গল্প-গল্প নয়
সাদাফ হাসনাইন মানজুর
কারো কারো বয়স বাড়ে বহুমাত্রিক সুশৃংখল চিন্তার ঘন আসা যাওয়ায় । কারো বাড়ে যথা বয়সে, কেউ কেউ বয়সের আগেই চিটা ধানের মতো চুপসে গিয়ে অজস্র কাটা-কুটি গায়ে মেখে মলিন পড়ে থাকে জীবনের রাফ খাতায় । কারো বাড়ে সুর্যোদয়ের আগে । কারো কারো সূর্যাস্তে । 'আমার' বেড়েছে পেটের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতায় । কারো মেধায় সয়, কারো পেটে বা পিঠে । আমার সবটাতেই বদ হজম ,কিছুতেই সয় না কিছু । দুই যুগ বয়সের সীমানা ছুঁতে না ছুঁতেই আমার জ্ঞ্যান-বাহী মুল্যবান মাথার দুই দিকের ভ্রু বরাবর, মেঘ ভাঙ্গা সূর্যের মতো রাজস্থানের মরুভূমি উঁকি দিয়ে জানান দেয়া শুরু করেছে তার অবৈধ দখল প্রচেষ্টা । সেই সাথে কেশ বাগানের মাথার উপরে উঠেছে সাদা কালোর মোজাইক চিত্র । কোন শ্রেণীর পেট যে আমার নামে এলটম্যান্ট হয়েছে, শত চেষ্টাতেও তা বোঝা যায়নি । এই বয়সেই শীল পড়া আধ-পাকা কুমড়োর মতো ব্যাদান মুখ নিয়ে জগতের সকল হাসি খুশি সুখ দুঃখ নিরীহ মেনি মাছের ধৈর্য্যে গিলে যাচ্ছি সব । ফলে মন মেজাজের চিক্কন-মোটা, সব ধরনের চাপের অন্তীম আশ্রয় যদি বেচারা উদরের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে তাহলে, তার আর দোষ কি? বেঁকে তো বসবেই । শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে শেয অব্দি বৈদ্যের শরণ। আমার প্রাত্যহিক অনিয়মের সুনিপুণ মাত্রার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে বৈদ্য দিলেন পথ্য পালটে। খাবারের মেন্যুতে ঝুলিয়ে দিলেন দীর্ঘ শিকলসহ এক বিশাল তালা । বিয়াল্লিশ রকম খাদ্যের উপর করে দিলেন কার্ফ্যু জারী । বৈমাত্র শীবির ভ্রাত জ্ঞ্যানে পাশ কাটিয়ে চলতে পারলে নাকি অচিরেই পেট আমার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে । ভেতরটা নাকি চৌদ্দ সি,এফ,টি ডীপ ফ্রীজের মতো শীতল হয়ে যাবে । আরে বাবা, আমার মাথার উপরের সাদা কালো মোজাইক চিত্রটি পূর্বের মতো সিল্কের অন্ধকার খুঁজে পাবে কিনা সেটা বলো আগে । নাকি তাজা বাশেঁর পাকা কঞ্চি হয়েই থাকবে ?
যার পূর্বপুরুষেরা ভোগ বিলাস আর মৌজ মাস্তিতে জমিদারী খোয়ানোর ইতিহাস গড়েছেন, তাদের উদভ্রান্ত উত্তরসূরী হিসেবে বৈদ্যবাবুর বিধি নিষেধে আমার চলবে কেনো? ফলে, বৈদ্যবাবুর নিপাট মলাট ভাঁজ করে শুরু করে দিলাম নিজ হাতে আপন পরিচর্যা । সেই যে শুরু, আজ চার যুগের প্রান্তসীমায় এসেও থামেনি । একই গতিতে চলছে যজ্ঞ । আগে গাছ থেকে তুলে আনা মেহেদী পাতার বাটনা তুলে দিতাম চুলে । এখন শপিং মল থেকে কোরিয়ান হাইস্পীড কলপের প্যাকেট কিনে এনে ঘরে বসে নিজ হাতে মাখি মাসে চারবার । কিছুক্ষণ আগে এ মাসের শেষ কিস্তির কাজ সম্পন্ন করে বারান্দায় বসেছি, পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জের কবি “ডেরেক ওয়ালকট” এর অনুবাদ কবিতা হাতে নিয়ে ।
ওয়ালকট প্রকৃতির কবি । লিখতে গিয়ে তিনি প্রকৃতি ও প্রকৃতি-নির্ভর জীবিকা অণ্বেষণে ব্যস্ত মানুষের কাছে ফিরে গেছেন বার বার । নোবেল ভূষিত 'ডেরেক' , সমুদ্রের গভীরতা, সামুদ্রিক সৌন্দর্য, সমুদ্রের নির্ভরতা নিয়ে বেঁচে থাকা সরল অথচ কঠিন পরিশ্রমী মানুষ নিয়ে বহু কালজয়ী শব্দ ছবি এঁকেছেন । সব দেশেই সবসময় হাতে গোনা কিছু শব্দকৃষক জন্মান যাঁরা নিজ দেশের কাব্য ভূমিতে কাব্যের বাম্পার ফসল ফলান বলেই মনো-স্বাস্থ্যকর এ ফসল শতাব্দীকালব্যাপী পৃথিবীর কোটি কোটি সাহিত্য ভোজী পাঠকের রুচির খোরাক হয়ে এখনো পর্যন্ত দেশে দেশে রপ্তানী হচ্ছে স্রোতধারায় । আমাদের রবীন্দ্রনাথ,নজরুল, লালন সাঁই’র মতো ভাব-সম্রাট স্বচ্ছল-শব্দ কৃষকেরা যখন অর্গানিক শব্দাবাদ করেছেন বাম্পার ফলনে, তখন তা নিজ দেশ উপচে পড়ে বহু দেশের পাঠকের হাতে হাতে ঘুরেছে, আজো ঘুরছে। শেক্সপিওর, গ্যেয়তে,গোর্কি , গালিব ,খৈয়াম, ফিরাখ, রিল্কে, কামিংস, মালার্মে, ফ্রস্ট,ওয়ালকট আরো শত শত গুণীর আবাদী ফলন পেয়েছি বলেই আমরাও মেধায় মননে ভাবনায় রুচিতে ঋদ্ধ করেছি নিজেদেরকে। আবার যাদের কাব্য নদীতে নাব্যতা নেই তারাও দেশে দেশে যুগে যুগে ভাবের চরে হাঁটু মুড়ে কথার মটর-দানা পুড়ে উৎসব করে চলেছে রাজন্যগণের ফিতে কাটায়। অবৈধ বাণিজ্যিকের ব্যক্তিগত বিত্ত বৃদ্ধি পাওয়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে এরা, এদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কোনকালেও করা যায়নি উলটো এরাই বরং ক্ষোভ, হিংসা আর বিদ্বেষের অক্ষম আগুনে পোড়াতে চেয়েছে কাব্য ভূমির প্রকৃত অশ্বথ্থ ।
'তোমার রুপ চর্চা শেষ হলো?' ঘরের ভিতর থেকে বাতাসে ছুঁড়ে ফেলা ‘ইদন’ এর এই সকাল বেলার তাড়া দেয়া আওয়াজ, ট্রাফিকের রেড সিগন্যালে, দ্রুত ছুটে আসা যানের মতোই আমার ভাব জগতের সবগুলো গাড়ী হঠাৎ-ব্রেকে হুড়মুড় করে থেমে গেলো যে যার জায়গায় । এবার দমকা হাওয়া! “তুই খাবি না? একশবার খাবি…তোর বাবা খাবে” আমার ছোট মেয়েটা বড় দুজনের চেয়ে একটু বেশী মাত্রার ঘুম কাতুরে বলে ওকে ডে শিফটে দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ সকাল এগারোটায় ওর ইস্কুল শুরু । ইস্কুলে যাওয়ার সময় বুবাই কিছুতেই কিছু খেতে চায়না জেনেও ইদন জোর করে খাওয়াতে চেষ্টা করবে প্রতিদিন সকালে আর যথারীতি ফেইল মেরে তুই তুকারি করে বকা ঝকা শুরু করবে । এতটুকু বুবাই আমার, সেও গজাল মারা নৌকার গলুই’র মতো ঘাড় শক্ত করে নট নড়ন চড়ন বসে থাকবে । বুবাই আমার মাঝ বয়সের কুড়িয়ে পাওয়া খেলনা । ওর প্রতি ইদনের স্নেহাত্যাচারে আমি এক ধরনের হাবু কাবু হয়ে যাই । বারান্দায় বসে বসেই মিনমিনে স্বরে বলতে চেষ্টা করি ‘ঠিক আছে আমাকেই না হয় দাও, খেয়ে ফেলি’ । ব্যস, কম্ম সারা! সব কিছু জেনেও যে কেন এই সকাল সকাল ভুলটা করতে গেলাম ! চুল ছিঁড়ে প্রায়শ্চিত্ত করবো তারও উপায় রাখিনি, হাতে কলপের কালি লেগে যা তা হয়ে যাবে। এবার যুদ্ধ ময়দানে প্রতিপক্ষ আমি, মুখাস্ত্রের তাক এখন বুবাইকে ছেড়ে আমার দিকে ঘুরেছে, ঝাক ঝাক শব্দ বুলেট আমাকে ঝাঁঝরা করে ছাড়বে জানি । আমিও নিশ্চিত পরাজয় মেনে ভিতরে ভিতরে মাথা ভাঙ্গা দেবদারু আর বাহিরে বটের ঋজুতায় কঠিন, ভাবখানা এমন “বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচাগ্র মেদেনী”।
আচ্ছা? শেক্সপিয়র মহাশয় কি বুবাই, ইদনের মতো স্নেহমাখা শাসনের কোন বিগ ক্লোজআপ দৃশ্য দেখে লিখেছিলেন? I must be cruel only to be kind. শুরুর আগেই রণে ভঙ্গ দিয়ে পড়ি মরি করে ঘর ছেড়ে সোজা রাস্তায় নামার আগে ড্রাইভার হাফিজকে ইশারায় বুঝিয়ে দিয়ে গেলাম, তুই আজ ম্যাডামের অধীনে থাক। আমি দুই পা ভরসায় দিন শুরু করলাম। এই সময়টাতে সি,এন,জি বা রিক্সা পাওয়া আর যে কোন বড় দলের অধীনে নির্বাচনের টিকেট পাওয়া সমান কষ্টকর । আমাকে রংপুর যেতে হবে। লাভলু আর আমি যাবো। ছোট্ট আকারের একটা সাহিত্য আড্ডায়। ফলে সোজা 'ফিট বাবু টেকসই' মাথা নিচু করে লম্বা হাঁটা । মডেল কলেজ ঘেষেঁ খিলজি রোড হয়ে কলেজগেট ছাড়িয়ে সোজা কল্যাণপুর আগমনি বাস কাউন্টার । রাতের শেষ বাসের দুটো টিকেট কেটে চারুকলায় যাবো 'রনি'র কাছে । ছবিগুলো কদ্দুর কি করলো খবর নিতে হবে । রেস্তোরাঁটাকে একটু ভিন্ন আদলে সাজাবো বলে ভাবছি । সেই ভাবনাতেই ওকে কিছু ছবি আঁকার কাজ দেয়া । দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিভার রেলগাড়ি পুওউউউ করে ছুটিয়ে দিয়েছে ঝিকি ঝিকি করে ।
টিকেট দুটো পকেটে পুরে লাভলুকে ফোনে জানিয়ে দিলাম । রিপোর্টং টাইম সাড়ে এগারটা । গাড়ী ছাড়বে বারোটায় । দুপুর থেকে আকাশের অবস্থা 'ইদনের' সকালবেলার মনের অবস্থার সাথে দৌড়াচ্ছে কিনা কে জানে! গুড়ুম গুড়ুম মেঘের ডাক, দমকা হাওয়া আর ঘন পাতলা টানা বৃষ্টি । অবস্থা আরো খারাপ হলেও আমি যে যাবোই এই ব্যাপারে 'ইদনের' কোন সন্দেহ নেই তাই সব ধরনের মন খারাপ থাকা সত্বেও আমার ট্রাভেল ব্যাগটা ঠিকই গুছিয়ে রাখবে । সেই সাথে টর্চ লাইট, ব্রাশ কিট, লোশন, কটনবাড, কিছুই বাদ পড়বেনা । প্যান্টের ডান পকেটে রাখা এন্ড্রয়েডে ঠাকুরজীর 'কালো তা সে যতোই কালো হউক আমি দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ' সাদি মোহাম্মদের গলায় বেজে উঠলো । এই রিং টোন বলে দিচ্ছে আমার ম্যাডামের মান ভেঙ্গেছে ।
"শোন, লাভলু ভাইকে আমি কল করে বলে দিয়েছি, যাওয়ার আগে যেন এখানে এসে রাতের খাবার খেয়ে যায় " চুঁই ঝাল দিয়ে খাসী ভুনা করেছি । কাঁচা ঝালে ধনে পাতার ঘন পাবদা ঝোল, জলপাইর ডাল আর সিম আলু সর্ষের ভর্তা । এই হচ্ছে ইদন । প্রেমিকা হিসেবে যতো কৃপণ ততো উদার দায়িত্বশীল স্ত্রী হিসাবে । সময় ধরে লাভলু চলে এলো, রাতের খাবার খেয়ে যথাসময়ে দুজন বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলাম রংপুরের উদ্দেশ্যে। একটা ঘরোয়া সাহিত্যে আড্ডার আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে রংপুরে ছুটে যাওয়া ।
ঘাড়ে করে বৃষ্টির বোঝা নিয়ে সারারাত পথ ভেঙ্গে ঘুম ঘুম চোখে, জলের ভেজা-সম্ভাষণে পর্যটনের মোটেলে আশ্রয় । এখানে পোস্টম্যানের মতো বৃষ্টি ছুঁয়েছে ঘরের দুয়ার । দু একটি ছোট ছোট উঁচু এলাকা ছাড়া পুরো রংপুর ডুবে আছে জলে । গত দুই দিনের টানা বর্ষণে রংপুর এখন জল-মোমের বিছানা । দিনের মেইল ট্রেন আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চা মুড়কি আর রুই ঝোলে সব্জি ডালের মধ্যাহ্ন আহার। সময় যে কখন বড়শী ছেঁড়া মাছের মতো সরাত করে মুগ্ধ জলের শরীর কেটে বেরিয়ে গেলো কেউ টেরই পেলাম না!
রাতে নিমন্ত্রণী চঞ্চলদার বাড়ীতে ছিলো ভোজের বিলাস । চঞ্চলদা মানে চঞ্চল ভৌমিক। একজন সরকারী আমলা, জেলা শহরে পোস্টিং নিয়ে সকাল সন্ধ্যা শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যতিব্যস্ত রাখেন নিজেকে। ফেইসবুকি মানুষ। অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। অগণিত লাইকার আর ফলোয়ারের লিস্ট দেখে বোঝা যায় তার তারকা খ্যাতি! যে কোন গাছের নীচে দাঁড়িয়ে অনায়াসে হাত তুলে আম পেড়ে খাওয়ার মতো লম্বা মানুষ চঞ্চল। জ্বাল দেয়া দুধ ঘন হতেই পারে, তাই বলে চঞ্চলদার গায়ের রঙকে অতিক্রম করে যাবে (!) সে সাধ্যি দুধের নেই। রাধার ঘুম ভাংগিয়ে ঘর থেকে মাঝ রাতে বের করে নিয়ে আসার মতো সুরেলা আওয়াজে যখন তিনি খালি গলায় গান ধরেন বা কবিতা আবৃত্তি করেন অথবা কোন বিষয় উপস্থাপন করেন তখন নারীকূল মুগ্ধতার মোহনায় ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যার বাসনা ধরেন গোপন মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় । অথচ দিব্যি করে বলতে পারি এমন রমণী ভীতু সুন্দর পুরুষ আমি জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি । তাঁর ডাকেই রংপুর আসা, সে বাড়ীতেই নেমন্তন্ন ।
রাতের পৌর-আলোয় ঘন বৃষ্টির দেয়াল ভেংগে আমরা পৌঁছে যাই নির্ধারিত গন্তব্যে । যেতে যেতে মনে হলো ক্লান্ত ঘর বাড়ীগুলো শুয়ে আছে জলের জাজিমে । বৌদিসহ পরিবারের বাকীদের সাথে পরিচয় শেষে সুসজ্জিত ডাইনিং টেবিলের আহবানে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । লুচি লাবড়ার ভগ্নাংশ মুখে যেতেই বুঝে গেলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর আবদুর রহমান এখনো বেঁচে আছেন বৌদির হেশেঁলে। সব শেষে ফিরে আসা। মোটেলের বিছানায় নিজেকে শর্তহীন ছেড়ে দিতেই মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো ... শোকর আলহামদুলিল্লাহ্!
গাছ ভাঙ্গা বাজের শব্দে, ঘুমের অতল থেকে বিরক্তির বুদবুদ ছেড়ে জেগে উঠি অ্যালার্ম দেয়া সময়ের আগে । সন্মুখ সমরে থাকা যোদ্ধার মতো লাফ দিয়ে একটানে দরজার ছিটকিনি খুলে কেঁপে কেঁপে দাঁড়িয়ে যাই পা পিছেলে পড়া ভেজা বারান্দায় । আম, কাঠাল, অর্জুনের নিরীহ পাতায় তুমুল বৃষ্টির সমবায় সংগীতে মেজাজের খুপরিতে কুয়ার শীতলতা পেয়ে যাই, সেই সাথে এই মাড় গলা ভোরে চোখে মুখে ছুটে আসা জলের মৃদু মিষ্টি খামছি তোকে মনে করিয়ে দেয়, 'বুড়ী তুই কি চাঁদে আছিস! সুতো কাটায় ব্যস্ত আছিস? টানা বৃষ্টির গভীর চুম্বনে যেভাবে মৃত্তিকা শীতল, চুপচাপ গাঢ় রহস্যের স্বভাবে, আমিও তেমনি বুঁদ, চোখ বুজে লতা পাতা বৃক্ষের গণসংগীতে । বুড়ী, তুইতো চাঁদে আছিস! এই ভোরে আমাকে খোলা চিনি, দুধবাটি, তাজা ইস্পাহানি ব্যাগ ট্রে'তে করে তুলে দেবে কে? অগত্যা মধুসূদন, ইন্টারকমে মোটেলের কিচেনে ঢুকে বলে দেই প্রয়োজন, জানি ঘড়ি ধরে চলে আসবে প্রয়োজনের দল । আমিও কাপে কাপে তুলে নেবো উষ্ণ মুগ্ধতা! বুড়ী, চাঁদে বসে চা পাবিনে, খেতে চাইলে নেমে আয় নয়তো মর গিয়ে কোন সৌর ভাগাড়ে। ইতিমধ্যে লাভলু আড়মোড়া ভাঙ্গে বারান্দায় । তাঁর হাতে বৃষ্টির ভার দিয়ে, আমি পরিচর্যায় দেখে নেই দাঁতের স্বাস্থ্য, বত্রিশ পরিবারের ঘর, বাড়ী, গ্রাম, পরিপাটি রেখে ফিরে আসি পুরোনো গতিতে । এখানে চা, দুধ, খোলা চিনি স্বেচ্ছা মৃত্যুর প্রতিজ্ঞায় স্থির, এই ত্রয়ীর আত্মহত্যার উষ্ণ ধোঁয়ায় ঠোঁট রাখি আমরা দুজনে । হায় ভোর, ওহ ভোর কতদিন পাই না তোকে এই স্বভাবে!
ম্যাসেজ বক্সে সুমিকে বলে রেখেছিলাম, আমরা দু'দিন রংপুর থাকবো । সুমি, আমি ফেইসবুক ফ্রেন্ড। দেখা হয়নি কথা হয়নি কখনো। দু'একবার ইনবক্সে কথা চালাচালি তারপর যে যার মতো। গতকাল রিক্সায় ঘুরে ঘুরে বৃষ্টিস্নানের তৃপ্তিতে স্মৃতি খুঁড়ি, পরিচিত আর কে কে আছে রংপুর শহরে আমার? মেঘ ভাঙ্গা সূর্যের মতো উঁকি দেয় সুমি সুমি নাম! কলেজের প্রভাষক । স্বামী সুখি এক সন্তানের মা। জন্ম, পড়া, বড় হওয়া, বিয়ে এখানেই সব। রুমে ফিরে ইন্টারনেটের খোলা আকাশে শব্দ পায়রা ছেড়ে দিয়ে ভুলে যাই সুমিকে বিকেলের বৃষ্টিতে ভিজার আগাম প্রস্তুতিতে। ম্যাসেজের মিষ্টি আওয়াজে শব্দের পায়রাগুলো ফিরে এসেছে সুমির ফেরত বার্তা নিয়ে । জানতে চেয়েছে, এখনো রংপুর আছি কিনা থাকলে যেন অবশ্যই গঙ্গাচড়া হয়ে এই বর্ষায় হঠাৎ যৌবন পাওয়া তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টি মাখি গায়ে। আহ তিস্তা! মমতার জটিল গণিতে পড়ে দুখিনী তিস্তা এখন ক্ষীণকায়া, রুপ রং মরে গেছে ধীরে ধীরে, বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া বৃদ্ধার মাথার সিঁথির মতো চিক্কন, এলোমেলো হয়ে গেছে। একদা এই তিস্তা রংপুরের অহংকার ছিলো। বৃহত্তর রংপুরের মাটি, মানুষ, বৃক্ষলতা, ফসলি-সরল, ফলবতী-সুখের হাওয়ায় চিনে নিতো নিজেদের মুখ। আজ দাদা ও দিদিদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মায়াবী বাক্যস্রোতে প্রায় মরুভূমি হয়ে আছে তিস্তার বুক! সেই তিস্তা জলে ডুবেছে! এই ঘোর বরষায়? ব্যাঙের কাছে জলের লোভ! আমাকে খুঁজে পায় এমন সাধ্য কার আছে? ফিরতি পথে তাজহাটের রাজবাড়ী দেখতে যেন ভুল না করি, আমার "ইনবক্স অভিভাবক" গন্তব্যের পথ ও ঠিকানা বাতলে দিলেন, এই ভর বৃষ্টিতে নিজে হয়তো রয়ে গেলেন ভুনা খিচুড়ীর সমূহ সুখে!
রংপুর থেকে ফিরে এসে মইনুল কবির,দেওয়ান সাইদুল হাসান টোকেন, হাসান আব্দুল্লাহ চৌধুরী, মুন্সি রফিকুল হাসান , আযাদ নোমান , আমি, আমরা সবাই অফিসার্স ক্লাবের ক্যাফেটারিয়ায় বসে শিল্প সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ চর্যাপদের পরবর্তী সংখ্যার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনায় মিলিত হয়েছি । আমাদের বন্ধুত্বের বয়সটা একদমই ঝেড়েঝুড়ে ফেলে দেয়ার মতো নয়। সর্বনিম্ন তিরিশ, সর্বোচ্চ পঁয়তাল্লিশ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। চর্যাপদ প্রকাশ করছি সাতাশি সাল থেকে । বন্ধুত্ব চিৎকারে নয় বোধের গভীরে থাকে। নাড়ি ছেঁড়া টানে থাকে। খুনসুঁটির সোনামুখী সুঁই'য়ের স্বভাবে এফোঁড়ওফোঁড় হয় সময়ের চাকি। এতে স্নেহ প্রীতি ভালোবাসা চিরতার তিতা থাকে অমৃতের পাশে। চোখের পাতায় থাকে বিন্দু জলের ওজন, তবু সূর্যের হাসি ঝরে বন্ধুর মুখে, তবেই না বন্ধুত্ব । গণিতের সূত্র ধরে বন্ধুত্বের ফলাফল নির্ণয়ে যারা হেঁটে গেছে ফিরপথে, তারা অন্ধকারে গেছে। তাদের, এদো গলির দেহ মনে আলোর কণা পৌঁছায়নি কখনো। তা সে সভ্যতার চায়না থাকুক আর মক্কা মদিনায় অথবা আমাজনের গহিন অরণ্যে । শাসনে বারনে কারণে অকারণে ইর্ষায় গুঞ্জনে বন্ধু স্রোতের গতিপথ রুখে দেয়া মানে, স্বৈর স্বভাবে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের নিকুচি করে বিকৃত সুখে মনোবৈকল্যের কটকটি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি ওদের দিয়ে । অবসরে আমি বন্ধুত্বকে পড়ি। বারবার পড়ি। শহরে বা গ্রামে, গল্পে বা কবিতায়, ভিতরে বা বাহিরে, প্রকাশ্যে বা গোপনে এক ভাবেই পড়ি। আমার সকল বন্ধুদের জন্য অখন্ড সম্মানের প্রার্থনা করি মহান স্রষ্টা সমীপে ... হে প্রভু, আমাদের জ্ঞ্যান হউক বিনয়ে কোমল । আমীন ।
কাউকে বিশ্বাসের সর্বনিম্ন স্তরে রেখে বিশ্বাস করার চেয়ে অবিশ্বাস করা শ্রেয় । এতে করে উভয়েই উপকৃত হয়। সন্দেহের ক্ষুদ্র ইঁদুর, ঠাস বুননে তৈরী সম্পর্কের বর্ণিল শতরঞ্জিকে কুটি কুটি করে কেটে ছড়িয়ে দিয়ে নোংরা করে ফেলে বিশ্বাসের সাজানো উঠোন। স্বর্গীয় ঝড়ের মাতম ছাড়া এই উঠোন আর কখনোই চাকচিক্য ফিরে পায় না আগের মতোন। পক্ষান্তরে, সরাসরি অবিশ্বাসে নিজেকে সমূহ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়, যা নড়বড়ে বিশ্বাসে সম্ভব নয় । হয় কাউকে পুরোটাই বিশ্বাস, অথবা অবিশ্বাস করুন। নামকা ওয়াস্তে বিশ্বাসের নামে নিজেকে হাস্যকর করে তুললে এর খেসারত কিন্তু একদিন নিজেকেই দিতে হবে । সুজনটা সবার বেলায় সারা জীবন তাই করে এসেছে । সুখের মাছি হয়ে পাতিলের মুখ থেকে গুড়ের টুকরোটা পেলেই ওর হয়ে যায় , তলানির গাঢ়তায় নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার মধ্যে বোকামি ছাড়া আর কিছু দেখেনা সে । বালতির উচ্চতা দিয়ে কুয়ার গভীরতা যাচাই করতে গিয়ে সম্পর্কের খোলা মাঠে হোঁচট খেয়েছে বহুবার । আমরা অন্যের খুঁত ধরে ধরে নিজেকে নিখুঁত করার প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর যে কোন দেশের মানুষের চেয়ে অগ্রসর আর ভীষণ পটু । কিন্তু কেউই কেন যে বুঝতে চাই না পরের খুঁতের চার আনায় নিজের খুঁত ষোল আনা ফুটে থাকে জলে ভাসা পদ্মের মতো সকল পাঁপড়ি মেলে ।
আজকাল সজলটাকে খুব মনে পড়ে। ভীষণ রকম মনে পড়ে। তারুণ্যের বোকা-ক্রোধ যখন জীবনকে বেপথু করে দেয় যখন সম্ভাবনার উজ্জ্বল আলো তরুণ তুর্কীকে গুটি গুটি করে অমাবশ্যার অন্ধকারে নিয়ে অন্তহীন নিদ্রার কোলে ঢেলে দিতে চায়, ঠিক ঐ রকম একটা সময়ে রুপকথার চরিত্র হয়ে সজলটা আমাকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো উজ্জ্বল সূর্যের নীচে। বন্ধু, কতোদিন দেখিনা তোকে! পনেরো হাজার মাইল দূরে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে তুই ক্যামন আছিসরে সেদিনের স্মার্ট বয়? কার উপর, কি কারণে একমাত্র ছেলে হয়েও বৃদ্ধা মাকে একা ফেলে রেখে চলে গেলি কোন সুখের প্রত্যাশায়? খুব কি সুখী হয়েছিস বন্ধু আমার? দায়িত্ব পালনের কৃতিত্ব ফেলে পলায়নের কোন সুখ তোকে মহিয়ান করেছে? বুকে হাত দিয়ে একবার বলে যাবি সজল? মান্না দে’র গানের মতো জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে … 'তুমি কি সেই আগের মতোই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো ' ।
তোকে ঘৃণা করবো, সাহস নেই । ভালোবাসবো পথ খোলা নেই । সেদিন উজ্জ্বল সূর্যের নীচে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতার বিষ-মালা কেনো ঝুলিয়ে গেলি এই আন-পড়ুয়া অশিক্ষিতের গলায় ! ভুলেই যদি যাবি এভাবে, তবে তোকে আজীবন মনে রাখার দায়ভারটুকু আমাকে একা দিয়ে গেলি কেনো? সজল, তুই এতো নিষ্ঠুর হলি কি করে?
আমাদের এবারের ভ্রমণ সুন্দরবন । সাতক্ষীরায় চিশ্তির বাড়ীতে দুইদিন । এখানে ওর রয়েছে সম্ভবত দেশের সর্ববৃহৎ, ছয়শ পঞ্চাশ একরের চিংড়ী ঘের। আর মাত্র ক্রোশ দুয়েক পরেই সুন্দরবন। এক রাত নিরীহ মাছের সাথে রাত্রি যাপন আর দিনের বেলায় মৌয়ালদের সাথে সুখ দুঃখের খুদকুঁড়ো খুঁটে খাওয়া। ফের পরিচিত আঙ্গিনায় প্রিয়তম বিছানায় । এখানেও দিন ক্ষন হিসাব হিসাব করে পূর্ণিমাকে ধরতে এসেছি । যারা বাঘ হরিণ ধরে মারে ,ধরুক মারুক । আমি গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে আলোর আধুলি কুড়িয়ে ভ'রে নেবো বুকের ভিতর খালি হয়ে যাওয়া সব কটা খোলা পকেট ।
আলমের এক নাম্বার পচা সাবান বার কয়েক ব্যবহারে যে আকৃতি দাঁড়ায়, আজকের চাঁদ অনেকটা সেই রকম । উনত্রিশ তারিখ শনিবার পূর্ণতা পাবে, আমি তখন অপেক্ষায় রইবো বর্ষীয়ান গাছের আশ্রয়ে, আলোর জোয়ার এসে লেগে যাবে গায়। জোনাকির গুনগুন বুড়ীকে মনে করিয়ে দেবে । বুড়ী আমার ভুল চাকুতে সময় কাটে । দিগ্ববিদিক উদভ্রান্ত হাঁটে । আমিও তাকে নিয়ে ভুগবো সারারাত। বেদনার শশ্রুষা করে পূর্ণিমার উদর চিরে রুপালী জ্যোৎস্নায় মাঝরাতে আমি নীল পদ্ম হবো, সকল নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গাইতে থাকবো তোরা দেখে যা আমি কোন আলোয় খেলি। পূর্ণিমায়, রাত গহীনের পুণ্যস্নানে অন্তর জুড়িয়ে আবার ফিরে এসেছি প্রাণের শহর ঢাকায় । নিয়মিত জীবনে সুড়ুত করে ঢুকে পড়েছি । চেনা পথে চেনা কাজ বাঁধা সময়ের টানা জীবন শেষ করে ঘড়ি ধরে ঘরে ফিরি । প্রতিদিন এভাবেই রুটিন মাফিক ঘরে ফিরি, এভাবেই প্রতিদিন শাওয়ারে দাঁড়াই। মাঝরাতে ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টেই ঢুকে যাই বাথরুমে । কি শীত কি গ্রীষ্মকাল, জলের পতন মাথায় নিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ এক দুই তিন গুনে গুনে দিনের কাজগুলো মিলিয়ে নিতে থাকি।
ঢাকার ট্রাফিক দিনের তিন ভাগ সময়ের দুই ভাগ খেয়ে ফেলে বলে কয়ে । খেয়ে খেয়ে স্থূল হচ্ছে দিন দিন । রাস্তার স্বাস্থ্য বেড়ে ফুটপাতে উঠে গেছে । মটর সাইকেল, স্কুটি, ভেসপা, মোদ্দা কথা দুই চাকা এখন রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে চলাচলের জায়গা করে নিয়েছে । এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার পথচারীরা অচিরেই ডিজিটাল বেনিফিট নিয়ে দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করবে, তা ছাড়া পথচারীদের গন্তব্যস্থলে যাওয়ার আর কোন উপায় থাকবে কিনা সেই ব্যপারে আমার সন্দেহ দিনকে দিন ইউরোপ, আমেরিকায় জাংকফুডের বিরুদ্ধে দেয়া বিজ্ঞাপন হোর্ডিংয়ে ব্যবহৃত স্থুল নারীর স্বাস্থ্যের মতোই মোটা হচ্ছে ।
আসলে জাতি হিসাবে আমরা চক্ষুলজ্জা হারিয়ে ফেলেছি । যে যার মতো ছুটে চলছি । অন্যকে পিছনে ফেলে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাড়নায় ভুল চর্চাকে মূল চর্চা জ্ঞান করে নিয়েছি । ট্রাফিক পুলিশকে সামনে রেখে ভুল সিগন্যালে ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছি নির্লজ্জের হুইসেল বাজিয়ে । উল্টো গর্বিত হচ্ছি! চক্ষুলজ্জা হারিয়ে ফেললে একটি জাতির অবশিষ্ট থাকে কি? কিছুই না। সম্ভাবনার কোনও দুয়ার আমরা খোলা রাখিনি । ভিতরে ভিতরে আমাদের মানুষগুলো মরে গেছে অনেক আগেই । এ কথা সবার আগে বুঝেছিলেন প্রফেসর শ্রী নীরদ চন্দ্র চৌধুরী । ডিজিটাল যুগে এসে আমরা কি বড় বেশী অনার্য হয়ে যাচ্ছিনা? আয়োজন করে, উৎসব মুখর পরিবেশে একের পর এক অপকর্ম আর ধর্ষণে লিপ্ত হচ্ছি, অনেকটা শুটিং মুডে ভিডিও চিত্র ধারন করে রাখছি । আমাদের কারোই লজ্জা লাগছেনা, করতে না। শুনতে না । বলতে না। এতোটাই তলানিতে এসে ঠেকেছি আমরা!
পাঁচটা কাজ নিয়ে বেরিয়েছিলাম । তিনটা কাজ কম্পলিট করতেই সূর্য গোত্তা খেয়ে বোকাট্টা হলো। আজকেও জি.পি.ও তে যাওয়া হলোনা । কানাডায় জাহানারা বুলাকে কবিতার বইটা পাঠানো হলো না। ভোরের পাতায় এই সংখ্যার কবিতাটিও দেয়া হলো না, সম্পাদক, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরীকে। বিকেলে টি,এস,সি তে একবার ঢুঁ মেরে আসবো ফেরার পথে, গল্পকার মাহবুব লাভলুকে সেল ফোনে জানাতেই রাজী হয়ে গেলো, অফিস শেষে সচিবালয় থেকে বের হয়ে সোজা চলে আসবে টি,এস,সি চত্বরে । এক সাথে বসে চা, সিগারেট হালকা আড্ডায়, দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে যে যার মতো ফিরে যাবো ঘরে । ইতোমধ্যে সেলফোনে দু'বার কথা হয়েছে, সে এসে গেছে, অপেক্ষা করছে । ঢাকার সান্ধ্যকালীন জ্যাম আমাকে স্থির করে রেখেছে রাসেল স্কোয়ারে ।
মনে হচ্ছে অনন্তকাল থেকে থেমে আছি এইখানে, বাতাস বিবাগী হয়েছে এ সময় । গরম, পরম মমতায় ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর । হেলমেট মাথায় চুলের গোড়াপথে ঘামের তিরতির হাঁটা চলা টের পাচ্ছি বড্ড অস্বস্তিকর, এইভাবে শেকড় ছড়ানো স্বভাবে বসে থাকতে থাকতে মেজাজের তীর কখন যে কোন দিকে ছুটতে শুরু করে দেয় বুঝতে পারছিনা। নাহ, এভাবে হবে না যাওয়া । লাভলুকে কল করে জানিয়ে দিলাম, জ্যামের চুম্বকে আটকে আছি, আজ হয়তো দেখা হবে না। আবার ছড়াটির কথা মনে পড়ে গেলো ... " মানজটে দুই নেত্রী / যানজটে জনতা / পথে বসে দুলো খায় / তেনারা খান ক্ষমতা । আমাদের ঠিকই দেখা হলো না ।
দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করেছি, শরীর এখন ইস্পাহানীর তাজা গাছ। ক্ষুধা চাড়া দিয়ে উঠেছে, খেতে হবে ... প্রিয়তমা ঘুম অপেক্ষায় আছে। বসে আছে পথ চেয়ে ।
"মজা'' নামে আমার একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁ আছে ঢাকায় । যারা এখানে ভোক্তা হয়ে আসেন, শতকরা নব্বই ভাগ আসেন বিলংগিং সেন্স থেকে। নিজেরা রিপিট করেন আর নতুনদের সাথে করে নিয়ে আসেন অনেকটা হাত ধরে বা জোর করে। এইভাবে "মজা" রেস্তোরাঁ ঢাকাতে এখন একটা প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে গেছে বিশেষ করে ফিমেইল গেস্টদের জন্য "মজা" এক অভয়ারণ্যের মর্যাদা পেয়েছে । শোকর আলহামদুলিল্লাহ্ । রাতে বসে সম্মানিত ভোক্তাদের জন্য একটি খোলা চিঠি লিখে ফেললাম । ভোরবেলায় কেউ দেখার আগেই টেবিলের উপরে গ্লাসের নীচে নীচে সাঁটিয়ে দিলাম খোলা চিঠি । ভাষা শহীদদের উপর শতভাগ শ্রদ্ধা রেখে তাঁদের সম্মানে আমার এই খোলা চিঠির আইডিয়া । কিছুই না করতে পারার চেয়ে অন্তত এইটুকু করার মধ্যে দিয়েই হয়তো একদিন ভালো কিছু করার সাহস হয়ে যাবে । বীজ ফুটে বটগাছ হতে খুব কি বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়? প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের, সময় তাঁকে পূর্ণতা দেবে।
জেনেছি বহুকাল আগে, পানির অপর নাম জীবন, এখন বুঝি কেন পানির অপর নাম জীবন? আসছে সময়, পরবর্তীরা জীবন দিয়েই জেনে নেবে পানির অপর নাম জীবন। পূর্ববর্তীগণ শিখিয়ে গেছেন, তৃষ্ণার্তকে পানি দিও । এখন, অসময়ে পানিতে ডুবে মরি। সময়ে পানির জন্য মরুভূমি বুকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত, তিস্তার করুণ জীবনী পড়ি! দিদি, ভুলে যাচ্ছো কেন? এই জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়া জাতি । তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যুদ্ধ করে দেশ পেয়েছে যেই জাতি, প্রাণের দামে পাওয়া দেশ গড়তে, প্রয়োজনে পানির জন্য রক্ত নদী বইয়ে দেবে । বৃহৎ এর দম্ভোক্তি, ক্ষুদ্র পাখীর ঠোঁটে ছুঁড়ে দেয়া পাথরের আঘাত বিষয়ক করুণ গল্পটা জেনে নিও দিদি, এ গল্প তোমার আগামী রাজনীতির পাথেয় হবে জেনো ।
আমার রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় খাবারের সাথে ডেজার্ট হিসাবে পায়েশ , বহুজাতিক মিষ্টি কোমল পানীয়, আর দুই ধরনের সাদা পানি পাওয়া যায় । একটি হচ্ছে, একাধিক নামে বটলজাত মিনারেল পানি, আর অন্যটি জার ভর্তি ফিল্টার পানি। যা, গ্লাসে করে বিক্রি ও পরিবেশন করা হয় । খোলা চিঠিটিতে কথাগুলো বলেছি এইভাবে "জেনেছি বহুকাল আগে পানির অন্য নাম জীবন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে, এখানে খোলা জীবনের (পানি) মূল্য গ্রহণ করা হবে না" । যা জানুয়ারি ১৫ , ২০১৫ তারিখ থেকে টেবিলের উপরে গ্লাসের নীচে নীচে সেঁটে দিয়েছি। এবং যতদিন "মজা'' বেঁচে থাকবে, এই নিয়ম বলবত রয়ে যাবে সূর্যের উদয়াস্ত নিয়মের মতোই ইনশাহআল্লাহ্ । কিছু কি শিখলে দিদি? শিখবে কি করে? শিক্ষার জন্য ভাষার দরকার, তোমরা তো ভাষার জন্য জীবন দাওনি। তোমরা শেষ। উল্টো তোমাদের হিন্দির আগ্রাসনে রবীন্দ্রনাথ মরতে বসেছেন । দেখে নিও এই বাংলার মানুষই ঠাকুরকে বাঁচিয়ে রাখবে ।
সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অব্দি রেইললাইনের মতো পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে ভালো-মন্দ, চোর-সাধু, আলো-আঁধারের কাহন গাড়ী । কখনো, ভালো এগিয়ে যায় সম্মুখে। মন্দ, দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে থাকে খাদে । আবার কখনো বা মন্দ এগিয়ে যায় বহুদূর । ভালো, আঘাতপ্রাপ্ত ডলফিনের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে সময়ের সাগর তীরে। হুম্মম্ম... আপনি আমি আমরা কেউ অথরিটি নই । চাপিয়ে দেওয়া জীবন ধারন করে যাচ্ছি মাত্র, জীবনকে যাপন করছে জেলখাটা দাগি'রাই । এক অদ্ভূত অনিয়মের মধ্যে সয়ে যাচ্ছি সব। আমাদের কারো মধ্যে কোন বিকার নেই, নাকি বিকার থাকতে নেই!
এই যে, আপনি যেভাবে ভাবছেন, আপনার মতো অনেকেই ভাবছে। একদিন এই ভাবনাগুলো এক সাথে হয়ে যাবে, কোটি স্বর, এক সুরে বেজে উঠবে। সংগীতের বদলে বিস্ফোরণ হবে। ভালোর খবরদারীতে এই পৃথিবীতে একদিন সুন্দরের আবাদ হবে। এই সুন্দরের স্বপ্ন নিয়েই অসুন্দরের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছি রেইললাইনের মতো।
ফেইসবুকের কল্যাণে গত দুই এক বছর যাবৎ লক্ষ্য করছি, সকল শ্রেণীর ছোট বড় জোয়ান বুড়োর মধ্যে বিশাল উৎসাহ উদ্দীপনায় “হ্যালোয়িন ডে” মানে "ভুত দিবস" পালনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আদান প্রদান চলছে খুব আন্তরিক ও মায়াবী পরিবেশে এবং অধিকাংশ সচ্ছ্বল পরিবারের মাঝে এই দিনকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের রান্না-বান্নার আয়োজনে ও পোশাকে এক ধরনের উৎসব বয়ে গেছে, এ বাড়ী ও বাড়ী দাওয়াত দেয়া নেয়ার মধ্য দিয়ে। যারা আরো বেশী সামর্থ রাখেন তারা তো রীতিমতো ছোট বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে স্টার/ফাইভস্টার দখলে রেখেছেন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। আমার এইসব আনন্দে বিন্দু মাত্র আপত্তি নেই বরং উৎসাহ পাই খুব । যুগপৎ এটাও ভাবি, যদি কেউ বা কারা কোন একটা দিন বা রাতকে Veil Day বা Yashmak Day অর্থাৎ "বোরকা দিবস" বা "হিজাব দিবস" পালনের ঘোষণা দেন তাহলে দেশের সকল স্তরের লোকদের মধ্যে কি একই ধরনের আনন্দ প্রতিক্রিয়া হবে? সকলে কি সানন্দে সেটা গ্রহণ করে একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে একটা আনন্দ দিবস পালন করবেন? নিজেদের কোমল প্রাণ শিশুদের নানা রঙ এর নানা ডিজাইনের হিজাব সম্বলিত সালোয়ার কামিজ, টুপি পাঞ্জাবি পড়িয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্দোষ আনন্দ দিবস পালনে ব্যতিব্যস্ত থাকবেন? নাকি নাক সিঁটকে মৌলবাদী মৌলবাদী বলে শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলবেন পরিচিত আকাশ বাতাস ।
আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে ।
(চলতে থাকবে)
জ্ঞ্যানের সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হচ্ছে বিনয় । বিনয় মিশ্রিত জ্ঞ্যান
প্রকৃতির মতো মোলায়েম এবং সুন্দর । এই সুন্দর , স্বর্গীয় দ্যুতি ছড়ায়
আষাঢ়ের মায়াবি জ্যোৎস্নার মতো । বিনয় বিহীন জ্ঞ্যান হুতোমের
মুখশ্রী মনে করিয়ে দেয় বারবার । এই জ্ঞ্যান, অন্ধকারের কাকতাড়ুয়ার অদ্ভুত
অপেক্ষার মতো হাস্যকর । এর সাথে যদি ছিটে ফোটা অহংকারের গুড়ো থাকে তাহলে
সোলকলা পুর্ন । এই জ্ঞ্যানের হাওয়া বাতাস গায়ে মেখেই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে ফ্রেমে বাঁধা হাস্যোজ্বল মুখোচ্ছবি নিয়ে ।
কি অদ্ভুত এই দেশ ! অদ্ভুতেরও অধিক অদ্ভুত এই দেশের মানুষের আচরণ ।
নুন্যতম যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রচারের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যত্রতত্র যায়গা করে
নেয়ার ইঁদুর দৌড়ে ব্যাতি ব্যস্ত করে রাখে লোকালয় । অন্যকে বিরক্ত করে হলেও
নিজের ঝান্ডা উড়িয়ে রাখতে হবে ! এরা যোগ্যোতার স্বীকৃতি আদায়ে ভার্চুয়াল
সন্ত্রাসে নিষ্ঠুর ! এদের সমালোচনা করা যাবে না , শুধু পছন্দের টিপসই দিয়ে
যেতে হবে ! নয়তো শব্দধোলাই শুরু । এ ধোলাই শুরু হবে একা , পড়ে যোগ হবে
তোষামোদি তেলাপোকা দল ! একবার ও কেউ ভাবছি না , শান্তির ছাউনি থেকে ক্রমে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছি ! কেবলই দূরে সরে যাচ্ছি অহঙ্গকারের অন্ধকারে ডুবঝাপ দিয়ে ! জ্ঞ্যান ও বিনয়ের মিশেলে যে মোহনীয় মুখশ্রী তৈরী হয় , তা দর্শনে অন্তরের
শেষ প্রান্তে মুগ্ধতার এক ঝিরি ঝর্না বয়ে যায় ,আমি সেই অনিন্দ মুখের অনুবাদ
করার ক্ষীণ চেষ্টা করে যাবো স্বল্প শব্দের অল্প কথায় অথবা লক্ষ শদের বহু কথায় ।
প্রথম কিস্তির লেখা পড়ে স্বজন সুজন বহুজন তাঁদের ভালোলাগার টিপসহি আর প্রাণবন্ত মন্তব্য দিয়ে
উৎসাহের খেয়ায় ভাসিয়ে আমাকে বেঁধেছেন কৃতজ্ঞতার অদৃশ্য নাইলন গিঁটে । এই
নাদান তাঁদের ভালোবাসার স্নেহ-শ্রদ্ধামূলে নতজানু । এই লেখাটি একটি উপন্যাসের আকার নিতে পারতো , গল্পের বরফ ফোটায় ফোটায় গলিয়ে পরিমান মত
ো নিমক গুর ঝাল টক এর সমবায়ে একটা নতুন স্বাদ দেয়া যেতো , তবু ঐ পথে যাবো না আমি । ও পথ আমার নয় ।
স্মৃতি সংরক্ষনের বয়স হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ভাই বোন আত্নীয় স্বজন , নর নারী নির্বিশেষে যতো বন্ধু পেয়েছি
তাদের কাছ থেকে পাওয়া অনিন্দ আনন্দময় ভালোবাসার বিশ্বাসী পাটাতনে বুকের
বোতাম খোলা সময়, নিদাঘ দাহে বিনয়ের সুশীতল ছায়া-প্রশ্রয়ে ক্লান্তি বিয়োগের
স্বস্তি , ঘৃনার ধারালো শব্দ ছুরির নিঠুর আঘাত , কৌশলী আন্তরিকতায় কাব্যিক
প্রতারনার চান্দ্রিক রুপোশ্রী, পাওয়া না পাওয়ার ঝাঁঝালো ফোঁড়ন , সযত্নে
অযত্ন করন , অহংকারের ঘন স্বভাবে দুঃখ বিলাশ আর গীবতের বহুমাত্রিক রাগ
সঙ্গীতে বুঁদ হয়ে অন্যের সুখ শান্তিপুর্ণ জীবনকে ক্রুরের স্বভাবে যন্ত্রনার নরকে ফেলে দেয়ার মতো যাচ্ছে-তাই মানসিকতার দুর্গন্ধময়
কদর্য মুখের ইঙ্গতিয় স্কেচ আঁকার এক ধারাবাহিক চেস্টা থাকবে আমার এই লেখায় , পরিস্কার কোন নাম , ঠিকানা বা ছবি ব্যাবহার করে নয় , কাউকে হেয় করে সামাজিক লজ্জার মুখোমুখি দাঁর করানো বা অহেতুক, উঁচুতে তুলে সরলের দৃষ্টি সীমার বাইরে নিয়ে উজ্জ্বল তারকায় রুপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে এই প্রচেষ্টা নয় । আমার জীবন ঘসা যে আগুনের তাপ আমি মুহুর্তে মুহুর্তে দিনে দিনে বছরে বছরে এক জীবনে সয়ে গেছি ধরিত্রীর ধৈর্যে,
এ
লেখা সেই সকল তাপ উত্তাপ ও শীতল বরফের জলছবি মাত্র । এখানে সকলেই নিরাপদ ।
জীবন যেহেতু সামাজিক,সমাজ যেহেতু সচল ,ফলে চলাচলের এই জীবনে প্রেম প্রীতি ভালবাসা ঘৃনা পছন্দ অপছন্দের প্রচ্ছদ নিয়েই আমরা প্রকাশিত । এই বয়ানে যদি কোন পাঠক কোথাও নিজেকে খুঁজে পেয়ে যান তাহলে ধরে নেবেন চলমান জগত ও জীবনে আপনি একা নন বরং দল ভারি নিয়েই বেঁচে আছেন মানে অপমানে প্রেমে বিরহে ঘৃনা সন্মানে ।
রুমের দরোজায় টোকা পড়ার শব্দ। ঘন শব্দের টোকা । ধরন বলে দেয় এই টোকা আমার বড় মেয়ের । তাকে আমি বাবা বলে ডাকি এবং "আপনি" সম্বোধন করি । কন্যা সন্তানকে 'বাবা' বলি ! কেন আপনি বলে সম্বোধন করি ? এই বয়ানে অন্য আরেকদিন আসবো ,আপাতত দরোজা খুলে বরং তার টোকা দেয়ার হেতুটা জেনে নিই । দরোজা খুলতেই 'বাবা তালেব কাকা এসেছেন , তোমাকে খুঁজছেন । ড্রয়িংরুমে বসিয়েছি । তুমি গিয়ে দেখা করো , আমি গ্রীন টি আর পেপে কেটে পাঠাচ্ছি । বিকেলে তো তিনি আবার ফল ছাড়া কিছু খাননা । অল্প কথা কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো দ্রুত তালে টানা বলে তাড়া দিয়ে চলে গেল কিচেনে ।এমন মায়াবী শাসন পাওয়ার লোভে হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। ক্ষণকালের আয়ুতে মানুষের এমন অগুনিত ইচ্ছা অপুর্নতার নক্ষত্র হয়ে দুরের আকাশেই রয়ে যায় দল বেঁধে । ক্ষনায়ুর রহস্য ঘোরে ডুবে যাওয়ার আগেই ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখি তালেব ভাই খুব মনযোগ দিয়ে শব্দহীন কার্টুন ছবি দেখছেন টিভিতে । এটি তার পুরনো শিশু অভ্যেস । আমার মুরুব্বী বন্ধু । যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা । ডান পায়ে গুলি নিয়ে একটু টেনে হাটেন । একই পাড়ায় থাকি উত্তর আর দক্ষিন মাঝ খানে শুধু দুটো লাইন । সালাম দিয়ে সামনের সোফায় বসতে বসতে জানতে চাইলাম, 'কেমন আছেন তালেব ভাই ? বাঙ্গলা কবিতার অভিভাবক শামসুর রাহমানের কবিতার লাইন ধরে বললেন "খাচ্ছি দাচ্ছি চকচকে ব্লেডে সেভ করছি" দিনকাল কাটিয়ে নিচ্ছি বেশ, বলেই মধ্যম সরে একটা টানা ঢেউ খেলানো হাসি দিলেন । আমিও তার এই ঢেউ খেলানো হাসির দোলে দুলতে থাকলাম কিছুক্ষন, তাকে খুশী করার জন্য ? নাহ , আসলে এভাবেই বলে, শুনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি । কোন ভুমিকা ছাড়াই বলে উঠলেন, 'শোন, তোমার জন্য একটা সুসংবাদ নিয়ে এসেছি' । আমি নিস্পলক তাকিয়ে থাকি তার দিকে । দুই চোখে স্বস্তির কোমল একটা দ্যুতি দেখতে পাই । এমন দৃষ্টি তাঁর কখনো দেখিনি আগে । ফলে, সুসংবাদ শোনার গভীর আগ্রহের অস্থিরতা আমি গোপন করে রাখি । না হাঁচি, না কাশি ধরনের একটা মৃদু শব্দের ঝাকুনি গলায় তুলে বললেন ' কলেজ গেট এ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সরকার আমার নামে একটা ফ্ল্যাট বরাদ্দ করেছে ; আমি ফ্ল্যাটটা বুঝে পেয়েছি । আগামি পরশুদিন ওখানে উঠবো । বাদ আছর মিলাদ পড়াবো , তুমি কোন ধরনের ভুল না করে চলে আসবে'। এই সংবাদটি আমার জন্য শুধু সুসংবাদ নয় ,অতীব শুভ সংবাদ । কারণ, অনেক গুলো কস্টের সমাহারে তার জীবন, যার দুই একটার লাগাম আমাকেও ধরে সামলাতে হতো মাঝে মধ্যে ।
সুর্যাস্তের কিয়ত আগে, চকচকে সুর্যোদয়ের ওম ধরানো আরামের মতো একটা আনন্দ সংবাদের অনুভুতি ভিতরে লুকিয়ে রেখে আমি কপট বেদনার একটা ভান করে ভাংগা স্বরে টেনে টেনে বললাম 'অত্যাধুনিক ডিজাইনের ফ্ল্যাট পেয়েছেন আপনি, সুখ করে থাকবেন আপনি আর বলছেন সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন আমার জন্যে' ?
তালেব ভাই আমার চেয়েও তিন ধাপ কালো মুখ নিয়ে বললেন "এতদিন তোমাকে আপন বলেই জানতাম ,ঘরের মানুষ মনের মানুষ বলেই বিশ্বাস করতাম , তাই সময় পেলেই গহীনের কপাট খুলে সুখ দুখের খুচড়ো কয়েন গুলো তোমাকে নিয়েই এখানকারটা সেখানে ,সেখানকারটা এখানে করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতাম । আজ বলছো, আমার প্রাপ্তি তোমার সুসংবাদ নয়! তোমাকে নিয়ে কি বোকার স্বর্গেইনা বাস করেছি এতোদিন ! গভীর সত্যটি জানতে পেরে ভালোই হল, তোমার সময় নষ্ট করে কাজ নেই ,আজ উঠি তাহলে "। বলেই হুট করে উঠে দাঁড়ালেন । তার এই হঠাৎ উঠে যাওয়া আমাকে ভীষণ চমকে দেয় ! তার সাথে মজাটা কি একটু বেশিই করে ফেলেছি! বুকের ভিতর থেকে জলের স্রোত চোখ বেয়ে উপচে পড়ার চিনচিন কিট কিট কামর টের পাচ্ছি । আমি পাগলের মতো নাহ নাহ বলে দাঁড়িয়ে যাই । ভাই আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছি...আমার এই শিশুপাগল চিৎকার শুনে তিনি আমাকে বুকের মধ্যে জাপটে ধরে জোড়ালো ঝাকুনি দিয়ে বললেন, " হ্যারে,মজারু কথার মজা কি শুধু তুমি একাই করতে পারো ? এতোদিন তোমার সাথে মিশে কিছু কি আমরাও শিখিনি ভেবেছো ?" রসবোধের উপচে পড়া ডিব্বা নিয়ে তিনি আরো তিন কাঠি সরেস । তার চোখে চোখ রেখে দুজনেই হেসে উঠি । হাসতে হাসতে বুকের কোটরে জমে থাকা অপেক্ষ্যারত জলেরা শান্তির হুইসেল পেয়ে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো ফোঁটায় ফোঁটায় ।
একজন আহত সৎ মুক্তিযোদ্ধার নির্গমনের পথে এনার্জি টিউবের আলোয়, সিঁড়ি ভাঙ্গা ছায়ারা মিলিয়ে যাওয়ার পরেও আমি খোলা দরোজার মেহগনি চৌকাঠে হেলান দিয়ে ভাবছিলাম, এইতো সেদিন, তবুও পয়তাল্লিশ বছর! এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম । একটাই মুখ , একটাই ডাক , একটাই কন্ঠস্বর , একটাই আকাশ ছোঁয়া আংগুলের ইশারায় সারাদেশে সাত কোটি মানবিক বোমা তৈরী হয়ে যায়! জেলায় জেলায়, মহকুমায় , থানায়,পাড়ায়,ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী হতে থাকলো । আমি তখন সাতের কোঠায় । বাবা তৎকালীন নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ থানায়, পুলিশ ডিপার্টম্যান্ট এ চাকুরীরত । এপ্রিলের এক রাতে বাড়ী ফিরে বাবা সবাইকে জানিয়ে দিলেন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন পাকিস্তান সরকারের অধীনে আর চাকুরী করবেননা, আমাদের সকলকে নিয়ে পালিয়ে যাবেন । পড়নের কাপড় চোপড় সহ হালকা যা কিছু মালামাল নেয়ার মতো, বেঁধে ছেঁদে নিতে বললেন । যেহেতু জীবন বাঁচানোর যাত্রা ফলে ভারী মালামালের মায়া ত্যাগ করতে হবে। একটু একটু করে দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার, তবু সেসবের মায়া ত্যাগ করে 'মা' গৃহ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কোন পথে কোন বাহনে কি ভাবে যাবো সে ব্যবস্থা তখনো ঠিক করেননি । তবে পালানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বাবা পরেরদিন তাঁর কলিগদেরকে বেড়ানোর কথা বলে পরিবারের সকলকে মানে আমাদেরকে ওখান থেকে 'দশঘরিয়া' নামের এক গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন । থানা থেকে বেশ কয়েক মাইল পুবে চলে এলাম আমরা । যে বাড়ীটায় গিয়ে উঠলাম, সেই বাড়ীর গৃহিনী বাবাকে ধর্ম পিতা বলে মানতেন । সেই সুত্রে আমরা বড় বোনের বাড়ীতে আশ্রয় নিলাম দিন কয়েকের জন্য । আমাদের সাথে বাবা না আসার কারনে তাঁকে নিয়ে আমরা খুব ভীত ও উৎকন্ঠিত ছিলাম। অবশেষে তিনি দুইদিন পরের এক সন্ধ্যায় এলেন। তাঁকে দেখে বাড়ীর সকলে সাহসী ও আনন্দিত হয়ে উঠলাম ।
সে রাতে বাড়ীর উঠোন ভর্তি মানুষ । শিশু কিশোর কিশোরী যুবক যুবতী সহ নানান বয়সের নরনারী । বাবা সকলের মাঝখানে গিয়ে বসলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডিওতে খবর প্রচার করবে । এক ফোঁটা ঝোলা গুড়ের উপর পিঁপড়ে বসার মতো করে সবাই গোল হয়ে বসে আছে একটি ট্রাঞ্জিস্টরকে ঘিরে । যুদ্ধের খবর ও "চরমপত্র" শোনার জন্য অস্থির প্রতীক্ষ্যায় সকলে । সেই সময়এম,আর,আক্তার মুকুল পঠিত "চরমপত্র" ভীষণ জনপ্রিয় এক অধ্যায় ছিলো । এই চরমপত্র পাঠ শুনে মুক্তিযোদ্ধা সহ স্বাধিনতাকামী সমস্ত মানুষ এই পত্রপাঠ শোনার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষ্যায় থাকতেন, যা শুনে সমগ্র দেশবাসী বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতেন । এ বাড়ীতে একদিন একদিন করে তিনদিন কেটে গেলো । মায়ের কান্না কাটির জন্য ভাই'রা মুক্তিযুদ্ধে জেতে পারছিলেন না । দুইদিন পর মাকে কাঁদিয়ে বাবা আমার বড় দুই ভাইকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং এ পাঠালেন । আগরতলা । আমরা ছয়ভাই দুইবোন । আমি কনিষ্ঠের উচ্চতায় আসীন । সবচেয়ে বড় তিনভাই ঢাকায় । দুজনে সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে চাকুরীজীবী। সেজো ভাই ঠিকাদার । যুদ্ধের শুরু থেকেই আমরা যোগাযোহীন ছিলাম। বড়বোন ছিলেন সংসারের চতুর্থ সন্তান । বিবাহ সুত্রে তিনি তখন স্বামীর সংসারে । ছয় ছয়টি সন্তানকে দৃষ্টির সীমানায় না পেয়ে মা তখন ভীশন রকম ভেঙ্গে পড়েন । চোখের নীচে কালি পড়ে চোয়াল ভেঙ্গে হঠাৎ মা'র যেন বয়স বেড়ে গেলো । বাবার গহীনেও একই তোলপাড় । প্রকাশ্য যুদ্ধের চেয়েও মনের ভিতর বাড়ীর যুদ্ধে তিনি অহর্নিশ ক্লান্ত কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতেননা উল্টো মাকে সান্তনা দিয়ে রাখতেন । তিনভাই আগরতলা চলে যাবার দিন দুই পর বাবা জানালেন আজ গভীর রাতে আমরা গ্রামের বাড়ীর দিকে রওয়ানা হবো ।
মালামাল বলতে বড় একটি টিনের ট্রাংক বাক্স যা আমাদের পড়নের কাপড় দিয়ে ঠাসা আর মা'র কোমরে গোঁজা তার গহনার পুটুলী,ব্যস । বুক ধরপর করা ভয় আর টান টান উত্তেজনা নিয়ে আমরা গভীর রাতের উথাল পাথাল প্রতীক্ষ্যায় । একটি নির্ঘুম রাত একটি শিশুতোষ মনে যে কতোটা গভীর ছাপ রেখে যেতে পারে আমি তার ভুক্ত ভোগী প্রমান । আজ বয়স আমার পঞ্চাশের সীমান্ত ছাড়িয়ে পরের ধাপ ছুয়ে, মধ্যপথ ছাড়িয়েছে । তবুও এতোটা বছর পড়েও কোন কারণে যদি একটি নিদ্রাহিন রাত কাটানোর সম্ভাবনা দেখা দেয় বুকের ভিতর সেই ভয়াল রাতের ভয় এসে আমাকে কাঁপিয়ে দেয় , আমি কাঁপতে থাকি। আমাকে দুলিয়ে দেয় আমি দুলতে থাকি । ফলে সারারাত নির্ঘুম থাকি । বাড়ীর সকলের কাছে থেকে চক্ষুসজল বিদায় নিয়ে কিছুদুর পায়ে হেঁটে আমরা একটি বিশাল ধানী নৌকায় চড়ে বসলাম, নৌকা বোঝাই ধানের বস্তা । নৌকা চলছে, অন্ধকারে আমরা চলছি । বৈঠার জলজ শব্দ, ঝিঁঝিঁ পোকা, কোলা ব্যাঙ,মাছের ঘাই,দুরে গুলির আওয়াজ,সবকিছু মিলিয়ে আমাদের দলগত নির্ঘুম যাত্রা ।এত ভয়ের মধ্যেও আমি এবং আমার পিঠবোন শিরীন আপা কি করে যেন ভোরের দিকে দন্ড খানেকের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । হঠাৎ কাছাকাছি কোথাও মর্টারের শেল পতনের শব্দে হুড়মুড় করে উঠে বসলাম । এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি নৌকার ভিতরে বাবা নেই । ভয়ে কেঁদে উঠতে গিয়ে দেখি তিনি আরো তিন মাঝির সংগে নদীর পাড় দিয়ে পায়ে হেঁটে নৌকার গুন টেনে চলছেন । এই ভাবে বাবা প্রয়োজনে কখনো গুন টেনে কখনো নৌকায় উঠে সামনের দিকে চারজন মাঝির একজন হয়ে দাড়বৈঠা বাইতেন । ছেঁড়া গেঞ্জি হাঁটুর উপর লুঙ্গী বেঁধে গামছায় মুখ মুছতে মুছতে বাবা দিব্বি মাঝি বনে গেছেন । নৌকার বড় মাঝি, যিনি পেছনে হালবৈঠা ধরে বসে থাকেন আর সময়ে অসময়ে হাঁক ডাক দিয়ে সকলকে নিয়ন্ত্রন করেন,অধিকাংশ সময় আমি তাঁর পাশেই বসে থাকতাম। জলে ও স্থলে পচা গলা ফুলে যাওয়া শৃগাল কুকুর কাক ও শকুনে খাওয়া হাত নেই মাথা নেই পাহীন বিচিত্র ধরনের মানুষের লাশ দেখতে দেখতে কেমন যেন বোবা বোবা হয়ে গিয়েছিলাম । কারো সাথে কোন কথা না বলে নদীর জলে চলতাম আর চোখের জলে ভাসতাম । বুক কাঁপানো ভয় নিয়ে মনে মনে ভাবতাম এতো শত হাজার লাশের মধ্যে আমার কোন ভাই নেইতো !
ঐ টুকুন বয়সে এই টুকুন স্বার্থপর ভাবনার বাইরে যেতে পারিনি, তখনো ভাবতে শিখিনি,যারা মরছে, যারা বেচে আছে স্বাধীনতার স্বপ্নে ,যারা যুদ্ধ করছে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আত্নীয় ।
সকলের ভাবনাকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন মা । তাঁর মুখের আদল তাঁর ভয় ও শংকাকে ঢেকে রাখতে পারেনি। তিনি নৌকাতে তখন রীতিমতো কাজের বুয়া । আমরা চারজন ছাড়া নৌকাতে বড় মাঝি সহ তারা ছয়জন, মোট দশজনের রান্না মাকে একা সামলাতে হতো । যে মা আমার, হেঁসেলে ঢুকে বুয়াদের বড়জোড় ইন্সট্রাকশন দিতেন, দিনের পছন্দের খাবার কি হবে সেই মা তখন দশজনের রান্না একা সামলাতেন । মসলা বাটা থেকে শুরু করে তরি-তরকারী মাছ-মাংস পেঁয়াজ কাটাকুটি সহ সব কিছুই নিজ হাতে করতেন । লাকড়ির চুলায় আগুন কমে এলে আমি বা আমার পিঠবোন মাঝে মধ্যে ফুকুনিতে ফুঁ দিয়ে উনুনের আগুনকে জোড়ালো করে দিতাম । মাকে সাহায্য (!) করা বলতে এটুকুই । তাঁকে দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই কয়েকদিন আগেও তিনি কি নিশ্চিন্ত রাশভারী ও সম্ভ্রান্ত মুখশ্রীর মানুষ ছিলেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চোখের নীচে কালি, স্নানহীন উসকোখুসকো চুল মসলা বাটা হলুদাভ হাত,পড়নের ময়লা সুতীশাড়ী, আর শরীরে মাছ মসলার মিশ্র গন্ধে মা যেন এক দুঃখিনী মানুষের চির চেনা ছবি হয়ে উঠলেন ।
এভাবে চলতে চলতে দুই রাত রাত দুই দিন পরের মধ্য দুপুরে পাক সেনাদের নির্দেশে মুন্সীগঞ্জের তালতলা কাঠপট্টি ঘাটে আমাদের নৌকা ভিড়াতে হলো । ইতিমধ্যে মা আমার বোনকে নিয়ে পাটাতনের নীচে চলে গেলেন । এখনো মনে আছে বড় মাঝিকে জাপটে ধরে আমি কি ভিশন কাঁপছিলাম । ঘাটে দাঁড়িয়ে পাকসেনা দল । ভেতরে পাঠালো দুজন বাঙ্গালী পুলিশ। নৌকায় কোন আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা বা মুক্তিযোদ্ধা পারাপার হচ্ছে কিনা জাতীয় নানান প্রশ্ন। বেয়নেটের খোঁচায় খোঁচায় বস্তা থেকে ধান গড়িয়ে পড়ছে । প্রতিটি বস্তা এভাবে পরখ করতে করতে এক সময় আমাদের ট্রাংক বাক্সটির সামনে এসে খুলে দেখাতে বললে বাবা কোমর থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে দিলেন। দুজনের একজন বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাক্সটিরে দিকে তাকিয়ে রয়েছে অন্যজন একটু উপুড় হয়ে ভিতরের কাপড়চোপড় নেড়ে চেড়ে পরখ করে দেখছে। উদ্দেশ্য, কিছু পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ করে কাপড়ের ভীর থেকে বাবার ডিউটি কালীন ব্যবহৃত পিতলের একটি 'পদবি ফুল' বাক্সের বাইরে এসে পাটাতনের উপর গড়িয়ে পড়লো শব্দ করে। আর বুঝি শেষ রক্ষা হলনা! বাবা মাথা নিচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। পাশের পুলিশটি তীরের দিকে তাকালো অপেক্ষ্যারত পাকীদের উদ্দেশ্যে,বাবা যেন কেঁপে উঠলেন। অন্য পুলিশটি তাঁর পায়ের বুট দিয়ে বাক্স থেকে বের হওয়া পদবি ফুলটি চাপা দিয়ে ধরলেন।
বড় মাঝির একটি হাত তখন আমার কাঁধ খামছে ধরেছে। অত্তটুকুন ছোট বয়সেও আমি বুঝতে পারলাম আমাদের শেষ রক্ষা হলোনা । এই দুইদিন কঠিন পথ চলতে চলতে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই যেন শিখে ফেলেছিলাম। আসন্ন সর্বনাশের ভয়ে কেঁদে না ফেলে সাহসে বুক বেঁধে চুপচাপ অপেক্ষ্যায় রইলাম। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঘটনা কিন্তু ভিশন তোলপাড় করা মুহুর্ত। তীরে দাঁড়ানো সেনা অফিসার হেঁকে উঠলো,"কুছ মিলা ক্যায়া?" এই কথা শুনে বাবার দুই কানের পিছন দিয়ে দর দর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। হঠাৎ বোমা ফাটানো চিৎকারে চেকিংরত পুলিশটি বলে উঠলো,
স্যবকুছ ঠিক হ্যায় স্যার,কুছ নেহি মিলা। পড়ে বাবার মুখে শুনে কথা গুলোর মানে বুঝেছিলাম। আমরা সকলেই যেন সেদিন প্রথম মৃত্যুর আগে দ্বিতিয়বার জন্ম নিলাম। পুলিশ দুজন নৌকা ছেড়ে চলে যেতে যেতে নিচু স্বরে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে গেলেন- 'স্যার,আপনি ভাগ্যবান। আপনি এই শুয়োরের বাচ্চাদের হাত থেকে পালাতে পারছেন। দোয়া করেন আমরাও যেন পালাতে পারি,মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারি'। প্রতিউত্তরে মাথা নীচু করে বাবাকে কি যেন বিড়বিড় করতে শুনলাম কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারলামনা। মনে হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরনে কিছু বলেছিলেন। নিশ্চিত মৃত্য মুখে পতিত হয়ে হঠাৎ অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়ার আনন্দে কিনা জানিনা,বাবার মুখের শব্দগুলো স্পষ্ট প্রকাশ পেলনা।
তাঁর পরের সময়টা সাদামাটা ঝামেলা বিহীন। চলে এলাম গ্রামের বাড়ীতে। দেশও স্বাধীন হলো। একে একে ভাইরা যুদ্ধ শেষে ঘরে ফিরলেন। বাবা আবার কাজে যোগ দিলেন সদ্য স্বাধীন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। কাজে যোগ দিয়েই সেদিনের সেই দুই মহৎ প্রাণ পুলিশ দুজনকে বাবা অনেক চেস্টা করেছেন খুঁজে পেতে। অবসরের আগ পর্যন্ত খুঁজেছেন,পাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের জন্য দোয়া করে গেছেন। বাবা চলে গেছেন উনিশশত একানব্বুই'র তেরো জানুয়ারী । মা গেলেন দুই হাজার পাঁচ এর বিশ অক্টোবর। আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিতে সেই মানুষ দুজন এখনো তাজা,অমলীন। মা গেছেন বাবা গেছেন দুই ভাই এক বোন ও চলে গেছেন সুনির্ধারিত পথে। সেদিনের আমরা দুই ভাইবোন এখনো আছি । একদিন আমরাও চলে যাবো নিশ্চিত, পুর্ববর্তীগনের পথে। স্থায়ী নিবাসে যাত্রার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তাঁদের জন্য প্রার্থনা থাকবে- তাঁরা ও তাঁদের পরিবারের সকলেই মহান স্রষ্টার, রহমতের সুশীতল ছায়ায় থাকুক।
বাবাই'র ডাকে পয়তাল্লিশ বছর পিছন থেকে বিদ্যুতের গতিতে ফিরে এলাম । আম্মু খেতে ডাকছে, ভিতরে এসো । বাবাই আমার মেজো মেয়ে । ক্লাশ এইটে পড়ে ধানমন্ডি নালন্দা স্কুলে। বড় অগোছালো মেয়ে, সারাদিন একাকী চুপচাপ কবি কবি স্বভাবের এলোমেলো পোষাকে কিছুক্ষন গিটার বাজাচ্ছে তো পরক্ষনেই কিউব মিলাতে বসে পড়লো। ওটা শেষ হতেই হয়তো ল্যাপটপে বসে কোন ইংরেজী গানের লিরিক নিয়ে মেতে থাকলো কিংবা হুমায়ুন আহমেদ ,সত্যজিৎ বা শার্লক হোমস নিয়ে মশগুল অথবা ছবি আকা বা ছড়া লিখার চেস্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো । তবে তার প্রতিটি কাজেই আত্নবিশ্বাষের বাড়তি দম অনুভব করা যায় । আমি তাদের স্বাধীনতায় যোগান দেয়া ছাড়া অন্যভাবে মাথা গলাইনা বরং তাদের শাষণে বারণে নিজেকে বেঁধে নিয়ে সকলের মনে এক ধরনের তৃপ্তি সরবারাহ করি। মেহগনি চৌকাঠ ছেড়ে সরাসরি ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম রাতের খাবার খেতে । খাবার শেষ করে বারান্দায় মিনিট দশেক হেঁটে ঘুমাতে যাবার আগে বছর দশেক আগের পুড়ানো একটি ডাইরি নিয়ে বিছানায় শুয়েছি । পড়তে পড়তে স্মৃতি চারণ আমার নিদ্রার সিডেটিভ হিসেবে কাজ করে । ডাইরিটা মাঝখান থেকে খুলে ধরতেই যে পৃষ্ঠাটি চোখের দখলে গেলো, তা এতোদিন পড়ে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে কবিতা লিখার চেষ্টা করেছিলাম হয়তো...যেভাবে ফসলকে ছুঁয়ে যায় বৃস্টির জল , যদি
তুমিও... যেভাবে আকাশ দখলে নেয় মেঘেদের দল , যদি তুমিও... যেভাবে বজ্রপাতের শব্দপ্রেমে কাংশায় উজানী পথ চলে কৈ এর ঝাঁক , যদি তুমিও ... যেভাবে জলের অতল থেকে উঠে এসে শুশুক নেয় উয়াশী জীবন , যদি তুমিও (!) যে
ভাবে কাঠ পাখী খুঠে খায় বৃক্ষ্যের বুক , যদি তুমিও... যেভাবে গ্রহনে যায়
সুর্যের প্রতাপ... যদি তুমিও ...তাহলে শহস্রাব্দের শেষ তাজমহল নির্মানে আমি
যুগের শাহজাহান হবো।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাংলো সকাল সকাল। বন্ধের দিন হিসেব করে আরো ঘন্টা খানেক বেশী ঘুমানোর ইচ্ছে ছিলো । ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলটা রিসিভ করতে গিয়ে দেখি সুদুর আমেরিকা থেকে শাহিন ভাই ফোন করেছেন । পিকো সেকেন্ডের মধ্যেই মনের ঘরের বিরক্তি উধাউ,তার বদলে খাঁচা খোলা পায়রা ডিগবাজি খায় আনন্দ আকাশে । সে আমার বড় ভাই, সে আমার বন্ধু । জীবনের এক অবাক ফসলের নাম বন্ধুত্ব যা শুধু ঐশ্বর্য বাড়ায় নিস্ব করে না । এই
স্বর্গীয় ঐশ্বর্যে, বন্ধুরা নিস্ব হয়না । যে নিস্ব হলো ! সে কোন কালেই
বন্ধু ছিলোনা । হৃদয় হ্রদের টই টূম্বূর মায়া মমতা ঐশ্বর্যকে দেয় এন্টিক
মর্যাদা । মোহ দেয় ক্ষতের তিলক । কারো কারো কাছে বন্ধুত্ব মানে এক যোগ এক, সমান সমান দুই
এর অধিক, অর্থাৎ প্রাপ্তির চিকন প্রত্যাশা । আমার কাছে বন্ধুত্ব মানে এক যোগ এক, সমান সমান এক । ব্যক্তিত্বের নির্জন পথে সুশৃঙ্খল আচরণের চলাচল । কারো বা
কোন প্রভাবে যদি সে চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় , তবে বুঝে নিতে হবে
ব্যক্তিত্বে ঘাটতি রয়েছে । আমার কাছে শাহিন ভাই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের উদাহরণ । সকাল সকাল ফোন করে জানালেন আগামি সপ্তাহে স্বপরিবারে দেশে আসছেন বেড়াতে । অবশেষে মান ভেংগেছে জনাবের । এক দিঘি অভিমান নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন একদিন। বাইশ বছর পর ফিরছেন । অদ্ভুত এক ফুরফুরে আনন্দ নিয়ে আজকের দিনটি শুরু হতে যাচ্ছে টের পেয়েই খুব কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে এই সিশু-সুর্যের নরম আলোয় । আমার এমনই হয়,ভালোলাগার কিছু ঘটে গেলে গুন গুন করে গান গাইতে ইচ্ছে করে অথবা কবিতা পড়তে ইচ্ছে করে । কৈশরের এই অভ্যেসটি এখনো লেগে আছে স্বভাবে । চিলির কবি ভীসেন্তে হুইদব্রোর বইটি বালিশের পাশেই ছিলো । হাত বাড়িয়ে পেয়ে যাই । I am absent but deep in this absence /there is the waiting for my self/And this waiting is another from of presence .
এরই মধ্যে, উত্তরে শীত বসত নিতে শুরু করেছে । শাক সবজি লতা পাতা ঘাস
দূর্বায় কুয়াশার স্বর্ণ দানা সকাল সন্ধ্যায় হামাগুড়ি খায় গাছে, ঘাসে ও মাটিতে ।
রাজধানী ঢাকায় গাদা গাদি বসবাসে মানুষ যখন ঘামের নদী সাতরায়,উত্তরে তখন
জড়সড় শীতের কামড় । ঘরের চালা আছে, পাশ বেড়া নেই । পাশ বেড়া আছে ,
জানালায় পাল্লা নেই , জানালায় পাল্লা আছে , দরোজায় কপাট নেই । হা খোলা ঘর
দোর । এখানে শীত যেন পাশ বালিশ ! তাড়ানোর উপায় নেই, তাই নিয়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকে
ফ্রোজেন মানুষ । এভাবে কাব্য করে লিখা যাবে অনেক কিছু , দীঘল কবিতা হবে লিখার পাতায় । তাতে করে বঞ্চিত মানুষ কি পাবে ? তারা না বোঝে কবিতা, না বোঝে আলাপ । তারা বোঝে কনকনে শীত আছে উষ্ণতার কম্বল বা লেপ নেই । পেটে খুধা আছে ,
খাবার নেই । উত্তরের পান্ত মানুষ এমন মানবেতর জীবন নিয়ে বেঁচে থাকে , হয়তো
একদিন সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে এই আশায় । যেখানে একদা
প্রত্যেকেরই কম বেশী জমি নিয়ে সুখের গেরস্থালী ছিলো । ভাঙ্গনের ভাগ্যে পড়ে
আজ সকলেই নিজ গ্রামে উদ্বাস্তু । রংপুরের গাইবান্ধায় সুন্দরগঞ্জ এর নদী
ভাঙ্গা মানুষের কাছে হাজার চারেক শীত কম্বল বিলি করার সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় "আলোঘর"এর অনন্ত আদিল । ওর সকল ফেবু বন্ধুদের ডাক দিয়েছে, সাহায্যের জোড়া হাতে এগিয়ে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছে । আদিল'রা আছে বলেই ভালো ভাবনা গুলো বেঁচে আছে এখনো । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পথে পড়ে থাকা পানিয়ের খালি বোতল,চিপস সিগারেটের ছেঁড়া পরিত্যাক্ত প্যাকেট কুড়িয়ে এক যায়গায় জড়ো করে ফের চলতে শুরু করবে নিজের পথে । ব্যক্তি জীবনে একটা অনলাইন পত্রিকা চালায় অনন্ত । যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল , তবু শুরু হোক শুভ যাত্রা । আপনিও
আসুন না এগিয়ে আপনার সীমিত সামর্থে । আপনারা যারা দেশে বিদেশে বসে এই সকল কর্ম কান্ডের প্রতি বিশ্বস্ত দৃষ্টি রাখছেন তাদের সকলের প্রতি অনুরোধ রইলো,
আমাদের সকলের ভালোবাসার বিন্দু জল বঞ্চিত'কে দেবে সমুদ্র স্নানের তৃপ্তি ।
এগিয়ে আসুন । হাত বাড়িয়ে দিন প্লীজ । সকলের প্রতি করজোড়ে আহ্বান । দেশে বিদেশে যে যেখানেই থাকুন বানে বন্যায় ঝড়ে শীতে সহযোগিতার হাত খুলে এগিয়ে আসুন , যার যতটুকু সামর্থ্য, তাই দিয়ে । কবি সাহিত্যিক ব্যবসায়ী চাকুরীজীবী ছাত্র অছাত্র সকলে দলবেঁধে এগিয়ে এলে দুঃখীকে দুঃখ বেঁধে ঘর করে সে সাধ্য দুঃখের থাকবে কতোকাল ? দিনে একটা সিগারেট কম খেলে অথবা এক পেগ সোমরস কম গিলে দানের হাত দীর্ঘ হলে কি সৃষ্টিশীলতা মুখ লুকোবে লজ্জা নিয়ে ভেন্না বনে?
কোকিল আর ময়না সুরে ও সুন্দরে অসাধারণ । একজন ধার করা বাড়ীতে ডিম পাড়ে
অন্যজন শেখানো বুলিতে পটু । বুকে হাত দিয়ে বলুনতো, এই রকম কোন ত্রুটি আপনারও রয়েছে কিনা ? স্বীকারোক্তির অসীম সাহস নিয়ে বলছি, আমি মানুষটা একদমই ভালো নই। তবু শত কোটি মানুষ রয়েছে আমার চেয়ে খারাপ । তাই বলে কি অন্যের জন্যে ভাববোনা! ছোট ছোট সাধ্য নিয়েই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলে ভালো কিছু ,বড় কিছু হয়ে যেতে কতক্ষণ ? প্রয়োজন শুধু বিশ্বস্ত উদ্যোগের আর সৎ মানসিকতার । দল বেঁধে ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া বা পত্রিকার ছাপানো খবরের ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে এই বিশ্বস্ততা খুঁজে পাওয়া যাবেনা । এর জন্যে প্রয়োজন হৃদ-মাজারে মায়াবী জলের শন্তরণ । হিপোক্রেসির মুখোশে আটকে পড়া মানুষের পক্ষে এই কম্ম সম্ভব নয় । নেমে আসুন ,বেড়িয়ে পড়ি মুখোশ ছেড়ে ।
১৯৯৪ সালে সুদানের জাতিসংঘের খাদ্য গুদামের খুব কাছ থেকে ফটোগ্রাফার Kevin Carter উপুড় হয়ে পড়ে থাকা জঠর কাঁপানো ক্ষুধার্ত এক শিশুর ছবি তুলেছিলেন । ঠিক তাঁর পিছনেই ক্ষুধার্ত শিশুটির মৃত্যু প্রতিক্ষ্যার প্রহড় গুনছে এক বুড়ো শকুন ! সেও ক্ষুধার্ত , বাচ্চাটির মৃত্যুর অপেক্ষ্যায় ধারালো ঠোট সামলে রেখেছে শাষনে । চাপিয়ে দেয়া মৃত্যু উৎসব মুখর পৃথিবীতে যে প্রতীক্ষ্যা মানুষের কাছে আশা করা বাতুলতা সেই কাজটাই কতো সহজ-ধৈর্যে করে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতার প্রতীক বুড়ো শকুন! Kevin Carter এর এই ছবিটি পরবর্তীতে দুনিয়া কাঁপানো ছবির স্বীকৃতি পায় । Pulitzer নিজেদের সন্মান বৃদ্ধির কাজটি ঠিকই সেরে নিয়েছে Kevin কে পুরষ্কৃত করে । নিষ্পাপ শিশুটি কি সভ্যতার ললাটে লানতের সিলমোহর রেখে অন্তিমে চলে গেছে নাকি বেঁচে থেকে অপেক্ষ্যায় থাকা বুড়ো শকুন কে দু আঙ্গুল দেখিয়ে হতাশ করেছে এই খবর কারো কাছে নেই । এমনকি Kevin Carter ও জানতেন না ওর পরিণতি কি হয়েছিল । তবে ছবিটি তোলার তিনমাস পর একটা খবর অনেকেই জেনেছে Kevin Carter সুইসাইড করে পৃথিবীর তথাকথিত সভ্যদের অস্বিকার করে গেছেন নিজের মানবিক বোধকে সমুন্বত রেখে । মৃত্যু পুর্বে তিনি একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছিলেন ।
"Dear God, I promise I will never waste my food no matter
how bad it can taste and how full i may be. I pray that
He will protect this little boy, guide and deliver him away
from his misery. I pray that we will be more sensitive
towards the world around us and not be blinded by our
own selfish nature and interests. I hope this picture will always serve
as a reminder to us that how fortunate we are and that we must never
ever take things for granted."
অথচ,এক শ্রেণীতে অঢেল খাবার নষ্ট করাটা আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে । পৃথিবীর মোড়ল দেশ গুলো জাহাজ ভরে ভরে চাল গম সাগরে ফেলে দিচ্ছে প্রতি বছর । তাদের মোড়ল গিরি টিকিয়ে রাখতে গেলে পৃথিবীতে অভাবকে লালন পালন করে জিইয়ে রাখতে হবে ! পদে প্রকরণে মালিক দিয়েছেন অফুরন্ত, বান্দা কাটছাট করে মানুষ মারে বাজেট কমিয়ে! আমরা অনেকেই কারণে-অকারণে প্রায়ই
খাবার নষ্ট করি। প্রতি মিনিটে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে
খাবারের অভাবে, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে।
কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জে গিয়েছিলাম আমার এক বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে। সেদিন খাদ্য তালিকায় যা যা ছিলো তাতে আমি নিশ্চিত , মানসিক ভাবে সুস্থ কোন মানুষের পক্ষে এই তালিকা তৈরী করা সম্ভব নয় এবং এই পরিমানের খাবার লাখে একজনের পক্ষেও খাওয়া সম্ভব নয় । খাদ্য তালিকাটি তাহলে কি রকমের হতে পারে ? আসুন চোখ বুলিয়ে জেনে নেই ।
(১) জনপ্রতি একটা করে ৫০০গ্রামের আস্ত চিকেন রোস্ট (২) চাইনিজ ধরনে চিকেন ফ্রাই ইচ্ছে মতো (৩) একটা করে কোয়েল পাখীর রোস্ট(৪) ডিমের কোরমা(৫) রুই মাছ ভাজা(৬) তেলাপিয়া ভাজা(৭) কৈ মাছ ভাজা(৮) গলদা চিংড়ী ভুনা(৯) চিকেন সাসলিক(১০) চিকেন,প্রন মিক্সড সাদা সবজি(১১) মাটন ভুনা(১২) বিফ ভুনা(১৩) চিকেন কারি(১৪) বাসমতী চালের সাদা ভাত (১৫)বাসমতী চালের মাটন কাচ্চি(১৬)চিনিগুড়ো চালের সাদা পোলাউ(১৭)ছোট মিস্টি যোগে জর্দা
(১৮)পায়েশ(১৯)দই(২০)রসমালাই(২১)বোরহানি(২৩)সালাদ(২৪)মিনারেলের বটল
(২৫)চাহিদা অনুযায়ী কোমল পানীয় । কনে পক্ষের বাড়ীর ব্যবস্থা এইটি । এতো কিছুর পরেও কনের বাবা সহ অন্যান্য আত্নীয় স্বজন টেবিলে টেবিলে ঘুরে ঘুরে দুঃখ প্রকাশ করছে খুব বেশী ভালো কিছু আয়োজন করতে পারেনি বলে! এবং তাঁরা বিষয়টি নিয়ে খুবই লজ্জিত ! কানা ঘুসায় শুনতে পেলাম বর পক্ষ বৌ-ভাতে এর চেয়ে অন্তত একটি আইটেম বেশী আয়োজন না করলে তাদের মানে ঘাটতি চলে আসবে । ইতিমধ্যে বর পক্ষের একজন কনে পক্ষকে টপকে যাওয়ার বাড়তি আইটেমটিও খুঁজে পেয়েছেন ! বৌ-ভাতে তারা চলতি আইটেম গুলোর সাথে একটা করে বাচ্চা কবুতরের রোস্ট দেবেন ! টেবিল ভর্তি এতো খাবার দেখে এবং বাকিদের কথাবার্তা শুনে আমার ভিশন বমি বমি পাচ্ছিলো । কাঁদবো ? প্রকাশ্যে তা সম্ভব নয় । হাসবো সে পরিবেশ নেই । বমি করবো এই ভিড়ে সে উপায়ও নেই । নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো এই ভেবে যে, মাথা পিছু ঋনের দেশে আমরা কতো অপচয়ের অসুস্থ প্রতিযোগীতায় মত্ত । মানবিক সকল বোধ হারিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তে জানোয়ারে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছি । পুরো গ্রামটিকে আমার পাগলের গ্রাম বলে মনে হচ্ছিলো । ব্যস্ততার কথা বলে দ্রুত বিদায় নিয়ে চলে এলাম । খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে উপরে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, হে মালিক আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন ।
বদলে যাবার সময় চলে যায় ।
নিন্দাদের বাড়ী
গুলো আগের মতোই চকচকে আছে। এতো বছরে একটুও চুনকাম খসে
পড়েনি পুড়নো দেয়াল ভেঙ্গে। দিনে দিনে ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষমতার
দাপট। আরশোলা পেয়ে গেছে শকুনের চোখ। কোকিল আর দোয়েলের দেহ খায় পথের কুকুর।
বাঘ হবো বাঘ হবো ভাবনায় কুনো ব্যাঙ চেয়ে আছে চুপচাপ। 'সত্য-সতী'রা তল্লাট
ছেড়ে চলে গেছে বহুকাল আগে
কোন এক অমাশ্যার ঘোর অন্ধকারে । খবর পায়নি কেউ। কোথায় গেছে , ক্যামন আছে ।
এ সংবাদ জানার আগ্রহও নেই কারুর । সত্য,সতীদের কারনেই একদা এই লোকালয়
অভিজাত হয়েছিলো । নিন্দারা এক কোনায় অসহায় পড়েছিলো দূর কিনারে
। সময় পাল্টে গেছে আজ । নিন্দার জয় জয়কার । সত্য-সতী রা অজানা বনবাসে ।
আমরা বদলে গেলে নিশ্চয়ই সত্যরা ফিরে আসবে । পালটাতে হবে । হওয়াটা জরুরী ।
ওরা খেয়ে নিচ্ছে তামাম লোকালয় !
দিন পনেরো পার হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে ঢুকিনা । পরীক্ষার কারণে ল্যাপটপটি গত কয়েকদিন যাবত দখলী স্বত্বে বাবার মালিকানায় চলে গেছে । আজ হঠাৎ খালি পেয়ে ঢুকে দেখি প্রচুর নোটিফিকেশন জমা হয়ে আছে । এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী ছবি আপলোড হচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটকদের । সুর্যাস্ত সুর্যোদয় সমুদ্রস্নান পাহাড় আর জনভীরে দাঁড়িয়ে কুলফি খাওয়া সেলফি ভরা ফেসবুক । মানুষের সুখী সুখী মুখ দেখে খুব ভালো লাগছে । সমগ্র পৃথিবিতে আমরা বাঙ্গালীরাই সম্ভবত একমাত্র জাতি যারা খুব অল্পতেই তুস্ট থাকি, সুখের স্বর্গ তৈরী করে শত দুঃখকে অতিক্রমনের মধ্য দিয়ে জীবনের পথে হাঁটি উদয়াস্ত পরিশ্রমে। আবার এই আমরাই খোলা বাদামের বুক ভাঙ্গার মতো সহজেই মুল্যবান সময় ভেঙ্গে উড়িয়ে দেই ছাইয়ের দরে ,অহেতুক অর্থ অপচয়ের অহংকারী প্রতিযোগীতায় । কি অসামান্য বৈপরীত্য নিয়ে একটা জাতী এক কাজের জন্য যেমন মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে গর্ব নিয়ে ঠিক তারই পাশে আরেকজন ভুল কাজে দাঁড়িয়ে রয়েছে নতশীরে । বিভিন্ন জনের ছবি সহ স্ট্যাটাস পড়তে পড়তে অনেকদিন পর মৃদুলের স্ট্যাটাস চোখে পড়লো । আগে প্রতিদিন একটা করে গল্পের আকারে স্ট্যাটাস থাকতো , পড়তে ভালই লাগতো । মাস তিনেক ওকে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা । আজ হঠাৎ আবার ওর স্ট্যাটাস দেখে ভালো লাগছে । "ওয়েলকাম ব্যাক মৃদুল" লিখার আগে ওর গল্প টাইপ স্ট্যাটাস্টা পড়ে নিতে ভুল করিনি মোটেও । ছেলেটা ভালই লিখে, এটলিস্ট আমাকে টানে । আজও ভালই লাগলো । আজকের লিখাটির নাম দিয়েছে "ঘড়ি" ।
মোজাটা মাত্র দুই হাত দিয়ে মেলে ধরেছে। ডান পা'টা গলিয়ে দেবে ভিতরে ।
ইতিমধ্যে ডান পা'টা তুলেও ধরেছে হা করা মোজার মুখের সামনে। এমন সময় টেবিল
ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো 'তিতু'র। গত কয়েকদিন হলো ঘন্টার কাটা'টাকে ১২ টার
মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে। আর সেকেন্ড এর কাটা টি এক সেকেন্ড এর ঘর ছেড়ে
একবার সামনে আর একবার পিছনে করছে। তিতু বুঝতে পারছে, এটুকুও থিথু হয়ে যাবে
যে কোন সময়। দম ফুরিয়ে যাচ্ছে । ব্যাটারি পালটাবে পালটাবে করে প্রতিদিনই
ভুলে যায় ফেরার সময় । ঘরির কাটা হঠাৎ ১২ টার ঘরে এসে থেমে
যাওয়াটা খারাপ কোন কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে নাতো ? ঘরির সাথে ওর আর দেশের ও
১২ টা বেজে যাচ্ছেনাতো ! সে খুব পজিটিভ মনস্ক মানুষ, ফলে শরীরে হালকা একটা
ঝাকুনি তুলে মোজা পরা শেষ করে উটে দাঁড়ালো তিতু । প্রতিদিন অফিসে
যাওয়ার আগে ফেস বুকে একটা করে নতুন স্ট্যাটাস দিয়ে যায় । ঘুম থেকে উঠেই আগে
ল্যাপটপ টা অন করে বসে পড়ে বসে পড়ে। লগ ইন
করে দেখলো গত রাতের দেয়া স্ট্যাটাস এ হিউজ লাইক জমা পড়েছে । এই লাইক দেয়া
বিষয় টি নিয়ে ও অল মোস্ট প্রতিদিনই
ভাবে । ওর ধারনা ,কেউ কেউ মনে হয় ,
না বুঝেই লাইক দিয়ে দেয় । নইলে "গতকাল আমার বাবা মারা গেছেন" অথবা "এখন
আমার ভিষন রকম কাঁদতে ইচ্ছে করছে" এই জাতীয় স্ট্যাটাসে কেউ লাইক মারে ?
তিতু ভাবে, যারা বিশ্বাস করে তাদের পুর্ব পুরুষ বানর ছিল, তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত
একটা জেলাস এর যায়গা হয়ে গেল । কারণ কেউ কেউ গাধার ও উত্তর শুরী হয়ে এ
দেশে এসেছে বলে ওর ধারনা । ফেস-বুকের এই ওলট পালট লাইক দেওয়ার বহর দেখে ওর
এই ধারনা ইদানিং আরো বেশী স্ট্রং হচ্ছে । তাদের ধারনা যে কোন লেখাতে লাইক
দেয়াটা বুঝি স্মার্টনেস এর আওতায় পড়ে । আবার কারো কারো মন্তব্য
স্ট্যাটাসটিকে আরো অর্থবহ করে তোলে, বহু মাত্রায় নিয়ে যায় । "তাঁর সাথে
আমাদের জান্নাতে দেখা হউক, আমীন" কিংবা "ভাল করে কেঁদে নাও,আনন্দ আসছে
ভাসিয়ে নিতে" । মৃত ব্যাক্তির সাথে নিজের জন্যও জান্নাত প্রাপ্তির
প্রার্থণা করার ধরনটি অভিনব বটে । অন্যটি ভরপুর প্রাণে সম্ভাবনার আশায় বুক বেঁধে বর্তমান খারাপ
সময়কে মোকাবেলা করার এক আশার বাণী শোনায় । এই সকল লেখা পড়লে শরীর মন ফুর ফুরে লাগে , হালকা হয়ে
যায় । বিশ্বাসের গাঁথুনি আরো সবল হয় । তখন ভাল কিছুর জন্য অপেক্ষ্যা করতে
সত্যি সত্যি ভাল লাগে ।
সময় নেই । এখুনি বেরুতে হবে । অফিসের গাড়ী চলে
এসেছে । হর্ন বাজাচ্ছে । তখনো ওর মাথা থেকে ঘড়ির কাঁটা নামেনি । তাড়া তাড়ি
করে আজকের স্ট্যাটাস দিয়ে বের হয়ে গেলো তিতু ।
" ও মন কয়টা বাজে তোমার ঘড়িতে....? আমি নিশ্চিত,মৃদুল নিজেকে তিতু বানিয়ে গল্পাকারে মনের কথা গুলো ব্যক্ত করে অফিসে চলে গেলো ।
আমাকেও উঠতে হবে , যেতে হবে দেওয়ান সাইদুল হাসান কে তাগাদা দিতে । ওর লিখা পাওয়ার জন্য ফেভিকল হয়ে লেগে থাকতে হবে নয়তো, দুই হাতে মা'দুর্গার দশ হাতি ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইবে । চর্যাপদ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সদস্য, কবি, বানান বিশারদ, আবৃতিকার , বি,বি,সি বাংলা , বাংলাদেশ বেতার ও বি,টি,ভির সিনিয়র সংবাদ পাঠক এবং লেখা লেখিতে অসম্ভব সম্ভাবনাময় এক অলস বন্ধুর নাম দেওয়ান সাইদুল হাসান । আজ বসে থেকে লিখিয়ে নেবো ,ছাড়বোনা কিছুতেই । (২য় অংশ)
(৩য় অংশ)
রাজনীতির ভেশাল জালে জনতা নিরীহ নলামাছ / ঈমানে উদ্বাস্তু নেতা ফরমালীন অহংকার / লতগুল্ম সনদ পায় মহান অশ্বথ গাছ/ নলামাছ ভাজা খায়, ভুনা খায় নিজামি,মুযাহিদ,বাচ্চু রাজাকার । গতরাতে ফেসবুকে এই কবিতাটি স্ট্যাটাসে দিয়ে পাপ পুণ্যের যে জ্ঞ্যান খয়রাত
পেয়েছি তাতে করে একবার মনে হয়েই যাচ্ছিলো যে, বরং রাজাকার পুত্র হয়ে
জন্মালেই ভালো হতো । পাপ পুণ্য রেল লাইনের মতো পাশাপাশি অনন্তমুখী । এক
জীবনে একই সাথে দুটো কাজ করবে বলেই মানুষের স্বর্গ ছেড়ে মর্তে আগমন । শধু
পুণ্য করলে এই মানুষই হয়তো ফেরস্তাকুলের কাছাকাছি কোথাও থাকতো অথবা অবিরত
পাপ কার্যে সে হতো শয়তানের দোসর , তাই বলে রাজাকারের ধংসযজ্ঞ ভুলে
যাবো ! ধিক্কার জানিয়ে দুটো লাইন লিখতে পারবোনা ! লিখলেই খয়রাতি জ্ঞ্যানের
ভারে মিন মিন করে তসবিহ জপতে বসে যাবো! আমরা যারা যুদ্ধ দেখেছি
ধংসোল্লাসের কোরাস শুনেছি , এখনো অবিরাম ক্ষতের কাঁচা রস মুছে যাচ্ছি চোখের
জলে তারা কি করে ভুলি ! সেই সব দিন রাতের চিত্র । যারা আমার এক মুখ দাড়ি
দেখে রাজাকার প্রিয় বলে জ্ঞ্যান করেছেন তাঁদেরকে বলছি, পাপ পুণ্যের অযাচিত
জ্ঞ্যান দানের জন্য অন্য অনেক অনাবাদি আঙ্গিনা রয়েছে , দয়া করে সেখানে আবাদ
করুন । আমার ছোট্ট পালান স্বাধীনতার রক্তজবায় ভরা । এখানে ধুতরা বা জামালগোটার বপণ রোপণ বৃথা ।
সেদিন
স্যার জগদিশ চন্দ্র বসুর বাড়ী গিয়েছিলাম এক দুপুর ছুটি নিয়ে । ভরা বর্ষা
তখন । উত্তর পুকুরে ঘাটে বসেছিলাম পানিতে পা ডুবিয়ে । আমাদের একান্নবর্তী
সংসারের মতো পরম মমতায় গাদা গাদি করে বেঁচে আছে এক
পুকুর কচুরি পানা । বরষার জলে গলা ডুবিয়ে সারি সারি হিজল, সীমান্ত রক্ষীর
মতো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সহোদরার সবুজ শরীরে কোন শকুনের আঁচড় পড়ে
রক্তাক্ত না হয় । এই নিখুঁত মমতা , জলজ উদ্ভিদ, তৃণ ও বৃক্ষের বুকে আদি এবং
অনন্ত । অথচ আমরা, একদার একান্নবর্তী সংসারের মায়াবী উঠোন ছেড়ে দশ ফিট বাই দশ
ফিট খোঁয়াড়ে খুঁজে নিয়েছি ফেসিয়াল সুখ !
ঘরে ফিরে ল্যাপটপ অন করে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম নিয়মিত স্বভাবে । ফ্রেস হয়ে রাতের
আহার শেষে ব্রডব্যান্ডের লতা পাতা ধরে টারজানের মতো ও...হো করে ঢুকে গেলাম ফেসবুকের
গভীরে । আমার জন্মদিন উপলক্ষে 'বুলা' ইনবক্সে আমাকে উইস করে রেখেছে । বুলা মানে
'জাহানারা বুলা' আমার ফেসবুক বান্ধবী । অনেকটাই প্রবাসী জীবন তার । এক ছেলে এক মেয়ে দুজনেই কানাডাতে পড়া শোনা করে বলে সে বছরের দশ মাস সেখানেই থাকে । একাধারে কবি, ছড়াকার এবং গল্পকার । হাস্যোজ্জ্বল জীবন আর স্কেলের মতো সোজা সাপটা কথা বার্তায় অভ্যস্ত বুলা প্রথম যেদিন ইনবক্সে আমাকে "দোস্ত" বলে সম্বোধন করে আমার একটা কবিতার স্ট্যাটাস নিয়ে মন্তব্য করেছিলো , বিশেষ করে এই অবিশ্বাসের যুগে এতোটা আন্তরিক ও বিশ্বস্ত শব্দ চয়নে, যা আমাকে মুগ্ধ করেছিলো পবিত্রতার ভাবনা স্নানে । প্রতি উত্তরে তৎক্ষণাৎ আমি তাকে ও তার কবিতা নিয়ে লিখে পাঠালাম "আপনার লেখা কবিতা গুলো আপনার ভিতর বাড়ীর আয়না । অন্যেরা সেই আয়নায় চোখ
রেখে ঝকঝকে পরিস্কার এক কবিকে দেখে । আপনার মন প্রদীপের আলো, হাসি হয়ে দূর
করে দেয় অমাবস্যার কালো । সূর্য বলুন চন্দ্র বলুন সবই আছে তাতে । আজ তুমি আমায় বন্ধু বলে ডাক দিয়েছো । সে ডাক শুনে (পড়ে) ঝিরি জলে ভিজে গেছে শুষ্ক হৃদয় । 'মা'
ছাড়া সব সম্পর্ক জাগতিক হিসাবের টুটাফুটা থলি । বন্ধুত্ব
হলো বুকের ভিতর ধারাবাহিক পলি । পলি আর কৃষকের যুগল ধ্যানে মানুষই প্রথম
আবাদ করেছে বন্ধু নামের অবাক ফসল । যত্নের অভাবে কোন কোন ফসল চিটা ধানের মতোই পড়ে থাকে আবাদি ভুমিতে । কারো কারো ভরে যায় বিশ্বাসের গোলা । এ যুগে কেউ কাউকে কিছু দেয়না বরং কেড়ে নেয় । যা পাচ্ছো তুমি, নিজ
যোগ্যতাতেই পাচ্ছো । নিজেকে কি করে রাখবে দূরে প্রকৃতির দেয়া এই অবাক ফসল
থেকে ? তুই আমার আপনি তুমি সব । আপনি,তুমি তুই,আমার আনন্দ উৎসব। পনেরো হাজার মাইল দুরে আছেন । ভালো থেকো । সুখে থাকিস ।
মৃদুল স্ট্যাটাস দিয়েছে , এই মাত্র স্ক্রীন জানিয়ে দিয়ে কুয়াশার মতো উবে গেলো । ও আমার প্রিয় ফেসবুকারের একজন । সাথে সাথে ক্লিক করে চলে গেলাম । "এক জীবনে মানুষ ঠিক ততো টুকুই পায় যতোটা বিলায় উদার হস্তে । প্রেমে বা
দ্রোহে , হিংসায় বা খোবে । ঘৃণায় কিংবা প্রতিবাদে , গিবদে বা প্রশংসায় ।
সে তার প্রাপ্য টুকুই পায় । তিল, তাল বা পাহাড়ের হিসাবে পেয়ে যায় । অযাচিত
প্রাপ্তি নেই মানুষের ললাটে । ফলে হিসাবী জীবন আর মাপা পদক্ষেপের বিকল্প
নেই । দাগটানা স্কেলের সোজা জীবন থেকে একবার সটকে গেলে পুনরায় ফেরা যাবেনা পুরনো দাগে । রে... জীবন সাবধান" । ওর একটা নিজস্ব দর্শন আছে এবং তা সে জোর বিশ্বাসের সাথে প্রচারও করে । কিন্তু ইদানিং মৃদুলের বলার ধরনটা যেন কেমন পালটে যাচ্ছে! ও কি মনোকস্টে ভুগছে কোন কারনে ? আমার এমন ভাবনার কারণ, আজ সে পর পর তিনটা স্ট্যাটাস দিয়েছে । দ্বিতীয়টি , "স্বীকারোক্তির
সাহস জীবনকে উজ্জ্বলতা দ্যায়। মিথ্যে গড়ে কুৎসিত পেঁচার আদল । সমালোচনার
তিক্ত বিষ মেনে নিও । তুমি সুধু উদারতার অমৃত দিও"।
"কবির গাম্ভীর্যে হঠাৎ
মেঘে ঢেকে গেলে সুনীল আকাশ আমি আতি পাতি তোমাকে খুঁজি, বৃষ্টিবানে ভিজে
আবাদের যোগ্য হবো বপন সুশ্রীতে" । তিন নাম্বারে এসে কাউকে খুজতে খুজতে স্বেচ্ছায় খেই হারাতে চাইছে মৃদুল । মনে হচ্ছে কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে । পরবর্তী স্ট্যাটাসের সতর্ক অপেক্ষায় বেরিয়ে গেলাম ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে ।
"টু নাইট আই কেন রাইট"।
আজ নেরুদাকে পড়বো বলে আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছিলাম । মৃদুল আজকের স্ট্যাটাস সেই ইচ্ছেটাকে আরো চাগিয়ে দিলো
Tonight i can write the saddest lines .
To think that i do not have her, To feel that i lost her .
To hear the immense night,still more immense without her.
ওরা এসেছিলো আজ । ওরা এক সাথে এসেছিলো । হঠাৎ করেই এসেছিলো । আমাকে
চমেকে দেবে বলে বিনা নোটিশে এসেছিলো । হাতে নাতে না পেয়ে মনে মনে কাঁচকলা
খাওয়ার মতোই গোপনে কান মলা খেয়ে আমাকে ফোন করেছিলো... 'ভাই আপনার মজা ' তে
আমরা অপেক্ষা করছি ' । আহ্ শুনেও শান্তি... আমার মজা ' তে অপেক্ষা আছে সেই
অপেক্ষাতেও মজা আছে ! হায়রে মজা ! দারুন মজা, মজাই মজা । ছেলেটি
ছাব্বিশের মধ্য সীমান্তে, মেয়েটি সেই সীমান্ত পেরিয়েছে তারও আগে । দুজনেই
খুব আস্থাবান বন্ধু । আচরণে উচ্চারণে একজন রসের পিপা আরেকজন সেই রস বাজা
রজাত
করণের দায়ভার নিয়েছে নিজ কাঁধে । আমি ফোনের প্রতি উত্তরে 'আসছি' বলেই পড়ি কি
মরি ঘর থেকে বেড়িয়েই দুজনের সামনে । প্রথম পরিচয়েই যুগল হাঁসির বানে ভাসতে
ভাসতে বন্ধু হয়ে গেলাম । দুজনেই আমার সিনিয়র । কারণ গত চব্বিশ বছর যাবৎ আমি
প্রাণ পণ চেষ্টা করেও আমার পঁচিশ বছর বয়স অতিক্রম করতে পারিনি ! আর এই
পঁচিশের সীমান্ত ওরা দুজনেই খুব স্বার্থপরের মতো ছাড়িয়ে গেছে আমাকে পিছনে
ফেলে ! তারপর চলল তিন তরুণের "মেইল ট্রেন" আড্ডা । আড্ডা
শেষে আমরা চিনে নিলাম যে যার ডেরা । ওরা মানে ,কবি দ্বিত্ব শুভ্রা আর ওর এক ছোট ভাই কাম বন্ধু এসেছিলো ।
(চলতে থাকবে)
কৌশলে কৌশলে বড়ো বেশী কুৎশীত হয়ে গেছি । এবার সরল করো আমায় । শুদ্ধ করো প্রভু ।
চাইলে তুমি সবি পারো, ইচ্ছে মতো ভেঙ্গে আবার গড়তে পারো । লাভার মধ্যে রাখতে পারো বরফ পাহাড় ।পাহাড় বুকে তীল ছোট্টো কীটের আহাড় । তুমিই প্রভূ রহিম করিম ইসমে আযম, তুমি আল্লাহ্ ।লা ইলাহা ইল্লাল-লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ । এবার সরল করো তুমি,শুদ্ধ করো আমায় ।
এই আমাকেই পারো তুমি, করে নিতে তোমার আপন । ডাকলে আমায় ছেড়ে দেবো সুজন স্বজন ।
নাওনা করেবন্ধু তোমার । সকাল বিকাল নিদ্রা আহার তোমায় যপি, তুমিই প্রভু নিত্য স্বরণ ।
কয়লা কালো বুকের ভিতর, হিরা'র ঝিলিক নূরের আলো দাওনা প্রভু চিক-ঝিক-মিক । ভিতর ভিতর কুট বুদ্ধি, কিটের কামড় আনাকোন্ডা, হায়েনা কিংবা দাঁতাল হাঙ্গড় কামড় ছোবল খাই যতোটা, দেই ফিরিয়ে অধিক দিয়ে খেয়ে সব দিকেই পঁচে গেছি মালিক । এবার আমায় তাজা করে সুগন্ধ দাও প্রভু । সরল করো ,শুদ্ধ করো , প্রভু আমি আর কারো নয় শুধু তোমার লবিং করি ।
অন্যরা এলে একাকীত্ব থাকেনা, তুমি এলে থাকেনা শূন্যতা । অন্যরা আসলে বুঝতে পারেনা ,আমাতেই তোমার পূর্ণতা । কেন শধু যাও এদিক সেদিক নিজেকে করে বেহাল বেঠিক তোমার কি খুব বেশী প্রিয়, উদ্ভ্রান্ত আঙ্গিনা । কতো কিছু আছে অশোভনীয়, তুমি কেন বোঝনা ! আমাতেই আছে ঠায় ঠিকানা আমাতেই সখি পূর্ণতা । নিজেরে প্রকাশ করে যাও দুহাতে সরিয়ে শূন্যতা ।
বাইরে থেকে সব ঠিকঠাক, প্রতিটা হুকে তালা লাগানো । ব্যানার ও ঠিক মতোই
টানানো আছে । নির্ভাবনায় তালা খুলে ভিতরে ঢূকলাম প্রতিদিনের মতো । ঢোকার
পড়েই মনে হল, কোথাও যেন কিছু একটা গোলামাল হয়েছে । হুম, চোখ ঘুরিয়ে বুঝে
গেলাম,গতরাতে রেস্টুরেন্টে চুরি হয়েছে ! অন্য কিছু না, শুধু তামা, কাঁসা ও
পিতলের সমস্ত মালামাল নিয়ে গেছে । অনেক কষ্টে এগুলো কালেক্ট করেছিলাম বহু
পথ ঘুরে । সংগৃহীত জিনিস গুলো চোখে পড়ার মতো, যা কিনা মজা রেস্টুরেন্টকে
একটা ভিন্ন মাত্রার বিশেষত্ব দিয়েছিলো । ভিডিও ফুটেজে দেখলাম রাত ১টা ৪
মিনিটে একটা ১৩/১৪ বছরের বাচ্চা ছেলে সিলিং বেয়ে নিচে নেমে এলো । পরনে
জিন্সের প্যান্ট, গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি । সারাদিন ওর চৌর্যবৃত্তির দৃশ্য
আগপিছ করে দেখছি আর ভাবছি থানায় যাবো ? পুলিশকে কমপ্লেইন করবো ? নাকি শোকর
আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করবো ?
রহমতের তৃতীয় রাত*****julay 02 -2014
তারাবী শেষে চোর পাকরাও অভিযান শুরু ।
প্রথমে ভিডিও ফুটেজ দেখে এলাকার নাইটগার্ডদের তলব । তাদেরকে দেখানো হল ।
একজনকে সনাক্ত করে ফেললো । নাম রাজু । শুরু হল রাজুকে খোঁজা । শ্যামলী,
আদাবর, পি,সি, কালচার,মহাম্মদীয়া হাউজিং, পুরো মহাম্মদপুর, লালমাটিয়া,
ধানমন্ডি এলাকার সমস্ত চোরদের ধরতে ধরতে এক সময় ৩১ জনকে ধরা হল । এর মধ্যে
শুধু একজন বলল রাজু আজ বের হয়নি । সম্ভবত বাসায় আছে সে । কিন্তু, কেউ রাজুর
বাসা চেনেনা জানালো । এই চোরদের ভীরে ৭/৮ বছরের দুজন আছে । একজনের নাম
দ্বীপজল, অন্যজন মানিক । দ্বীপজল গ্রুপ লীডার । তাঁর অধীনে মোট ২৬ জন কাজ
করে । সবার বয়স ৫ থেকে ৯ এর ভিতরে । প্রত্যেকেই নেশায় আসক্ত । ডান্ডি খায় ।
জুতোর সলিউসন পলিথিনের ব্যাগের ভিতরে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহন করে । ছোট
চোরদের মদ্ধে এই নেশাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় । দ্বীপ রাজুর বাশা চেনে । ফের
অভিযান শুরু ।
ইতিমধ্যে সকাল ৭টা । আমরাও অনেক কাদা জল পেরিয়ে সেখানে
হাজির । ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া গেলো রাজুকে । তুলে নিয়ে এলাম । ওর
স্বীকারোক্তিতে ক্রেতার নাম ঠিকানা জেনে আবার অভিযান। ডেকে তোলার পর সে
বুঝতে পেরেছে ,রক্ষা নেই । কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ভিতর থেকে তিন বস্তা মাল
নিয়ে এসে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো । সব কিছু ঠিক ঠাক মিলে জাওয়ার পড়ে হঠাৎ
মনে হল,রহমতের তৃতীয় রাত চলে গেলো, কিন্তু এখনো শুকরিয়া আদায় করা হলনা ।
শোকর আল -হাম দুলিল্লাহ ।
আমার সকল বন্ধুদের আন্তরিক সুভেচ্ছা । যারা এফ বি তে এবং সেল এ ফোন করে
সমবেদনা জানিয়েছেন । আর যারা আমার এই বিপদের কথা শুনে লাইক ! দিয়েছেন
তাদেরকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা । সকলে ভালো থাকুন এবং আমার জন্য এভাবেই দোয়া
করুন ।
( চলতে থাকবে )
RAZU..... Ghotonar Nayak.... Jake dhorar jonno ek ek kore 31 jonke
dhorte hoyechilo goto rate... *Operation Mazaa* te raju'r sathe "FIROJ"
namer ei Lungee pora cheleti chilo... Action er somoy jeans pant
T'shirt oder official dress... Ei firoj ke sorbo prothom collect kori...
Collage gate buss jatree chaouni theke...
Godfather.....Abdullah ... Investor...chor der advance payment kore
rakhe onekta dadon diye rakhar moto arki... Sorto ekta'e churir mal tar
kachei bikri korte hobe... Ghum theke tule jiggesh kortei vebaceka....
Ekhan thekei somosto malamal uddhar....
রাসূলে পাক (সা:) বলেছেন ।
কোনো মুসলমান বান্দা যখন গভীর বিশ্বাসের সাথে পড়েন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই) ।
তখন তা আকাশসমূহ অতিক্রম করে আল্লাহর সম্মুখে গিয়ে হাজির হয়।
আল্লাহ্ সুবহানু-তাআলা বলেন, 'স্থির হও' ।
উচ্চারিত কালেমা বলেন, আমি কি করে স্থির হই, যার দ্বারা উচ্চারিত হয়েছি
এখনও তাকে মাফ করা হয়নি। আল্লাহ্ তখন বলেন, আমি তোমাকে সে লোকের জিহ্বা
দ্বারা পরিচালিত করিনি যাকে তার আগ মুহুর্তে মাফ করে দেইনি।
[হাদীসে কুদসী]
টু নাইট আই কেন রাইট।
পাবলো নেরুদা ।
Tonight i can write the saddest lines .
To think that i do not have her, To feel that i lost her .
To hear the immense night,still more immense without her.
And the verse falls to the soul and she like dew to the pasture .
What does it matter that my love could not keep her.
The night is shattered and she is not with me.
The same night whitening the same trees.
We of that time, are no longer the same .
ও পাতাল ও মাটি , আগলে রেখো মাকে
মা যেমন রাখতেন প্রত্নবেদনাকে ।
(নুরুন্নাহার শিরীন)
আজ সব খুলে দিও,
কোন ফুল রেখনা আড়ালে
ভুমধসাগর যদি চাই,দিও
দুহাত বাড়ালে ।
(পূর্ণেন্দু পত্রী )
আমিও কিছুটা খুলি,আর তুমি বাদ বাকি খোলো
ভেতরে গুমরে থাকা প্রশ্নগুলি তোলো !
খোলা খুলি হউক আলচনা...
(রহমান হেনরি ।)
একই সমতলে ।
হাজার বছর হেঁটে এসে সিংহল মালয় শেষে অন্ধকারে বনলতা দেখেন জীবনান্দ দাশ । যে কোন নারীর মধ্যে সুনীল চাটুজ্যে পান
সুগন্ধি রুমাল বুকে বরুনার আভাস । শস্যের সপক্ষে থেকে খেতের আড়ালে ডেকে আন্তরিক রতির দরদ ঢালেন আল মাহমুদ , আর শত মুখ জড়ো করে এক মুখ বালিকা বানান আবু হাসান শাহরিয়ার ।
বালিকা আশ্রম... ( ১৪ নং সর্গ )
আবু হাসান শাহরিয়ার ।
আবারও কে কড়া নাড়ে ? কে দাঁড়ায় স্বার্থপর পায়ে ?
বিল-হাতে হকার ছেলেটা ? তার মানে
মাস ঘুরে গেছে । ছেলেটাকে
কেলেন্ডারও বলা যেতে পারে ।
ও ভাবে জ্যোৎস্নাও যদি বিল-হাতে
দরজায় দাঁড়ায় ? রৌদ্রবিল আসে যদি
বিদ্যুতের বিলের বদলে ?
গাছ যদি ছায়াবিল,নদী যদি ঢেউবিল,
পাখি যদি সুরের মজুরি চেয়ে বসে ?
ইদানিং ।
সাদাফ হাসনাইন মানজুর ।
তুমি নাকি ব্যস্ত ভীষণ
তোমার সময় দিচ্ছ কাকে।
আমার মতো আপন করে
শুনি, বলো আরকে ডাকে ।
বেনিয়ারা হরেদরে কিনছে
নাকি তোমার সময় ।
আজকাল প্রতিরাতে
তিনু মিনুর যেমনটা হয় ।
পিঠ ছড়ানো রঙিন চুলে
বিক্রি হচ্ছ হাতে হাতে ।
আদর করে বুকের পায়রা
তুলে দিচ্ছ নতুন পাতে ।
কোন হাতে যে পায়েশ বাটি
দিচ্ছ তুলে নাভীর চাবি ।
কে যে যাচ্ছে সাঁতরে ওপাড়
কে যে খাচ্ছে দারুন খাবি ।
আমি চাইলেম বুকের ময়না
নিজের একটু অধিকার ।
ওদের দিলে আস্ত তোমায়
ওদের বেলায় এতো উদার !!!
আজকাল মেয়েরা জুতা বা স্যান্ডাল এর ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন
...ভাবখানা এমন যে, ফেসবুকের সকলকে তিনি জুতা দিচ্ছেন বা মারছেন । অচিরেই
দেখা যাবে তেনারা তাদের দোতালা এবং নীচ তালার "দ্বিতীয় পত্রের" ছবি ও মাপ
দিয়ে স্ট্যাটাস দেবেন "তোরা দেখে যা আমি আর কি কি পড়ি" ।
আর
বেডারা...? হেরা তো মাইয়াগো থন আরো তিন কাডি বেশী সরষ...মদের বোতলের
ছবি,পাছফুতে বিছা লাগাইন্না ছবি, দুপুরে কি কি খাইছে বাডি বরা হেই তরকারির
ছবি...আর কিছু কিছু বেডাগোতো মনে অয় হেইডা নাই...নাই নাই!! পরিচয় দিতে
সরমায়...মাই
য়া মানুষ সাইজা যা মন চায় করে...
আর একদল আছে...,হেতাগো পেইছবুকে পেইছ নাই! হেইতারা হেঁচার মতন ডার্কে
থাকে...মনে অয় পেইছবুকের রইদে হেতার স্কীন কালা অই যাইবো ইয়াল্লাই
ব্লাইন্ডে থাই কল কাঁডি লাড়ে !!
আমি পঁচিশের তারুণ্যে বসে আধ্যাত্তিক গান গাই...তিন সেয়ানের হল মেলা ফেছবুকে এসে... তোরা কেউ দিসনে সারা ওদের ডাকে ।
একদল আছেন যারা আইডি'তে প্রতিকি ছবি ব্যবহার করেন এবং অসাধারন কিছু লেখা
লিখেন যা পড়ে প্রতিদিনই কিছুনা কিছু শিখা যায়, জানা যায়, তাদের আন্তরিক
অভিনন্দন । তাদের প্রতি অনুরোধের বিনয়ী দরখাস্ত...প্লীজ,নিজের ছবি দিয়ে
প্রকাশ্যে আসুন...অগুনিত বন্ধুর আস্থা ও ভালবাসা গ্রহন করুন ।
বিমাতা গরম দিলে রক্ত চক্ষু রাত
নিদ্রাহীন বেয়ে চলি ঘাম জল নদী । অনুজা ভোরের কাছে শীতল পরশ পেয়ে যাই পেয়ে যাই ঢুলু ঢুলু ঘুম ঘুমিয়ে পড়ি ,ঘুমিয়ে পড়ি , ঘুমিয়ে পড়ি মাটির খাটালে ।
হে বিমাতা তপ্ত দাহ ,কিছু কাল ,কিছু কাল এই নিদারুন নিদাঘের কালে , চুপ চাপ থাকোনা আড়ালে ।
১৮। ০৪ । ১৪ ।
বেতনের সব টাকা শেষ হলে ঘরের ভারায় ।
বিনিত জীবন ভাঙ্গে সভ্যের দেয়াল । কঠিন চোয়াল, ভেঙ্গে খায় নিজ মাড়ী দাঁত । দু হাত ফিরিয়ে দেয় অনুপম ছোঁয়া । কদমে কদমে চেনে অন্ধকার পথ । এই ভাবে থেমে গেলে সৎ এর জীবন ,নিজ হাতে রেধে খাবে আপন মগজ । ফুসফুস গলা গিলা কলিজা চুল ও নখ পুরো দেহ খেয়ে নেবে ক্ষুধার জঠর । ভুলের চর্চা পেলে মূলের অধিক অসভ্যের দল পায় সাহেবি জীবন !! আর্যরা শোন............... (১৪, ০৯,১৩)
বুকের কষ্টকে বলি, থাক জেগে বুকে জেগে থাক দিন রাত ।
তামাম পৃ্থিবী থাক নিজেদের সুখে চলুক সুখের বৃষ্টিপাত । একাকী আমি ঘুরে ফিরে থাকি লক্ষ জনের ভিতর । অনেকেই এসেছে বাগদাদ ছেড়ে
আমি এ মাটির এক অনার্য ঈতর । আমাদের মালসা ভাঙ্গা খালের উপর যে কাঠের পুলটি ছিলো । সকাল দুপুর নেংটা ঝাপে শৈশব খেয়ে গেলো । যৌবন আমার নগর ভাগাড় ভরে ছিলো পঁচা গলায় ।
মাঝ বয়সে বিষ্বাদে হরষে কাটাই ঝাড়ুর শলায় । আমড়ার ঢেকি মাকাল একাকী লক্ষ জনের ভিতর ।
খল ছল আমি খুবি কমদামী অনার্য এক ঈতর ।