিয়ে ঘর থেকে মাঝ রাতে বের করে নিয়ে আসার মতো সুরেলা আওয়াজে যখন তিনি খালি গলায় গান ধরেন  বা কবিতা আবৃত্তি করেন অথবা কোন বিষয় উপস্থাপন করেন তখন নারীকূল মুগ্ধতার মোহনায় ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যার বাসনা ধরেন গোপন মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় । অথচ দিব্যি করে বলতে পারি এমন রমণী ভীতু সুন্দর পুরুষ আমি জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি । তাঁর ডাকেই রংপুর আসা, সে বাড়ীতেই নেমন্তন্ন ।

রাতের পৌর-আলোয় ঘন বৃষ্টির দেয়াল ভেংগে আমরা পৌঁছে যাই নির্ধারিত গন্তব্যে । যেতে যেতে মনে হলো ক্লান্ত ঘর বাড়ীগুলো শুয়ে আছে জলের জাজিমে । বৌদিসহ পরিবারের বাকীদের সাথে পরিচয় শেষে সুসজ্জিত ডাইনিং টেবিলের আহবানে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । লুচি লাবড়ার ভগ্নাংশ মুখে যেতেই বুঝে গেলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর আবদুর রহমান এখনো বেঁচে আছেন বৌদির হেশেঁলে। সব শেষে ফিরে আসা। মোটেলের বিছানায় নিজেকে শর্তহীন ছেড়ে দিতেই মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো ... শোকর আলহামদুলিল্লাহ্!

গাছ ভাঙ্গা বাজের শব্দে, ঘুমের অতল থেকে বিরক্তির বুদবুদ ছেড়ে জেগে উঠি অ্যালার্ম দেয়া সময়ের আগে । সন্মুখ সমরে থাকা যোদ্ধার মতো লাফ দিয়ে একটানে দরজার ছিটকিনি খুলে কেঁপে কেঁপে দাঁড়িয়ে যাই পা পিছেলে পড়া ভেজা বারান্দায় । আম, কাঠাল, অর্জুনের নিরীহ পাতায় তুমুল বৃষ্টির সমবায় সংগীতে মেজাজের খুপরিতে কুয়ার শীতলতা পেয়ে যাই, সেই সাথে এই মাড় গলা ভোরে চোখে মুখে ছুটে আসা জলের মৃদু মিষ্টি খামছি তোকে মনে করিয়ে দেয়, 'বুড়ী তুই কি চাঁদে আছিস! সুতো কাটায় ব্যস্ত আছিস? টানা বৃষ্টির গভীর চুম্বনে যেভাবে মৃত্তিকা শীতল, চুপচাপ গাঢ় রহস্যের স্বভাবে, আমিও তেমনি বুঁদ, চোখ বুজে লতা পাতা বৃক্ষের গণসংগীতে । বুড়ী, তুইতো চাঁদে আছিস! এই ভোরে আমাকে খোলা চিনি, দুধবাটি, তাজা ইস্পাহানি ব্যাগ ট্রে'তে করে তুলে দেবে কে? অগত্যা মধুসূদন, ইন্টারকমে মোটেলের কিচেনে ঢুকে বলে দেই প্রয়োজন, জানি ঘড়ি ধরে চলে আসবে প্রয়োজনের দল । আমিও কাপে কাপে তুলে নেবো উষ্ণ মুগ্ধতা! বুড়ী, চাঁদে বসে চা পাবিনে, খেতে চাইলে নেমে আয় নয়তো মর গিয়ে কোন সৌর ভাগাড়ে। ইতিমধ্যে লাভলু আড়মোড়া ভাঙ্গে বারান্দায় । তাঁর হাতে বৃষ্টির ভার দিয়ে, আমি পরিচর্যায় দেখে নেই দাঁতের স্বাস্থ্য, বত্রিশ পরিবারের ঘর, বাড়ী, গ্রাম, পরিপাটি রেখে ফিরে আসি পুরোনো গতিতে । এখানে চা, দুধ, খোলা চিনি স্বেচ্ছা মৃত্যুর প্রতিজ্ঞায় স্থির, এই ত্রয়ীর আত্মহত্যার উষ্ণ ধোঁয়ায় ঠোঁট রাখি আমরা দুজনে । হায় ভোর, ওহ ভোর কতদিন পাই না তোকে এই স্বভাবে!

ম্যাসেজ বক্সে সুমিকে বলে রেখেছিলাম, আমরা দু'দিন রংপুর থাকবো । সুমি, আমি ফেইসবুক ফ্রেন্ড। দেখা হয়নি কথা হয়নি কখনো। দু'একবার ইনবক্সে কথা চালাচালি তারপর যে যার মতো। গতকাল রিক্সায় ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিস্নানের তৃপ্তিতে স্মৃতি খুঁড়ি, পরিচিত আর কে কে আছে রংপুর শহরে আমার? মেঘ ভাঙ্গা সূর্যের মতো উঁকি দেয় সুমি সুমি নাম! কলেজের প্রভাষক । স্বামী সুখি এক সন্তানের মা। জন্ম, পড়া, বড় হওয়া, বিয়ে এখানেই সব। রুমে ফিরে ইন্টারনেটের খোলা আকাশে শব্দ পায়রা ছেড়ে দিয়ে ভুলে যাই সুমিকে বিকেলের বৃষ্টিতে ভিজার আগাম প্রস্তুতিতে। ম্যাসেজের মিষ্টি আওয়াজে শব্দের পায়রাগুলো ফিরে এসেছে সুমির ফেরত বার্তা নিয়ে । জানতে চেয়েছে, এখনো রংপুর আছি কিনা থাকলে যেন অবশ্যই গঙ্গাচড়া হয়ে এই বর্ষায় হঠাৎ যৌবন পাওয়া তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টি মাখি গায়ে। আহ তিস্তা! মমতার জটিল গণিতে পড়ে দুখিনী তিস্তা এখন ক্ষীণকায়া, রুপ রং মরে গেছে ধীরে ধীরে, বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া বৃদ্ধার মাথার সিঁথির মতো চিক্কন, এলোমেলো হয়ে গেছে। একদা এই তিস্তা রংপুরের অহংকার ছিলো। বৃহত্তর রংপুরের মাটি, মানুষ, বৃক্ষলতা, ফসলি-সরল, ফলবতী-সুখের হাওয়ায় চিনে নিতো নিজেদের মুখ। আজ দাদা ও দিদিদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মায়াবী বাক্যস্রোতে প্রায় মরুভূমি হয়ে আছে তিস্তার বুক! সেই তিস্তা জলে ডুবেছে!  এই ঘোর বরষায়? ব্যাঙের কাছে জলের লোভ! আমাকে খুঁজে পায় এমন সাধ্য কার আছে? ফিরতি পথে তাজহাটের রাজবাড়ী দেখতে যেন ভুল না করি, আমার "ইনবক্স অভিভাবক" গন্তব্যের পথ ও ঠিকানা বাতলে দিলেন, এই ভর বৃষ্টিতে নিজে হয়তো রয়ে গেলেন ভুনা খিচুড়ীর সমূহ সুখে!

রংপুর থেকে ফিরে এসে মইনুল কবির,দেওয়ান সাইদুল হাসান টোকেন, হাসান আব্দুল্লাহ চৌধুরী, মুন্সি রফিকুল হাসান , আযাদ নোমান , আমি, আমরা সবাই অফিসার্স ক্লাবের ক্যাফেটারিয়ায় বসে শিল্প সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ চর্যাপদের পরবর্তী সংখ্যার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছি । আমাদের বন্ধুত্বের বয়সটা একদমই ঝেড়েঝুড়ে ফেলে দেয়ার মতো নয়। সর্বনিম্ন তিরিশ, সর্বোচ্চ পঁয়তাল্লিশ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। চর্যাপদ প্রকাশ করছি সাতাশি সাল থেকে । বন্ধুত্ব চিৎকারে নয় বোধের গভীরে থাকে। নাড়ি ছেঁড়া টানে থাকে। খুনসুঁটির সোনামুখী সুঁই'য়ের স্বভাবে এফোঁড়ওফোঁড় হয় সময়ের চাকি। এতে স্নেহ প্রীতি ভালোবাসা চিরতার তিতা থাকে অমৃতের পাশে। চোখের পাতায় থাকে বিন্দু জলের ওজন, তবু সূর্যের হাসি ঝরে বন্ধুর মুখে, তবেই না বন্ধুত্ব । গণিতের সূত্র ধরে বন্ধুত্বের ফলাফল নির্ণয়ে যারা হেঁটে গেছে ফিরপথে, তারা অন্ধকারে গেছে। তাদের, এদো গলির দেহ মনে আলোর কণা পৌঁছায়নি কখনো। তা সে সভ্যতার চায়না থাকুক আর মক্কা মদিনায় অথবা আমাজনের গহিন অরণ্যে । শাসনে বারনে কারণে অকারণে ইর্ষায় গুঞ্জনে বন্ধু স্রোতের গতিপথ রুখে দেয়া মানে, স্বৈর স্বভাবে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের নিকুচি করে বিকৃত সুখে মনোবৈকল্যের কটকটি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি ওদের দিয়ে । অবসরে আমি বন্ধুত্বকে পড়ি। বারবার পড়ি। শহরে বা গ্রামে, গল্পে বা কবিতায়, ভিতরে বা বাহিরে, প্রকাশ্যে বা গোপনে এক ভাবেই পড়ি। আমার সকল বন্ধুদের জন্য অখন্ড সম্মানের প্রার্থনা করি মহান স্রষ্টা সমীপে ... হে প্রভু, আমাদের জ্ঞ্যান হউক বিনয়ে কোমল । আমীন ।

কাউকে বিশ্বাসের সর্বনিম্ন স্তরে রেখে বিশ্বাস করার চেয়ে অবিশ্বাস করা শ্রেয় । এতে করে উভয়েই উপকৃত হয়। সন্দেহের ক্ষুদ্র ইঁদুর, ঠাস বুননে তৈরী সম্পর্কের বর্ণিল শতরঞ্জিকে কুটি কুটি করে কেটে ছড়িয়ে দিয়ে নোংরা করে ফেলে বিশ্বাসের সাজানো উঠোন। স্বর্গীয় ঝড়ের মাতম ছাড়া এই উঠোন আর কখনোই চাকচিক্য ফিরে পায় না আগের মতোন। পক্ষান্তরে, সরাসরি অবিশ্বাসে নিজেকে সমূহ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়, যা নড়বড়ে বিশ্বাসে সম্ভব নয় । হয় কাউকে পুরোটাই বিশ্বাস, অথবা অবিশ্বাস করুন। নামকা ওয়াস্তে বিশ্বাসের নামে নিজেকে হাস্যকর করে তুললে এর খেসারত কিন্তু একদিন নিজেকেই দিতে হবে । সুজনটা সবার বেলায় সারা জীবন তাই করে এসেছে । সুখের মাছি হয়ে পাতিলের মুখ থেকে গুড়ের টুকরোটা পেলেই ওর হয়ে যায় , তলানির গাঢ়তায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার মধ্যে বোকামি ছাড়া আর কিছু দেখেনা সে । বালতির উচ্চতা দিয়ে কুয়ার গভীরতা যাচাই করতে গিয়ে সম্পর্কের খোলা মাঠে হোঁচট খেয়েছে বহুবার । আমরা অন্যের খুঁত ধরে ধরে নিজেকে নিখুঁত করার প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর যে কোন দেশের মানুষের চেয়ে অগ্রসর আর  ভীষণ পটু । কিন্তু কেউই কেন যে বুঝতে চাই না পরের খুঁতের চার আনায় নিজের খুঁত ষোল আনা ফুটে থাকে জলে ভাসা পদ্মের মতো সকল পাঁপড়ি মেলে । 

আজকাল সজলটাকে খুব মনে পড়ে। ভীষণ রকম মনে পড়ে। তারুণ্যের বোকা-ক্রোধ যখন জীবনকে বেপথু করে দেয় যখন সম্ভাবনার উজ্জ্বল আলো তরুণ তুর্কীকে গুটি গুটি করে অমাবশ্যার অন্ধকারে নিয়ে অন্তহীন নিদ্রার কোলে ঢেলে দিতে চায়, ঠিক ঐ রকম একটা সময়ে রুপকথার চরিত্র হয়ে সজলটা আমাকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো উজ্জ্বল সূর্যের নীচে। বন্ধু, কতোদিন দেখিনা তোকে! পনেরো হাজার মাইল দূরে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে তুই ক্যামন আছিসরে সেদিনের স্মার্ট বয়? কার উপর, কি কারণে একমাত্র ছেলে হয়েও বৃদ্ধা মাকে একা ফেলে রেখে চলে গেলি কোন সুখের প্রত্যাশায়? খুব কি সুখী হয়েছিস বন্ধু আমার? দায়িত্ব পালনের কৃতিত্ব ফেলে পলায়নের কোন সুখ তোকে মহিয়ান করেছে? বুকে হাত দিয়ে একবার বলে যাবি সজল?  মান্না দে’র গানের মতো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে … 'তুমি কি সেই আগের মতোই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো ' ।

তোকে ঘৃণা করবো, সাহস নেই । ভালোবাসবো পথ খোলা নেই । সেদিন উজ্জ্বল সূর্যের নীচে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার বিষ-মালা কেনো ঝুলিয়ে গেলি এই আন-পড়ুয়া অশিক্ষিতের গলায় ! ভুলেই যদি যাবি এভাবে, তবে তোকে আজীবন মনে রাখার দায়ভারটুকু আমাকে একা দিয়ে গেলি কেনো? সজল, তুই এতো নিষ্ঠুর হলি কি করে?

আমাদের এবারের ভ্রমণ সুন্দরবন । সাতক্ষীরায় চিশ্তির বাড়ীতে দুইদিন । এখানে ওর রয়েছে সম্ভবত দেশের সর্ববৃহৎ, ছয়শ পঞ্চাশ একরের চিংড়ী ঘের। আর মাত্র ক্রোশ দুয়েক পরেই সুন্দরবন।  এক রাত নিরীহ মাছের সাথে রাত্রি যাপন আর দিনের বেলায় মৌয়ালদের সাথে সুখ দুঃখের খুদকুঁড়ো খুঁটে খাওয়া। ফের পরিচিত আঙ্গিনায় প্রিয়তম বিছানায় । এখানেও দিন ক্ষন হিসাব হিসাব করে পূর্ণিমাকে ধরতে এসেছি । যারা বাঘ হরিণ ধরে মারে ,ধরুক মারুক । আমি গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে আলোর আধুলি কুড়িয়ে ভ'রে নেবো বুকের ভিতর খালি হয়ে যাওয়া সব কটা খোলা পকেট । 

আলমের এক নাম্বার পচা সাবান বার কয়েক ব্যবহারে যে আকৃতি দাঁড়ায়, আজকের চাঁদ অনেকটা সেই রকম । উনত্রিশ তারিখ শনিবার পূর্ণতা পাবে, আমি তখন অপেক্ষায় রইবো বর্ষীয়ান গাছের আশ্রয়ে, আলোর জোয়ার এসে লেগে যাবে গায়। জোনাকির গুনগুন বুড়ীকে মনে করিয়ে দেবে । বুড়ী আমার ভুল চাকুতে সময় কাটে । দিগ্ববিদিক উদভ্রান্ত হাঁটে । আমিও তাকে নিয়ে ভুগবো সারারাত। বেদনার শশ্রুষা করে পূর্ণিমার উদর চিরে রুপালী জ্যোৎস্নায় মাঝরাতে আমি নীল পদ্ম হবো, সকল নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গাইতে থাকবো তোরা দেখে যা আমি কোন আলোয় খেলি। পূর্ণিমায়, রাত গহীনের পুণ্যস্নানে অন্তর জুড়িয়ে আবার ফিরে এসেছি প্রাণের শহর ঢাকায় । নিয়মিত জীবনে সুড়ুত করে ঢুকে পড়েছি । চেনা পথে চেনা কাজ বাঁধা সময়ের টানা জীবন শেষ করে ঘড়ি ধরে ঘরে ফিরি । প্রতিদিন এভাবেই রুটিন মাফিক ঘরে ফিরি, এভাবেই প্রতিদিন শাওয়ারে দাঁড়াই। মাঝরাতে ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টেই ঢুকে যাই বাথরুমে । কি শীত কি গ্রীষ্মকাল, জলের পতন মাথায় নিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ এক দুই তিন গুনে গুনে দিনের কাজগুলো মিলিয়ে নিতে থাকি।
ঢাকার ট্রাফিক দিনের তিন ভাগ সময়ের দুই ভাগ খেয়ে ফেলে বলে কয়ে । খেয়ে খেয়ে স্থূল হচ্ছে দিন দিন । রাস্তার স্বাস্থ্য বেড়ে ফুটপাতে উঠে গেছে । মটর সাইকেল, স্কুটি, ভেসপা, মোদ্দা কথা দুই চাকা এখন রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে চলাচলের জায়গা করে নিয়েছে । এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার পথচারীরা অচিরেই ডিজিটাল বেনিফিট নিয়ে দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করবে, তা ছাড়া পথচারীদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার আর কোন উপায় থাকবে কিনা সেই ব্যপারে আমার সন্দেহ দিনকে দিন ইউরোপ, আমেরিকায় জাংকফুডের বিরুদ্ধে দেয়া বিজ্ঞাপন হোর্ডিংয়ে ব্যবহৃত স্থুল নারীর স্বাস্থ্যের মতোই মোটা হচ্ছে ।
আসলে জাতি হিসাবে আমরা চক্ষুলজ্জা হারিয়ে ফেলেছি । যে যার মতো ছুটে চলছি । অন্যকে পিছনে ফেলে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাড়নায় ভুল চর্চাকে মূল চর্চা জ্ঞান করে নিয়েছি । ট্রাফিক পুলিশকে সামনে রেখে ভুল সিগন্যালে ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছি নির্লজ্জের হুইসেল বাজিয়ে । উল্টো গর্বিত হচ্ছি! চক্ষুলজ্জা হারিয়ে ফেললে একটি জাতির অবশিষ্ট থাকে কি? কিছুই না। সম্ভাবনার কোনও দুয়ার আমরা খোলা রাখিনি । ভিতরে ভিতরে আমাদের মানুষগুলো মরে গেছে অনেক আগেই । এ কথা সবার আগে বুঝেছিলেন প্রফেসর শ্রী নীরদ চন্দ্র চৌধুরী । ডিজিটাল যুগে এসে আমরা কি বড় বেশী অনার্য হয়ে যাচ্ছিনা? আয়োজন করে, উৎসব মুখর পরিবেশে একের পর এক অপকর্ম আর ধর্ষণে লিপ্ত হচ্ছি, অনেকটা শুটিং মুডে ভিডিও চিত্র ধারন করে রাখছি । আমাদের কারোই লজ্জা লাগছেনা, করতে না। শুনতে না । বলতে না। এতোটাই তলানিতে এসে ঠেকেছি আমরা!
পাঁচটা কাজ নিয়ে বেরিয়েছিলাম । তিনটা কাজ কম্পলিট করতেই সূর্য গোত্তা খেয়ে বোকাট্টা হলো। আজকেও জি.পি.ও তে যাওয়া হলোনা । কানাডায় জাহানারা বুলাকে কবিতার বইটা পাঠানো হলো না। ভোরের পাতায় এই সংখ্যার কবিতাটিও দেয়া হলো না, সম্পাদক, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরীকে। বিকেলে টি,এস,সি তে একবার ঢুঁ মেরে আসবো ফেরার পথে, গল্পকার মাহবুব লাভলুকে সেল ফোনে জানাতেই রাজী হয়ে গেলো, অফিস শেষে সচিবালয় থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসবে টি,এস,সি চত্বরে । এক সাথে বসে চা, সিগারেট হালকা আড্ডায়, দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে যে যার মতো ফিরে যাবো ঘরে । ইতোমধ্যে সেলফোনে দু'বার কথা হয়েছে, সে এসে গেছে, অপেক্ষা করছে । ঢাকার সান্ধ্যকালীন জ্যাম আমাকে স্থির করে রেখেছে রাসেল স্কোয়ারে ।
মনে হচ্ছে অনন্তকাল থেকে থেমে আছি এইখানে, বাতাস বিবাগী হয়েছে এ সময় । গরম, পরম মমতায় ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর । হেলমেট মাথায় চুলের গোড়াপথে ঘামের তিরতির হাঁটা চলা টের পাচ্ছি বড্ড অস্বস্তিকর, এইভাবে শেকড় ছড়ানো স্বভাবে বসে থাকতে থাকতে মেজাজের তীর কখন যে কোন দিকে ছুটতে শুরু করে দেয় বুঝতে পারছিনা। নাহ, এভাবে হবে না যাওয়া । লাভলুকে কল করে জানিয়ে দিলাম, জ্যামের চুম্বকে আটকে আছি, আজ হয়তো দেখা হবে না। আবার ছড়াটির কথা মনে পড়ে গেলো ... " মানজটে দুই নেত্রী / যানজটে জনতা / পথে বসে দুলো খায় / তেনারা খান ক্ষমতা । আমাদের ঠিকই দেখা হলো না ।
দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করেছি, শরীর এখন ইস্পাহানীর তাজা গাছ। ক্ষুধা চাড়া দিয়ে উঠেছে, খেতে হবে ... প্রিয়তমা ঘুম অপেক্ষায় আছে। বসে আছে পথ চেয়ে ।
"মজা'' নামে আমার একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁ আছে ঢাকায় । যারা এখানে ভোক্তা হয়ে আসেন, শতকরা নব্বই ভাগ আসেন বিলংগিং সেন্স থেকে। নিজেরা রিপিট করেন আর নতুনদের সাথে করে নিয়ে আসেন অনেকটা হাত ধরে বা জোর করে। এইভাবে "মজা" রেস্তোরাঁ ঢাকাতে এখন একটা প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে গেছে বিশেষ করে ফিমেইল গেস্টদের জন্য  "মজা"  এক অভয়ারণ্যের মর্যাদা পেয়েছে । শোকর আলহামদুলিল্লাহ্‌ । রাতে বসে সম্মানিত ভোক্তাদের জন্য একটি খোলা চিঠি লিখে ফেললাম । ভোরবেলায় কেউ দেখার আগেই টেবিলের উপরে গ্লাসের নীচে নীচে সাঁটিয়ে দিলাম খোলা চিঠি । ভাষা শহীদদের উপর শতভাগ শ্রদ্ধা রেখে তাঁদের সম্মানে আমার এই খোলা চিঠির আইডিয়া । কিছুই না করতে পারার চেয়ে অন্তত এইটুকু করার মধ্যে দিয়েই হয়তো একদিন ভালো কিছু করার সাহস হয়ে যাবে । বীজ ফুটে বটগাছ হতে খুব কি বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়? প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের, সময় তাঁকে পূর্ণতা দেবে।
জেনেছি বহুকাল আগে, পানির অপর নাম জীবন, এখন বুঝি কেন পানির অপর নাম জীবন? আসছে সময়, পরবর্তীরা জীবন দিয়েই জেনে নেবে পানির অপর নাম জীবন। পূর্ববর্তীগণ শিখিয়ে গেছেন, তৃষ্ণার্তকে পানি দিও । এখন, অসময়ে পানিতে ডুবে মরি। সময়ে পানির জন্য মরুভূমি বুকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত, তিস্তার করুণ জীবনী পড়ি! দিদি, ভুলে যাচ্ছো কেন? এই জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি । তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছে যেই জাতি, প্রাণের দামে পাওয়া দেশ গড়তে, প্রয়োজনে পানির জন্য রক্ত নদী বইয়ে দেবে । বৃহৎ এর দম্ভোক্তি, ক্ষুদ্র পাখীর ঠোঁটে ছুঁড়ে দেয়া পাথরের আঘাত বিষয়ক করুণ গল্পটা জেনে নিও দিদি, এ গল্প তোমার আগামী রাজনীতির পাথেয় হবে জেনো ।
আমার রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় খাবারের সাথে ডেজার্ট হিসাবে পায়েশ , বহুজাতিক মিষ্টি কোমল পানীয়, আর দুই ধরনের সাদা পানি পাওয়া যায় । একটি হচ্ছে, একাধিক নামে বটলজাত মিনারেল পানি, আর অন্যটি জার ভর্তি ফিল্টার পানি। যা, গ্লাসে করে বিক্রি ও পরিবেশন করা হয় ।  খোলা চিঠিটিতে কথাগুলো বলেছি এইভাবে "জেনেছি বহুকাল আগে পানির অন্য নাম জীবন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে, এখানে খোলা জীবনের (পানি) মূল্য গ্রহণ করা হবে না" । যা জানুয়ারি ১৫ , ২০১৫ তারিখ থেকে টেবিলের উপরে গ্লাসের নীচে নীচে সেঁটে দিয়েছি। এবং যতদিন "মজা''  বেঁচে থাকবে, এই নিয়ম বলবত রয়ে যাবে সূর্যের উদয়াস্ত নিয়মের মতোই ইনশাহআল্লাহ্‌ । কিছু কি শিখলে দিদি? শিখবে কি করে? শিক্ষার জন্য ভাষার দরকার, তোমরা তো ভাষার জন্য জীবন দাওনি। তোমরা শেষ। উল্টো তোমাদের হিন্দির আগ্রাসনে রবীন্দ্রনাথ মরতে বসেছেন । দেখে নিও এই বাংলার মানুষই ঠাকুরকে বাঁচিয়ে রাখবে ।
সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অব্দি রেইললাইনের মতো পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে ভালো-মন্দ, চোর-সাধু, আলো-আঁধারের কাহন গাড়ী । কখনো, ভালো এগিয়ে যায় সম্মুখে। মন্দ, দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে থাকে খাদে । আবার কখনো বা মন্দ এগিয়ে যায় বহুদূর । ভালো, আঘাতপ্রাপ্ত ডলফিনের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে সময়ের সাগর তীরে। হুম্মম্ম... আপনি আমি আমরা কেউ অথরিটি নই । চাপিয়ে দেওয়া জীবন ধারন করে যাচ্ছি মাত্র, জীবনকে যাপন করছে জেলখাটা দাগি'রাই । এক অদ্ভূত অনিয়মের মধ্যে সয়ে যাচ্ছি সব। আমাদের কারো মধ্যে কোন বিকার নেই, নাকি বিকার থাকতে নেই!
এই যে, আপনি যেভাবে ভাবছেন, আপনার মতো অনেকেই ভাবছে। একদিন এই ভাবনাগুলো এক সাথে হয়ে যাবে, কোটি স্বর, এক সুরে বেজে উঠবে। সংগীতের বদলে বিস্ফোরণ হবে। ভালোর খবরদারীতে এই পৃথিবীতে একদিন সুন্দরের আবাদ হবে। এই সুন্দরের স্বপ্ন নিয়েই অসুন্দরের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছি রেইললাইনের মতো।
ফেইসবুকের কল্যাণে গত দুই এক বছর যাবৎ লক্ষ্য করছি, সকল শ্রেণীর ছোট বড় জোয়ান বুড়োর মধ্যে বিশাল উৎসাহ উদ্দীপনায় “হ্যালোয়িন ডে” মানে "ভুত দিবস" পালনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আদান প্রদান চলছে খুব আন্তরিক ও মায়াবী পরিবেশে  এবং অধিকাংশ সচ্ছ্বল পরিবারের মাঝে এই দিনকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের রান্না-বান্নার আয়োজনে ও পোশাকে এক ধরনের উৎসব বয়ে গেছে, এ বাড়ী ও বাড়ী দাওয়াত দেয়া নেয়ার মধ্য দিয়ে। যারা আরো বেশী সামর্থ রাখেন তারা তো রীতিমতো ছোট বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে স্টার/ফাইভস্টার দখলে রেখেছেন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। আমার এইসব আনন্দে বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই বরং উৎসাহ পাই খুব । যুগপৎ এটাও ভাবি, যদি কেউ বা কারা কোন একটা দিন বা রাতকে Veil Day বা Yashmak Day অর্থাৎ "বোরকা দিবস" বা "হিজাব দিবস" পালনের ঘোষণা দেন তাহলে দেশের সকল স্তরের লোকদের মধ্যে কি একই ধরনের আনন্দ প্রতিক্রিয়া হবে? সকলে কি সানন্দে সেটা গ্রহণ করে একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে একটা আনন্দ দিবস পালন করবেন? নিজেদের কোমল প্রাণ শিশুদের নানা রঙ এর নানা ডিজাইনের হিজাব সম্বলিত সালোয়ার কামিজ, টুপি পাঞ্জাবি পড়িয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্দোষ আনন্দ দিবস পালনে ব্যতিব্যস্ত থাকবেন? নাকি নাক সিঁটকে মৌলবাদী মৌলবাদী বলে শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলবেন পরিচিত আকাশ বাতাস ।
আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে ।

(চলতে থাকবে)

জ্ঞ্যানের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হচ্ছে বিনয় । বিনয় মিশ্রিত জ্ঞ্যান প্রকৃতির মতো মোলায়েম এবং সুন্দর । এই সুন্দর , স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়ায় আষাঢ়ের মায়াবি জ্যোৎস্নার মতো । বিনয় বিহীন জ্ঞ্যান হুতোমের মুখশ্রী মনে করিয়ে দেয় বারবার । এই জ্ঞ্যান, অন্ধকারের কাকতাড়ুয়ার অদ্ভুত অপেক্ষার মতো হাস্যকর । এর সাথে যদি ছিটে ফোটা অহংকারের গুড়ো থাকে তাহলে সোলকলা পুর্ন । এই জ্ঞ্যানের হাওয়া বাতাস গায়ে মেখেই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে ফ্রেমে বাঁধা হাস্যোজ্বল মুখোচ্ছবি নিয়ে ।
কি অদ্ভুত এই দেশ ! অদ্ভুতেরও অধিক অদ্ভুত এই দেশের মানুষের আচরণ । নুন্যতম যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রচারের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যত্রতত্র যায়গা করে নেয়ার ইঁদুর দৌড়ে ব্যাতি ব্যস্ত করে রাখে লোকালয় । অন্যকে বিরক্ত করে হলেও নিজের ঝান্ডা উড়িয়ে রাখতে হবে ! এরা যোগ্যোতার স্বীকৃতি আদায়ে ভার্চুয়াল সন্ত্রাসে নিষ্ঠুর ! এদের সমালোচনা করা যাবে না , শুধু পছন্দের টিপসই দিয়ে যেতে হবে ! নয়তো শব্দধোলাই শুরু । এ ধোলাই শুরু হবে একা , পড়ে যোগ হবে তোষামোদি তেলাপোকা দল ! একবার ও কেউ ভাবছি না , শান্তির ছাউনি থেকে ক্রমে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছি ! কেবলই দূরে সরে যাচ্ছি অহঙ্গকারের অন্ধকারে ডুবঝাপ দিয়ে !  জ্ঞ্যান ও বিনয়ের মিশেলে যে মোহনীয় মুখশ্রী তৈরী হয় , তা দর্শনে অন্তরের শেষ প্রান্তে মুগ্ধতার এক ঝিরি ঝর্না বয়ে যায় ,আমি সেই অনিন্দ মুখের অনুবাদ করার ক্ষীণ চেষ্টা করে যাবো স্বল্প শব্দের অল্প কথায় অথবা লক্ষ শদের বহু কথায় । প্রথম কিস্তির লেখা পড়ে স্বজন সুজন বহুজন তাঁদের ভালোলাগার টিপসহি আর প্রাণবন্ত মন্তব্য দিয়ে উৎসাহের খেয়ায় ভাসিয়ে আমাকে বেঁধেছেন কৃতজ্ঞতার অদৃশ্য নাইলন গিঁটে । এই নাদান তাঁদের ভালোবাসার স্নেহ-শ্রদ্ধামূলে নতজানু । এই লেখাটি একটি উপন্যাসের আকার নিতে পারতো , গল্পের বরফ ফোটায় ফোটায় গলিয়ে পরিমান মতো নিমক গুর ঝাল টক এর সমবায়ে একটা নতুন স্বাদ দেয়া যেতো , তবু ঐ পথে যাবো না আমি । ও পথ আমার নয় ।
স্মৃতি সংরক্ষনের বয়স হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ভাই বোন আত্নীয় স্বজন , নর নারী নির্বিশেষে যতো বন্ধু পেয়েছি তাদের কাছ থেকে পাওয়া অনিন্দ আনন্দময় ভালোবাসার বিশ্বাসী পাটাতনে বুকের বোতাম খোলা সময়, নিদাঘ দাহে বিনয়ের সুশীতল ছায়া-প্রশ্রয়ে ক্লান্তি বিয়োগের স্বস্তি , ঘৃনার ধারালো শব্দ ছুরির নিঠুর আঘাত , কৌশলী আন্তরিকতায় কাব্যিক প্রতারনার চান্দ্রিক রুপোশ্রী, পাওয়া না পাওয়ার ঝাঁঝালো ফোঁড়ন , সযত্নে অযত্ন করন , অহংকারের ঘন স্বভাবে দুঃখ বিলাশ আর গীবতের বহুমাত্রিক রাগ সঙ্গীতে বুঁদ হয়ে অন্যের সুখ শান্তিপুর্ণ জীবনকে ক্রুরের স্বভাবে যন্ত্রনার নরকে ফেলে দেয়ার মতো যাচ্ছে-তাই মানসিকতার দুর্গন্ধময় কদর্য মুখের ইঙ্গতিয় স্কেচ আঁকার এক ধারাবাহিক চেস্টা থাকবে আমার এই লেখায় , পরিস্কার কোন নাম , ঠিকানা বা ছবি ব্যাবহার করে নয় , কাউকে হেয় করে সামাজিক লজ্জার মুখোমুখি দাঁর করানো বা অহেতুক, উঁচুতে তুলে সরলের দৃষ্টি সীমার বাইরে নিয়ে উজ্জ্বল তারকায় রুপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই প্রচেষ্টা নয় । আমার জীবন ঘসা যে আগুনের তাপ আমি মুহুর্তে মুহুর্তে দিনে দিনে বছরে বছরে এক জীবনে সয়ে গেছি ধরিত্রীর ধৈর্যে,
এ লেখা সেই সকল তাপ উত্তাপ ও শীতল বরফের জলছবি মাত্র । এখানে সকলেই নিরাপদ ।
জীবন যেহেতু সামাজিক,সমাজ যেহেতু সচল ,ফলে চলাচলের এই জীবনে প্রেম প্রীতি ভালবাসা ঘৃনা পছন্দ অপছন্দের প্রচ্ছদ নিয়েই আমরা প্রকাশিত । এই বয়ানে যদি কোন পাঠক কোথাও নিজেকে খুঁজে পেয়ে যান তাহলে ধরে নেবেন চলমান জগত ও জীবনে আপনি একা নন বরং দল ভারি নিয়েই বেঁচে আছেন মানে অপমানে প্রেমে বিরহে ঘৃনা সন্মানে ।
রুমের দরোজায় টোকা পড়ার শব্দ। ঘন শব্দের টোকা । ধরন বলে দেয় এই টোকা আমার বড় মেয়ের । তাকে আমি বাবা বলে ডাকি এবং "আপনি" সম্বোধন করি । কন্যা সন্তানকে 'বাবা' বলি ! কেন আপনি বলে সম্বোধন করি ? এই বয়ানে অন্য আরেকদিন আসবো ,আপাতত দরোজা খুলে বরং তার টোকা দেয়ার হেতুটা জেনে নিই । দরোজা খুলতেই 'বাবা তালেব কাকা এসেছেন , তোমাকে খুঁজছেন । ড্রয়িংরুমে বসিয়েছি । তুমি গিয়ে দেখা করো , আমি গ্রীন টি আর পেপে কেটে পাঠাচ্ছি । বিকেলে তো তিনি আবার ফল ছাড়া কিছু খাননা । অল্প কথা কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো দ্রুত তালে টানা বলে তাড়া দিয়ে চলে গেল কিচেনে ।এমন মায়াবী শাসন পাওয়ার লোভে হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। ক্ষণকালের আয়ুতে মানুষের এমন অগুনিত ইচ্ছা অপুর্নতার নক্ষত্র হয়ে দুরের আকাশেই রয়ে যায় দল বেঁধে । ক্ষনায়ুর রহস্য ঘোরে ডুবে যাওয়ার আগেই ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখি তালেব ভাই খুব মনযোগ দিয়ে শব্দহীন কার্টুন ছবি দেখছেন টিভিতে । এটি তার পুরনো শিশু অভ্যেস । আমার মুরুব্বী বন্ধু । যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা । ডান পায়ে গুলি নিয়ে একটু টেনে হাটেন । একই পাড়ায় থাকি উত্তর আর দক্ষিন মাঝ খানে শুধু দুটো লাইন । সালাম দিয়ে সামনের সোফায় বসতে বসতে জানতে চাইলাম, 'কেমন আছেন তালেব ভাই ? বাঙ্গলা কবিতার অভিভাবক শামসুর রাহমানের কবিতার লাইন ধরে বললেন "খাচ্ছি দাচ্ছি চকচকে ব্লেডে সেভ করছি" দিনকাল কাটিয়ে নিচ্ছি বেশ, বলেই মধ্যম সরে একটা টানা ঢেউ খেলানো হাসি দিলেন । আমিও তার এই ঢেউ খেলানো হাসির দোলে দুলতে থাকলাম কিছুক্ষন, তাকে খুশী করার জন্য ? নাহ , আসলে এভাবেই বলে, শুনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি । কোন ভুমিকা ছাড়াই বলে উঠলেন, 'শোন, তোমার জন্য একটা সুসংবাদ নিয়ে এসেছি' । আমি নিস্পলক তাকিয়ে থাকি তার দিকে । দুই চোখে স্বস্তির কোমল একটা দ্যুতি দেখতে পাই । এমন দৃষ্টি তাঁর কখনো দেখিনি আগে । ফলে, সুসংবাদ শোনার গভীর আগ্রহের অস্থিরতা আমি গোপন করে রাখি । না হাঁচি, না কাশি ধরনের একটা মৃদু শব্দের ঝাকুনি গলায় তুলে বললেন ' কলেজ গেট এ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সরকার আমার নামে একটা ফ্ল্যাট বরাদ্দ করেছে ; আমি ফ্ল্যাটটা বুঝে পেয়েছি । আগামি পরশুদিন ওখানে উঠবো । বাদ আছর মিলাদ পড়াবো , তুমি কোন ধরনের ভুল না করে চলে আসবে'। এই সংবাদটি আমার জন্য শুধু সুসংবাদ নয় ,অতীব শুভ সংবাদ । কারণ, অনেক গুলো কস্টের সমাহারে তার জীবন, যার দুই একটার লাগাম আমাকেও ধরে সামলাতে হতো মাঝে মধ্যে ।
সুর্যাস্তের কিয়ত আগে, চকচকে সুর্যোদয়ের ওম ধরানো আরামের মতো একটা আনন্দ সংবাদের অনুভুতি ভিতরে লুকিয়ে রেখে আমি কপট বেদনার একটা ভান করে ভাংগা স্বরে টেনে টেনে বললাম 'অত্যাধুনিক ডিজাইনের ফ্ল্যাট পেয়েছেন আপনি, সুখ করে থাকবেন আপনি আর বলছেন সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন আমার জন্যে' ?
তালেব ভাই আমার চেয়েও তিন ধাপ কালো মুখ নিয়ে বললেন "এতদিন তোমাকে আপন বলেই জানতাম ,ঘরের মানুষ মনের মানুষ বলেই বিশ্বাস করতাম , তাই সময় পেলেই গহীনের কপাট খুলে সুখ দুখের খুচড়ো কয়েন গুলো তোমাকে নিয়েই এখানকারটা সেখানে ,সেখানকারটা এখানে করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতাম । আজ বলছো, আমার প্রাপ্তি তোমার সুসংবাদ নয়! তোমাকে নিয়ে কি বোকার স্বর্গেইনা বাস করেছি এতোদিন ! গভীর সত্যটি জানতে পেরে ভালোই হল, তোমার সময় নষ্ট করে কাজ নেই ,আজ উঠি তাহলে "। বলেই হুট করে উঠে দাঁড়ালেন । তার এই হঠাৎ উঠে যাওয়া আমাকে ভীষণ চমকে দেয় ! তার সাথে মজাটা কি একটু বেশিই করে ফেলেছি! বুকের ভিতর থেকে জলের স্রোত চোখ বেয়ে উপচে পড়ার চিনচিন কিট কিট কামর টের পাচ্ছি । আমি পাগলের মতো নাহ নাহ বলে দাঁড়িয়ে যাই । ভাই আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছি...আমার এই শিশুপাগল চিৎকার শুনে তিনি আমাকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে জোড়ালো ঝাকুনি দিয়ে বললেন, " হ্যারে,মজারু কথার মজা কি শুধু তুমি একাই করতে পারো ? এতোদিন তোমার সাথে মিশে কিছু কি আমরাও শিখিনি ভেবেছো ?" রসবোধের উপচে পড়া ডিব্বা নিয়ে তিনি আরো তিন কাঠি সরেস । তার চোখে চোখ রেখে দুজনেই হেসে উঠি । হাসতে হাসতে বুকের কোটরে জমে থাকা অপেক্ষ্যারত জলেরা শান্তির হুইসেল পেয়ে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো ফোঁটায় ফোঁটায় ।
একজন আহত সৎ মুক্তিযোদ্ধার নির্গমনের পথে এনার্জি টিউবের আলোয়, সিঁড়ি ভাঙ্গা ছায়ারা মিলিয়ে যাওয়ার পরেও আমি খোলা দরোজার মেহগনি চৌকাঠে হেলান দিয়ে ভাবছিলাম, এইতো সেদিন, তবুও পয়তাল্লিশ বছর! এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম । একটাই মুখ , একটাই ডাক , একটাই কন্ঠস্বর , একটাই আকাশ ছোঁয়া আংগুলের ইশারায় সারাদেশে সাত কোটি মানবিক বোমা তৈরী হয়ে যায়! জেলায় জেলায়, মহকুমায় , থানায়,পাড়ায়,ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী হতে থাকলো । আমি তখন সাতের কোঠায় । বাবা তৎকালীন নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ থানায়, পুলিশ ডিপার্টম্যান্ট এ চাকুরীরত । এপ্রিলের এক রাতে বাড়ী ফিরে বাবা সবাইকে জানিয়ে দিলেন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন পাকিস্তান সরকারের অধীনে আর চাকুরী করবেননা, আমাদের সকলকে নিয়ে পালিয়ে যাবেন । পড়নের কাপড় চোপড় সহ হালকা যা কিছু মালামাল নেয়ার মতো, বেঁধে ছেঁদে নিতে বললেন । যেহেতু জীবন বাঁচানোর যাত্রা ফলে ভারী মালামালের মায়া ত্যাগ করতে হবে। একটু একটু করে দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার, তবু সেসবের মায়া ত্যাগ করে 'মা' গৃহ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কোন পথে কোন বাহনে কি ভাবে যাবো সে ব্যবস্থা তখনো ঠিক করেননি । তবে পালানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাবা পরেরদিন তাঁর কলিগদেরকে বেড়ানোর কথা বলে পরিবারের সকলকে মানে আমাদেরকে ওখান থেকে 'দশঘরিয়া' নামের এক গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন । থানা থেকে বেশ কয়েক মাইল পুবে চলে এলাম আমরা । যে বাড়ীটায় গিয়ে উঠলাম, সেই বাড়ীর গৃহিনী বাবাকে ধর্ম পিতা বলে মানতেন । সেই সুত্রে আমরা বড় বোনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলাম দিন কয়েকের জন্য । আমাদের সাথে বাবা না আসার কারনে তাঁকে নিয়ে আমরা খুব ভীত ও উৎকন্ঠিত ছিলাম। অবশেষে তিনি দুইদিন পরের এক সন্ধ্যায় এলেন। তাঁকে দেখে বাড়ীর সকলে সাহসী ও আনন্দিত হয়ে উঠলাম ।
সে রাতে বাড়ীর উঠোন ভর্তি মানুষ । শিশু কিশোর কিশোরী যুবক যুবতী সহ নানান বয়সের নরনারী । বাবা সকলের মাঝখানে গিয়ে বসলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডিওতে খবর প্রচার করবে । এক ফোঁটা  ঝোলা গুড়ের উপর পিঁপড়ে বসার মতো করে সবাই গোল হয়ে বসে আছে একটি ট্রাঞ্জিস্টরকে ঘিরে । যুদ্ধের খবর ও "চরমপত্র" শোনার জন্য অস্থির প্রতীক্ষ্যায় সকলে । সেই সময়এম,আর,আক্তার মুকুল পঠিত "চরমপত্র" ভীষণ জনপ্রিয় এক অধ্যায় ছিলো । এই চরমপত্র পাঠ শুনে মুক্তিযোদ্ধা সহ স্বাধিনতাকামী সমস্ত মানুষ এই পত্রপাঠ শোনার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষ্যায় থাকতেন, যা শুনে সমগ্র দেশবাসী বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতেন । এ বাড়ীতে একদিন একদিন করে তিনদিন কেটে গেলো । মায়ের কান্না কাটির জন্য ভাই'রা মুক্তিযুদ্ধে জেতে পারছিলেন না । দুইদিন পর মাকে কাঁদিয়ে বাবা আমার বড় দুই ভাইকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এ পাঠালেন । আগরতলা । আমরা ছয়ভাই দুইবোন । আমি কনিষ্ঠের উচ্চতায় আসীন । সবচেয়ে বড় তিনভাই ঢাকায় । দুজনে সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে চাকুরীজীবী। সেজো ভাই ঠিকাদার । যুদ্ধের শুরু থেকেই আমরা যোগাযোহীন ছিলাম। বড়বোন ছিলেন সংসারের চতুর্থ সন্তান । বিবাহ সুত্রে তিনি তখন স্বামীর সংসারে । ছয় ছয়টি সন্তানকে দৃষ্টির সীমানায় না পেয়ে মা তখন ভীশন রকম ভেঙ্গে পড়েন । চোখের নীচে কালি পড়ে চোয়াল ভেঙ্গে হঠাৎ মা'র যেন বয়স বেড়ে গেলো । বাবার গহীনেও একই তোলপাড় । প্রকাশ্য যুদ্ধের চেয়েও মনের ভিতর বাড়ীর যুদ্ধে তিনি অহর্নিশ ক্লান্ত কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতেননা উল্টো মাকে সান্তনা দিয়ে রাখতেন । তিনভাই আগরতলা চলে যাবার দিন দুই পর বাবা জানালেন আজ গভীর রাতে আমরা গ্রামের বাড়ীর দিকে রওয়ানা হবো ।
মালামাল বলতে বড় একটি টিনের ট্রাংক বাক্স যা আমাদের পড়নের কাপড় দিয়ে ঠাসা আর মা'র কোমরে গোঁজা তার গহনার পুটুলী,ব্যস । বুক ধরপর করা ভয় আর টান টান উত্তেজনা নিয়ে আমরা গভীর রাতের উথাল পাথাল প্রতীক্ষ্যায় । একটি নির্ঘুম রাত একটি শিশুতোষ মনে যে কতোটা গভীর ছাপ রেখে যেতে পারে আমি তার ভুক্ত ভোগী প্রমান । আজ বয়স আমার পঞ্চাশের সীমান্ত ছাড়িয়ে পরের ধাপ ছুয়ে, মধ্যপথ ছাড়িয়েছে । তবুও এতোটা বছর পড়েও কোন কারণে যদি একটি নিদ্রাহিন রাত কাটানোর সম্ভাবনা দেখা দেয় বুকের ভিতর সেই ভয়াল রাতের ভয় এসে আমাকে কাঁপিয়ে দেয় , আমি কাঁপতে থাকি। আমাকে দুলিয়ে দেয় আমি দুলতে থাকি । ফলে সারারাত নির্ঘুম থাকি । বাড়ীর সকলের কাছে থেকে চক্ষুসজল বিদায় নিয়ে কিছুদুর পায়ে হেঁটে আমরা একটি বিশাল ধানী নৌকায় চড়ে বসলাম, নৌকা বোঝাই ধানের বস্তা । নৌকা চলছে, অন্ধকারে আমরা চলছি । বৈঠার জলজ শব্দ, ঝিঁঝিঁ পোকা, কোলা ব্যাঙ,মাছের ঘাই,দুরে গুলির আওয়াজ,সবকিছু মিলিয়ে আমাদের দলগত নির্ঘুম যাত্রা ।এত ভয়ের মধ্যেও আমি এবং আমার পিঠবোন শিরীন আপা কি করে যেন ভোরের দিকে দন্ড খানেকের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । হঠাৎ কাছাকাছি কোথাও মর্টারের শেল পতনের শব্দে হুড়মুড় করে উঠে বসলাম । এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি নৌকার ভিতরে বাবা নেই । ভয়ে কেঁদে উঠতে গিয়ে দেখি তিনি আরো তিন মাঝির সংগে নদীর পাড় দিয়ে পায়ে হেঁটে নৌকার গুন টেনে চলছেন । এই ভাবে বাবা প্রয়োজনে কখনো গুন টেনে কখনো নৌকায় উঠে সামনের দিকে চারজন মাঝির একজন হয়ে দাড়বৈঠা বাইতেন । ছেঁড়া গেঞ্জি হাঁটুর উপর লুঙ্গী বেঁধে গামছায় মুখ মুছতে মুছতে বাবা দিব্বি মাঝি বনে গেছেন । নৌকার বড় মাঝি, যিনি পেছনে হালবৈঠা ধরে বসে থাকেন আর সময়ে অসময়ে হাঁক ডাক দিয়ে সকলকে নিয়ন্ত্রন করেন,অধিকাংশ সময় আমি তাঁর পাশেই বসে থাকতাম। জলে ও স্থলে পচা গলা ফুলে যাওয়া শৃগাল কুকুর কাক ও শকুনে খাওয়া হাত নেই মাথা নেই পাহীন বিচিত্র ধরনের মানুষের লাশ দেখতে দেখতে কেমন যেন বোবা বোবা হয়ে গিয়েছিলাম । কারো সাথে কোন কথা না বলে নদীর জলে চলতাম আর চোখের জলে ভাসতাম । বুক কাঁপানো ভয় নিয়ে মনে মনে ভাবতাম এতো শত হাজার লাশের মধ্যে আমার কোন ভাই নেইতো !
ঐ টুকুন বয়সে এই টুকুন স্বার্থপর ভাবনার বাইরে যেতে পারিনি, তখনো ভাবতে শিখিনি,যারা মরছে, যারা বেচে আছে স্বাধীনতার স্বপ্নে ,যারা যুদ্ধ করছে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আত্নীয় ।
সকলের ভাবনাকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন মা । তাঁর মুখের আদল তাঁর ভয় ও শংকাকে ঢেকে রাখতে পারেনি। তিনি নৌকাতে তখন রীতিমতো কাজের বুয়া । আমরা চারজন ছাড়া নৌকাতে বড় মাঝি সহ তারা ছয়জন, মোট দশজনের রান্না মাকে একা সামলাতে হতো । যে মা আমার, হেঁসেলে ঢুকে বুয়াদের বড়জোড় ইন্সট্রাকশন দিতেন, দিনের পছন্দের খাবার কি হবে সেই মা তখন দশজনের রান্না একা সামলাতেন । মসলা বাটা থেকে শুরু করে তরি-তরকারী মাছ-মাংস পেঁয়াজ কাটাকুটি সহ সব কিছুই নিজ হাতে করতেন । লাকড়ির চুলায় আগুন কমে এলে আমি বা আমার পিঠবোন মাঝে মধ্যে ফুকুনিতে ফুঁ দিয়ে উনুনের আগুনকে জোড়ালো করে দিতাম । মাকে সাহায্য (!) করা বলতে এটুকুই । তাঁকে দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই কয়েকদিন আগেও তিনি কি নিশ্চিন্ত রাশভারী ও সম্ভ্রান্ত মুখশ্রীর মানুষ ছিলেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চোখের নীচে কালি, স্নানহীন উসকোখুসকো চুল মসলা বাটা হলুদাভ হাত,পড়নের ময়লা সুতীশাড়ী, আর শরীরে মাছ মসলার মিশ্র গন্ধে মা যেন এক দুঃখিনী মানুষের চির চেনা ছবি হয়ে উঠলেন ।
এভাবে চলতে চলতে দুই রাত রাত দুই দিন পরের মধ্য দুপুরে পাক সেনাদের নির্দেশে মুন্সীগঞ্জের তালতলা কাঠপট্টি ঘাটে আমাদের নৌকা ভিড়াতে হলো । ইতিমধ্যে মা আমার বোনকে নিয়ে পাটাতনের নীচে চলে গেলেন । এখনো মনে আছে বড় মাঝিকে জাপটে ধরে আমি কি ভিশন কাঁপছিলাম । ঘাটে দাঁড়িয়ে পাকসেনা দল । ভেতরে পাঠালো দুজন বাঙ্গালী পুলিশ। নৌকায় কোন আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা বা মুক্তিযোদ্ধা পারাপার হচ্ছে কিনা জাতীয় নানান প্রশ্ন। বেয়নেটের খোঁচায় খোঁচায় বস্তা থেকে ধান গড়িয়ে পড়ছে । প্রতিটি বস্তা এভাবে পরখ করতে করতে এক সময় আমাদের ট্রাংক বাক্সটির সামনে এসে খুলে দেখাতে বললে বাবা কোমর থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে দিলেন। দুজনের একজন বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাক্সটিরে দিকে তাকিয়ে রয়েছে অন্যজন একটু উপুড় হয়ে ভিতরের কাপড়চোপড় নেড়ে চেড়ে পরখ করে দেখছে। উদ্দেশ্য, কিছু পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ করে কাপড়ের ভীর থেকে বাবার ডিউটি কালীন ব্যবহৃত পিতলের একটি 'পদবি ফুল' বাক্সের বাইরে এসে পাটাতনের উপর গড়িয়ে পড়লো শব্দ করে। আর বুঝি শেষ রক্ষা হলনা! বাবা মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। পাশের পুলিশটি তীরের দিকে তাকালো অপেক্ষ্যারত পাকীদের উদ্দেশ্যে,বাবা যেন কেঁপে উঠলেন। অন্য পুলিশটি তাঁর পায়ের বুট দিয়ে বাক্স থেকে বের হওয়া পদবি ফুলটি চাপা দিয়ে ধরলেন।
বড় মাঝির একটি হাত তখন আমার কাঁধ খামছে ধরেছে। অত্তটুকুন ছোট বয়সেও আমি বুঝতে পারলাম আমাদের শেষ রক্ষা হলোনা । এই দুইদিন কঠিন পথ চলতে চলতে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই যেন শিখে ফেলেছিলাম। আসন্ন সর্বনাশের ভয়ে কেঁদে না ফেলে সাহসে বুক বেঁধে চুপচাপ অপেক্ষ্যায় রইলাম। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা কিন্তু ভিশন তোলপাড় করা মুহুর্ত। তীরে দাঁড়ানো সেনা অফিসার হেঁকে উঠলো,"কুছ মিলা ক্যায়া?" এই কথা শুনে বাবার দুই কানের পিছন দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। হঠাৎ বোমা ফাটানো চিৎকারে চেকিংরত পুলিশটি বলে উঠলো,
স্যবকুছ ঠিক হ্যায় স্যার,কুছ নেহি মিলা। পড়ে বাবার মুখে শুনে কথা গুলোর মানে বুঝেছিলাম। আমরা সকলেই যেন সেদিন প্রথম মৃত্যুর আগে দ্বিতিয়বার জন্ম নিলাম। পুলিশ দুজন নৌকা ছেড়ে চলে যেতে যেতে নিচু স্বরে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে গেলেন- 'স্যার,আপনি ভাগ্যবান। আপনি এই শুয়োরের বাচ্চাদের হাত থেকে পালাতে পারছেন। দোয়া করেন আমরাও যেন পালাতে পারি,মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারি'। প্রতিউত্তরে মাথা নীচু করে বাবাকে কি যেন বিড়বিড় করতে শুনলাম কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারলামনা। মনে হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরনে কিছু বলেছিলেন। নিশ্চিত মৃত্য মুখে পতিত হয়ে হঠাৎ অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়ার আনন্দে কিনা জানিনা,বাবার মুখের শব্দগুলো স্পষ্ট প্রকাশ পেলনা।
তাঁর পরের সময়টা সাদামাটা ঝামেলা বিহীন। চলে এলাম গ্রামের বাড়ীতে। দেশও স্বাধীন হলো। একে একে ভাইরা যুদ্ধ শেষে ঘরে ফিরলেন। বাবা আবার কাজে যোগ দিলেন সদ্য স্বাধীন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। কাজে যোগ দিয়েই সেদিনের সেই দুই মহৎ প্রাণ পুলিশ দুজনকে বাবা অনেক চেস্টা করেছেন খুঁজে পেতে। অবসরের আগ পর্যন্ত খুঁজেছেন,পাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের জন্য দোয়া করে গেছেন। বাবা চলে গেছেন উনিশশত একানব্বুই'র তেরো জানুয়ারী । মা গেলেন দুই হাজার পাঁচ এর বিশ অক্টোবর। আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিতে সেই মানুষ দুজন এখনো তাজা,অমলীন। মা গেছেন বাবা গেছেন দুই ভাই এক বোন ও চলে গেছেন সুনির্ধারিত পথে। সেদিনের আমরা দুই ভাইবোন এখনো আছি । একদিন আমরাও চলে যাবো নিশ্চিত, পুর্ববর্তীগনের পথে। স্থায়ী নিবাসে যাত্রার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তাঁদের জন্য প্রার্থনা থাকবে- তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের সকলেই মহান স্রষ্টার, রহমতের সুশীতল ছায়ায় থাকুক।
বাবাই'র ডাকে পয়তাল্লিশ বছর পিছন থেকে বিদ্যুতের গতিতে ফিরে এলাম । আম্মু খেতে ডাকছে, ভিতরে এসো । বাবাই আমার মেজো মেয়ে । ক্লাশ এইটে পড়ে ধানমন্ডি নালন্দা স্কুলে। বড় অগোছালো মেয়ে, সারাদিন একাকী চুপচাপ কবি কবি স্বভাবের এলোমেলো পোষাকে কিছুক্ষন গিটার বাজাচ্ছে তো পরক্ষনেই কিউব মিলাতে বসে পড়লো। ওটা শেষ হতেই হয়তো ল্যাপটপে বসে কোন ইংরেজী গানের লিরিক নিয়ে মেতে থাকলো কিংবা হুমায়ুন আহমেদ ,সত্যজিৎ বা শার্লক হোমস নিয়ে মশগুল অথবা ছবি আকা বা ছড়া লিখার চেস্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো । তবে তার প্রতিটি কাজেই আত্নবিশ্বাষের বাড়তি দম অনুভব করা যায় । আমি তাদের স্বাধীনতায় যোগান দেয়া ছাড়া অন্যভাবে মাথা গলাইনা বরং তাদের শাষণে বারণে নিজেকে বেঁধে নিয়ে সকলের মনে এক ধরনের তৃপ্তি সরবারাহ করি। মেহগনি চৌকাঠ ছেড়ে সরাসরি ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম রাতের খাবার খেতে । খাবার শেষ করে বারান্দায় মিনিট দশেক হেঁটে ঘুমাতে যাবার আগে বছর দশেক আগের পুড়ানো একটি ডাইরি নিয়ে বিছানায় শুয়েছি । পড়তে পড়তে স্মৃতি চারণ আমার নিদ্রার সিডেটিভ হিসেবে কাজ করে । ডাইরিটা মাঝখান থেকে খুলে ধরতেই যে পৃষ্ঠাটি চোখের দখলে গেলো, তা এতোদিন পড়ে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে কবিতা লিখার চেষ্টা করেছিলাম হয়তো...যেভাবে ফসলকে ছুঁয়ে যায় বৃস্টির জল , যদি তুমিও... যেভাবে আকাশ দখলে নেয় মেঘেদের দল , যদি তুমিও... যেভাবে বজ্রপাতের শব্দপ্রেমে কাংশায় উজানী পথ চলে কৈ এর ঝাঁক , যদি তুমিও ... যেভাবে জলের অতল থেকে উঠে এসে শুশুক নেয় উয়াশী জীবন , যদি তুমিও (!) যে ভাবে কাঠ পাখী খুঠে খায় বৃক্ষ্যের বুক , যদি তুমিও... যেভাবে গ্রহনে যায় সুর্যের প্রতাপ... যদি তুমিও ...তাহলে শহস্রাব্দের শেষ তাজমহল নির্মানে আমি যুগের শাহজাহান হবো। 
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাংলো সকাল সকাল। বন্ধের দিন হিসেব করে আরো ঘন্টা খানেক বেশী ঘুমানোর ইচ্ছে ছিলো । ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলটা রিসিভ করতে গিয়ে দেখি সুদুর আমেরিকা থেকে শাহিন ভাই ফোন করেছেন । পিকো সেকেন্ডের মধ্যেই মনের ঘরের বিরক্তি উধাউ,তার বদলে খাঁচা খোলা পায়রা ডিগবাজি খায় আনন্দ আকাশে । সে আমার বড় ভাই, সে আমার বন্ধু । জীবনের এক অবাক ফসলের নাম বন্ধুত্ব যা শুধু ঐশ্বর্য বাড়ায় নিস্ব করে না । এই স্বর্গীয় ঐশ্বর্যে, বন্ধুরা নিস্ব হয়না । যে নিস্ব হলো ! সে কোন কালেই বন্ধু ছিলোনা । হৃদয় হ্রদের টই টূম্বূর মায়া মমতা ঐশ্বর্যকে দেয় এন্টিক মর্যাদা । মোহ দেয় ক্ষতের তিলক । কারো কারো কাছে বন্ধুত্ব মানে এক যোগ এক, সমান সমান দুই এর অধিক, অর্থাৎ প্রাপ্তির চিকন প্রত্যাশা । আমার কাছে বন্ধুত্ব মানে এক যোগ এক, সমান সমান এক । ব্যক্তিত্বের নির্জন পথে সুশৃঙ্খল আচরণের চলাচল । কারো বা কোন প্রভাবে যদি সে চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় , তবে বুঝে নিতে হবে ব্যক্তিত্বে ঘাটতি রয়েছে । আমার কাছে শাহিন ভাই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের উদাহরণ । সকাল সকাল ফোন করে জানালেন আগামি সপ্তাহে স্বপরিবারে দেশে আসছেন বেড়াতে । অবশেষে মান ভেংগেছে জনাবের । এক দিঘি অভিমান নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন একদিন। বাইশ বছর পর ফিরছেন । অদ্ভুত এক ফুরফুরে আনন্দ নিয়ে আজকের দিনটি শুরু হতে যাচ্ছে টের পেয়েই খুব কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে এই সিশু-সুর্যের নরম আলোয় । আমার এমনই হয়,ভালোলাগার কিছু ঘটে গেলে গুন গুন করে গান গাইতে ইচ্ছে করে অথবা কবিতা পড়তে ইচ্ছে করে । কৈশরের এই অভ্যেসটি এখনো লেগে আছে স্বভাবে । চিলির কবি ভীসেন্তে হুইদব্রোর বইটি বালিশের পাশেই ছিলো । হাত বাড়িয়ে পেয়ে যাই ।    I am absent but deep in this absence /there is the waiting for my self/And this waiting is another from of presence .

এরই মধ্যে, উত্তরে শীত বসত নিতে শুরু করেছে । শাক সবজি লতা পাতা ঘাস দূর্বায় কুয়াশার স্বর্ণ দানা সকাল সন্ধ্যায় হামাগুড়ি খায় গাছে, ঘাসে ও মাটিতে । রাজধানী ঢাকায় গাদা গাদি বসবাসে মানুষ যখন ঘামের নদী সাতরায়,উত্তরে তখন জড়সড় শীতের কামড় । ঘরের চালা আছে, পাশ বেড়া নেই । পাশ বেড়া আছে , জানালায় পাল্লা নেই , জানালায় পাল্লা আছে , দরোজায় কপাট নেই । হা খোলা ঘর দোর । এখানে শীত যেন পাশ বালিশ ! তাড়ানোর উপায় নেই, তাই নিয়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকে ফ্রোজেন মানুষ । এভাবে কাব্য করে লিখা যাবে অনেক কিছু , দীঘল কবিতা হবে লিখার পাতায় । তাতে করে বঞ্চিত মানুষ কি পাবে ? তারা না বোঝে কবিতা, না বোঝে আলাপ । তারা বোঝে কনকনে শীত আছে উষ্ণতার কম্বল বা লেপ নেই । পেটে খুধা আছে , খাবার নেই । উত্তরের পান্ত মানুষ এমন মানবেতর জীবন নিয়ে বেঁচে থাকে , হয়তো একদিন সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে এই আশায় । যেখানে একদা প্রত্যেকেরই কম বেশী জমি নিয়ে সুখের গেরস্থালী ছিলো । ভাঙ্গনের ভাগ্যে পড়ে আজ সকলেই নিজ গ্রামে উদ্বাস্তু । রংপুরের গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জ এর নদী ভাঙ্গা মানুষের কাছে হাজার চারেক শীত কম্বল বিলি করার সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় "আলোঘর"এর অনন্ত আদিল । ওর সকল ফেবু বন্ধুদের ডাক দিয়েছে, সাহায্যের জোড়া হাতে এগিয়ে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছে । আদিল'রা আছে বলেই ভালো ভাবনা গুলো বেঁচে আছে এখনো । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পথে পড়ে থাকা পানিয়ের খালি বোতল,চিপস সিগারেটের ছেঁড়া পরিত্যাক্ত প্যাকেট কুড়িয়ে এক যায়গায় জড়ো করে ফের চলতে শুরু করবে নিজের পথে । ব্যক্তি জীবনে একটা অনলাইন পত্রিকা চালায় অনন্ত । যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল , তবু শুরু হোক শুভ যাত্রা । আপনিও আসুন না এগিয়ে আপনার সীমিত সামর্থে । আপনারা যারা দেশে বিদেশে বসে এই সকল কর্ম কান্ডের প্রতি বিশ্বস্ত দৃষ্টি রাখছেন তাদের সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো, আমাদের সকলের ভালোবাসার বিন্দু জল বঞ্চিত'কে দেবে সমুদ্র স্নানের তৃপ্তি । এগিয়ে আসুন । হাত বাড়িয়ে দিন প্লীজ । সকলের প্রতি করজোড়ে আহ্বান । দেশে বিদেশে যে যেখানেই থাকুন বানে বন্যায় ঝড়ে শীতে সহযোগিতার হাত খুলে এগিয়ে আসুন , যার যতটুকু সামর্থ্য, তাই দিয়ে । কবি সাহিত্যিক ব্যবসায়ী চাকুরীজীবী ছাত্র অছাত্র সকলে দলবেঁধে এগিয়ে এলে দুঃখীকে দুঃখ বেঁধে ঘর করে সে সাধ্য দুঃখের থাকবে কতোকাল ? দিনে একটা সিগারেট কম খেলে অথবা এক পেগ সোমরস কম গিলে দানের হাত দীর্ঘ হলে কি সৃষ্টিশীলতা মুখ লুকোবে লজ্জা নিয়ে ভেন্না বনে?   
কোকিল আর ময়না সুরে ও সুন্দরে অসাধারণ । একজন ধার করা বাড়ীতে ডিম পাড়ে অন্যজন শেখানো বুলিতে পটু । বুকে হাত দিয়ে বলুনতো, এই রকম কোন ত্রুটি আপনারও রয়েছে কিনা ?    স্বীকারোক্তির অসীম সাহস নিয়ে বলছি, আমি মানুষটা একদমই ভালো নই। তবু শত কোটি মানুষ রয়েছে আমার চেয়ে খারাপ । তাই বলে কি অন্যের জন্যে ভাববোনা! ছোট ছোট সাধ্য নিয়েই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলে ভালো কিছু ,বড় কিছু হয়ে যেতে কতক্ষণ ? প্রয়োজন শুধু বিশ্বস্ত উদ্যোগের আর সৎ মানসিকতার । দল বেঁধে ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া বা পত্রিকার ছাপানো খবরের ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে এই বিশ্বস্ততা খুঁজে পাওয়া যাবেনা । এর জন্যে প্রয়োজন হৃদ-মাজারে মায়াবী জলের শন্তরণ । হিপোক্রেসির মুখোশে আটকে পড়া মানুষের পক্ষে এই কম্ম সম্ভব নয় । নেমে আসুন ,বেড়িয়ে পড়ি মুখোশ ছেড়ে ।
১৯৯৪ সালে সুদানের জাতিসংঘের খাদ্য গুদামের খুব কাছ থেকে ফটোগ্রাফার Kevin Carter উপুড় হয়ে পড়ে থাকা জঠর কাঁপানো ক্ষুধার্ত এক শিশুর ছবি তুলেছিলেন । ঠিক তাঁর পিছনেই ক্ষুধার্ত শিশুটির মৃত্যু প্রতিক্ষ্যার প্রহড় গুনছে এক বুড়ো শকুন ! সেও ক্ষুধার্ত , বাচ্চাটির মৃত্যুর অপেক্ষ্যায় ধারালো ঠোট সামলে রেখেছে শাষনে । চাপিয়ে দেয়া মৃত্যু উৎসব মুখর পৃথিবীতে যে প্রতীক্ষ্যা মানুষের কাছে আশা করা বাতুলতা সেই কাজটাই কতো সহজ-ধৈর্যে করে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতার প্রতীক বুড়ো শকুন! Kevin Carter এর এই ছবিটি পরবর্তীতে দুনিয়া কাঁপানো ছবির স্বীকৃতি পায় । Pulitzer নিজেদের সন্মান বৃদ্ধির কাজটি ঠিকই সেরে নিয়েছে Kevin কে পুরষ্কৃত করে । নিষ্পাপ শিশুটি কি সভ্যতার ললাটে লানতের সিলমোহর রেখে অন্তিমে চলে গেছে নাকি বেঁচে থেকে অপেক্ষ্যায় থাকা বুড়ো শকুন কে দু আঙ্গুল দেখিয়ে হতাশ করেছে এই খবর কারো কাছে নেই । এমনকি Kevin Carter ও জানতেন না ওর পরিণতি কি হয়েছিল । তবে ছবিটি তোলার তিনমাস পর একটা খবর অনেকেই জেনেছে Kevin Carter সুইসাইড করে পৃথিবীর তথাকথিত সভ্যদের অস্বিকার করে গেছেন নিজের মানবিক বোধকে সমুন্বত রেখে । মৃত্যু পুর্বে তিনি একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছিলেন ।
"Dear God, I promise I will never waste my food no matter
how bad it can taste and how full i may be. I pray that
He will protect this little boy, guide and deliver him away
from his misery. I pray that we will be more sensitive
towards the world around us and not be blinded by our
own selfish nature and interests. I hope this picture will always serve as a reminder to us that how fortunate we are and that we must never ever take things for granted."
অথচ,এক শ্রেণীতে অঢেল খাবার নষ্ট করাটা আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে । পৃথিবীর মোড়ল দেশ গুলো জাহাজ ভরে ভরে চাল গম সাগরে ফেলে দিচ্ছে প্রতি বছর । তাদের মোড়ল গিরি টিকিয়ে রাখতে গেলে পৃথিবীতে অভাবকে লালন পালন করে জিইয়ে রাখতে হবে ! পদে প্রকরণে মালিক দিয়েছেন অফুরন্ত, বান্দা কাটছাট করে মানুষ মারে বাজেট কমিয়ে! আমরা অনেকেই কারণে-অকারণে প্রায়ই খাবার নষ্ট করি। প্রতি মিনিটে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে খাবারের অভাবে, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে।

কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে। সেদিন খাদ্য তালিকায় যা যা ছিলো তাতে আমি নিশ্চিত , মানসিক ভাবে সুস্থ কোন মানুষের পক্ষে এই তালিকা তৈরী করা সম্ভব নয় এবং এই পরিমানের খাবার লাখে একজনের পক্ষেও খাওয়া সম্ভব নয় । খাদ্য তালিকাটি তাহলে কি রকমের হতে পারে ? আসুন চোখ বুলিয়ে জেনে নেই ।
(১) জনপ্রতি একটা করে ৫০০গ্রামের আস্ত চিকেন রোস্ট (২) চাইনিজ ধরনে চিকেন ফ্রাই ইচ্ছে মতো (৩) একটা করে কোয়েল পাখীর রোস্ট(৪) ডিমের কোরমা(৫) রুই মাছ ভাজা(৬) তেলাপিয়া ভাজা(৭) কৈ মাছ ভাজা(৮) গলদা চিংড়ী ভুনা(৯) চিকেন সাসলিক(১০) চিকেন,প্রন মিক্সড সাদা সবজি(১১) মাটন ভুনা(১২) বিফ ভুনা(১৩) চিকেন কারি(১৪) বাসমতী চালের সাদা ভাত (১৫)বাসমতী চালের মাটন কাচ্চি(১৬)চিনিগুড়ো চালের সাদা পোলাউ(১৭)ছোট মিস্টি যোগে জর্দা
(১৮)পায়েশ(১৯)দই(২০)রসমালাই(২১)বোরহানি(২৩)সালাদ(২৪)মিনারেলের বটল
(২৫)চাহিদা অনুযায়ী কোমল পানীয় । কনে পক্ষের বাড়ীর ব্যবস্থা এইটি । এতো কিছুর পরেও কনের বাবা সহ অন্যান্য আত্নীয় স্বজন টেবিলে টেবিলে ঘুরে ঘুরে দুঃখ প্রকাশ করছে খুব বেশী ভালো কিছু আয়োজন করতে পারেনি বলে! এবং তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খুবই লজ্জিত ! কানা ঘুসায় শুনতে পেলাম বর পক্ষ বৌ-ভাতে এর চেয়ে অন্তত একটি আইটেম বেশী আয়োজন না করলে তাদের মানে ঘাটতি চলে আসবে । ইতিমধ্যে বর পক্ষের একজন কনে পক্ষকে টপকে যাওয়ার বাড়তি আইটেমটিও খুঁজে পেয়েছেন ! বৌ-ভাতে তারা চলতি আইটেম গুলোর সাথে একটা করে বাচ্চা কবুতরের রোস্ট দেবেন ! টেবিল ভর্তি এতো খাবার দেখে এবং বাকিদের কথাবার্তা শুনে আমার ভিশন বমি বমি পাচ্ছিলো । কাঁদবো ? প্রকাশ্যে তা সম্ভব নয় । হাসবো সে পরিবেশ নেই । বমি করবো এই ভিড়ে সে উপায়ও নেই । নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো এই  ভেবে যে, মাথা পিছু ঋনের দেশে আমরা কতো অপচয়ের অসুস্থ প্রতিযোগীতায় মত্ত । মানবিক সকল বোধ হারিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তে জানোয়ারে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছি । পুরো গ্রামটিকে আমার পাগলের গ্রাম বলে মনে হচ্ছিলো । ব্যস্ততার কথা বলে দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে এলাম । খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে উপরে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, হে মালিক আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ।  

বদলে যাবার সময় চলে যায় ।
নিন্দাদের বাড়ী গুলো আগের মতোই চকচকে আছে। এতো বছরে একটুও চুনকাম খসে পড়েনি পুড়নো দেয়াল ভেঙ্গে। দিনে দিনে ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষমতার দাপট। আরশোলা পেয়ে গেছে শকুনের চোখ। কোকিল আর দোয়েলের দেহ খায় পথের কুকুর। বাঘ হবো বাঘ হবো ভাবনায় কুনো ব্যাঙ চেয়ে আছে চুপচাপ। 'সত্য-সতী'রা তল্লাট ছেড়ে চলে গেছে বহুকাল আগে কোন এক অমাশ্যার ঘোর অন্ধকারে । খবর পায়নি কেউ। কোথায় গেছে , ক্যামন আছে । এ সংবাদ জানার আগ্রহও নেই কারুর । সত্য,সতীদের কারনেই একদা এই লোকালয় অভিজাত হয়েছিলো । নিন্দারা এক কোনায় অসহায় পড়েছিলো দূর কিনারে । সময় পাল্টে গেছে আজ । নিন্দার জয় জয়কার । সত্য-সতী রা অজানা বনবাসে । আমরা বদলে গেলে নিশ্চয়ই সত্যরা ফিরে আসবে । পালটাতে হবে । হওয়াটা জরুরী । ওরা খেয়ে নিচ্ছে তামাম লোকালয় !
দিন পনেরো পার হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে ঢুকিনা । পরীক্ষার কারণে ল্যাপটপটি গত কয়েকদিন যাবত দখলী স্বত্বে বাবার মালিকানায় চলে গেছে । আজ হঠাৎ খালি পেয়ে ঢুকে দেখি প্রচুর নোটিফিকেশন জমা হয়ে আছে । এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী ছবি আপলোড হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটকদের । সুর্যাস্ত সুর্যোদয় সমুদ্রস্নান পাহাড় আর জনভীরে দাঁড়িয়ে কুলফি খাওয়া সেলফি ভরা ফেসবুক । মানুষের সুখী সুখী মুখ দেখে খুব ভালো লাগছে । সমগ্র পৃথিবিতে আমরা বাঙ্গালীরাই সম্ভবত একমাত্র জাতি যারা খুব অল্পতেই তুস্ট থাকি, সুখের স্বর্গ তৈরী করে শত দুঃখকে অতিক্রমনের মধ্য দিয়ে জীবনের পথে হাঁটি উদয়াস্ত পরিশ্রমে। আবার এই আমরাই খোলা বাদামের বুক ভাঙ্গার মতো সহজেই মুল্যবান সময় ভেঙ্গে উড়িয়ে দেই ছাইয়ের দরে ,অহেতুক অর্থ অপচয়ের অহংকারী প্রতিযোগীতায় । কি অসামান্য বৈপরীত্য নিয়ে একটা জাতী এক কাজের জন্য যেমন মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে গর্ব নিয়ে ঠিক তারই পাশে আরেকজন ভুল কাজে দাঁড়িয়ে রয়েছে নতশীরে । বিভিন্ন জনের ছবি সহ স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে অনেকদিন পর মৃদুলের স্ট্যাটাস চোখে পড়লো । আগে প্রতিদিন একটা করে গল্পের আকারে স্ট্যাটাস থাকতো , পড়তে ভালই লাগতো । মাস তিনেক ওকে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা । আজ হঠাৎ আবার ওর স্ট্যাটাস দেখে ভালো লাগছে । "ওয়েলকাম ব্যাক মৃদুল" লিখার আগে ওর গল্প টাইপ স্ট্যাটাস্টা পড়ে নিতে ভুল করিনি মোটেও । ছেলেটা ভালই লিখে, এটলিস্ট আমাকে টানে । আজও ভালই লাগলো । আজকের লিখাটির নাম দিয়েছে "ঘড়ি" ।
মোজাটা মাত্র দুই হাত দিয়ে মেলে ধরেছে। ডান পা'টা গলিয়ে দেবে ভিতরে । ইতিমধ্যে ডান পা'টা তুলেও ধরেছে হা করা মোজার মুখের সামনে। এমন সময় টেবিল ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো 'তিতু'র। গত কয়েকদিন হলো ঘন্টার কাটা'টাকে ১২ টার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে। আর সেকেন্ড এর কাটা টি এক সেকেন্ড এর ঘর ছেড়ে একবার সামনে আর একবার পিছনে করছে। তিতু বুঝতে পারছে, এটুকুও থিথু হয়ে যাবে যে কোন সময়। দম ফুরিয়ে যাচ্ছে । ব্যাটারি পালটাবে পালটাবে করে প্রতিদিনই ভুলে যায় ফেরার সময় । ঘরির কাটা হঠাৎ ১২ টার ঘরে এসে থেমে যাওয়াটা খারাপ কোন কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে নাতো ? ঘরির সাথে ওর আর দেশের ও ১২ টা বেজে যাচ্ছেনাতো ! সে খুব পজিটিভ মনস্ক মানুষ, ফলে শরীরে হালকা একটা ঝাকুনি তুলে মোজা পরা শেষ করে উটে দাঁড়ালো তিতু । প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে ফেস বুকে একটা করে নতুন স্ট্যাটাস দিয়ে যায় । ঘুম থেকে উঠেই আগে ল্যাপটপ টা অন করে বসে পড়ে বসে পড়ে। লগ ইন করে দেখলো গত রাতের দেয়া স্ট্যাটাস এ হিউজ লাইক জমা পড়েছে । এই লাইক দেয়া বিষয় টি নিয়ে ও অল মোস্ট প্রতিদিনই
ভাবে । ওর ধারনা ,কেউ কেউ মনে হয় , না বুঝেই লাইক দিয়ে দেয় । নইলে "গতকাল আমার বাবা মারা গেছেন" অথবা "এখন আমার ভিষন রকম কাঁদতে ইচ্ছে করছে" এই জাতীয় স্ট্যাটাসে কেউ লাইক মারে ? 

তিতু ভাবে, যারা বিশ্বাস করে তাদের পুর্ব পুরুষ বানর ছিল, তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত একটা জেলাস এর যায়গা হয়ে গেল । কারণ কেউ কেউ গাধার ও উত্তর শুরী হয়ে এ দেশে এসেছে বলে ওর ধারনা । ফেস-বুকের এই ওলট পালট লাইক দেওয়ার বহর দেখে ওর এই ধারনা ইদানিং আরো বেশী স্ট্রং হচ্ছে । তাদের ধারনা যে কোন লেখাতে লাইক দেয়াটা বুঝি স্মার্টনেস এর আওতায় পড়ে । আবার কারো কারো মন্তব্য স্ট্যাটাসটিকে আরো অর্থবহ করে তোলে, বহু মাত্রায় নিয়ে যায় । "তাঁর সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হউক, আমীন" কিংবা "ভাল করে কেঁদে নাও,আনন্দ আসছে ভাসিয়ে নিতে" । মৃত ব্যাক্তির সাথে নিজের জন্যও জান্নাত প্রাপ্তির প্রার্থণা করার ধরনটি অভিনব বটে । অন্যটি ভরপুর প্রাণে সম্ভাবনার আশায় বুক বেঁধে বর্তমান খারাপ সময়কে মোকাবেলা করার এক আশার বাণী শোনায় । এই সকল লেখা পড়লে শরীর মন ফুর ফুরে লাগে , হালকা হয়ে যায় । বিশ্বাসের গাঁথুনি আরো সবল হয় । তখন ভাল কিছুর জন্য অপেক্ষ্যা করতে সত্যি সত্যি ভাল লাগে ।
সময় নেই । এখুনি বেরুতে হবে । অফিসের গাড়ী চলে এসেছে । হর্ন বাজাচ্ছে । তখনো ওর মাথা থেকে ঘড়ির কাঁটা নামেনি । তাড়া তাড়ি করে আজকের স্ট্যাটাস দিয়ে বের হয়ে গেলো তিতু ।
" ও মন কয়টা বাজে তোমার ঘড়িতে....? আমি নিশ্চিত,মৃদুল নিজেকে তিতু বানিয়ে গল্পাকারে মনের কথা গুলো ব্যক্ত করে অফিসে চলে গেলো । 

আমাকেও উঠতে হবে , যেতে হবে দেওয়ান সাইদুল হাসান কে তাগাদা দিতে । ওর লিখা পাওয়ার জন্য ফেভিকল হয়ে লেগে থাকতে হবে নয়তো, দুই হাতে মা'দুর্গার দশ হাতি ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইবে । চর্যাপদ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সদস্য, কবি, বানান বিশারদ, আবৃতিকার , বি,বি,সি বাংলা , বাংলাদেশ বেতার ও বি,টি,ভির সিনিয়র সংবাদ পাঠক এবং লেখা লেখিতে অসম্ভব সম্ভাবনাময় এক অলস বন্ধুর নাম দেওয়ান সাইদুল হাসান । আজ বসে থেকে লিখিয়ে নেবো ,ছাড়বোনা কিছুতেই । (২য় অংশ)

(৩য় অংশ)
রাজনীতির ভেশাল জালে জনতা নিরীহ নলামাছ / ঈমানে উদ্বাস্তু নেতা ফরমালীন অহংকার / লতগুল্ম সনদ পায় মহান অশ্বথ গাছ/ নলামাছ ভাজা খায়, ভুনা খায় নিজামি,মুযাহিদ,বাচ্চু রাজাকার । গতরাতে ফেসবুকে এই কবিতাটি স্ট্যাটাসে দিয়ে পাপ পুণ্যের যে জ্ঞ্যান খয়রাত পেয়েছি তাতে করে একবার মনে হয়েই যাচ্ছিলো যে, বরং রাজাকার পুত্র হয়ে জন্মালেই ভালো হতো । পাপ পুণ্য রেল লাইনের মতো পাশাপাশি অনন্তমুখী । এক জীবনে একই সাথে দুটো কাজ করবে বলেই মানুষের স্বর্গ ছেড়ে মর্তে আগমন । শধু পুণ্য করলে এই মানুষই হয়তো ফেরস্তাকুলের কাছাকাছি কোথাও থাকতো অথবা অবিরত পাপ কার্যে সে হতো শয়তানের দোসর , তাই বলে রাজাকারের ধংসযজ্ঞ ভুলে যাবো ! ধিক্কার জানিয়ে দুটো লাইন লিখতে পারবোনা ! লিখলেই খয়রাতি জ্ঞ্যানের ভারে মিন মিন করে তসবিহ জপতে বসে যাবো! আমরা যারা যুদ্ধ দেখেছি ধংসোল্লাসের কোরাস শুনেছি , এখনো অবিরাম ক্ষতের কাঁচা রস মুছে যাচ্ছি চোখের জলে তারা কি করে ভুলি ! সেই সব দিন রাতের চিত্র । যারা আমার এক মুখ দাড়ি দেখে রাজাকার প্রিয় বলে জ্ঞ্যান করেছেন তাঁদেরকে বলছি, পাপ পুণ্যের অযাচিত জ্ঞ্যান দানের জন্য অন্য অনেক অনাবাদি আঙ্গিনা রয়েছে , দয়া করে সেখানে আবাদ করুন । আমার ছোট্ট পালান স্বাধীনতার রক্তজবায় ভরা । এখানে ধুতরা বা জামালগোটার বপণ রোপণ বৃথা ।
   সেদিন স্যার জগদিশ চন্দ্র বসুর বাড়ী গিয়েছিলাম এক দুপুর ছুটি নিয়ে । ভরা বর্ষা তখন । উত্তর পুকুরে ঘাটে বসেছিলাম পানিতে পা ডুবিয়ে । আমাদের একান্নবর্তী সংসারের মতো পরম মমতায় গাদা গাদি করে বেঁচে আছে এক পুকুর কচুরি পানা । বরষার জলে গলা ডুবিয়ে সারি সারি হিজল, সীমান্ত রক্ষীর মতো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সহোদরার সবুজ শরীরে কোন শকুনের আঁচড় পড়ে রক্তাক্ত না হয় । এই নিখুঁত মমতা , জলজ উদ্ভিদ, তৃণ ও বৃক্ষের বুকে আদি এবং অনন্ত । অথচ আমরা, একদার একান্নবর্তী সংসারের মায়াবী উঠোন ছেড়ে দশ ফিট বাই দশ ফিট খোঁয়াড়ে খুঁজে নিয়েছি ফেসিয়াল সুখ !
ঘরে ফিরে ল্যাপটপ অন করে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম নিয়মিত স্বভাবে । ফ্রেস হয়ে রাতের
আহার শেষে ব্রডব্যান্ডের লতা পাতা ধরে টারজানের মতো ও...হো করে ঢুকে গেলাম ফেসবুকের
গভীরে । আমার জন্মদিন উপলক্ষে 'বুলা' ইনবক্সে আমাকে উইস করে রেখেছে । বুলা মানে
'জাহানারা বুলা' আমার ফেসবুক বান্ধবী । অনেকটাই প্রবাসী জীবন তার । এক ছেলে এক মেয়ে দুজনেই কানাডাতে পড়া শোনা করে বলে সে বছরের দশ মাস সেখানেই থাকে । একাধারে কবি, ছড়াকার এবং গল্পকার । হাস্যোজ্জ্বল জীবন আর স্কেলের মতো সোজা সাপটা কথা বার্তায় অভ্যস্ত বুলা প্রথম যেদিন ইনবক্সে আমাকে "দোস্ত" বলে সম্বোধন করে আমার একটা কবিতার স্ট্যাটাস নিয়ে মন্তব্য করেছিলো , বিশেষ করে এই অবিশ্বাসের যুগে এতোটা আন্তরিক ও বিশ্বস্ত শব্দ চয়নে, যা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো পবিত্রতার ভাবনা স্নানে । প্রতি উত্তরে তৎক্ষণাৎ আমি তাকে ও তার কবিতা নিয়ে লিখে পাঠালাম "আপনার লেখা কবিতা গুলো আপনার ভিতর বাড়ীর আয়না । অন্যেরা সেই আয়নায় চোখ রেখে ঝকঝকে পরিস্কার এক কবিকে দেখে । আপনার মন প্রদীপের আলো, হাসি হয়ে দূর করে দেয় অমাবস্যার কালো । সূর্য বলুন চন্দ্র বলুন সবই আছে তাতে । আজ তুমি আমায় বন্ধু বলে ডাক দিয়েছো । সে ডাক শুনে (পড়ে) ঝিরি জলে ভিজে গেছে শুষ্ক হৃদয় । 'মা' ছাড়া সব সম্পর্ক জাগতিক হিসাবের টুটাফুটা থলি । বন্ধুত্ব হলো বুকের ভিতর ধারাবাহিক পলি । পলি আর কৃষকের যুগল ধ্যানে মানুষই প্রথম আবাদ করেছে বন্ধু নামের অবাক ফসল । যত্নের অভাবে কোন কোন ফসল চিটা ধানের মতোই পড়ে থাকে আবাদি ভুমিতে । কারো কারো ভরে যায় বিশ্বাসের গোলা । এ যুগে কেউ কাউকে কিছু দেয়না বরং কেড়ে নেয় । যা পাচ্ছো তুমি, নিজ যোগ্যতাতেই পাচ্ছো । নিজেকে কি করে রাখবে দূরে প্রকৃতির দেয়া এই অবাক ফসল থেকে ? তুই আমার আপনি তুমি সব । আপনি,তুমি তুই,আমার আনন্দ উৎসব। পনেরো হাজার মাইল দুরে আছেন । ভালো থেকো । সুখে থাকিস ।

মৃদুল স্ট্যাটাস দিয়েছে , এই মাত্র স্ক্রীন জানিয়ে দিয়ে কুয়াশার মতো উবে গেলো । ও আমার প্রিয় ফেসবুকারের একজন । সাথে সাথে ক্লিক করে চলে গেলাম । "এক জীবনে মানুষ ঠিক ততো টুকুই পায় যতোটা বিলায় উদার হস্তে । প্রেমে বা দ্রোহে , হিংসায় বা খোবে । ঘৃণায় কিংবা প্রতিবাদে , গিবদে বা প্রশংসায় । সে তার প্রাপ্য টুকুই পায় । তিল, তাল বা পাহাড়ের হিসাবে পেয়ে যায় । অযাচিত প্রাপ্তি নেই মানুষের ললাটে । ফলে হিসাবী জীবন আর মাপা পদক্ষেপের বিকল্প নেই । দাগটানা স্কেলের সোজা জীবন থেকে একবার সটকে গেলে পুনরায় ফেরা যাবেনা পুরনো দাগে । রে... জীবন সাবধান" । ওর একটা নিজস্ব দর্শন আছে এবং তা সে জোর বিশ্বাসের সাথে প্রচারও করে । কিন্তু ইদানিং মৃদুলের বলার ধরনটা যেন কেমন পালটে যাচ্ছে! ও কি মনোকস্টে ভুগছে কোন কারনে ? আমার এমন ভাবনার কারণ, আজ সে পর পর তিনটা স্ট্যাটাস দিয়েছে । দ্বিতীয়টি , "স্বীকারোক্তির সাহস জীবনকে উজ্জ্বলতা দ্যায়। মিথ্যে গড়ে কুৎসিত পেঁচার আদল । সমালোচনার তিক্ত বিষ মেনে নিও । তুমি সুধু উদারতার অমৃত দিও"।
"কবির গাম্ভীর্যে হঠাৎ মেঘে ঢেকে গেলে সুনীল আকাশ আমি আতি পাতি তোমাকে খুঁজি, বৃষ্টিবানে ভিজে আবাদের যোগ্য হবো বপন সুশ্রীতে" । তিন নাম্বারে এসে কাউকে খুজতে খুজতে স্বেচ্ছায় খেই হারাতে চাইছে মৃদুল । মনে হচ্ছে কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে । পরবর্তী স্ট্যাটাসের সতর্ক অপেক্ষায় বেরিয়ে গেলাম ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে ।
"টু নাইট আই কেন রাইট"।
আজ নেরুদাকে পড়বো বলে আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছিলাম । মৃদুল আজকের স্ট্যাটাস সেই ইচ্ছেটাকে আরো চাগিয়ে দিলো 
Tonight i can write the saddest lines .
To think that i do not have her, To feel that i lost her .
To hear the immense night,still more immense without her.

ওরা এসেছিলো আজ । ওরা এক সাথে এসেছিলো । হঠাৎ করেই এসেছিলো । আমাকে চমেকে দেবে বলে বিনা নোটিশে এসেছিলো । হাতে নাতে না পেয়ে মনে মনে কাঁচকলা খাওয়ার মতোই গোপনে কান মলা খেয়ে আমাকে ফোন করেছিলো... 'ভাই আপনার মজা ' তে আমরা অপেক্ষা করছি ' । আহ্ শুনেও শান্তি... আমার মজা ' তে অপেক্ষা আছে সেই অপেক্ষাতেও মজা আছে ! হায়রে মজা ! দারুন মজা, মজাই মজা । ছেলেটি ছাব্বিশের মধ্য সীমান্তে, মেয়েটি সেই সীমান্ত পেরিয়েছে তারও আগে । দুজনেই খুব আস্থাবান বন্ধু । আচরণে উচ্চারণে একজন রসের পিপা আরেকজন সেই রস বাজারজাত করণের দায়ভার নিয়েছে নিজ কাঁধে । আমি ফোনের প্রতি উত্তরে 'আসছি' বলেই পড়ি কি মরি ঘর থেকে বেড়িয়েই দুজনের সামনে । প্রথম পরিচয়েই যুগল হাঁসির বানে ভাসতে ভাসতে বন্ধু হয়ে গেলাম । দুজনেই আমার সিনিয়র । কারণ গত চব্বিশ বছর যাবৎ আমি প্রাণ পণ চেষ্টা করেও আমার পঁচিশ বছর বয়স অতিক্রম করতে পারিনি ! আর এই পঁচিশের সীমান্ত ওরা দুজনেই খুব স্বার্থপরের মতো ছাড়িয়ে গেছে আমাকে পিছনে ফেলে ! তারপর চলল তিন তরুণের "মেইল ট্রেন" আড্ডা । আড্ডা শেষে আমরা চিনে নিলাম যে যার ডেরা । ওরা মানে ,কবি দ্বিত্ব শুভ্রা আর ওর এক ছোট ভাই কাম বন্ধু এসেছিলো ।
(চলতে থাকবে)

কৌশলে কৌশলে বড়ো বেশী কুৎশীত হয়ে গেছি । এবার সরল করো আমায় । শুদ্ধ করো প্রভু ।
চাইলে তুমি সবি পারো, ইচ্ছে মতো ভেঙ্গে আবার গড়তে পারো । লাভার মধ্যে রাখতে পারো বরফ পাহাড় ।পাহাড় বুকে তীল ছোট্টো কীটের আহাড় । তুমিই প্রভূ রহিম করিম ইসমে আযম, তুমি আল্লাহ্ ।লা ইলাহা ইল্লাল-লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ । এবার সরল করো তুমি,শুদ্ধ করো আমায় ।
এই আমাকেই পারো তুমি, করে নিতে তোমার আপন । ডাকলে আমায় ছেড়ে দেবো সুজন স্বজন ।
নাওনা করেবন্ধু তোমার । সকাল বিকাল নিদ্রা আহার তোমায় যপি, তুমিই প্রভু নিত্য স্বরণ ।
কয়লা কালো বুকের ভিতর, হিরা'র ঝিলিক নূরের আলো দাওনা প্রভু চিক-ঝিক-মিক । ভিতর ভিতর কুট বুদ্ধি, কিটের কামড় আনাকোন্ডা, হায়েনা কিংবা দাঁতাল হাঙ্গড় কামড় ছোবল খাই যতোটা, দেই ফিরিয়ে অধিক দিয়ে খেয়ে সব দিকেই পঁচে গেছি মালিক । এবার আমায় তাজা করে সুগন্ধ দাও প্রভু । সরল করো ,শুদ্ধ করো , প্রভু আমি আর কারো নয় শুধু তোমার লবিং করি । 

অন্যরা এলে একাকীত্ব থাকেনা, তুমি এলে থাকেনা শূন্যতা । অন্যরা আসলে বুঝতে পারেনা ,আমাতেই তোমার পূর্ণতা । কেন শধু যাও এদিক সেদিক নিজেকে করে বেহাল বেঠিক তোমার কি খুব বেশী প্রিয়, উদ্ভ্রান্ত আঙ্গিনা । কতো কিছু আছে অশোভনীয়, তুমি কেন বোঝনা ! আমাতেই আছে ঠায় ঠিকানা আমাতেই সখি পূর্ণতা । নিজেরে প্রকাশ করে যাও দুহাতে সরিয়ে শূন্যতা ।

বাইরে থেকে সব ঠিকঠাক, প্রতিটা হুকে তালা লাগানো । ব্যানার ও ঠিক মতোই টানানো আছে । নির্ভাবনায় তালা খুলে ভিতরে ঢূকলাম প্রতিদিনের মতো । ঢোকার পড়েই মনে হল, কোথাও যেন কিছু একটা গোলামাল হয়েছে । হুম, চোখ ঘুরিয়ে বুঝে গেলাম,গতরাতে রেস্টুরেন্টে চুরি হয়েছে ! অন্য কিছু না, শুধু তামা, কাঁসা ও পিতলের সমস্ত মালামাল নিয়ে গেছে । অনেক কষ্টে এগুলো কালেক্ট করেছিলাম বহু পথ ঘুরে । সংগৃহীত জিনিস গুলো চোখে পড়ার মতো, যা কিনা মজা রেস্টুরেন্টকে একটা ভিন্ন মাত্রার বিশেষত্ব দিয়েছিলো । ভিডিও ফুটেজে দেখলাম রাত ১টা ৪ মিনিটে একটা ১৩/১৪ বছরের বাচ্চা ছেলে সিলিং বেয়ে নিচে নেমে এলো । পরনে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি । সারাদিন ওর চৌর্যবৃত্তির দৃশ্য আগপিছ করে দেখছি আর ভাবছি থানায় যাবো ? পুলিশকে কমপ্লেইন করবো ? নাকি শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করবো ?



রহমতের তৃতীয় রাত*****julay 02 -2014
তারাবী শেষে চোর পাকরাও অভিযান শুরু । প্রথমে ভিডিও ফুটেজ দেখে এলাকার নাইটগার্ডদের তলব । তাদেরকে দেখানো হল । একজনকে সনাক্ত করে ফেললো । নাম রাজু । শুরু হল রাজুকে খোঁজা । শ্যামলী, আদাবর, পি,সি, কালচার,মহাম্মদীয়া হাউজিং, পুরো মহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি এলাকার সমস্ত চোরদের ধরতে ধরতে এক সময় ৩১ জনকে ধরা হল । এর মধ্যে শুধু একজন বলল রাজু আজ বের হয়নি । সম্ভবত বাসায় আছে সে । কিন্তু, কেউ রাজুর বাসা চেনেনা জানালো । এই চোরদের ভীরে ৭/৮ বছরের দুজন আছে । একজনের নাম দ্বীপজল, অন্যজন মানিক । দ্বীপজল গ্রুপ লীডার । তাঁর অধীনে মোট ২৬ জন কাজ করে । সবার বয়স ৫ থেকে ৯ এর ভিতরে । প্রত্যেকেই নেশায় আসক্ত । ডান্ডি খায় । জুতোর সলিউসন পলিথিনের ব্যাগের ভিতরে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহন করে । ছোট চোরদের মদ্ধে এই নেশাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় । দ্বীপ রাজুর বাশা চেনে । ফের অভিযান শুরু ।
ইতিমধ্যে সকাল ৭টা । আমরাও অনেক কাদা জল পেরিয়ে সেখানে হাজির । ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলো রাজুকে । তুলে নিয়ে এলাম । ওর স্বীকারোক্তিতে ক্রেতার নাম ঠিকানা জেনে আবার অভিযান। ডেকে তোলার পর সে বুঝতে পেরেছে ,রক্ষা নেই । কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ভিতর থেকে তিন বস্তা মাল নিয়ে এসে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো । সব কিছু ঠিক ঠাক মিলে জাওয়ার পড়ে হঠাৎ মনে হল,রহমতের তৃতীয় রাত চলে গেলো, কিন্তু এখনো শুকরিয়া আদায় করা হলনা ।
শোকর আল -হাম দুলিল্লাহ ।
আমার সকল বন্ধুদের আন্তরিক সুভেচ্ছা । যারা এফ বি তে এবং সেল এ ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন । আর যারা আমার এই বিপদের কথা শুনে লাইক ! দিয়েছেন তাদেরকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা । সকলে ভালো থাকুন এবং আমার জন্য এভাবেই দোয়া করুন ।

( চলতে থাকবে )


RAZU..... Ghotonar Nayak.... Jake dhorar jonno ek ek kore 31 jonke dhorte hoyechilo goto rate... *Operation Mazaa* te raju'r sathe "FIROJ" namer ei Lungee pora cheleti chilo... Action er somoy jeans pant T'shirt oder official dress... Ei firoj ke sorbo prothom collect kori... Collage gate buss jatree chaouni theke...

Godfather.....Abdullah ... Investor...chor der advance payment kore rakhe onekta dadon diye rakhar moto arki... Sorto ekta'e churir mal tar kachei bikri korte hobe... Ghum theke tule jiggesh kortei vebaceka.... Ekhan thekei somosto malamal uddhar....

রাসূলে পাক (সা:) বলেছেন ।
কোনো মুসলমান বান্দা যখন গভীর বিশ্বাসের সাথে পড়েন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই) ।
তখন তা আকাশসমূহ অতিক্রম করে আল্লাহর সম্মুখে গিয়ে হাজির হয়।
আল্লাহ্‌ সুবহানু-তাআলা বলেন, 'স্থির হও' ।
উচ্চারিত কালেমা বলেন, আমি কি করে স্থির হই, যার দ্বারা উচ্চারিত হয়েছি এখনও তাকে মাফ করা হয়নি। আল্লাহ্ তখন বলেন, আমি তোমাকে সে লোকের জিহ্বা দ্বারা পরিচালিত করিনি যাকে তার আগ মুহুর্তে মাফ করে দেইনি।

[হাদীসে কুদসী]




টু নাইট আই কেন রাইট।
পাবলো নেরুদা ।
Tonight i can write the saddest lines .
To think that i do not have her, To feel that i lost her .
To hear the immense night,still more immense without her.
And the verse falls to the soul and she like dew to the pasture .
What does it matter that my love could not keep her.
The night is shattered and she is not with me.
The same night whitening the same trees.
We of that time, are no longer the same .

ও পাতাল ও মাটি , আগলে রেখো মাকে
মা যেমন রাখতেন প্রত্নবেদনাকে ।
(নুরুন্নাহার শিরীন)

আজ সব খুলে দিও,
কোন ফুল রেখনা আড়ালে
ভুমধসাগর যদি চাই,দিও
দুহাত বাড়ালে ।
(পূর্ণেন্দু পত্রী )
আমিও কিছুটা খুলি,আর তুমি বাদ বাকি খোলো
ভেতরে গুমরে থাকা প্রশ্নগুলি তোলো !
খোলা খুলি হউক আলচনা...
(রহমান হেনরি ।)
একই সমতলে ।
হাজার বছর হেঁটে এসে সিংহল মালয় শেষে অন্ধকারে বনলতা দেখেন জীবনান্দ দাশ । যে কোন নারীর মধ্যে সুনীল চাটুজ্যে পান সুগন্ধি রুমাল বুকে বরুনার আভাস । শস্যের সপক্ষে থেকে খেতের আড়ালে ডেকে আন্তরিক রতির দরদ ঢালেন আল মাহমুদ , আর শত মুখ জড়ো করে এক মুখ বালিকা বানান আবু হাসান শাহরিয়ার ।

বালিকা আশ্রম... ( ১৪ নং সর্গ )
আবু হাসান শাহরিয়ার ।
আবারও কে কড়া নাড়ে ? কে দাঁড়ায় স্বার্থপর পায়ে ?
বিল-হাতে হকার ছেলেটা ? তার মানে
মাস ঘুরে গেছে । ছেলেটাকে
কেলেন্ডারও বলা যেতে পারে ।
ও ভাবে জ্যোৎস্নাও যদি বিল-হাতে
দরজায় দাঁড়ায় ? রৌদ্রবিল আসে যদি
বিদ্যুতের বিলের বদলে ?
গাছ যদি ছায়াবিল,নদী যদি ঢেউবিল,
পাখি যদি সুরের মজুরি চেয়ে বসে ?


ইদানিং ।
সাদাফ হাসনাইন মানজুর ।
তুমি নাকি ব্যস্ত ভীষণ
তোমার সময় দিচ্ছ কাকে।
আমার মতো আপন করে
শুনি, বলো আরকে ডাকে ।
বেনিয়ারা হরেদরে কিনছে
নাকি তোমার সময় ।
আজকাল প্রতিরাতে
তিনু মিনুর যেমনটা হয় ।
পিঠ ছড়ানো রঙিন চুলে
বিক্রি হচ্ছ হাতে হাতে ।
আদর করে বুকের পায়রা
তুলে দিচ্ছ নতুন পাতে ।
কোন হাতে যে পায়েশ বাটি
দিচ্ছ তুলে নাভীর চাবি ।
কে যে যাচ্ছে সাঁতরে ওপাড়
কে যে খাচ্ছে দারুন খাবি ।
আমি চাইলেম বুকের ময়না
নিজের একটু অধিকার ।
ওদের দিলে আস্ত তোমায়
ওদের বেলায় এতো উদার !!!


আজকাল মেয়েরা জুতা বা স্যান্ডাল এর ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন ...ভাবখানা এমন যে, ফেসবুকের সকলকে তিনি জুতা দিচ্ছেন বা মারছেন । অচিরেই দেখা যাবে তেনারা তাদের দোতালা এবং নীচ তালার "দ্বিতীয় পত্রের" ছবি ও মাপ দিয়ে স্ট্যাটাস দেবেন "তোরা দেখে যা আমি আর কি কি পড়ি" ।
আর বেডারা...? হেরা তো মাইয়াগো থন আরো তিন কাডি বেশী সরষ...মদের বোতলের ছবি,পাছফুতে বিছা লাগাইন্না ছবি, দুপুরে কি কি খাইছে বাডি বরা হেই তরকারির ছবি...আর কিছু কিছু বেডাগোতো মনে অয় হেইডা নাই...নাই নাই!! পরিচয় দিতে সরমায়...মাইয়া মানুষ সাইজা যা মন চায় করে...
আর একদল আছে...,হেতাগো পেইছবুকে পেইছ নাই! হেইতারা হেঁচার মতন ডার্কে থাকে...মনে অয় পেইছবুকের রইদে হেতার স্কীন কালা অই যাইবো ইয়াল্লাই ব্লাইন্ডে থাই কল কাঁডি লাড়ে !!
আমি পঁচিশের তারুণ্যে বসে আধ্যাত্তিক গান গাই...তিন সেয়ানের হল মেলা ফেছবুকে এসে... তোরা কেউ দিসনে সারা ওদের ডাকে ।
একদল আছেন যারা আইডি'তে প্রতিকি ছবি ব্যবহার করেন এবং অসাধারন কিছু লেখা লিখেন যা পড়ে প্রতিদিনই কিছুনা কিছু শিখা যায়, জানা যায়, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন । তাদের প্রতি অনুরোধের বিনয়ী দরখাস্ত...প্লীজ,নিজের ছবি দিয়ে প্রকাশ্যে আসুন...অগুনিত বন্ধুর আস্থা ও ভালবাসা গ্রহন করুন ।

বিমাতা গরম দিলে রক্ত চক্ষু রাত নিদ্রাহীন বেয়ে চলি ঘাম জল নদী । অনুজা ভোরের কাছে শীতল পরশ পেয়ে যাই পেয়ে যাই ঢুলু ঢুলু ঘুম ঘুমিয়ে পড়ি ,ঘুমিয়ে পড়ি , ঘুমিয়ে পড়ি মাটির খাটালে ।
হে বিমাতা তপ্ত দাহ ,কিছু কাল ,কিছু কাল এই নিদারুন নিদাঘের কালে , চুপ চাপ থাকোনা আড়ালে ।



১৮। ০৪ । ১৪ ।

বেতনের সব টাকা শেষ হলে ঘরের ভারায় । বিনিত জীবন ভাঙ্গে সভ্যের দেয়াল । কঠিন চোয়াল, ভেঙ্গে খায় নিজ মাড়ী দাঁত । দু হাত ফিরিয়ে দেয় অনুপম ছোঁয়া । কদমে কদমে চেনে অন্ধকার পথ । এই ভাবে থেমে গেলে সৎ এর জীবন ,নিজ হাতে রেধে খাবে আপন মগজ । ফুসফুস গলা গিলা কলিজা চুল ও নখ পুরো দেহ খেয়ে নেবে ক্ষুধার জঠর । ভুলের চর্চা পেলে মূলের অধিক অসভ্যের দল পায় সাহেবি জীবন !! আর্যরা শোন............... (১৪, ০৯,১৩)

বুকের কষ্টকে বলি, থাক জেগে বুকে জেগে থাক দিন রাত । তামাম পৃ্থিবী থাক নিজেদের সুখে চলুক সুখের বৃষ্টিপাত । একাকী আমি ঘুরে ফিরে থাকি লক্ষ জনের ভিতর । অনেকেই এসেছে বাগদাদ ছেড়ে
আমি এ মাটির এক অনার্য ঈতর । আমাদের মালসা ভাঙ্গা খালের উপর যে কাঠের পুলটি ছিলো । সকাল দুপুর নেংটা ঝাপে শৈশব খেয়ে গেলো । যৌবন আমার নগর ভাগাড় ভরে ছিলো পঁচা গলায় ।
মাঝ বয়সে বিষ্বাদে হরষে কাটাই ঝাড়ুর শলায় । আমড়ার ঢেকি মাকাল একাকী লক্ষ জনের ভিতর ।
খল ছল আমি খুবি কমদামী  অনার্য এক ঈতর ।

 






 




উপন্যাশ





জ্ঞ্যান ও বিনয়ের মিশেলে যে মোহনীয় মুখশ্রী তৈরী হয় , তা দর্শনে অন্তরের শেষ প্রান্তে মুগ্ধতার এক ঝিরি ঝর্না বয়ে যায় ,আমি সেই অনিন্দ মুখের অনুবাদ করার ক্ষীণ চেষ্টা করেছিলাম গত স্ট্যাটাসে, স্বল্প শব্দের অল্প কথায় । স্বজন সুজন বহুজন তাঁদের ভালোলাগার টিপসহি আর প্রাণবন্ত মন্তব্য দিয়ে উৎসাহের খেয়ায় ভাসিয়ে আমাকে বেঁধেছেন কৃতজ্ঞতার অদৃশ্য নাইলন গিঁটে । এই নাদান তাঁদের ভালোবাসার স্নেহ-শ্রদ্ধামূলে নতজানু ।
এই লেখাটি একটি উপন্যাসের আকার নিতে পারতো , গল্পের বরফ ফোটায় ফোটায় গলিয়ে পরিমান মতো নিমক গুর ঝাল টক এর সমবায়ে একটা নতুন স্বাদ দেয়া যেতো , তবু ঐ পথে যাবো না আমি । ও পথ আমার নয় ।
ফে-সদস্য হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নর নারী নির্বিশেষে যতো বন্ধু পেয়েছি তাদের কাছ থেকে পাওয়া অনিন্দ আনন্দময় ভালোবাসার বিশ্বাসী পাটাতনে বুকের বোতাম খোলা সময়, নিদাঘ দাহে বিনয়ের সুশীতল ছায়া-প্রশ্রয়ে ক্লান্তি বিয়োগের স্বস্তি , ঘৃনার ধারালো শব্দ ছুরির নিঠুর আঘাত , কৌশলী আন্তরিকতায় কাব্যিক প্রতারনার চান্দ্রিক রুপোশ্রী, পাওয়া না পাওয়ার ঝাঁঝালো ফোঁড়ন , সযত্নে অযত্ন করন , অহংকারের ঘন স্বভাবে দুঃখ বিলাশ আর গীবতের বহুমাত্রিক রাগ সঙ্গীতে বুঁদ হয়ে অন্যের একাউন্ট হ্যাকের যাচ্ছে-তাই মানসিকতার দুর্গন্ধময় কদর্য মুখের নিপুণ স্কেচ আঁকার এক ধারাবাহিক চেস্টা থাকবে আমার এই লেখায় , তবে সঠিক কোন নামে নয় , ফেবু-আইডি , ঠিকানা বা ছবি ব্যাবহার করে নয় । এ লেখায় সকলেই নিরাপদ ।

পতিতা বৃত্তি ও প্রতারনার ডিজিটাল কৌশল !
মেয়েটাকে আমি ধন্যবাদ জানিয়ে তার সুস্বাস্থ কামনা করার পরে এই ম্যাসেজটা পেলাম ! কোথায় যাচ্ছে দেশ কোথায় যাচ্ছি আমরা !
Angel Reeya
Amar sathy real and skype sex korty cila ans deba. Ami thaki danmondi 27. Ami amar nejar flat a sex kori and basy aka thaki. Sex korty cila 1 den agy taka bkash a advance korty hoby for bokking. R ami bkash korar agy phone a 1 sec o kotha boli na. R amar kacy kokono sexy pic r kotha bolar jonno phone num caba na tila ami sathy sathy block koira debo. R ojatha hi hlo ki koro kamon aso aisob ajira pacel parba na. So bkash korar kotha boly bkash num neya taka bkash na koira call dely ami reciv korbo na. Sudu besas koira ja amaky kotha bolar agy bkash korty parby ami tar sathy sex kori. Amar kotha gula porar por amaky fack mony hoby tokon r dari na kori plz unfrnd koira debo. R jodi besas hoy or jodi resk neya agy bkash korty paro tila sudu ans deba ami raji.
জ্ঞ্যানের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হচ্ছে বিনয় । বিনয় মিশ্রিত জ্ঞ্যান প্রকৃতির মতো মোলায়েম এবং সুন্দর । এই সুন্দর , স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়ায় আষাঢ়ের মায়াবি জ্যোৎস্নার মতো ।
বিনয় বিহীন জ্ঞ্যান হুতোমের মুখশ্রী মনে করিয়ে দেয় বারবার । এই জ্ঞ্যান, অন্ধকারের কাকতাড়ুয়ার অদ্ভুত অপেক্ষার মতো হাস্যকর । এর সাথে যদি ছিটে ফোটা অহংকারের গুড়ো থাকে তাহলে সোলকলা পুর্ন ।
এই জ্ঞ্যানের হাওয়া বাতাস গায়ে মেখেই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে ফ্রেমে বাঁধা হাস্যোজ্বল মুখোচ্ছবি নিয়ে ।
কি অদ্ভুত এই দেশ ! অদ্ভুতেরও অধিক অদ্ভুত এই দেশের মানুষের আচরণ । নুন্যতম যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রচারের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যত্রতত্র যায়গা করে নেয়ার ইঁদুর দৌড়ে ব্যাতি ব্যস্ত করে রাখে লোকালয় । অন্যকে বিরক্ত করে হলেও নিজের ঝান্ডা উরিয়ে রাখতে হবে ! এরা যোগ্যোতার স্বীকৃতি আদায়ে ভার্চুয়াল সন্ত্রাসে নিষ্ঠুর ! এদের সমালোচনা করা যাবে না , শুধু পছন্দের টিপসই দিয়ে যেতে হবে ! নয়তো শব্দধোলাই শুরু । এ ধোলাই শুরু হবে একা , পড়ে যোগ হবে তোষামোদি তেলাপোকা দল !
একবার ও কেউ ভাবছি না , শান্তির ছাউনি থেকে ক্রমে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছি !
দূরে সরে যাচ্ছি ! দূরে সরে যাচ্ছি !
আমি কখনও যেভাবে বিষয়টা ভাবিনি কিন্তু বাস্তবতা অনুভব করেছি মাত্র। আপনারাও শুনলে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন। কবি সাদাফ হাসনাইন মঞ্জু'র একটি কথাকে কবি ও ছড়াকার নাসের মাহমুদও সাদরে মেনে নিলেন, আমি তো নিলামই। যে হারে অকবিদের ভিড়ে কবি চেনা দায় হয়ে পরছে আজকাল সে কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণের কনডম কিম্বা পিল আবিষ্কারের মত কবি নিয়ন্ত্রণেরও উপায় বের করা জরুরি। শুনতে মন্দ হলেও, কাজের কথা।
কবি নিয়ন্ত্রণের বিষয় নয় কিন্তু কবি প্রকাশের বিষয়। সুতরাং কবি বিনে অকবিদের কবি বলে সম্বোধন এবং তাদের কবিতা প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে। অসাধু প্রকাশক এবং ঘুষখোড় সামাজিক সংগঠন যারা টাকার বিনিময়ে পদক দেয় সে সকলকে চিহ্নিত করে সমাজ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অনুজদের সেই সকল অগ্রজদের সাথে মিশতে হবে যারা প্রকৃতই নির্মোহ কবি এবং সাহিত্যের সাধক।

আমার শুভাকাংক্ষী শ্রদ্ধেয় বড় ভাই 'হুমায়ুন কবির' গতকাল নিচের এই স্ট্যাটাস টি দিয়েছেন। তার আগে তিনি তার ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে আমাকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ঝেটে বিদায় করেছেন।
সুপ্রিয় হুমায়ুন ভাই অর্নব আশিক নাম নিয়ে লিখালিখি করেন। গত বইমেলায় চন্দ্রদ্বীপ প্রকাশনী থেকে "ধুপগন্ধময় জীবন" শিরোনামে একটি কবিতার বই বের হয়েছে ।
অনুজ হিসাবে তার জন্য আমার নিরন্তর প্রার্থনা, তার কাব্য ভুমি সোনালী ফসলে
সমৃদ্ধ হউক, আমিন ।
ভাষা সমৃদ্ধ ! তার স্ট্যাটাসটি আমাকে আমার সুহৃদগন স্ক্রীনসর্ট করে পাঠিয়েছেন । তারা
আমাকে কেনো পাঠিয়েছেন? তাদের কাছে মনে হয়েছে, আমার প্রিয় অগ্রজ আমাকে ইংগিত করে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন কাল ।
মনযোগ দিয়ে পড়ার পর বন্ধুদের ধারনা আমার বিশ্বাসে রুপ নেয় । কারন, আমার জানামতে, কবিতা চর্চা করেন এমন ব্যাক্তি দের মধ্যে একমাত্র আমি রেস্তোরাঁ বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত, এবং আমার ছবি সম্বলিত ক'একটি পোস্টার রেস্তোরাঁর দেয়ালে সাঁটানো আছে। রসুইঘরে রান্না করতে করতে দুই চার লাইন কবিতা লিখার অপচেস্টাও করি নিয়মিত । তবে হুমায়ুন ভাইজান যে ভাবে" দাঁড়কাকের ময়ুরপুচ্ছ" ধারনের গল্প বলতে গিয়ে আমার পবিত্র পেশাকে হেয় করার উল্লাসে মেতেছেন, তাতে করে আমি বিনয়ে নতজানু হয়ে আপনাকে জানাতে চাই সুপ্রিয় শ্রধ্যেয় হুমায়ুন ভাই কবিতাকে আমি বানিজ্যের বিজ্ঞাপন বোর্ড বানাইনি কখনো। এক কথার সত্যতা শতভাগ । এ দেশে আমার কারি বিজনেস এর গল্প মাত্র পাঁচ বছরের । দু'একটি টিভি চ্যানেল স্বেচ্ছায় নিজ দায়িত্বে এই রেস্তোরাঁর গল্প শুনিয়েছেন তাদের রংগিন পর্দায় । দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পাঁচটা পত্রিকা ফিচার করেছেন। এরা প্রত্যেকেই ভোক্তা হিসাবে এসেছিলেন প্রথম।
খাবারেরর স্বাদ, মান,পরিচ্ছন্নতা, স্বচ্ছতায় তৃপ্ত হয়ে আমার অনুমতি নিয়ে ফিচার করেছেন। কোলকাতার অত্যন্ত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন "হ্যাংলা হেসেল" এখানে এসে আমার ইন্টারভিউ সহ ইলিশকাচ্চির রেসিপি নিয়ে তাদের টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকায় প্রকাশ ও প্রচার করেছেন । আর এই সবই আপনার মতো অগ্রজদের দোয়াতেই
হয়েছে । পক্ষান্তরে আমি লেখালেখির উজান যাত্রায় গা ভাসিয়েছি একত্রিশ বছর আগে । উনিশ শত চুরাশি সাল থেকে আমি লিটল ম্যাগ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি । আমি ও আমার সহযোগী দের সংগে নিয়ে "চর্যাপদ"নামে একটি লিটল ম্যাগ প্রকাশ করে আসছি আজোব্দি । শুরুতে আমি তার সহকারী সম্পাদক ছিলাম এখন প্রকাশক । কবি আযাদ নোমান এখনো সম্পাদনার গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কবিতাচর্চা নামে আরো একটি কবিতা পত্রিকা প্রকাশনার সাথে সরাসরি যুক্ত আছি, যার সম্পাদক কবি বদরুল হায়দার।
আল্লাহ সুবহানু তা আলার অশেষ মেহেরবানীতে আমি একজন
ইউ.কে ট্রেনিং প্রাপ্ত প্রফেশনাল বাবুর্চি । যুক্তরাজ্যে স্থায়ী আবাসের সকল সুবিধা
থাকা সত্যেও আমি দেশে ফিরেছি মা, মাটি,
ও কবিতার টানে। চল্লিশজন সহকর্মী
নিয়ে তিনবেলা ভাত বেচি দুইবেলা
ভাতের আশায় ।
ইদানিং আমি " অকবি ধোলাই প্রকল্প" ও "পইড়া দ্যাহেন, সাদাফের জ্ঞ্যান, হুদাই ঘ্যানপ্যান" নামে সিরিজ কবিতা লিখছি ।
যা অ-কবিদেরকে উদ্যেশ্য করে লিখছি ।
কাদেরকে আমি অ-কবি বলতে চাইছি ?
যারা কবিতা চর্চার চেয়ে কবি হাওয়ার ভান করে, অহর্নিশি কবির মুখোশ পড়ে ফিটফাট টিকসই শরীর নিয়ে নিরিহ নারি শীকারে ব্রত আছেন । যাদের কাছে, কন্যা, নাতিন সহ মাঝ বয়সি নারীরাও নিরাপদ নন। যারা নিজ স্ত্রীর গীবত খেয়ালে গোপন মঞ্চ কাপান পরস্ত্রীর অনুকম্পা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় । ধারাবাহিক মিথ্যাচারের বিষ্ঠায় পরিবেশ দুষিত করার মহান দায়িত্ব পালনে নিরলস অগ্রণী, আমি তাদেরকে অ-কবি বলে মানি । আমার এই অ-কবি নিধনের প্রকল্প নিয়ে এ দেশের
কবিদের কোন মাথা ব্যাথা তৈরী হয়েছে বলে কোন সংবাদ আমার কাছে এখনো পৌছায়নি।
মহাত্নন,বিনয়াবনত আমি আপনার করকমলে নতজানু হয়ে জানতে চাই, আমার উপর আপনার এতো গোসসা কেনো ? একবার দয়া করে, স্নেহের সন্মুখে এসে চোখে চোখ রেখে বলে যান... তুই ঘুরে সো,তোর মুখে দুর্গন্ধ ! আপনার জন্য অধমের ভাংগা দুয়ার খোলা রইলো আগের মতোই । যারা এই গার্বেজটি এতোক্ষন কস্ট করে পড়লেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই নাদানের প্রতি দয়াবান হউন
দোয়া রেখে ।

 আমি মনে করি পেশা যাই হোক না কেন.....সৎ পেশা সততই মহান। কারও সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডের সাথে অহেতুকভাবে মহৎ পেশার অশুচি খোঁজা দুর্বলচিত্তের নামান্তর। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। ‘মজা’ রেস্তরাঁ একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। শুধু রাজধানি নয়...দেশের আনাচে-কানাচে থেকেও আমার যেসব বন্ধুরা এর স্বাদ পেয়েছেন...তারাও শুধু ‘মজা’-এর স্বাদ উপভোগ করতে রাজধানির বাইরে থেকে পরিবার টেনে এনেছেন...এমনকি ওপার বাংলার বেশ কিছু অতিথির সাথে আমার পরিচয় হয়েছে এই ‘মজা’ রেস্তরাঁর টেবিলে....আমার অভিজ্ঞতামতে অথবা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি এই অধুনা রুচিসম্মত রেস্তরাঁ শুধুমাত্র রসনা বিলাসীদের জন্যই নয়....সৃজনশীল বা সৃষ্টিশীল ‘মানুষ’-গণের মিলনমেলা। যে রেস্তরাঁর পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতার সাথে এই ঢাকা শহরে অন্য কোনও রেস্তরাঁর পরিবেশগত তুলনা অর্বাচিন সময়ক্ষেপন বলেই আমার ধারনা। আর একটা কথা না বললেই নয়.....আমার দর্শণ থেকে বলছি..একমাত্র ‘মজা’ রেস্তরাঁতেই স্কুল-কলেজ-ভার্সটি পড়ুয়া আমাদের কোমলমতি মেধাবী কন্যারা অভিভাবকের অবর্তমানে কখনও নিজেদের একাকী ভাবে না। নিজেরা আসে...রসনার স্বাদ বয়ে নিজেরাই চলে যায়...স্বস্তির আয়েসে। সে যাক....‘মজা’-এর কর্ণধার কিংবা ব্যক্তি Sadaf Hasnaeen Manzoor -এর সাথে আমার পরিচয় ‘মজা’-এর বিলাসি খাবারের মেনু থেকে নয়....একজন সৃষ্টিশীল কবি, অভিনেতা ও প্রকৃত সমাজসেবী হিসেবে। ঘনিষ্ঠতার প্রায় বছরখানেক পর (যদিও ‘মজা’ রেস্তরাঁ সম্পরকে জানতাম আরও পাঁচ বছর আগে থেকে) কাকতালীয়ভাবে জানতে পারি এই ‘মজা’-এর স্থপতি আমার বছরখানেক ধরে চেনা জানা বিশ্বস্ত বন্ধুটি। এত ঘনিষ্ঠতার মাঝেও তিনি কখনও ঐতিহ্যবাহী মজা সম্পরকে কখনও আগ বাড়িয়ে কিছু বলেননি। অকস্মাৎ একদিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটা পারিবারিক আয়োজন থেকে ফেরার সময় ফোনে কথা হলে তিনি আমার সান্নিধ্য উপভোগের জন্য ‘মজা’য় আমন্ত্রণ জানান এবং তখনই জানতে পারি এই ‘মজা’-এর গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠাতা আমার এই ঘনিষ্ঠজন। ‘মজা’-এর জন্য আমি যতটুকু গর্ব অনুভব করি, তার চেয়েও বেশি ধন্য মনে করি——একজন প্রকৃত কবি বন্ধু——Sadaf Hasnaeen Manzoor-এর বন্ধু হতে পেরে............
কাক ও ময়ূরপূচ্ছ।
-----------------
ফেসবুকে অপরচিত যাদের সাথে আমার দেখা হয়েছে পরবর্তিতে তাদের মধ্যে প্রথম Sadaf Hasnaeen Manzoor ভাই। দেখা হওয়ার আগে ফোনে কথা হয়েছে কয়েকবার। তাতেই খুব ভালো লেগেছে মুহুর্তে আপন করে নেবার ক্ষমতা তার অসাধারণ ! কয়েকবার ঢাকায় তার সাথে দেখা হয়েছে। প্রতিবারই ফিরে একটা করে স্ট্যাটাস দিয়েছি তাকে উদ্দেশ্য করে কিন্তু তার নাম না দিয়ে পাছে কষ্ট পান। তার সাথে প্রথম দেখার গল্প করি। ২০১৪ র আগষ্ট মাস ঢাকার আগারগাও এল জি ই ডি ভবনে কনফারেন্স। আগে জেনেছিলেন মাঞ্জুর ভাই। সকাল থেকে ফোন দিচ্ছিলেন কখন ফ্রি হবো? দুপুর দুটায় লাঞ্চ করে ১২ তলা থেকে যখন নামলাম তখন মুষল ধারে বৃষ্টি । গেটে দড়িয়ে ভেসপা নিয়ে ভিজছেন মাঞ্জুর ভাই। বৃষ্টিতে সি এন জি ওয়ালাদের পশ্চাৎদেশ ভারী হয় তারা যেতে চায় না। মাঞ্জুর ভাই ঐ বৃষ্টি তে একটা সি এন জি নিয়ে এসে বললেন উঠেন। আমি উঠলাম আর তিনি ভিজতে ভিজতে সামনে পথা দেখালেন। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম আমি একজন অতি সাধারন মানুষ আমার জন্য এই লোকটা এতো কষ্ট করছেন কেনো?তারপর তার মজা রেস্টুরেন্টে গেলাম। ভাড়াটাও তিনিই দিলেন জোর করে। ভাড়া বাসায় থাকেন রেস্টুরেন্টের পাশেই। এর মধ্যে আমার আর ও কয়েকজন ফেসবুক বন্ধু ও প্রিয় মানুষ Rashel Mahmud, Adil Ananta, Mahbub Lovelu কে খবর দিলেন। চললো জম্পেশ আড্ডা আর অসাধারণ সব খাবার রেস্টুরেন্টের বাইরে বসে। মাঞ্জুর ভাইকে দেখলাম এলাকায় অসম্ভব জনপ্রিয়। যেই যাচ্ছে শ্রেণী ভেদে তাদের সাথে কথা রসিকতা করছেন। আমি ঐ দিনই ফিরবো তাই রাতে গাড়ীতে খাওয়ার জন্য এলুমিনিয়াম ফয়েলে খাবার পানি দিয়ে তার ভেসপায় করে কল্যানপুর দিয়ে এলেন। এরপর কয়েকবার ঢাকায় কাজে গিয়ে তার ওখানে গেছি মানে তিনি একরকম জোর করে নিয়ে গিয়েছেন। সব শেষ গিয়েছিলাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন বিকেলে। সেদিন আর ও কিছু নতুন মুখ ছিলো, Jesmin Akter, Zakia Sisir নুরুল্লাহ মাসুম এবং Md Humayun Kabir , আড্ডা হলো দারুন সেইসাথে অসাধারণ সব খাবার বিনে পয়সায়। সবাই খেয়ে দেয়ে বিদেয় হলাম। জনাব হুমায়ুন কবির জানলাম কবি ও অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। পরে তিনি আমার বন্ধু হলেন এবং এখনো আছেন। আজ মাঞ্জুর ভাইয়ে একটা স্ট্যাটাস দেখলাম যাতে তিনি একটি স্ট্যাটাসের স্ক্রিন শট দিয়েছেন যেটা জনাব হুমায়ুন কবিরের যাতে মাঞ্জুর ভাইকে উদ্দেশ্য করেই নাকি লেখা অবশ্য তার নাই উল্লেখ নাই। তাতে লেখা রেস্টুরেন্টের প্রসার বাড়ানোর জন্যই কবিদের আড্ডা বসানো আর নিজে বাবুর্চি থেকে কবি সাজার চেষ্টা। দারুন! আবাক আমি! মাঞ্জুর ভাই আর তার পরিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদি লোক। প্রচুর জমি জিরাত। যখন সেখানে ধান চাষ হতো। তার ভাইদের ছয় সাত তলা বহু ফ্লাট আছে আর মাঞ্জুর ভাই সেসব ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। লন্ডনে হোটেল ছেড়ে দিয়ে কোনোরকমে বেচে থাকার জন্য মজা রেস্টুরেন্ট করেছেন পার্টনারশীপে । তার মজা রেস্টুরেন্ট আসলেই এক্সট্রা অর্ডিনারি। সব কাসার বাসন, প্রত্যেক ঘরের আলাদা আলাদা নাম। একজন খেয়ে গেলে ডেটল দিয়ে টেবিল পরিস্কার। তার দোকানের জন্য আড দিতে হয় না। আমি দেখেছি চুলায় রান্না কিন্তু লোক টেবিলে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, এখন না বসলে খাবার পাবো না, শেষ হয়ে যাবে। আর হোটেল দেওয়ার আগে থেকেই মাঞ্জুর ভাই কবিতা গান লেখেন। আমার জানামতে তার কবিতা আর গানের যে সংগ্রহ আছে তাতে গোটা পচিশেক বই বের করা যাবে। আমি কবিতা ভালো লিখতে পারি না কিন্তু বুঝি। মাঞ্জুর ভাইয়ের কবিতায় যে গভীরতা আছে অনেক প্রতিষ্ঠিত কবির কবিতায় তা দেখিনি। একজন নিরহংকার, সদালাপী পরোপকারী মানুষ সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য শুধু কষ্ট দায়কই নয় হাস্যকরও বটে । অবশ্য জনাব হুমায়ুন কবির মহোদয়কে ধন্যবাদ যে তিনি ইতোমধ্যে ট্যাটাসটি মুছে দিয়েছেন। মাঞ্জুর ভাইতো ময়ূর সাজতে যান নাই। তার ময়ূর সাজারও দরকার নাই। তিনি তো কাকই , সাচ্চা কাক। আমাদের কাকের রাজ্যে তিনিই কাকরাজ।


ভাইরাস নরকীট- ১১
ভাইরাস নরকীট সনাক্ত করে শাস্তি প্রদান ছাড়া সমাজকে সুস্থ রাখার বিকল্প
সাহিত্য সমাজে আগত এক দুষিত ভাইরাস নরকীট সম্পর্কে লিখতে গিয়ে মনে হল অনেকেই হয়তো ভাববে এসব মানুষকে জানানোর কি হল; নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিলেই তো হল। কিন্তু একজন মানুষ, কি পুরুষ কি নারী সত্যি যদি সমাজ সচেতন ও বিবেকবান সামাজিক জীব হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সমাজের নরকীট সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করার দায়ভার নিজ কাঁধে তুলে নিতে প্রস্তুত থাকবে। শুধু তাই নয় আজ এই নরকীটের মাধ্যমে একটি বন্ধু মহল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আগামীতে যে আপনি বা আপনার কোন বন্ধুবলয় ক্ষতির শিকার হবেন না তার কি নিশ্চয়তা? সেই দায়ভার থেকে বর্তমান সাহিত্যসমাজ সহ অন্যান্য সকলকে চিনিয়ে দিতে চাই একটি নরকীটকে। সেই সাথে দাবি জানাই নরকীটের প্রকৃত শাস্তির জন্য তাদের কাছে- যারা সুশীল সমাজ, মা বোন কন্যা তথা নারীর সম্মান এবং সাহিত্য সেবক- লেখক ও কবিদের আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে সদা প্রস্তুত। সেই লক্ষ্যে একটি দীর্ঘ লেখার অবতারনা করে আমি নূরিতা নূসরাত খন্দকার আরও অনেকের পক্ষ থেকে ন্যায্য প্রতিবাদ জানাতে চাই। তাই এটি কোন ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে লেখ্য বস্তু নয়। এটাকে সমাজে কিছু সম্মানিত ব্যক্তি নারী ও কবি সাহিত্যিক সম্পর্কে মানহানীকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সমাজবার্তা ও অন্যায়কারীর পরিচয় বার্তা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সম্মানিত পাঠককূলের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে। কারণ আমরা লেখক সমাজ মানেই আমাদের দেশের সাহিত্য ও শিল্প- সাংস্কৃতিক জগতকে কলুষমুক্ত রাখতে সদা অতন্ত্রপ্রহরী, নির্ভীক সেনা।
পুরুষের প্রতি নারীর কিম্বা নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ থাকবে সেটাই প্রাণী এবং মানব জগতের স্বাভাবিকতা। সেই দুর্বলতা চরিতার্থ করতে কেউ কেউ একাধিক নারী বা পুরুষের সাথে মানসিক ও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। সেটা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক যাই হোক না কেন কোন অন্যায় বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ব্যক্তিস্বাধীনতা অতিক্রম করে মানুষ কোনো ভারসাম্যহীন আচরণ প্রকাশ করে। ভারসাম্যহীন আচরণ বলতে অশ্রদ্ধা, গীবত, মানুষের প্রতি মানুষের মূল্যবোধ অবক্ষয় এবং নিজের চরিত্রকে ভাল বলতে গিয়ে অন্যের চরিত্রের ওপর মিথ্যা অভিযোগে কলঙ্কিত করে তোলা। শুধু তাই নয়, অত্যাধুনিক যুগের যাবতীয় সুবিধায় এক বা একাধিক মানুষের ছবি বিকৃত করে চরিত্রের ওপর অযাচিত কলঙ্ক লেপটে দেয়া সত্যি গর্হিত অন্যায়। এই জাতীয় ভণ্ড ও প্রতারকের পাল্লায় পরে দৈনিক অসংখ্য মানুষের সাজানো ঘর-সংসার ভেঙ্গে যায়। অধিকাংশ ভণ্ড প্রতারক থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ক্ষতিগ্রস্ত যদি নারী হয়ে থাকে তবে তারা হয় সমাজে কুগল্পের খোঁড়াক। এমনকি নারীরাও ভণ্ডদের কথা ভুলে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের নিয়েই বাজে মন্তব্যে লিপ্ত থাকে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তের কি ঘর কি সমাজ কি কর্মক্ষেত্র সকল যায়গাতেই অভাবনীয় মানসিক সঙ্কটে ভুগতে থাকে। অথচ তার একটিই মাত্র ছোট্ট ভুল তা হল- বন্ধু নির্বাচন ভুল। মানুষ চেনা একটা কঠিন কাজ। মূলত মানুষের দেহ অবয়ব চেনা ছাড়া মানুষের মন চেনা অসম্ভব। যেখানে মানুষ নিজেই আজ তার মন বস্তুকে আবিস্কার করতে পারেনি। একজন সাধারণ মানুষকে যদিও বা কিছু কথা কিছু আচরণ দিয়ে কিছুদিনের ওঠা বসায় মানুষটির ধরণ আন্দাজ করা যায়। কিন্তু মুখোশ ধারী একজন প্রতারকের ধরণ চেনা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ বিষয়। আর যদি হয় যথেষ্ট বয়স্ক এবং সমাজের সম্মানিত কোন উচ্চ পদস্থ চাকুরীজীবী তবে তার ক্ষেত্রে তো আগে চোখের সামনে সম্মানের আস্তরণ ঝুলে থাকে। সন্দেহের চোখ তখনি ফোটে শুরু যখন ব্যক্তি নিজে কিছু ভুল করে বসেন একাধিক জনের সাথে একটি বন্ধু সমন্বয় দলের সাথে।তেমনি বন্ধুতে বন্ধুতে কথার আদান প্রদানে অনেকের ঝুলি থেকে বেড়িয়ে আসে কদর্য এক কবি বেশ ধারী। সাহিাত্য সমাজ কলুষিত করা ভাইরাস নরকীট- মুখোশধারী চরিত্রহীন মিথ্যুকের কাহিনী। শুধু তাই নয় সাইবার ক্রাইমার হিসেবেও নিজেকে জঘন্য অপরাধী হিসেবে মেলে ধরেছেন। কারণ ইতিমধ্যেই সে একাধিক মানুষকে জানিয়েছেন তিনি নারীদের ন্যুড ছবির সংগ্রাহক। কোন নারী তার কু’ইশারায় সাড়া না দিলেই সে নারী হয়ে যায় চরিত্রহীন, ন্যুড ছবির শিকার।
তিনি কবি- কারণ তার কবিতার বই আছে। তিনি কারো স্বামী, কারো বাবা, কারো শ্বশুর, কারো নানা। তিনি ষাটোর্ধ পুরুষ। তিনি যে কবি তা প্রমাণেরও নানান কায়দা আছে। তার জ্ঞানী দৃষ্টিতে বড় বড় অসংখ্য লেখকরা হলেন নারীখোর আর লুচ্চা। এমনকি যে ম্যাজিক লণ্ঠন তাকে সম্মান দিয়ে আড্ডার কবি হিসেবে ডেকে কবি সমাজে পরিচয় করে দিয়েছিল সেই ম্যাজিক লণ্ঠন এবং কর্ণধারকে নিয়েও তার কটূক্তির সীমা নেই। কিন্তু কেন তার কটূক্তি? প্রশ্ন করলে উত্তরে তিনি বলেন, তিনি একজন সম্মানিত কবি তার মুখের কথাই যথেষ্ট, কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন লাগে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পাশ করা ছাত্র। সুতরাং তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত কবি।
প্রথমতঃ তার পকেটে ক্যামেরা থাকে। সাহিত্যের ভুবন ডিঙ্গানো কিছু সরল মানুষের বাড়িতে যাবে কারো না কারো ছুতো ধরে। ফেসবুকের দেয়ালে ঝুলিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখাবে তিনি অমুকের বাসায় আজ তমুকের বাসায় কাল, সেই অনুষ্ঠানে, ওই মঞ্চে ইত্যাদি।
দ্বিতীয়তঃ পরিচয় মাত্রই জানবেন তিনি ইয়া বড় লম্বা চওড়া চাক্ ছিলেন। তার আলিশান ফ্লাট আছে। মূলত বরিশালে তার পূর্ব পুরুষ ছিল জমিদার। সামাজিক কোমর বেশ শক্ত পোক্ত। কারণ তার ছোট ভাই সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।
তৃতীয়তঃ কথা শুরু হওয়া মাত্রই আপনি যদি অবিবাহিত/ বিবাহিত/ ডিভোর্সি/ স্বামী বিদেশে ইত্যাদি যে কোন প্রকারের (নারী) হয়ে থাকেন তবে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ফেসবুক আইডি চেয়ে নেবে। চতুর্থতঃ আপনাকে আধুনিক আধুনিক গ্রন্থের নাম সহ চিন্তা প্রকাশ করে আপনাকে তাক লাগিয়ে দেবে। পঞ্চমতঃ ইনবক্সে আপনাকে কবিতার সুরে সুরে মিষ্টি ঝাল নুন বাংলা সাহিত্যের মহারথী হিসেবে জাহির করবে; ফোনালাপেও আপনাকে বুঝিয়ে দেবে কত বড় বড় সাহিত্যিক নিয়ে তার ওঠা বসা। মোদ্দা কথা তিনি খুব বড় মাপের কেউ।
তারপর যা যা ঘটবে বা ঘটবেঃ
আপনাকে বাসায় নিমন্ত্রণ করবে চা খেতে। গর্বের সাথে জানাবে আরও কিছু মহারথীরা তার বাড়িতে আসবে। কিন্তু আপনিই প্রধান এবং বিশেষ অতিথি। পরিপাটি গোছালো পরিবারের সাথে পরিচয় করাবেন। এরপর আন্তরিকতার বহর বেড়ে ওঠা মাত্রই গোপনে গোপনে আপনার (নারী) আশেপাশে লেপটে থাকা যাবতীয় বন্ধুমহলে আপনার চরিত্র সম্পর্কে আজে বাজে বানোয়াট কথা ছড়াতে থাকবে। এমনকি আপনি যে কত খারাপ তা প্রমাণ করতে যেহেতু তার পকেটে মোবাইল থাকে আপনার যে কোন ছবি পর্ণগ্রাফির আদলে পেশ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে বিতরণ করে দেখাবে। এ সবই ঘটনে আপনার অগোচরে। আপনার দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে তার মত নীতিবান মানুষ এবং আপনার সবচেয়ে শুভাকাঙ্ক্ষী তিনি ছাড়া দ্বিতীয়টি আপনার আশে পাশে কেউ নেই।
দুর্ভাগ্য বশতঃ এই নরকীটের সাথে পরম শ্রদ্ধেয় অগ্রজ কবি, ঔপন্যাসিক, কলামিস্ট বুহুগুণে গুণান্বিত সাযযাদ কাদির এবং আমার পরিচয় হয়েছিল ম্যাজিক লণ্ঠন সাপ্তাহিক কবিতা আড্ডায়। সেখানে উপস্থিত সবাই জানতে পারি তিনি সত্তর দশকের আলোকিত ও আলোড়িত কবি শ্রদ্ধেয় জাহাঙ্গীর ফিরোজ এঁর একজন দীর্ঘকালের বন্ধু সুবাদে ম্যাজিক লণ্ঠন আড্ডার সভাকবি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। পারিচিতি পর্বে আরও জানতে পারি তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব ছিলেন। রিটায়ার্ড করার পর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে আছেন বর্তমানে। পরবর্তীতে গল্প প্রসঙ্গে জানতে পারি তিনি কোন এক সময়ে বান্দরবনের জেলা প্রশাসকও ছিলেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টি আরোপিত হয়েছিল বয়স এবং কর্মকাহিনীর পরিচয় সুত্র ধরেই।
এর কিছুদিন পর প্রেসক্লাবে কবিতাপত্রের মাসিক আড্ডায় আমাকে শ্রদ্ধেয় সাযযাদ কাদির নিমন্ত্রণ জানালে সম্মান করে তাকেও সাথে নিয়ে যাই (কারণ ইতিপূর্বে তিনিই জানিয়েছিলেন এমন কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক)। সেখানে ছবি তোলা সহ কবির সাংবাদিক ও কবি শ্রেণির একাধিক নারীর নাম্বার এবং ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করেন। পরের মাসে যখন তাকে নিয়ে আবার প্রেসক্লাবে যাই তখন তিনি আমাকে জানান, সে অল্পবয়সী নারীকবি তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে অস্থির, তিনি তাকে আর সামলাতে পারছেনা। আমি খুব অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম- “তার সাথে তো গতমাসেই পরিচয় মাত্র। ওই মেয়ের এত কথা জানলেন কি করে? তাছাড়া একটা মেয়ে এত দ্রুত তার মনের কথা বলে দিতে পারে নাকি”! তার উত্তর যা ছিল, ফোনে প্রতিদিন সব শেয়ার করেছে। কিন্তু তিনি সে মেয়েকে মোটেও লাইক করেন না। কারণ সে মেধাহীন। তিনি আবার মেধাহীন নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন না। অথচ প্রেসক্লাবে পৌঁছানোর পর দেখেছিলাম তাজরিনের সাথে ছবি তুলতে আর নানান ইশারার কথায় তার চেয়ে ব্যাস্ত আর কেউ নয়। সৌভাগ্যবশতঃ (আমার এই কথার প্রমাণ সাপেক্ষে) সেদিন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট এবং কবি শামসুল আলম বেলাল সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। আমি অনেক আগে থেকেই তাজরিনকে মেধাবী পরিচয়ে চিনতাম বলেই আমার আর তাজরিনের সাথে আলাদা করে জেনে নেওয়ার জন্য কথা বলার প্রয়োজন মনে হয়নি। বরং ভদ্রলোকের সাথে তাজরিনের মেধার পরিচয় ঘটুক সে প্রত্যাশায় তাকে বলেছিলাম, “সময় সব বলে দেবে। অল্প পরিচয়ে মেধা চেনা যায় না”। তিনি উত্তরে যা জানালেন, দীর্ঘদিন প্রশাসনের মত জটিল জায়গা তিনি সামলিয়েছেন সুতরাং তার কাছে মানুষ চেনা কোন বিষয়ই নয়। তখন নিজেকে বড় বোকাই মনে হয়েছিল আমার। কারণ একজন প্রাক্তন সচিবকে সময়ের উদাহরণ দেয়ার কোন দরকার ছিল না। স্বভাব হেতু আমি কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলিনা এবং শোনারও অবকাশ রাখিনা বলেই ওসব কথা আর শুনতেও চাইলাম না।
সেদিন উম্মুল খায়ের নামে আরও একজন কবিকে ফোনে প্রেসক্লাবে ডেকেছিলেন আমাকে না জানিয়েই। আমাকে না জানানোর কথা এই কারণেই বললাম কারণ আমি সেদিন অবাক হয়েছিলাম তার কাণ্ডজ্ঞান দেখে। একটি নির্ধারিত বলয়ে তিনি আমার মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন অথচ তিনি আমাকেই না জানিয়ে নিমন্ত্রণ করেছেন অন্য কাউকে সেই আচরণগত নমুনা দেখে আমি কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিলাম। কিন্তু শ্রদ্ধার নজর আগে থেকেই নিমজ্জিত ছিল বিধায় আর সে বিষয়ে কোন কথা বাড়াইনি। কবি উম্মুলের সাথেও ছবি তুলতে মহাব্যস্ত ছিল এই ষাটোর্ধ বয়সী কবি। পরে উম্মুল খায়ের আমাকে দেখে মনে করিয়ে দিলেন ২০১৪ সালে বিশ্ব কবিতা উৎসবে কবি সাদিক মোহম্মদ এঁর মাধ্যমে তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমারও মনে পরে গেল সব। উম্মুল খায়ের কবি সাদিক মোহম্মদের প্রসঙ্গ টানতেই ষাটোর্ধ কবি অপ্রত্যাশিতভাবে গর্জে বললেন, ‘সাদিক সেই স্টুপিড বয়। সে তো একটা স্টুপিড ছেলে। ইডিয়ট। কিসের কবি?' বিস্ময়ে আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করি “আপনি তাকে কেন স্টুপিড বয় বললেন? কারণ কি? সাদিক সিনিয়র হলেও আমাদের বন্ধু সার্কেলের একজন ভাল বন্ধু। আপনি তাকে কতদিন ধরে চেনেন?” কিন্তু তিনি কোন কারণ ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত নন। সাফ জানিয়ে দিলেন। আমি দ্বিতীয়বার বিরক্ত সুরে জানতে চাইলে তিনি আবারও গর্জানো সুরে বললেন, “ওকে সামনে পেলে আমি থাপ্পড় দিয়ে তারপর বলব ও কেন স্টুপিড। ওকে আগে সামনে পাইয়া নেই তারপর জানবেন ও কেন স্টুপিড”। যাই হোক সেদিন এই জাতীয় কথা শুনে খুব বিব্রত এবং বিরক্ত হয়েছিলাম বেশ। সেখানে প্রবীণ সাংবাদিক সহ সম্পাদক গোছের মানুষেরা থাকায় পারিপার্শ্বিক কারণে সাদিক প্রসংগ ইচ্ছে করে স্থগিত রাখলাম। কিন্তু মনের ভেতর প্রচন্ড বিষ ঢেউ বয়ে গেল সেটাও ঠিক। সাদিক মোহম্মদের মত একজন শান্ত ও কাব্য নিবিষ্ট কবি সম্পর্কে প্রেসক্লাবের বুকে দাঁড়িয়ে এই কথা বলার কি কারণ থাকতে পারে সেটা জানার জন্য আমার ভেতর বহুবার আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু প্রশ্ন জিজ্ঞেস মাত্রই তিনি উত্তর না দিয়ে দু’দফা পরিবেশ অশান্ত করে তোলায় সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল পরিবেশ শান্ত রাখাটাও সামাজিক দায়। মনের ভেতরে অপেক্ষার বেলাভূমি গড়ে তুলেছিলাম।
আগেই জানিয়েছিলাম বলে ঐদিন আমি তাকে মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের বাসার সাহিত্য ও সংগীত আড্ডায় নিয়ে যাই। সেখানে কবি শেলিনাজ সহ আমার প্রিয় অগ্রজ কবি বন্ধু, রেডটাইমস পত্রিকার সম্পাদক সৌমিত্রদেব এবং ময়মনসিংহ গীতিকা সংকলক ও গবেষক আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন এর প্রপৌত্রী অধ্যাপক-গবেষক শ্রদ্ধেয় দেবলীনা দিদির সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। সে সব ছবি সহ তার ফেসবুকে পোস্টে ঢালাও প্রচারও করতে কার্পণ্য করে নাই তখন। এরপর 'এইবেলা' পত্রিকায় দেবলীনা দিদির ইন্টারভিউ উপলক্ষ্যে অংশগ্রহণ করে। আমাকে ছাড়া তিনি নিমন্ত্রণ পান নি বিধায় আমাকেও উপস্থিত থাকতে হয়েছিল।
আমি তার বাসায় যে ক'বার নিমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলাম তার মধ্যে প্রথম দিনঃ তিনি আমাকে সন্ধ্যা সাতটায় কৃষিমার্কেট এর কাছে মজা নামে একটি রেস্টুরেন্টে ডাকলেন। জানালেন, সেখানে কিছু কবি বন্ধুদের সাথে একটি নান্দনিক সাহিত্য আড্ডা চলছে। আমাকেও সেখানে যোগ দিতে ডাকলেন। আড্ডা শেষে তিনি তার বাসায় আমাকে নিয়ে যাবেন। আরও জানলাম তার স্ত্রীও আমার জন্য খাবার রান্না করে অপেক্ষায় আছেন। মজায় গিয়ে পরিচয় হল শারদীয়া সম্পাদক নূরুল্লাহ মাসুম, নাট্যকার ও কবি মাহবুব লাভলু, শিক্ষা অফিসার জেসমিন আক্তার, সংগঠক ও লেখক, কবি জাকিয়া শিশির, কবি ও সম্পাদক এবং মজা রেস্টুরেন্ট কর্ণধার সাদাফ হাসনাইন মাঞ্জু এবং শিক্ষা অফিসার (বিসিএস) চঞ্চল ভৌমিক প্রমুখের সাথে।
দ্বিতীয় দিনঃ কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ উপস্থিত ছিলেন। মূলত তাঁর কথা বলায় আমি আর নিমন্ত্রণ ফেলতে পারিনি সেদিন। সত্তর দশকের সেই বিখ্যাত কবির কবিতা এবং আমার গান মিলে সুন্দর কিছু সামান্য কাটিয়েছিলাম।
তৃতীয়দিনঃ শ্রদ্ধেয় কবি দিলতাজ রহমান আপা এবং আলোচিত ব্যক্তির দু'জন বাল্যবন্ধু বেড়াতে এসেছিলেন। তাদের একজন (নাম মনে নেই) মাইটিভি'র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। নরকীটের গুণী মেয়ের সাথে একটা সহজ রসিকতা (সম্ভবত আমার কথার আদল ভাল করে না শুনে) দিলতাজ আপা অভিভাবক সুলভ আমাকে নীতি কথা শুনিয়েছিলেন। যা সেই সময়ের অন্য আমার ভাল লাগেনি মোটেই। কিন্তু ভাল না লাগা কারো সাথেই প্রকাশ করিনি কারণ তিনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সম্মানিত নারী। আর না বলা ফাঁকফোকরে ঝোপ বুঝে কোপ মারার সুযোগ ছাড়েনি সেই নরকীট। আমাদের দুজনের অজান্তেই খেলেছে কুৎসা রটানোর খেলা। সেদিন আমাকে রাতে থাকতে বলেছিল নরকীট এবং তার সহধর্মিণী। সেদিন বলেছিলাম অন্য কোন দিন এসে আরও গান শোনাবো এবং থেকেও যাব।
চতুর্থ বা শেষদিনঃ রোজার ঈদের অগ্রিম নিমন্ত্রণ থাকায় ঈদের পরদিন নৈশ ভোজনে তার বাসায় যাই। ঘনবৃষ্টিময় রাতের আকাশ। রাস্তায় রিক্সা পাওয়া যাবে কি না এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ফেরার জন্য উদগ্রীব আমি। আমাকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে এখন আর না যেয়ে আজ থেকেই যান। আমার বাসায় কোন অসুবিধা নেই। এক্সট্রা রুম পরেই তো আছে’। আমি অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তার স্ত্রীও বলেন, “নূরিতা আজ রাতে থেকে যাও তো। থাকলে সত্যি খুব খুশি হব। আকাশও খারাপ। আর এখন এমনিতেও বের হতে পারবে না”। আমি তাদের জানালাম আমার লেখা জমা দিতে হবে। বাসায় না ফিরলে লিখতে পারব না। আমাকে রাতের মধ্যেই লিখতে হবে”। নরকীট বলল তার ল্যাপটপ থাকতে চিন্তা কি। মূলত লেখার নিশ্চয়তা পেয়েই থেকে গেছিলাম সে রাতে। ভালই কেটেছিল। অনেক রাত পর্যন্ত তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে ও নাতির হাতে মেন্দি পরিয়ে দিয়েছিলাম। তার বড় মেয়ে বিজুয়া আমার হাতে যত্ন ভরে মেন্দির নকশা এঁকে দিল। মেন্দি উৎসবের পাশাপাশি সবাই মিলে রেডিও ভূমি’র প্রথম প্রয়াস শ্রুতি নাটক শুনেছিলাম। সে নাটকে তার ছোট মেয়ে নায়িকা চরিত্রে ছিল।
সেদিন নরকীটকে সাদিকের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তর্জন গর্জনে পুনশ্চ অস্থিরতা দেখা যায় তার চোখে মুখে। পারলে তখনি সাদিক তার সামনে দাঁড়ালেই সে তাকে জুতিয়ে কবিতা কি জিনিস তা শেখাত। আর তার মত উচ্চ পর্যায়ের কবির সাথে (অজ্ঞাত) বেয়াদবির জন্য সাদিকের বারোটা বাজিয়ে তেরোটা করে ছাড়ত। এসব গর্জনের হম্বিদম্ভি শুনে তার স্ত্রী স্বয়ং তাকে সহজ বাংলায় থামালেন, “তুমি ওসব কিছুই করতে পারবা না। ওইসব মুখেই তোমার শেষ। খামোখা অতিরিক্ত কথা বলার কি দরকার”। আমি সাথে যোগ করে বললাম, “শোনেন আপনি যখন কারো সম্পর্কে কোন নেগেটিভ কথা বলবেন বিশেষ করে প্রেসক্লাবের মত স্থানে তখন শ্রোতার কাছে প্রধান প্রশ্ন দাঁড়াবে মানুষটার কোন বিষয়ে আপনি ক্ষিপ্ত। কারণ ব্যাখ্যা ছাড়া আপনার কোন কথাই কথা নয়। একজন সম্পর্কে বলতে গেলে যুক্তি ও কারণ প্রথমে নির্দেশ করবেন। সেটা বলতে না পারলে অহেতুক আপনার কথা বলাই উচিত না”। আমার এই কথা শুনে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, “আমি বলেছি সাদিক একটা স্টুপিড বেয়াদপ। ব্যাস সে তাই। আমার মুখের কথাই যথেষ্ট। আমি বাংলা সাব্জেক্ট এখনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। সাদিক কোন কবিই না। কি কবিতা লেখে আমার জানা আছে। সাদিককে আমি বাগ মত পাইলে ধরব তো। সে কি কবি হইছে সেইটা সবার সামনে তুলে ধরব। আমি ব্যাখ্যা কেন দিব আপনাকে”। আমার জানা ছিল না তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়ান। আর ঘটনা কিছু না বলায় আন্দাজও করতে পারলাম না সাদিক সম্পর্কে কেন এইসব কথা তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলে বেড়ান। তবে প্রতিবাদ করেছিলাম সামান্য উত্তেজিত স্বরে কারণ তার একটা কথা ছিল ভীষণ আপত্তিকর। তা হল সাদিক কোন কবিই না- এই কথা শুনে আমি বিরক্তি ঝেরেছি আমার ভদ্রতা বজিয়ে। এরপরেই একে একে আবিষ্কার করতে থাকলাম সম্মানিত অনেক নারী ও পুরুষদের ব্যক্তিত্ব-চরিত্র নিয়ে মনগড়া মিথ্যে কথা এবং অসম্মানজনক কথা বলাই তার প্রধান কাজ। সেগুলো জানার পর কি শাস্তি হওয়া উচিত তা আপনারাই বিচার করুন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখছি, বাস্তব জগতে স্বনাম ধন্য কবি যিনি একজন রত্নগর্ভা জননী, একজন সুপ্রতিষ্ঠিত গল্পসাহিত্যিক এবং কবি। তিনি মানুষের মঙ্গল ছাড়া অমঙ্গল করেন না- এইটুকু তথ্য আমার সুবিস্তৃত বন্ধুমহলের সুবাদে আগেই জেনেছিলাম। তবে আমি নিজে একদিন তাকে আরও অনেক উঁচু মহৎ আসনে দেখেছি, যেদিন গল্পকার ও কবি দিলতাজ রহমান আপা আমাকে স্নেহ-আদর ভরে (জাদুঘরে) কাব্যলোক পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন। এবং আমাকে খুব মিষ্টি করে বলেন, “নূরিতা তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রেখো। দোয়া করি তুমি অনেক বড় হও”। সৌভাগ্য কাকে বলে আমি জানি না। তবে একজন অগ্রজ সাহিত্যিক যখন সবার সামনে বুকে জড়িয়ে স্নেহ আর ভালবাসা দিয়ে আশীর্বাদ করেন তখন তাতে সৌভাগ্যের চেয়েও অনেক বেশি কিছু মনে হয়। হৃদসত্য হল সেদিন মা মা গন্ধ পেয়েছিলাম গোপনে গোপনে। কারণ আমার সংগ্রামী আম্মু পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। তাই হয়ত গোপন হৃদয় কোন প্রকৃত সংগ্রামী নারীর স্পর্শ পেলে মাতৃস্নেহ আকাঙ্ক্ষাকেই উস্কে দেয়। অথচ মা-সম এই মহান নারী সম্পর্কেও বাজে কথা নরকীট ছড়িয়ে বেড়ায়। শুধু তাই নয় তাঁর কাছেও আমার সম্পর্কে জঘন্যতম বানোয়াট কথা বলে আমার পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমাদের উভয়ের অগোচরে করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে দু’জনের কাছেই ধোয়া তুলসী থেকে যেতে পারনি আর।
কতটা জঘন্য এবং চরিত্রহীন হলে একটা মানুষ রাতে মেহমানকে থাকতে দিয়ে পরে রটিয়ে বেড়ায় মেহমান তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের জন্য ছিল। এখানে আমার প্রশ্ন হলঃ সে নিজে তাহলে কেমন স্বামী বা বাবা যার স্ত্রী ও কন্যাদের উপস্থিতিতে হাঁটুর বয়সি মেহমানের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার বানোয়াট গল্প রটিয়ে বেড়ায়? কি ধরণের মানুষ যে তার বৌয়ের নামেও কুৎসা রটিয়ে আরেকজন সম্মানিত নারীকে (সরকারি কর্মকর্তা) প্রেম নিবেদনের মোড়কে কু-প্রস্তাব দিয়ে অসম্মান করে? শুধু তাই নয় কিছু মেয়েদের যৌন উস্কানি দিতে আরও জঘন্য পন্থা অবলম্বন করে। ফটোশপে ছবি এডিট করে পর্ণ ছবিতে রূপান্তর করে। তারপর এক নারীর কাছে আরেক নারীর নগ্ন ছবি দেখিয়ে তার জনপ্রিয়তার বড়াই করে। এভাবে কি কবি হওয়া যায়? এমন কি মিথ্যে কুৎসা রটিয়ে মজা রেস্টুরেন্টের মালিক কবি এবং সাহিত্য পত্রিকার চর্যাপদ এর সহঃসম্পাদক সাদাফ হাসনাইন মাঞ্জু সম্পর্কে একটি পোস্ট দেয়। কারণ কবি সাদাফকেই প্রথম কয়েকজন নারী ষাটোর্ধ এই কবি সম্পর্কে অভিযোগ দেয়। আর সেটার আঁচ বুঝতে পেরেই সে কবি সাদাফ এর উপার্জন কেন্দ্র 'মজা' সহ কবিত্ব নিয়েও কটু কথা লিখে তার ফেসবুকপোস্টে দিলে আমি সরাসরি (কমেন্ট বক্সে) জানতে চাই একজন কবি সম্পর্কে সমালোচনা করতে গিয়ে তার সৎ পথের উপার্জনকে কেন আঘাত করা হল। আরও লিখি কবিত্বের দুর্বলতা আলোচনা করতে হলে কাব্যগ্রন্থ সহ কবিতার উদাহরণ দেয়া সমালোচকের অবশ্য কর্তব্য। নাট্যকার ও কবি মাহবুব লাভলু’র জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে কবি সাদাফকে দেখা মাত্র পরিবেশ দূষিত করে সেদিনই সবার চোখে সে একটা নরকীটে পরিণত হয়। তারচেয়েও জঘন্য কাজ করে সকলের শ্রদ্ধা বঞ্চিত হয়েছে সেদিনের আনন্দ-অনুষ্ঠানে। আয়োজকের (নারী) সরলতার সুযোগ নিয়ে তার অজান্তেই তাকে প্রেমিকা পরিচয় দিয়ে ফোন ধরিয়ে দিয়ে সুকৌশলে ব্যাবহার করে ফোনের ওপারে অপর এক নারীকে ঈর্ষান্বিত করার ফন্দী এঁটে হয়তো সফল হয়েছিল। কিন্তু রমনার সেই বিকেলে তার জঘন্য চেহারা আবিষ্কার করে সকলের হৃদয়ে ঘৃণার কালো ছায়ায় অন্ধকার দেখছিল। কারণ আয়োজক জেসমিন আক্তার সম্পর্কে যেমন কুৎসা অন্যের কাছে রটেছেন তেমনি জেসমিন আপার কাছেও অন্যান্য নারী সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য ছড়িয়েছে। সেদিন যে তার ময়ূরপুচ্ছ পরা দাঁড়কাক চেহারা উন্মোচিত হয়েছিল সেটাও সে না জেনে নিজেরি ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন চর্যাপদ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এবং মজা রেস্টুরেন্ট এর মালিক সম্পর্কে কদর্য কথা। আর তখনি পাল্টা পোস্ট মাঞ্জু ভাই সহ মাহবুব লাভলু এবং চঞ্চল ভৌমিক দিয়েছিলেন। প্রত্যেকটি পোস্টে আমি সহ অনেকেই নরকীটের কদর্য পোস্টের তুমুল সমালোচনা করি।
সম্মানিত কবি লেখক ও সাহিত্যিক সকলের কাছে আমার প্রশ্ন- মাথামোটা এই গায়ে মানেনা আপনি মোড়লকে কি কবি সমাজে প্রবেশ করতে দেয়া আর মটেই উচিত হবে? সমাজের সকল নারীর কাছে আমার প্রশ্ন- যদি এই ষাটোর্ধ নোংরা ইতর পুরুষকে তার বউ-বাচ্চারা পাগল বা মানসিক রোগী বলে ক্ষমা প্রত্যাশা করে তবে কি নরকীটের সেই নতুন ভেক কে প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে। কারণ সে যে পাগল নয়, প্রকৃতই ভণ্ড। তার মাধ্যমে আরও অজস্র মা-বোনের ইজ্জত ডোবানোর সুযোগ করে দেয়া কি আমাদেরই অন্যায় হবে না? নারীর নগ্ন শরীরের ছবি ছড়ানো কি সাইবার ক্রাইম নয়? সমাজের খুঁটি তার ছোটভাই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা- সে কথা ভেবে কি তার সাইবার অপরাধ অগণ্য, নির্বিচার থেকে যাবে? বয়সে অনুজ হলেও যত্র তত্র কবি সাদিক মোহম্মদ, কবি সাদাফ হাসনাইন মাঞ্জু কিম্বা আরও অন্যান্য সম্মানিত কবি ও নারী সম্পর্কে ব্যাখ্যাহীন ভাবে কুৎসা রটিয়ে মান হানীকর কথা বলার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? সমাজে সম্মানিত নারী, লেখক ও সুপ্রতিষ্ঠিত কবিদের সাথে ছবি তুলে পরবর্তীতে তাদের সম্পর্কে কুৎসা রটানোর দুঃসাহস কোথায় পায় সে? আমরা চাই এর যথোপযুক্ত জবাব তাকে দিতেই হবে এবং জনসমক্ষে তাকে নিরপরাধ নারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সাইবার ক্রাইম অপরাধের আওতায় এনে শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
এই নরকীটেরা সমাজে বিচার বহির্ভূত থাকা মানে মানুষের সম্পর্কের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা এবং যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে নির্বাক মেনে নেয়া। একটি বিবেকবান সচেতন সমাজ কখনই তা ঘটতে দিতে পারে না। তার উপর আমাদের দেশ- বাংলাদেশ, একাত্তরের আলোকদীপ্ত চেতনায় জাতির প্রতারক রাজাকার নির্মূলকারী জাতি হিসেবে আজ আমরা সারা বিশ্বে সমাদৃত। স্বাধীন দেশের বুকে যারা সমাজকে সুশীল মুখোশে প্রতারণা ও ভণ্ডামি দিয়ে কলুষিত করছে তারাও এক প্রকারের রাজাকার। এদের জন্যেও শাস্তির বিধান আমাদের দেশে মজুত আছে।
তবুও এই জাতীয় অপরাধীরা যদি বিচার বহির্ভূত থাকে তবে আগামী সমাজও কলুষিত থাকবে। আর বারবার প্রতারিত হতে থাকবে সাহিত্য শিল্পাঙ্গনের বন্ধু সুলভ সুস্থ পরিবেশ। কবিদের প্রতি, লেখকদের প্রতি সর্বোপরি সৃষ্টিশীল মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা হ্রাসের অবকাশ থেকে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে এমন কি সৃজনশীল মানুষেরা নিজেরাও একে অপরের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই অতি দ্রুত এই জাতীয় ভাইরাস নরকীটদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি বিধান করা ছাড়া সমাজকে সুস্থ রাখার বিকল্প নেই।



স্বঘোষিত কবি বনাম হুকুমালি ডাকাত।
সূত্রঃ ভাইরাস নরকীট-১১, Nurita Nusrat Khandoker

বয়স বাড়লে মানুষ মেধা, মনন, বাচনে পরিপক্ক হয়। ষাটোর্ধ হলে হলে হয়ত কায়িক কিছুটা ভাটার টান লাগে, তবে সুদীর্ঘ জীবনের নানান অভিজ্ঞতার আলোকে মেধাটুকু অন্তত শাণিত হয়...যার প্রতিফলন মেধা, মনন, বাচনে প্রতিফলিত হওয়াই বাঞ্চনীয়। সেভাবেই আমরা দেখে অভ্যস্ত।
সম্প্রতি ফেবু সম্রাজ্যে বিভিন্ন বন্ধুজনের ওয়াল থেকে লাইক-কমেন্ট হয়ে বিশাল কলেবরের একটি স্ট্যাটাস অন্য একজন বন্ধুর ওয়ালে তার আগ্রহে দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো। আসলে দৃষ্টিগ্রাহ্য বললে বিষয়টিকে হালকা করা হয়....আমার মনে হচ্ছে প্রচন্ডরকম একটা সাইক্লোন, না কি সুনামি উঠেছে...বলাই বাহুল্য। স্ট্যাটাসটি নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করেছেন সৃজনশীল বন্ধু Nurita Nusrat Khandoker এবং এর সাথে আলোচিত ব্যক্তিটির লিঙ্ক এ্যড করেছেন বলে সঙ্গত কারণে বিষয়টি স্বাভাবিক গতিতে আমার ওয়ালে উদ্ভাসিত হয়নি। সঙ্গত কারণ মানে, ওই লিংকের ব্যক্তিটির সাথে আমার সংযোগ নেই.. তবে সপ্তাখানেক আগেও ছিল। কোন এক ভর-মজলিসে তার শ্রুতিকটু একখন্ড অর্বাচিন বাক্যালাপের অম্লমধুর প্রতিবাদ করার খেসারত দিয়েছি তার তরফ থেকে আনফ্রেন্ড হয়ে। আর আমার যা স্বভাব....মুহূর্ত সিদ্ধান্তে নিশপিশে আঙ্গুলে কি বোর্ডের ছোঁয়ায় আনন্দচিত্তে আমি করে দিলাম ব্লক। সে যাই হোক...প্রসঙ্গে আসা যাক...তিনি সরকারের একজন সাবেক সচিব বলে শ্রুত। তার দেয়া হিসেব মতে অবসরে (?) গিয়েছেন আরও সাত বৎসর আগে। ফেবু জগতে তার সাথে বছর দুয়েক থেকে এ্যাড থাকলেও সম্মুখ পরিচয় হলো এই প্রজন্মের কতিপয় সৃজনশীল গণমানুষের আড্ডাস্থল MAZAA রেস্তরাঁ-এর আঙ্গিনায় কবি বন্ধু Sadaf Hasnaeen Manzoor-এর সান্নিধ্যে ...যেখানে সৃজনশীল মানুষের মিলনমেলা। না, শুধু পুরুষ ‘মানুষ’ নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ‘মানুষ’গণের। সেই আড্ডায় কবিতা হয়, গান হয়, টেলিস্ক্রিপ্ট নিয়ে কথা হয়, সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন হয়....গল্প বলা হয়। মেধাভিত্তিক আলোচনা-সমালোচনা...সবই হয়। আমার সৌভাগ্য... সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের এই প্রজন্মের বেশ কজন প্রতিভাবানের সাথে পরিচয় হয়েছে সেই আড্ডায়। তারই মাঝে আলোচিত সাবেক সচিব এবং কবি জনাব হুমায়ুন কবির–এর সাথেও পরিচয়। তিনি একদা তার লেখা একটি কাব্য উপহার দিয়েছিলেন আমায়। জানলাম তিনি ‘অর্ণব আশিক’ নামে কবিতাচর্চা করেন। তার কবিতা কিংবা আবৃত্তি শ্রবণের সৌভাগ্য হয়েছিল ‘কাব্যলোকে কাব্যপাঠ’ বর্ষা কবিতা উৎসবে, অতি সম্প্রতি। যেখানে ষড়ঋতুর প্রতি ঋতুতে কবিতা পাঠ হয়, সারা দেশ থেকে প্রেরিত কবিতার মধ্যে পাঁচজন কবিকে সেরা মনোনিত কিংবা বাছাই করে পুরস্ক্রৃত করা হয়। শারদীয়া সম্পাদক ও কবি নুরুল্লাহ মাসুম-এর উদ্যোগ ও সাপ্তাহিক শারদীয়া প্রযোজনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঋতুর গান, আবৃত্তি, নাটক মঞ্চায়ন হয়। উৎসবে পঞ্চম থেকে একে একে যখন তৃতীয় পুরস্কার ঘোষণা হয়...আমাদের সবার স্নেহভাজন সৃষ্টিশীল কবি ও কণ্ঠশিল্পী Nurita Nusrat Khandoker-এর নাম। পুরো হলসুদ্ধ করতালির মাধ্যেমে আমরা সবাই যে যার মতো উইশ করি এই লক্ষ্মী বোনকে। সবশেষে ঘোষিত আমি যখন প্রথম পুরস্কার গ্রহণ শেষে মঞ্চ থেকে নেমে আসছিলাম, সামনের সারিতে বসা এই আলোচিত সেলিব্রেটি আমার তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে জাস্ট আড় চোখ তাক করেছিলেন মাত্র। অবশ্য তাতেই আমি খুশি ছিলাম...ধারণা করেছিলাম...ওনার মতো উচ্চপদস্থ একজন গুণী মানুষ একবার নজর ফেলেছে তাতেই আমি ধন্য। এরপর কফির আড্ডা, ফটোসেসন...ধারণা করেছিলাম তিনি হয়ত এই নবীন কাননে আসবেন না...তবে এসেছিলেন...ক্যামেরা হাতে। আর তখনই এমন সেলিব্রেটিকে আবিষ্কার করা শুরু করলাম——নতুন করে। যেটা নূরিতার স্ট্যাটাসে সম্পূর্ণতা পেয়েছে। তাই আর আলাদা করে সে বিষয়ে যাচ্ছি না। তবে আমার এক স্নেহভাজন ফেবু বন্ধু, স্বকীয় কবি ও গল্পকার মুখ গোমড়া করে আমায় অনুরোধ জানালেন, এই মুহূর্তে সে এই ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চায়। অবশেষে আমার কৌশলী জেরার মূখে জানা গেল——হেতু। জঘন্য...জঘন্য। ক্রমশ জানা গেল আমার এই অনুজের ইনবক্সে অশালিন, শ্রুতিকটু ছন্দের ঢল নামে প্রায়শঃ। সে আমাকে আগেও প্রসঙ্গত জানিয়েছিল...তবে বিশ্বাসের জায়গাটা স্থির রাখতে অমন পদস্থ সেলিব্রেটির বিরুদ্ধাচরণ আমলে নেইনি। কত বড় মাপের মানুষ....হয়ত কোথাও বুঝতে ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে——এমন প্রবোধ চাপিয়ে দিয়ে। তারপর শুনলাম তার ধমকের বহর——‘আমি সাবেক অমুক…..আমার সান্নিধ্যের জন্য কতজন ওয়েটিংয়ে… সবাইকে আমি পাত্তা দেই না। ওদের অঙ্গে রূপ-রস থাকলেই হয় না…কার্যকর গুণ-রসও থাকতে হয়…যা তোমার/আপনার মধ্যে অঢেল….তাই ভাললাগে বলে….তুমি/আপনি বুঝতেই চাচ্ছ না….বোকার হদ্দ…!’ এই হচ্ছে তার স্বাভাবিক এপ্রোচিং….(আমি শুনে বলছি)। এরপর ফোন কল কিংবা ম্যাসেজ বক্স। দাওয়াৎ….গিফট…এ পর্যন্ত না হয় যুক্তির খাতিরে মেনে নেয়া গেল…কিন্তু যে এই অন্যায় আব্দার মেনে নিতে চাইবে না…তখনই শুরু হবে হঠাৎ ভাল লাগা থেকে ছুটে যাওয়া মানুষটার বিরুদ্ধে অপপ্রচার কিংবা বিষোদাগার… অপরের কাছে। ‘আমি সাধু পুরুষ——ও চরিত্রহীন, আমায় এপ্রোচ করেছে। ওর সাথে যেন কেউ মিশো না কিংবা ফটোসেসন করো না…ইত্যাদি।
বোধ না থাকলে মানুষ যা খুশি করতে পারে। কথায় আছে, এক কান কাটলে রাস্তার একপাশে হাঁটে। কোন বিশেষ কারণে দুই কান কাটা গেলে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটে। আমি জানি না, এই সাবেক উচ্চপদস্থ ও কবি রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন কেন? এই প্রবীণ সেলিব্রেটি ও সুশিক্ষিত তার ওজন হিসেবে কথা বলবেন আদর্শিক। তা না করে তিনি হুকুমালি ডাকাতের ভূমিকা কেন অবতীর্ণ হলেন? মহা চিন্তার বিষয়।
নূরিতার স্ট্যাটাসের পর এখন একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে এর স্বরূপ। জানা যায়...নিকট বন্ধুদের অনেকের ইনবক্স তার কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিতে টইটম্বুর। কেউ একজন সৎসাহস নিয়ে দেখিয়েছেন। সেই লেখনীর ভাষা...! আমি মনে করি...নূন্যতম আদর্শলিপি পাঠ করা সেই মাপের কোন শিক্ষিত ব্যক্তি এই অশ্রাব্য ভাষা (তিরিক্ষি মেজাজে হয়ত উচ্চারণ করে ফেলতে পারেন তবে) লিখতে গিয়ে ব্যবহার করতে পারেন না। বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিয়েছে। স্যরি বন্ধুরা...(অফ দ্য রেকর্ড) বলতে বাধ্য হলাম। এটা একটি কষ্টের কথা। আরো অনেক কথা। ফেবু ভার্চুয়াল জগতের স্ব স্ব অবস্থানে থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে আমার শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের অনেকে জ্ঞান, গড়িমা ও প্রজ্ঞাবয়ে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। তাঁদের সাথে শুধু হাঁটলেও অনেক কিছু শেখার থাকে। কিন্তু ওনার মন মতো না হলে সেই সব বরেণ্য ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলেন তীর্যক ভাষায়। আর নারীদের তো....বিশেষ করে নূরিতাসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি সম্পর্কে....তখন তার এই স্বেচ্ছাচারিতা (যা মানুষের সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ক্ষতিগ্রস্থ করছে ক্রমাগত) বন্ধের ব্যবস্থা নেয়াটা কী জরুরী নয়...? এত দুঃসাহস উনি কোথায় পেলেন....? আমি নূরিতার প্রতিবাদি স্ট্যাটাসের সাথে সহমত। সেই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করার সুযোগ ছিল না বলে আলাদা করে লিখলাম।
মানুষ তার শ্রদ্ধা হারায় স্বীয় অশ্রদ্ধার কারণে। যে মানুষ প্রতিবাদী মানুষকে সামাজিকভাবে হত্যা করার ফন্দি আঁটে...., হুমকি দেয়....হুকুম দেয়, তাকে বিবেকসচেতন মানুষ হুকুমালি ডাকাতের সঙ্গে তুলনা না করে পারে না। আমি শুধু তুলনা করেই সন্তষ্ট নয়....নূরিতার ভাষায় কণ্ঠ মিলিয়ে এর প্রতিবাদ ও সামাজিক বিচারের দাবী মেনে নিচ্ছি বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে। সেই সাথে নূরিতাকে ধন্যবাদ ....হুকুমালির চরিত্র উন্মোচনের জন্য..........
(ছবি কোন একজন সুহৃদ নুরিতার টাইমলাইন থেকে স্ক্রিণশুট করে পাঠিয়েছেন)


Alamgir Reza Chowdhury
কবি সাদাফ হাসনাইন মানজুর আশির দশক থেকে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ‘চর্যাপদ‘ নামক একটি অসাধারণ সাহিত্য পত্রিকার পখচলা শুরু হয়। যা আজো অনিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছে। সাহিত্য পাগল এই মানুষটির সঙ্গে আমার, ভ্রমণ লেখক মঈনুস সুলতান, কবি বদরুল হায়দারের আত্ম‍ার সম্পর্ক তখন থেকেই। যা আজো অটুট রয়েছে। জীবন ও জীবিকার কারণে কবি সাদাফ হাসনাইন মানজুর লন্ডনসহ পৃথিবীর বহুদেশে বসবাস গড়েন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও লড়াকু। যা আমি ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। দীর্ঘদিন বিদেশ যাপন শেষে শেকড়ের টানে বাংলাদেশে ফিরে আসে। শুধু কবিতা লিখবে বলেই পাশ্চাত্য পৃথিবীর মোহময় বর্ণাঢ্য জীবন ওকে আটকে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশে ফিরে এসে কবিতা নামক কুমারীর পেছনে আবার পথ চলা শুরু করেন। আবার সেই চর্যাপদ। আবার সেই কবিতার আড্ডা। আবার কবিতা-কবিতা বলে চিৎকার-পাগলামি। না কবিতা ওকে ফেলে যায় নি। সে এই চির কুমারীর নীল উর্ণির ঢেউয়ে পাগলপারা। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই, ‘প্রতিবেশি নদীর মতো।” যা আমিসহ সকল পাঠকের মনকে চমৎকৃত করে। আমি ওকে মনে মনে হিংসা করতে শুরু করি। যাকে বলে কাব্যহিংসা। ওর ফলবান হাত বহতা নদীর মতো বেগবান হোক। এ কামনা আমার সারা জীবন অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি ফেবুতে হুমায়ূণ কবির (অর্ণব আশিক) নামক এক অধুনালুপ্ত আমলা (বর্তমান যিনি কবিপ্রার্থী) তিনি সাদাফ হাসনাইন মানজুর সম্পর্কে না জেনেই অশালীন মন্তব্য করে চলছেন। যা অত্যন্ত অমর্যাদাকর, অসম্মানজনক। মেনে নেওয়া যায় না। এই ভদ্রলোকটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। দীর্ঘ জীবনের কবিতা যাত্রায় পরিচয়ও হয়ে ওঠে নি। কবি ও কথাসাহিত্যিক দীলতাজ রহমান পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি তাকে নিপাট ভদ্রলোক মনে করেছিলাম। সেই সৌজন্যে ভোরের পাতার ঈদ সংখ্যায় তাঁর একটি কবিতাও ছেপেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফেবুতে তাকে ঘিরে যেসব মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড চোখে পরছে। এতে আমি সঙ্কিত। একজন কবিতাকর্মী কি করে এতটা নোংরা ও ঈর্ষা পরায়ন হতে পারে! বিষয়টি নিয়ে আমার অবাক হওয়া ছাড়া কিছু করবার নেই। হূমায়ূন কবির সাহেব জানে না কবিতার মতো কিছু একটা লিখলেই কবি হওয়া সম্ভব নয়। অক্টোভিও পাজ বলেছেন, কবিতার জন্য এক জীবন অপেক্ষা করতে হয়। আপনি অতটা সময় কবিতার জন্য দিতে চেষ্টা করুন। নইলে অযথা সাহিত্যের পরিবেশ দূষণ করবেন না।